Previous Lesson -- Next Lesson
৩. খোদার পূর্ণতা তার দেহধারণের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হলো (যোহন ১:১৪-১৮)
যোহন ১:১৪
সেই কালামই মানুষ হইয়া জন্মগ্রহণ করিলেন এবং আমাদের মধ্যে বাস করিলেন৷ পিতা- খোদার একমাত্র পুত্র হিসেবে তাঁহার যে মহিমা, সেই মহিমা আমরা দেখিয়াছি৷ তিনি রহমত আর সত্যে পূর্ণ৷
কে ঈসা মসিহ? তিনি সত্য? খোদা এবং সত্য মানুষ৷ প্রচারক যোহন আমাদের এই বিশাল রহস্যকে তার সুসংবাদের নীতিবাক্য হিসেবে দেখান৷ যখন তিনি খোদার বাক্যকে মনুষ্য দেহধারী হিসেবে উল্লেখ করেন, তিনি আমাদেরকে তার বাণীর ভিত্তি হিসেবে তুলে ধরেন৷ ১৪ পদ হলো তার পরবতর্ী বার্তাগুলির চাবিকাঠি৷ আপনি যদি এই সুন্দরতম নিদর্শনকে সার্বিক অর্থে অনুধাবন করতে পারেন, তাহলে আপনি পরবতর্ী অধ্যায়ে উলেস্নখিত গভীরতম অন্তর্নিহিত জ্ঞানকে অনুধাবন করতে পারবেন৷
আমাদের আধ্যাত্মিক নবজীবন প্রাপ্তি এবং মসিহের মনুষ্যদেহধারণ, এ দুটি বিষয় মৌলিকভাবে ভিন্ন৷ আমাদের প্রত্যেকেরই দেহ আছে, এবং পিতামাতার দ্বারা জন্মপ্রাপ্ত৷ পরবতর্ীতে সুসমাচারের বার্তা আমাদের কাছে পৌছিয়াছে এবং আমাদের ভিতরে অনন্ত জীবন হয়েছে উত্পন্ন ঈসা মসিহ জাগতিক পিতাদ্বারা জন্মপ্রাপ্ত নন৷ বরং খোদার বাক্য ফেরেস্তার মাধ্যমে মরিয়মের কাছে এসেছিল, যিনি তাকে বলেছিলেন 'পাকরুহ তোমার উপর আসিবেন এবং আল্লাহপাকের শক্তির ছায়া তোমার উপর পড়িবে৷ এই জন্য যে পবিত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করিবেন তাকে খোদার পুত্র বলা হইবে৷' (লুক ১ : ৩৫)
যখন কুমারীটি এই অভূতপূর্ব বাণী বিশ্বাসের সাথে গ্রহণ করলেন, তিনি তার গর্ভে অনুপম ভ্রূণের অস্তিত্ব টের পেলেন, যার ভিতরে মানুষের রক্তের সাথে পাকরুহের সংযুক্তি ঘটলো৷ এইভাবেই খোদা মানুষ হয়ে আসলেন৷ আমাদের চিন্তা-চেতনা এই বাস্তবতার কাছে নিশ্চল হয়ে পড়ে৷ জীববিজ্ঞান এই রহস্যকে উদ্ঘাটন করতে পারে না৷ মানুষের অভিজ্ঞতা এটাকে বুঝতে অক্ষম৷ কিছু তাত্তি্বকেরা মসিহের জন্মকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে অসম্ভব বলে মনে করেন এই বলে যে, তিনি শুধুমাত্র একটি দেহ নিয়ে আসছিলেন যা সত্যিকার অর্থে বস্তুগত দেহ ছিল না এবং দেহবেদনা এবং দুঃখবোধ করতে পারতো না৷ আমরা যদিও স্বীকার করি যে, ঈসা মসিহ ছিলেন একজন সম্পূর্ন মানুষ এবং একই সময় সম্পূর্ণভাবে রুহপানি সত্তা৷
ঈসা মসিহের এই অভূতপূর্ব জন্ম এবং তাঁর মানবদেহ ধারণ হলো সর্বোত্কৃষ্ট ব্যাখ্যা৷ খোদার চিরন্তন এই পুত্র, যিনি সর্বকালের জন্য পিতার কাছ থেকে এসেছিলেন এবং কোনো পাপ ব্যতীত আমাদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যে অংশগ্রহণ করেছিলেন, কারণ পাকরুহ তাকে সমস্ত পাপ হইতে দুরে রেখেছিল৷ তাই ঈসা মসিহই একমাত্র মানুষ, যিনি বাস করেছিলেন কলঙ্কমুক্ত দোষ শূন্যতা এবং পবিত্রতার মধ্যে৷
খোদার পুত্র মিশেছিলেন বিদ্রোহী অযত্নপালিত এবং দুষ্টলোকদের সাথে যারা সবাই মৃতু্যবরণ করেছে৷ তিনি নিজে ছিলেন শাশ্বত এবং তার বেহেস্তি বৈশিষ্টের কারণে মৃতু্যমুখে পতিত হবার জন্য অসমর্থ ছিলেন৷ তাঁর এই মহিমান্বিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমাদের ভালোবেসেছিলেন এবং তাঁর প্রকৃত মহিমাকে ত্যাগ করেছিলেন, আর অবমানিত অবস্থার মধ্যে আমাদের সাথে বসবাস করেছিলেন৷ তিনি আমাদের মতো একজন হয়েছিলেন এবং আমাদের অবস্থাকে নিখুঁতভাবে বুঝতে পেরেছিলেন৷ তার ব্যথায় তিনি সম্পূর্ণভাবে কর্তব্যপরায়ণতা শিখেছিলেন৷ বস্তুত এইভাবে তিনি করুণাময় হয়েছিলেন৷ তিনি আমাদের মতো দুষ্টদেরকে অস্বীকার করেননি৷ আমাদের কাছে টানবার জন্য, ঈসা মসিহ মানুষ হয়ে এসেছিলেন, যাতে করে আমরা খোদার সানি্নধ্যে আসতে পারি৷
ঈসা মসিহের দেহ পুরাতন নিয়মের ধর্মধাম সদৃশ ছিল, যেখানে খোদা মানুষদের সাথে মিলিত হতেন৷ খোদা ঈসা মসিহের মধ্যে ছিলেন এবং নিজেকে মানুষদের কাছে, মানুষের আকৃতিতে, প্রকাশ করেছিলেন৷ সমস্ত বেহেস্তি বৈশিষ্ট মসিহের মধ্যে বিদ্যমান ও স্পর্শনীয় ছিল৷ গ্রিকভাষ্য অনুসারে যোহন প্রকৃতপক্ষে এই কথা বলেছিল যে, তিনি আমাদের মধ্যে এবাদতগৃহ স্বরূপ৷ এ কথা পরিষ্কার যে, তিনি কখনো একটি স্থায়ী দুর্গ তৈরি করেননি এবং আমাদের সাথে সব সময়ই দুনিয়াতে থাকবেন কিন্তু তিনি বাস করেছিলেন, যেমন বেদুইনরা অল্পদিনের জন্য তাদের তাঁবুতে বাস করে৷ এরপর তিনি তার তাঁবুকে নামিয়ে ফেলেন এবং অন্য আর এক জায়গায় চলে যান৷ একইভাবে, বেহেস্তে ফিরে যাবার আগে ঈসা মসিহ আমাদের মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য ছিলেন৷
প্রেরিতেরা একত্রে সাক্ষ্য দিয়েছিল যে, তারা মসিহের মহিমাকে প্রত্যক্ষ করেছিল৷ তাদের এই সাক্ষ্য একটি উচ্চপ্রশংসা ও আনন্দ উত্সবের মতো৷ তারা চাক্ষুস সাক্ষী ছিল রক্ত মাংসে গড়া খোদার পুত্রের উপস্থিতি৷ তাদের বিশ্বাস, তাদের চক্ষুকে উম্মোচন করে এবং তার ভালোবাসা ধৈর্য, অপমানিত অবস্থা, আনুগত্য এবং মসিহের বেহেস্তি বৈশিষ্ঠতা উপলব্ধি করে৷ তারা তার পবিত্রতার মধ্যে খোদাকে দেখতে পায়৷ 'তার মহিমা পুরাতন নিয়মে এই অভিব্যক্তি প্রকাশ করে, নির্দেশ করে এবং সমস্ত বেহেস্তি বৈশিষ্ট৷ প্রেরিত যোহন সাহসিকতার সাথে ঈসা মসিহের এই সমস্ত বিষয় সাক্ষ্য দিয়েছিল৷ তিনি তার গুপ্ত মহিমা এবং সেই সাথে তার সৌন্দর্য এবং মহত্ত্বকে উপলব্ধি করেছিলেন৷
পাকরুহের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যোহন খোদাকে পিতা এবং ঈসা মসিহকে পুত্র বলে ডেকেছিলেন৷ এই দুটি সম্পর্ককে এড়ানো যায় না৷ রুহের অনুপ্রেরণা পর্দাকে ছিঁড়ে ফেলে যা খোদার নামকে লুকিয়ে রেখেছিল এবং আমাদেরকে আশ্বাস দেয় যে এই শাশ্বত পবিত্র জন হলেন পিতা, যিনি সর্বশক্তিমান শ্রষ্টা আর তার মতো একটি পবিত্র পুত্র আছে যিনি গৌরবময় এবং চিরস্থায়ী ও প্রেমে পরিপূর্ণ৷ খোদা তার শক্তি দিয়ে কোন কিছুকে বিচার করতে, ধংস করতে বা প্রতিশোধ নেন না৷ তিনি সহানুভূতিশীল কোমল এবং ধৈর্যশীল, এবং তার পুত্রও সেই রকম৷ পিতা এবং পুত্রকে বোঝার মধ্য দিয়ে আমরা ইঞ্জিল শরিফের প্রাণকেন্দ্রে পৌছাই৷ যে কেউ পুত্রকে দেখেছে সে পিতাকেও দেখেছে৷ এই প্রকাশিত কালাম খোদার ভাবমূর্তিকে রূপান্তরিত করেছে যা অন্য ধর্মগুলোতেও পাওয়া যায় এবং আমাদের চোখকে উম্মোচন করেছে প্রেমের যুগের জন্য৷
আপনি কি খোদাকে চিনতে চান? তাহলে মসিহের জীবনী অধ্যয়ন করুন৷ সাহাবিরা ঈসা মসিহের মধ্যে কি দেখেছিল? তাদের সাক্ষ্যের সারাংশ কী ছিল? তারা খোদার ভালোবাসা যা কৃপা এবং সত্যের সাথে সম্পৃক্ততা দেখেছিল৷ যখন তুমি প্রার্থনা করবে তখন এই তিনটি বিষয়ের ব্যাপারে চিন্তা করবো এবং তুমি অনুভব করবে খোদার গৌরবের পূর্ণতা যা মসিহের মধ্যে বিদ্যমান৷ তিনি আমাদের কাছে এসেছেন আরোগ্যের কৃপা নিয়ে, যে জন্য আমরা উপযুক্ত ছিলাম না৷ আমরা সবাই দোষী, আমাদের ভিতর কেউ ভালো নেই, আমাদের কাছে তার আগমন অল্প সময়ের জন্য দয়া দেখায় কিন্তু আমরা দুষ্টই থেকে যাই এবং নিজেদের তার ভ্রাতা বলতে লজ্জিত হই না, তিনি আমাদেররকে ধৌত করেছেন, পাপমুক্ত করেছেন এবং নতুন করে তৈরি করেছেন আর তার রুহ দিয়ে আমাদেরকে পরিপূর্ণ করেছেন৷ এই উদ্ধারের কাজগুলি কি দয়ার ওপর দয়া নয়? এবং এমনকি আরও অনেক কিছু আছে যেমন, আমরা একটি নতুন অধিকার অর্জন করেছি, কারণ ঈসা মসিহ আমাদেরকে তার দয়ার মধ্যে রোপন করেছেন যাতে করে আমরা খোদার সন্তান হবার অধিকার পাই৷ এই কৃপার বাণী কোন শঠতা অথবা কাল্পনিক কিছু নয় কিন্তু একটি নতুন অধিকার৷ ঈসা মসিহের মনুষ্য দেহ ধারণ হলো খোদার কার্যাবলির এবং তার বাস্তবতার প্রমাণ, যা আমাদেরকে তার নাজাতের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ করে৷ ক্ষমাই হলো আমাদের বিশ্বাসের ভিত্তি৷
প্রার্থনা : হে যাবনাপাত্রের শিশু, তোমার কাছে আমরা নতজানু হই, যেমন মেষপালকেরা এবং পূর্বদিকের জ্ঞানী ব্যক্তিরা বেথলেহেমে নতজানু হয়েছিল৷ তুমি রক্তমাংসে খোদা, আমাদের কাছে এসেছিলে এবং আমাদেরকে ভাই বলে ডাকতে লজ্জিত হওনি৷ তোমার নূর অন্ধকারের মধ্যে জ্বলে৷ আমার অপবিত্র হৃদয়কে বিশুদ্ধ কর যাতে করে এটা তোমার জন্য একটি অনন্ত যাবপাত্রের উপযুক্ত হতে পারে৷ সকল বিশ্বাসীদের সাথে আমিও তোমাকে বড় করিয়া দেখি কারণ তোমার মহিমা হয়েছে একটি বিনীতকায়া৷ আমরা তোমার কাছে মিনতি করি যে, আমাদের এই স্থানের অনেক হতভাগ্য ব্যক্তিকে যেন তাদের নতুন অধিকারকে উপলব্ধি করতে পারে এবং তোমাকে গ্রহণ করতে পারে৷
প্রশ্ন: