Previous Lesson -- Next Lesson
৩. খোদার পূর্ণতা তার দেহধারণের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হলো (যোহন ১:১৪-১৮)
যোহন ১:১৫-১৬
১৫ ইয়াহিয়া তাহার বিষয়ে জোর গলায় সাক্ষ্য দিয়ে বলিলেন, 'উনিই সেই লোক, যাহার বিষয় আমি বলিয়াছিলাম, যিনি আমার পরে আসিতেছেন তিনি আমার চেয়ে মহান, কারণ তিনি আমার অনেক আগে হইতেই আছেন, ১৬ আমরা সকলে তাহার সেই পূর্ণতা হইতে রহমতের উপর আরও রহমত পাইয়াছি৷
বাপ্তিস্মদাতা জোরগলায় ঘোষণা করেন যে, ঈসা মসিহ যিনি তার পরে উপস্থিত হয়েছেন তিনি আগে থেকেই ছিলেন, এইভাবে তিনি পার্থিব কুলুজিকে অতিক্রম করলেন৷ এই ঘোষণা দেবার মধ্যদিয়ে বাপ্তিস্মদাতা মসিহের চিরজীবিতা জোরের সঙ্গে তুলিয়া ধরলেন৷ সে সত্য সাক্ষ্য দিয়েছিল যে, তিনি স্থান-কাল এবং সময়ের উধের্্ব এবং একজন চিরন্তন ও অবিকৃত খোদা৷
ইয়াহিয়া নির্জন প্রান্তরের মধ্যে বসে মানুষের পাপের করুণ অবস্থা দেখে দুঃখ পেলেন৷ তিনি পাপ মোচনের জন্য তাদেরকে অনুতাপের বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ঈসা মসিহকে দেখে তার হৃদয় আনন্দে দুলে উঠলো, কারণ ঈসা মসিহ চিরন্তন মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তিনি সত্যে পরিপূর্ণ ছিলেন যাতে করে মৃতু্য তার ওপর কোনো শক্তি না খাটাতে পারে৷ তার আবির্ভাবের আনন্দ এবং বড়দিনের আনন্দ প্রকাশিত হয়েছিল মানুষের দেহে খোদার অনন্ত জীবনের মধ্য দিয়ে৷ এই থেকেই শুরু হয়েছিল মৃতু্যর ওপর জীবনের জয়লাভ, কারণ তার ভিতর দিয়েই পাপ দূরীভূত হয়েছিল যেটা ছিল মৃতু্যর কারণ৷
এই কৃপার গভীরতা উপলব্ধি করে বাপ্তিস্মদাতা হয়েছিলেন এবং খোদার পূর্ণতাকে বিশালভাবে দেখতে পেয়েছিলেন যা মসিহের মধ্যে বিদ্যমান ছিল৷ পৌল স্বীকার করেছিল তার মধ্যে দৈহিকভাবে খোদার পূর্ণতা বিদ্যমান ছিল এবং তুমি তার ভিতর পরিপূর্ণ৷ যোহন তার বিশাল বক্তব্যের মধ্যে এই সত্যগুলো একত্রিত করে বলেছিল, 'তার পরিপূর্ণতা থেকে আমরা রহমতের উপর রহমত পেয়েছি'৷
ঈসা মসিহের পূর্ণতা কি এবং তার কাছ থেকে আমরা কি পেয়েছি? আপনি যদি স্মরণ করতে পারেন, ব্যক্তি মসিহের ব্যাপারে যোহনের ব্যাখ্যা, যা বিগত পদে রয়েছে, তাহলে আপনি তাঁর ব্যক্তিত্বের মহত্বতা সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং কেমন করে প্রতিদিন আমরা রহমতের সাগর পাই তা উপলব্ধি করতে পারবেন৷
ঈসা মসিহ হলো খোদার কালেমা বা বাক্য যা পিতা থেকে বেরিয়ে আসে, যেমন মানুষের কথা তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে৷ তিনি হলেন খোদার গভীরতম হৃদয় এবং তার ইচ্ছা, অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য বা সত্তা ও আনন্দদায়ক পরশ৷ যেভাবে সুসমাচারের বাক্য আমাদের কাছে পেঁৗছায় যা আমাদের মনের ভিতরে ঢোকে এবং আমাদের ইচ্ছার পরিবর্তন ঘটায়, ঈসা মসিহও তেমনি আমাদের হৃদয়ে আসেন এবং আমাদেরকে তাঁর মহত্ত্ব অনুযায়ী পরিবর্তন করেন৷ এটা কি একটি চমত্কার রহমত নয়?
ঈসা মসিহ হলেন খোদার জীবন৷ বৈজ্ঞানিকেরা বাড়ি, সেতু এবং বিশাল বোমা তৈরি করতে পারে, কিন্তু কেউ জীবন সৃষ্টি করতে পারে না৷ সঞ্চার করে যা খোদা প্রদান করেন৷ এটা কি রহমত নয়? যখন পার্থিব জীবন শেষ হয়ে যায় ঈসা মসিহ বিশ্বাসীদেরকে তাদের উপর তার রুহ দেন যা অনন্ত জীবন৷ সকল খ্রিস্টানরা খোদার জীবনের সাথে অংশগ্রহণ করে এবং কখনো মৃতু্যবরণ করবে না৷ এটা কি চমত্কার রহমত নয়?
ঈসা মসিহ দুনিয়ার নূর৷ তিনি অন্ধকারের ওপর জয়ী এবং ঘনকালো অন্ধকারে রাতের মধ্যে নূরের স্রষ্টা৷ তিনি হতাশায় পরিপূর্ণ জগতকে আশা দেন এবং দুর্বলতার মধ্যে এই আর্তনাদকারী পৃথিবীর কাছে তার ক্ষমতা প্রদান করেন৷ মসিহের আলো দুনিয়ার অন্ধকারকে ভাসিয়ে দিতে সক্ষম তার উজ্জ্বল নূর দিয়ে৷ তিনি সত্য ও বিশ্বস্ততা প্রদান করেন রাজনীতি, কারখানা, পরিবার এবং জামাতগুলিতে যদি মানুষ তাকে বিশ্বাস করে৷ এটা কি রহমতের উপরে রহমত নয়?
ঈসা মসিহ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা৷ খোদার শক্তির পরিপূর্ণতা তাঁর মধ্যে ছিল৷ তাঁর মাজেজাগুলি ছিল তার কতর্ৃত্বের নির্দশন৷ তার মৃতু্য থেকে পুনরুত্থান প্রমাণ করে যে, মৃতু্যর ওপরে তাঁর ক্ষমতা বা কতর্ৃত্ব ছিল৷ দৈহিকভাবে তিনি অভিকর্ষ শক্তিকে পরাভূত করেন এবং পানির ওপর দিয়ে হাঁটেন৷ তিনি এক টুকরা রুটিকে ভাঙেন এবং পাঁচ হাজার মানুষকে তাই দিয়ে খাওয়ান যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা পরিতৃপ্ত হয়েছিল৷ আপনার মাথার চুলগুলির সংখ্যাও তিনি জানেন৷ কখন আমরা তাঁর এই অসীম রহমতের কাছে নতজানু হব?
আপনি কি কখনো মসিহের পরিপূর্ণতা সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানতে চান? তিনি দুনিয়ার মালিক৷ সমস্ত জিনিস এবং সম্পদ, আপনার জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত এবং আপনি নিজেও তাঁর সম্পত্তি৷ তিনি আপনাকে তৈরি করেছেন এবং প্রতিপালন করেন৷ তিনি সব কিছুরই অধিকারী৷ তিনি আপনার হাতে তার সবকিছু বিশ্বাসের সাথে অর্পণ করেছেন যাতে করে আপনি তাঁর জন্য এগুলিকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারেন৷ আপনার পেশি, আপনার চিন্তাধারা এবং আপনার মাতা-পিতা হলেন আপনার প্রভুর দান যা তিনি আপনার উপর অর্পণ করেছেন৷ তার এই রহমতের জন্য কখন আপনি তাঁকে ধন্যবাদ দেবেন?
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, মানব দেহধারণ এবং বড়দিনের ব্যাপারটি সেটি খোদাত্বের পরিপূর্ণতাকে একটা শিশুর দেহে রূপ দিয়েছে৷ নবী যিশাইয় এই ঘটনা ঘটবার সাতশো বছর আগে ঠিক এই মোজেজার ভবিষ্যত্বাণী করেছিলেন পাক-রুহের অনুপ্রেরণায় এবং এই কথা বলেন যে, 'আমাদের মধ্যে একটি শিশু জন্ম নিয়েছে, আমাদেরকে একটি পুত্র দেওয়া হয়েছে এবং সমস্ত নিয়ন্ত্রণ বা শাসনভার তাঁর কাঁধের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে৷ তাঁকে ডাকা হবে বিস্ময়কর পরামর্শদাতা শক্তিশালী খোদা, চিরস্থায়ী পিতা, শান্তির রাজা' (যিশাইয় ৯ : ৬)৷ দুঃখজনকভাবে মানুষের মন এটি বুঝে উঠবার জন্য ধীরগতিসম্পন্ন যে মসিহের ভিতরে খোদা মানুষরূপ নিয়েছে যা তাঁর পবিত্র প্রতিকৃতি এবং যা সৃষ্টির প্রথম থেকেই ছিল৷ ঈসা মসিহ গৌরবময় যিনি বিজ্ঞ আলোকিত পরামর্শদাতা, শক্তিশালী শাশ্বত খোদা৷ সমস্ত গুণাগুণ এবং খোদার দান এই পাত্রের শিশুর মধ্যে বিদ্যমান ছিল৷ আপনি কি এটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন এই বিস্ময়কর রহমতকে যে ঈসা মসিহের মধ্য দিয়ে খোদা আমাদের কাছে এসেছিলেন৷ এখন বলতে পারি খোদা আমাদের সাথে আছেন!
ঈসা মসিহ তাঁর গুণাবলি নিজের কাছে রেখে দিতে চান না, তা না হলে তিনি বেহেস্তেই অবস্থান করতেন৷ তিনি আমাদের দুনিয়াতে এসেছেন, আমাদের রক্তমাংসের মধ্য দিয়েই এসেছেন এবং আমাদের মতো নীচু সাদৃশ্য নিয়ে এসেছেন বেহেস্তের পথকে আমাদের কাছে উম্মোচন করতে, তাঁর পিতার কাছে আমাদের প্রত্যর্পণ করতে এবং তাঁর পূর্ণতা দিয়ে আমাদেরকে পরিপূর্ণ করতে৷ একইভাবে পৌল সাক্ষ্য দিয়েছে, খোদার উদ্দেশ্য হলো তাঁর পূর্ণতাকে জামাতের কাছে জাহির করা৷ ইফিষীয় ১ : ২৩, ৪ : ১০ এবং কলসীয় ২ : ১০ এই পদগুলি পড়লেই আপনি খোদার প্রশংসার স্রোতে ভেসে যাবেন এবং আপনার খোদার রহমতকে বিবর্ধিত করতে অগ্রসর হবেন৷ আপনি আপনার পাপের হীনতার মধ্যে থাকবেন না কিন্তু আপনার হৃদয়কে ঈসা মসিহের পূর্ণতার কাছে উন্মোচন করুন৷ যাবপাত্রের শিশুটির কাছে আসেন এবং নানাবিধ আশীর্বাদ আপনাকে স্রোতের মতো ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তিনি আপনাকে রহমতের একটি উত্স বানাবেন তাদের জন্য যারা আপনার চারিপাশে রয়েছেন ৷
প্রার্থনা : প্রভু ঈসা মসিহ, আপনি খোদার পুত্র৷ সকল ভালোবাসা, শক্তি এবং সত্য আপনার মধ্যে রয়েছে৷ আমরা আপনার সামনে নতজানু হই এবং আনন্দ করি কারণ আপনি আমাদের থেকে দূরে থাকেন না কিন্তু আপনি আমাদের মধ্যেই বাস করেন৷ আপনি আমাদেরকে ভালোবাসেন৷ আপনি মানুষ হয়ে এসেছিলেন এবং আমাদেরকে উদ্ধার করেছেন৷ আমরা আপনাকে ধন্যবাদ দেই কারণ আমাদেরকে আপনি রহমতের উপর রহমত দিয়েছেন৷
প্রশ্ন: