Previous Lesson -- Next Lesson
ক) নিজেকে রাজা বলে দাবি করার অভিযোগে ঈসা মসিহকে রোমীয় দেওয়ানী আদালতে (যোহন ১৮:২৮-৩৮)
যোহন ১৮:২৮-৩২
ইহুদি নেতারা ভোর বেলায় ঈসা মসিহকে কাইয়াফার কাছ থেকে রোমীয় প্রধান শাসনকর্তা পীলাতের বাড়ীতে নিয়ে গেলেন৷ তাঁরা কিন্তু সেই বাড়ীর ভিতরে ঢুকলেন না যেন পাক-সাফ অবস্থায় উদ্ধার ঈদের ভোজ খেতে পারেন৷ তখন পীলাত বাইরে তাঁদের কাছে এসে বললেন, 'এই লোকটিকে তোমরা কী দোষে দোষী করছ?" ইহুদি নেতারা বললেন, 'এ যদি খারাপ কাজ না করত তবে আমরা তাকে আপনার কাছে আনতাম না৷' পীলাত তাঁদের বললেন, 'একে তোমরা নিয়ে গিয়ে তোমাদের শরীয়ত মতে বিচার কর৷' এতে ইহুদি নেতারা পীলাতকে বললেন, 'কিন্তু কাউকে মৃতু্যর শাসত্মি দেবার ক্ষমতা তো আমাদের হাতে নেই৷' কিভাবে নিজের মৃতু্য হবে ঈসা আগেই তা বলেছিলেন৷ এটা ঘটল যাতে তাঁর সেই কথা পূর্ণ হয়৷
ইহুদি সমপ্রদায়ের কতিপয় ব্যক্তি সময়ের পূর্বেই ঈসা মসিহকে হত্যা করতে মনস্থ করল যখন বৈথেসদার অবশ রোগটিকে তিনি আশ্চর্য্যভাবে সুস্থ করে তুললেন (৫ : ১৮)৷ তাছাড়া, চার দিনের মৃত লাসারকে কবর থেকে জীবিত করে তোলার ফলে (১১ : ৪৬)অধিকাংশ ইহুদি নেতৃবৃন্দ গোপনে শলা-পরামর্শ করতে শুরম্ন করলো; যে করেই হোক, ঈসা মসিহকে হত্যা করাই হবে আপদ দূর করায় একমাত্র উপায়৷
বৃহস্পতিবার রাত্রে শুরম্নত্বপূর্ণ এক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয় যা ইউহোন্না তাঁর বর্ণনায় উলেস্নখ করেন নি (মথি ২৬ : ৫৭-৬৭ এবং ২৭ : ১)
উক্ত ইহুদি নেতারা খুব অল্পই গ্রীক ভাষাভাসিদের কাছে প্রকাশ করেছেন, তবে ইউহোন্না সবিশেষ বর্ণনা দিয়েছেন যে রোমীয় বিচারকদের কাছ থেকে ঈসা মসিহের ওপর অন্যায়ভাবে শাসত্মির রায় ঘোষিত হয়েছে৷ পিলাত মিলিটারি ছাউনিতে বসে এই রায় ঘোষণা করে৷ আর এ পিলাতই ছিলেন একমাত্র দ-মু-ের অধিকারী৷ তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শাসত্মিও দিতে পারতেন আবার বেকসুর খালাস করেও দিতে পারতেন৷
উক্ত ইহুদি ব্যক্তিদের মধ্যে যারা প্রভুর ভয়ে ভীত ছিলেন, তারা পৌত্তলিকদের প্রাঙ্গনে প্রবেশ করতে অনিহা বোধ করছিলেন৷ তারা তাদের আনুষ্ঠানিক পবিত্রতা বজায় রাখতে চেষ্টা করছিলেন, তারা উদ্ধার পর্বের মেষ কোরবানি দিতে স্বজন প্রিয়জন নিতেন, অথচ ঐশি মেষ খোদাবন্দ হযরত ঈসা মসিহকে হত্যা করার জন্য ব্যাকুল ছিল৷
ঈসা মসিহকে গ্রেফতার করার কঠিন মূহুর্তে পিলাতের জীবনে এক আশ্চর্য্য পরবর্তন ঘটে গেল৷ তার সহকর্মী রোমীয় সেনাপতি বিদ্রোহ করার দায়ে সিজার তাকে বরখাসত্ম করেছিলেন৷ উক্ত সেনাপতি ইহুদি বিরোধি ছিলেন৷ তিনি যে ষড়যন্ত্র করেছিলেন তা ইহুদি সমপ্রদায়ের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়েছিল৷ সে কারণে পিলাতের ক্ষমতা অনেকটা কমে গিয়েছিল৷ তাছাড়া ইহুদিদের ওপর তার ঘৃণাভাব এবং কঠোর অবস্থানের কারণে তাকে পূর্বাপদ ও মর্যাদা থেকে পদানত করা হয়েছিল৷
ইহুদিরা ঈসা মসিহকে ধরে নিয়ে যখন পিলাতের দরবারে হাজির হলো, পিতর তখন দ্রম্নত চলে আসলেন প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য৷ তাদের অভিযোগের বিষয় নিয়ে তিনি (পীলাত) আলোচনা পর্যালোচনায় বেশি সময় দিলেন না, কেননা তিনি তাদের দাবি-দাওয়ার মূল বিষয়টি ধরতে পেরেছিলেন৷ ঈসা মসিহের প্রতি পিলাতের মনোভাব তার বক্রহাসির মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেল, সৈন্যসামনত্ম, গোলাবারম্নদবিহীন রাজা গাধার পিঠে চড়ে জেরম্নজালেমে পৌছালে রোম সম্রাজ্যের ভয়ের কিছুই থাকতে পারে না৷ কিন্তু পিলাত ইহুদিদের সিদ্ধানত্মে একাত্মতা প্রকাশ করলেন৷ ঈসা মসিহকে গ্রেফতার করার জন্য ইহুদিদের সাথে একজন অফিসার নিয়োগ দিলেন যেন দলবল নিয়ে সে গ্রেফতার করার জন্য প্রস্তুত থাকে৷ ষড়যন্ত্র ফলপ্রসু হলো৷ তারপরও ধোঁকা দেবার জন্য প্রকাশ্যে জানতে চাইলো কোন অপরাধে তিনি দোষী? সন্দেহহীনভাবে ইহুদি নেতাগণ জোড়ালোভাবে ঘোষণা দিলেন, আপনি জানেন ইতোপূর্বে আমরা যে কথা বলেছি৷ এ ব্যক্তি রাজনৈতিক দাঙ্গাবাজ দুষ্ঠচক্র, দেশে দাঙ্গা সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, এর অতিরিক্ত আমরা বলতে চাই না৷ আমরা ইহুদি নেতারা কেবল প্রতিনিধিত্বের স্বার্থে আপনার দরবারে আসি নি, বরং তার মৃতু্যর আজ্ঞা লাভের জন্য এসেছি যাতে জনতার মধ্যে হুলুস্থূল বেধে না যায়৷
ইহুদিদের কুসংস্কার ও একগুয়েমির খবর পিলাতের জানা ছিল৷ এবং এও জানতেন যে তাদের আইনের পরিবর্তন অত্যাবশ্যক৷ তারা যে শক্তিধর ঈসা মসিহের আগমনের অপেক্ষায় আছে তাও পিলাত জানতেন৷ রোমীয় আইনপরিপন্থি কোনো কাজই ঈসা মসিহ করেন নি৷ তাই তিনি ঈসা মসিহকে আবার ফিরিয়ে দিলেন তাদের কাছে এ কারণে, যেন তারা তাদের শরিয়ত মোতাবেক তার বিচার করে৷
উক্ত সময়ে ইহুদিদের হাতে কাওকে পাথর ছুড়ে হত্যা করার ক্ষমতা ছিল না৷ তাদের উদ্যেশ্য ছিল, পৌত্তলিক রোমীয়দের হাতে বিচারের নামে জনসমক্ষে ঈসা মসিহকে হেয় প্রতিপন্ন করা৷ এ কারণে তত্কালিন হিংস্র ও ঘৃণ অপরাধীদের প্রাপ্য অভিশপ্ত শাসত্মি দিয়ে সলিবে ঝুলিয়ে হত্যা করার রায় দিয়েছিলো৷ তারা মনে করেছিল, এমনভাবে হত্যা করার ফলে প্রমানীত হবে যে ঈসা মসিহ খোদার পুত্র নয়, বরং ধর্মদ্রোহী হতচ্ছাড়া এক ব্যক্তিমাত্র৷ কাইয়াফাও চেয়েছিলেন তার মৃতু্য হোক রোমীদের হাতে একজন প্রতারক ক্ষমতালোভি ব্যক্তি হিসেবে, আসলে সে ঈসা মসিহ নয়৷
যোহন ১৮:৩৩-৩৬
তখন পীলাত আবার বাড়ীর মধ্যে ঢুকলেন এবং ঈসাকে ডেকে বললেন, 'তুমিই কি ইহুদিদের বাদশাহ৷' ঈসা মসিহ বলেন, 'আপনি কি নিজে থেকেই এই কথা বলছেন, না অন্যেরা আমার বিষয়ে আপনাকে বলেছে?' পীলাত জবাব দিলেন, 'আমি কি ইহুদি? তোমার জাতির লোকেরা আর প্রধান ইমামেরা তোমাকে আমার কাছে দিয়েছে৷ তুমি কি করেছ?' ঈসা মসিহ বললেন, 'আমার রাজ্য এই দুনিয়ার নয়৷ যদি আমার রাজ্য এই দুনিয়ার হত তবে আমি যাতে ইহুদি নেতাদের হাতে না পড়ি সেইজন্য আমার লোকেরা যুদ্ধ করত; কিন্তু আমার রাজ্য তো এখানকার নয়৷'
পীলাত বুঝতে পেরেছিলেন, আসলে ঈসা মসিহ হলেন সত্যবাদী এবং তাঁর দ্বারা ভয়ের কিছু ছিল না৷ তিনি সভাকক্ষে ইহুদিদের জনসমাগম এর সামনে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নির্দোশিতা প্রকাশ্যে স্বীকার করলেন৷ সুসমাচারের চার খন্ডেই প্রমান করেছে, ধমর্ীয় বিধি এবং দেওয়ানি নিয়ম অনুযায়ী তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ ব্যক্তি ছিলেন৷ তিনি ঈসা মসিহের বিরম্নদ্ধে কোনো দোষ আরোপ করতে পারেন নি৷ দেওয়ানি আদালতেও তার নির্দোষিতা প্রমাণ করেছে৷
পীলাত অবশ্য নির্দোষ হিসেবে ঈসা মসিহকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ইহুদিদের যে কীভাবে সন্তুষ্ট করা যায় সে দিকেও তার যথেষ্ঠ আগ্রহ ছিল৷ তিনি প্রথাগত মুক্তিপর্বের দিনে ঈসা মসিহকে ছেড়ে দিতে চেয়ে ছিলেন, কেননা উক্ত পর্বের ভোজের সময় যেকোনো একজন দোষী ব্যক্তিকে মুক্ত করার নিয়ম ছিল৷ পীলাত ঈসা মসিহকে ঠাট্টাবিদ্রম্নপ করে ইহুদিদের রাজা বলে মহা-ইমামকে সন্তুষ্ঠ করতে চেষ্টা করেছিল৷ পীলাত যদি তাকে মুক্তি দিত তবে সে জনপ্রিয়তা হারাতো, তাই রোমীয় শৃঙ্খলা থেকে তাদের মুক্তি দেয়া চলবে না৷
'ইহুদিদের রাজা' উপাধি ঈসা মসিহকে দেয়ায় ইমাম ও সাধারণ ইহুদিরা তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠলো৷ তাদের প্রত্যাশা ছিল সামরিক ক্ষমতাধর ব্যক্তি তাদের শাসন ও পরিচালনা দান করবে৷ তাই তারা বারব্বার মতো এক দুশ্চরিত্র খুনি ডাকাতের মুক্তির জন্য আবদার করলো, পরিবর্তে পূতপবিত্র ঐশি শেষ ঈসা মসিহের মৃতু্য চাইলো৷ পরামর্শ সভা ঈসা মসিহের কেবল বিরোধিতাই করেনি, তারা চরমভাবে ঘৃণাও করেছে৷ আপনি তাহলে কার পাশে দাড়াবেন? কোনো দুর্বল, নিরস্র ব্যক্তির পাশে অথবা বিধিবদ্ধ ব্যক্তিদের, যারা বিদ্রোহ সৃষ্টিকল্পে সত্য ও ক্ষমাশুলভ পথ থেকে সরে গিয়েছিল৷
যোহন ১৮:৩৭-৩৮
পীলাত ঈসা মসিহকে বললেন, 'তাহলে তুমি কি বাদশাহ?' ঈসা মসিহ বললন, 'আপনি ঠিকই বলেছেন যে, আমি বাদশাহ৷ সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিবার জন্য আমি জন্মেছি আর সে জন্যই আমি দুনিয়াতে এসেছি৷ যে কেউ সত্যের সে আমার কথা শোনে৷ পীলাত তাঁকে বললেন, 'সত্য কি?' এই কথা বলে তিনি আবার বাইরে ইহুদি নেতাদের কাছে গিয়ে বললেন, 'আমি এর কোনই দোষ দেখতে পাচ্ছি না৷
মসিহের দাবির মূলভাব পীলাত বুঝতে পারে নি, তবে সে অনুধাবন করতে পেরেছিল, বিশদ ব্যাখ্যা না দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি স্বীকার করেছে, তিনি রাজা, তবে তাঁ রাজত্ব ছাড়া৷ মসিহ জবাবে বললেন, তুমি আমার গোপন বিষয় দেখতে পেয়েছ এবং আমার বাক্যের অর্থও বুঝতে পেরেছো৷ রাজা হলেন তার রাজত্বের মালিক এবং কর্তা, আমার রাজত্ব এ পৃথিবীর নয়, এ পৃথিবী প্রতারণা ও মিথ্যাচারে ভরা, আমি হলাম সত্যের রাজা৷
মসিহ সাখ্য দিলেন, তাঁর জন্ম কুমারী মরিয়মের মধ্য দিয়ে হয়েছে তবুও ঐ জন্ম তাঁর জীবনের শুরম্ন নয়৷ এর পূর্ব থেকেই তিনি বর্তমান, অসত্মিত্বমান৷ তিনি এ বিশ্বে এসেছেন উর্ধ থেকে৷ যুগকলাপের পূর্বেই তিনি পিতার সাথে আছেন এবং সেখান থেকে হয়েছেন আবিভর্ূত৷ তিনি ঐশি সত্য জানেন৷ মসিহ খোদার সত্যের সাখ্য বহন করেছেন৷ যেমন অননত্মকালের জন্য জাত হয়েছেন, তিনি একমাত্র বিশ্বসত্মসাক্ষি৷ পীলাত পরিতৃপ্ত হয়ে প্রশ্ন করলেন, 'সত্য বলতে কি বুঝায়?' গভর্ণর অনেক ভন্ডামি ও প্রতারণা দেখতে পেয়েছে, তাই সত্যের উপর তার আর আস্থা নেই৷ মসিহ বিশ্বসত্মসাক্ষ্য বেহেশতি সত্যের পক্ষে, সাক্ষী দৃঢ় মনোবল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন পিতার নামের সত্য প্রকাশ করবেন৷
প্রর্থনা: প্রভু ঈসা মসিহ, তুমি আমার রাজা, আমি তোমার৷ তোমার বিনম্রতার সেবক হিসেবে আমাকে গড়ে তোল৷ তোমার সত্যে আমাকে শক্ত হাতে ধরে রাখো৷
প্রশ্ন: