Previous Lesson -- Next Lesson
৪. তোমাদের শত্রম্ন ও বিরম্নদ্ধবাদীদের মহব্বত করো (রোমীয় ১২:১৭-২১)
রোমীয় ১২:১৭-২১
১৭. খারাপীর বদলে কারও খারাপ কোরো না৷ সমসত্ম লোকের চোখে যা ভাল সেই বিষয়ে মনোযোগ দাও৷ ২৮. তোমাদের দিক থেকে যতদূর সম্ভব সমসত্ম লোকের সঙ্গে শানত্মিতে বাস কর৷ ১৯. প্রিয় ভাইয়েরা, তোমরা নিজেরা প্রতিশোধ নিয়ো না, বরং আলস্নাহকেই শাসত্মি দিতে দাও৷ পাক-কিতাবে মাবুদ বলেন, অন্যায়ের শাসত্মি দেবার অধিকার কেবল আমারই আছে; যারা যা পাওনা আমি তাকে তা-ই দেব৷ ২০. কিতাবের কথামত বরং তোমরা শত্রম্নর যদি খিদে পায় তাকে খেতে দাও; যদি তার পিপাসা পায় তাকে পানি দাও৷ এই রকম করলে তুমি তার মাথায় জ্বলনত্ম কয়লা গাদা করে রাখবে৷ ২১. খারাপীর কাছে হেরে যেয়ো না, বরং ভাল দিয়ে খারাপীকে জয় কর৷
'চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত' এ আজ্ঞাটি জয় করেছেন মসিহ৷ এ হুকুমের পরিপূর্ণতা তিনি দিয়েছেন (হিজরত ২১:২৪; লেবীয় ২৪:১৯-২০; মথি ৫:৩৮-৪২), তিনি আমাদের এক নতুন আজ্ঞা দিয়েছেন যা হলো মহব্বত, সাহায্য ও আশির্বাদ করা সকল শত্রম্নদের পর্যনত্ম৷ এ আজ্ঞার মাধ্যমে পুরাতন ব্যবস্থার আইন সংক্রানত্ম সকল ধারণা বাতিল করে দিয়েছেন, আর এ কলুষিত বিশ্বে আমাদের পরিচালনা করেছেন বেহেশতি নিয়ম-কানুনের তথা ব্যবস্থার পথে৷
হযরত পৌল প্রচেষ্টা নিয়েছেন, পাকরূহের দ্বারা পরিচালিত হয়ে মসিহের আজ্ঞানুরম্নপ জীবন-যাপন করার জন্য, আর তদানুযায়ী জামাতকে শিক্ষাদানের জন্য৷ তাই, যদি কেউ তোমাকে প্রতারিত করে, অথবা তোমাদের বিরম্নদ্ধে কুত্সা রটনা করে, তবে তোমার অধিকার ও মর্যাদা আদায় করতে গিয়ে ঘৃণা বা পাসবিক শক্তি প্রয়োগ করো না, পরিবর্তে বিষয়টি প্রভুর হাতে ছেড়ে দাও যিনি তাড়িতদের পক্ষে ন্যায্য বিচার করেন৷ সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দাও আর তা করতে গিয়ে কঠোর বা রূঢ় হইয়ো না৷ শানত্মি রক্ষা করার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ দাও৷ তোমার নিজের সময় ও অধিকারের কোরবানি দাও৷ প্রার্থনা করো প্রভু যেন তাঁর শানত্মি তোমার ওপরে ও তোমার শত্রম্নদের ওপরে বর্ষণ করেন৷ প্রেমের প্রভু সর্বপ্রকার কঠিন হৃদয় কোমল করতে সক্ষম আর তাদের মধ্যে তোমার প্রতি সম্মান সৃষ্টি করতে পারেন৷
প্রতিহিংসা গ্রহন মসিহিয়াতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, কেননা খোদা একাই যোগ্য, যিনি তাঁর পবিত্রতার মাধ্যমে সর্বপ্রকার পরিস্থিতি বুঝতে সক্ষম, আর প্রজ্ঞার ও ন্যায়পরায়ণতার দ্বারা তিনি বিচার করেন (দ্বিতীয় বিবরণী ৩২:৩৫)
ফলত মসিহ আমাদের নিষেধ করেছেন অন্যকে বিচার করার বিষয়ে, কারণ হলো আমাদের প্রজ্ঞা অতীব সীমিত ও উগ্র৷ তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, 'তোমরা অন্যের দোষ ধরে বেড়িয়ো না কারণ যেভাবে তোমরা অন্যের দোষ ধর সেভাবে তোমাদেরও দোষ ধরা হবে, আর যেভাবে তোমরা মেপে দাও সেভাবে তোমাদের জন্যও মাপা হবে৷ তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটা আছে কেবল তা-ই দেখছ, অথচ তোমার নিজের চোখের মধ্যে যে কড়িকাঠ আছে তা লক্ষ্য করছ না কেন? যখন তোমার নিজের চোখেই কড়িকাঠ রয়েছে তখন কি করে তোমার ভাইকে এই কথা বলছ, এস তোমার চোখ থেকে কুটাটা বের করে দিই? ভন্ড! প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে কড়িকাঠটা বের করে ফেল, তাতে তোমার ভাইয়ের চোখ থেকে কুটাটা বের করবার জন্য স্পষ্ট দেখতে পাবে' (মথি ৭:১-৫)৷
প্রভুর এ বক্তব্য আমাদের অহমিকা, আত্মপ্রঞ্চনা ও অতি উচ্চাসা থেকে ভূতলে নামিয়ে আনে, আর দেখিয়ে দেয়, কারোরই সত্যিকারের অধিকার বলতে কিছুই নেই৷ আমরা সকলে দোষি, মন্দের সাথে সংযুক্ত, অপরাধিদের বিচার করার জন্য দ্রম্নত পদক্ষেপ নিয়ে থাকি, আর নিজেদের মনে করি অনুতাপের ও সংশোধনের বাইরে৷ শত্রম্নকে মহব্বতের প্রশ্নে পৌল বাসত্মবতার সাথে মিল রেখে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তিনি বলেছেন তোমার শত্রম্ন যখন খাবার কেনার অর্থ যোগান দিতে পারছে না তখন তাকে সাহায্য করো, তাকে অভুক্ত থাকতে দিওনা৷ যদি তার গৃহে পানীয় জল না থাকে, আর তোমার ঘরে পান করার জল মওজুদ রয়েছে, তবে তা থেকে জল পাঠিয়ে দাও বিনামূল্যে, যাতে তাকে তৃষ্ণাকাতর থাকতে না হয়৷ আপনার শত্রম্নর প্রয়োজনের মুহুর্তে সরবরাহ করার দায়িত্ব আপনার রয়েছে, যেমন প্রাজ্ঞ বাদশাহ সলোমন বলেছেন তোমার শত্রম্ন যদি ক্ষুধার্ত হয়, তবে তাকে ভোজনের জন্য রম্নটি দাও; যদি সে তৃষ্ণার্ত হয় তবে পান করার জন্য জল দাও, তাহলে প্রজ্জলিত কয়লা তার মাথার ওপরে জড়ো করে রাখা হবে, আর প্রভু তোমাকে পুরষ্কৃত করবেন (মেসাল ২৫:২১-২২)৷ এ প্রজ্ঞা কোনো নতুন দর্শন নয়৷ তিন হাজার বত্সর পূর্বে এ শিক্ষা এসেছে৷ সমস্যা জ্ঞানের নয় অথবা জ্ঞান না থাকার নয়, সমস্যা হলো অহংকারি মনোভাব কঠিন হৃদয় যা বিনম্র হতে জানে না বা পারে না, পারে না ক্ষমা করতে অথবা ক্ষমা চাইতে, প্রভুর কাছে তাদের কৃত অপরাধের ক্ষমা চেয়ে নিতে৷
পৌল তার বক্তব্যসমূহের চমত্কার মাধ্যমে সারসংক্ষেপ করেছেন, 'মন্দের দ্বারা পরাভুত হইও না বরং ভালো কাজের দ্বারা মন্দকে জয় করো' (রোমীয় ১২:২১)৷ এ বাক্যের মাধ্যমে প্রেরিত আপনাকে বলতে চান, মন্দ স্বভাব আপনার হৃদয়ের গভীরে অনুপ্রবেশ করতে দিবেন না, নিজের মধ্যে মন্দ পুষে রাখবেন না, বরং শুপ্ত মন্দ চিনত্মা মসিহের ভালো স্বভাব দিয়ে জয় করম্নন, কেননা তাঁর প্রেম, চিনত্মা ও জ্ঞানের চেয়ে বহুগুনে বেশি৷ এ নীতিই হলো সুসমাচারের রহস্য৷ মসিহ জগতের পাপ তুলে নিয়েছেন, জয় করেছেন তাঁর পবিত্র মহব্বতে ও তাঁর কাফফারা সাধনকারী মৃতু্যর মাধ্যমে৷ মসিহ হলেন বিজয়ী বিজেতা৷ তিনি চাচ্ছেন আপনার পাপ জয় করতে, আপনার মনকে শক্ত করতে, যেন রম্নহানি শক্তিতে পুষ্ট করতে, যাতে আপনি আপনার প্রার্থনা ও ধৈর্যশীল প্রেমের দ্বারা অন্যের পাপ বহন করে বিজয়ী হতে পারেন৷
প্রার্থনা: প্রভু মসিহ, আমরা তোমার আরাধনা করি, তুমি খোদার মহব্বতের মূর্ত প্রকাশ৷ তুমি জোর করে তোমার প্রেম আমাদের ওপর চাপিয়ে দাও নি অথবা তোমার পাওনা অধিকার প্রতিশোধ বা সদর্পে আদায় করতে চাওনি, কিন্তু তুমি তোমার শত্রম্নদের ক্ষমা করে দিয়েছো৷ তুমি বলেছো, 'পিতা, এদের ক্ষমা করো, কারণ এরা যে কি করছে তা তারা জানে না' যেন তোমার মনোবল ও আত্মায় আমরা পরিপুষ্ট হতে পারি৷ আমরা যেন আমাদের শত্রম্নদের ক্ষমা করতে পারি, তাদের সাহায্য করো, আর্শিবাদ দান করো আর তাদের সহ্য করো যেমন করে আসছো ইতোপূর্বে৷
প্রশ্ন: