Previous Lesson -- Next Lesson
গ) আমরা নাজাত পেয়েছি খোদার রহমতে, শরীয়ত পালনের দ্বারা নয় (রোমীয় ৪:১৩-১৮)
রোমীয় ৪:১৩-১৮
১৩ ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরদের কাছে আল্লাহ ওয়াদা করেছিলেন যে, এই দুনিয়া ইব্রাহিমেরই হবে৷ শরীয়ত পালন করবার ফলে এই ওয়াদা তাঁর কাছে করা হয় নি, কিন্তু তাঁর ঈমানের মধ্য দিয়েই তাঁকে ধার্মিক বলে গ্রহণ করা হয়েছিল আর সেজন্যই সেই ওয়াদা করা হয়েছিল৷ ১৪ শরীয়ত পালন করেই যদি কেউ দুনিয়ার অধিকার পেয়ে যায় তবে তো ঈমান অকেজো হয়ে পড়ে আর আল্লাহর সেই ওয়াদারও কোনো মূল্য থাকে না, ১৫ কারণ শরীয়ত আল্লাহর গজবকে ডেকে আনে৷ আর সত্যি বলতে কি, যেখানে শরীয়ত নেই সেখানে শরীয়ত অমান্য করবার প্রশ্নও নেই৷ ১৬ সেজন্য মানুষের ঈমানের মধ্য দিয়ে এই ওয়াদা পূর্ণ করা হয়, যেন এটা আল্লাহর রহমতের দান হতে পারে৷ আর তাই ইব্রাহিমের বংশধরদের সকলের জন্যই এই ওয়াদা নিশ্চয়ই পূর্ণ হবে৷ শরীয়তের অধীনে লোকরেদ জন্যই যে কেবল এই ওয়াদা পূর্ণ হবে তা নয়, যে সব লোক ইব্রাহিমের মত একই ঈমানে ঈমানদার তাদের জন্যও নিশ্চয়ই এই ওয়াদা পূর্ণ হবে৷ ১৭ পাক-কিতাবে যেমন লেখা আছে, 'আমি তোমাকে অনেকগুলো জাতির আদিপিতা করে রেখেছি,' সেই অনুসারে আল্লাহর চোখে ইব্রাহিম আমাদের সকলেরই পিতা৷ যিনি মৃতকে জীবন দেন এবং যা নেই তা আছে বলে ঘোষণা করেন সেই আল্লাহর ওপর ইব্রাহিম ঈমান এনেছিলেন৷ ১৮ যখন পিতা হবার কোনো আশাই ছিল না তখনও ইব্রাহিম আল্লাহর ওপর আশা রেখে ঈমান এনেছিলেন৷ আল্লাহ তাঁকে বলেছিলেন, 'তোমার বংশধরেরা আসমানের তারার মত অসংখ্য হবে৷' আর সেই কথামতই ইব্রাহিম অনেক জাতির পিতা হয়েছিলেন৷
খত্নার অসাড়তার বিরুদ্ধে কথা বলার পরে পৌল ইহুদিদের কাল্পনিক ধার্মিকতার ওপর নির্ভরতা বাতুল বলে ঘোষণা দিলেন যা ছিল শরীয়ত পালনের ওপর নির্ভরতা৷
প্রান্তরে অবস্থানকালে ইহুদি জাতির খোদা দু'টি প্রস্তর ফলকের উপর তাঁর দশ আজ্ঞা জারি করেছিলেন, লোকদের ধারণা ছিল, খোদা উক্ত প্রস্তর ফলকের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করেছেন এবং গোটা বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করে চলছেন৷ তাদের প্রত্যাশা ছিল, যতদিন তারা শরীয়ত ও তার নিয়মাবলি পালন করে চলবে ততদিন খোদা তাদের সাথে অবস্থান করবেন৷ যাহোক, তারা তাদের সংঘটিও মারাত্মক পাপকর্মগুলো উপলব্ধি করতে পারে নি, পারে নি অনুধাবন অনুভব করতে তাদের প্রতি খোদার সীমাহিন প্রেম, যা সকলের প্রতি সমভাবে রয়েছে কার্যকর৷ তারা আসলে শরীয়তের গোলামে পরিণত হয়ে পড়েছিল৷ তাদের হৃদয় প্রস্তর ফলকের দিকে ধাবিত হয়ে পড়েছিল, যার কারণে অন্ধভাবে তাদের আষ্ফালন করতে দেখা গেছে৷ তাদের ওপর খোদার ক্রোধ তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে এবং মসিহ যে তাদের মধ্যে বসবাস করছিলেন তাও বুঝতে অক্ষম হয়ে পড়েছিল৷
দুঃখ হয় তেমন জামাত বা জনগোষ্টির জন্য যারা প্রথাশিদ্ধ নিয়মকানুন বিধান শেষ বিচার আচার পালনের জন্য কতোটা অধ্যাবসায়ী অথচ সহজ সরলভাবে জীবন্ত মসিহের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে রয়েছে তাদের অনিহা৷ যিনি ইমানে দুর্বল তিনি প্রেমহীন শরীয়ত পালনকারীর চেয়ে উত্তম৷ রহস্যের বিষয় হলো, শরীয়ত ক্রোধ উত্পাদন করে, অপরাধে উত্সাহিত করে, আর বয়ে আনে শাস্তি৷ এ কারণে বিজ্ঞ ওস্তাদ অল্প সংখ্যক শর্ত আরোপ করে আর উত্সাহজনক বিষয় তাদের পরিবারে ও বিদ্যাপীঠে, কেননা মসিহ আমাদের স্নাত করেছেন প্রেম, বিশ্বাস, ধৈর্য, ক্ষমা করার জন্য, আর যাতে শরীয়তের ক্রীতদাসে পরিণত হয়ে না পড়ি আর চুলচেড়া হিসেব নিকেশ ও কঠিন শাস্তির ভয়ে যেন ক্লান্ত হয়ে না পড়ি৷
শরীয়ত পন্থীদের প্রত্যয়ের সাথে তিনি পুনরায় বললেন, ইব্রাহীম নবী শরীয়ত ছাড়ই কেবল বিশ্বাসের কারণেই নাজাত পেয়েছে, কেননা তখনও শরীয়ত প্রদত্ত হয় নি, শরীয়ত প্রদত্ত হয়েছে মুসা নবীর মাধ্যমে যা ইব্রাহীম নবীর বহু বত্সর আনুমানিক ৭০০ বত্সর পরের কথা৷ শরীয়ত পরবতর্ী সময় দত্ত হয়েছে ইমানদারদের পরিচালনা দানের জন্য৷ তাছাড়া তাদের ঐতিহ্যগত অহমিকা ভেঙ্গে দেবারও জন্য৷ খোদার করুনায় বিশ্বাস স্থাপন করাই হলো প্রকৃত রুহানি শক্তি, আর এ শক্তি রুহানি জীবন গঠন দেয়, বিশ্বাসীদের উত্সাহ দেয় যেন তারা খোদার সেবা চালিয়ে যেতে পারে, বিশ্বাসের বলে ভালো কাজের প্রেরণা লাভ হয় আর শরীয়ত বেধে রাখে, সর্বদা দোষী সাব্যস্থ করে তোলে, শাস্তি প্রদান ও হত্যা করা হলো শরীয়তের কাজ৷
ইব্রাহীম তাঁর নিজের আচরণের দিকে দৃকপাত করেন নি, আর শরীয়তের দিকেও নজর দেন নি কিন্তু কেবল খোদার প্রতিজ্ঞার ওপর নজর রেখেছেন, ও প্রভুকে বিশ্বাস করেছেন৷ সকল বিশ্বাসীকুলের কাছেই তিনি রুহানি পিতার দৃষ্টান্ত হতে পেরেছেন৷ তার কাছে খোদার যে প্রতিজ্ঞা তা সকল বিশ্বাসীদের জন্য আদর্শ স্থানীয় আর তার মাধ্যমে সর্ব জাতি পায় অশেষ দোয়া, যদিও তখনও তার কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ করে নি, তবুও অগণিত জাতি ও লোকের পিতা হতে পেরেছিলেন কেবল তার বিশ্বাসের ফলে, পৌল তাই বলেছেন, 'বিশ্বের উত্তরাধিকারী'৷
এ পদ্ধতিতে পাকরূহ ইব্রাহীম, যিনি একজন সাধারণ যাযাবর, তার মাধ্যমে আর্শিবাদের কাজ শুরু করেছিলেন অর্থাত্ মসিহ নিজে তার মধ্যে উপস্থিত ছিলেন৷ সকলকে তার কাছে আকর্ষণ করেছিলেন যারাই বিশ্বাসের বলে নাজাত পেয়েছিলেন৷
সম্ভবতঃ নবীদের যুগে মহান বিশ্বাসের দিক দিয়ে ইব্রাহীম নবী সমসাময়িক ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন৷ খোদা ওয়াদা করেছিলেন, তাঁর বংশধরের মধ্য দিয়ে বিশ্বের তাবত্ লোকদের আশির্বাদ করবেন, তার বংশের মধ্য দিয়ে কথাটার অর্থ হলো মসিহের মধ্য দিয়ে৷ ইব্রানী শব্দ 'বীজ' এ অর্থ হলো একটি ব্যক্তি, পৌল নিশ্চয়তা দিয়েছেন, মসিহের বিষয়ে এক বিশেষ বর্ণনা রয়েছে অর্থাত্ ইব্রাহীমের প্রতি আর্শিবাদের প্রতিজ্ঞা হলো মসিহকে তার বংশে প্রেরণের দিকটি৷ তাই যারাই মসিহের মাধ্যমে ধার্মিক বলে বিবেচিত হয়, তারাই ইব্রাহীমের প্রতি দত্ত আশির্বাদের ভাগিদার হয়৷ বেহেশতের অধিকারী, সকল আশির্বাদের ভাগীদার৷ মসিহের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের ফলে সেই কাঙ্খিত জীবন, শক্তি, ঐশি রহমতের ফল্গুধারার মালিক৷
মসিহের কাছে ছুটে আসুন যেন আপনি মৃতু্যপথ থেকে মুক্তি পেতে পারেন৷ আপনি যদি তাঁর বাক্যের আলোতে জীবন যাপন করেন, তবে পাকরূহ আপনার মধ্যে এবং আপনার পরিবেশের মধ্যেও একটি নতুন জীবনের আবহ সৃষ্টি করবেন৷ আপনার জামাতের খোদার প্রতিজ্ঞার ওপর বিশ্বাস যদি আপনার জামাতে এবং আপনার সমাজে থেকে থাকে, তবে এ বিশ্বাস পাপের কবলে মৃতু্য থেকে বাঁচাবে এবং এমন কিছু নতুন বিষয় সৃষ্টি করবে যা ইতোপূর্বে কখনোই দেখা যায় নি, কেননা আপনার বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে খোদা তা সৃষ্টি করে থাকেন, আর আপনার বিশ্বাসের আর্তনাদ তিনি শুনতে পান৷ তাঁর কালামে আপনার অনড় আনুগত্য আপনাকে তথা বিশ্বটাকে সম্পূর্ণ বদলে দেবে৷
প্রার্থনা: হে বেহেশতি পিতা, আমাদের মন সংকীর্ণ, কানুন প্রিয়, বিচারের স্বভাব ও অন্যকে দোষী করার মনোভাবে ভরা৷ আমাদের মধ্যে সম্পূর্ণ বিশ্বাসের ও নির্ভরতার ক্ষেত্র তৈরি করো, নিরবচ্ছিন্ন বিশ্বাস সৃষ্টি করো আমাদের হৃদয়ে, আর তোমার পাকরূহকে প্রেম, সাহস ও নবজাগরণের দ্বারা স্নাতশুভ্র করো যেন পাপে মৃতকল্প লোকজন হয়ে ওঠতে পারে পুণর্জাত, আর তোমার প্রশংসায় দেশ ও জাতি থাকে মুখরিত৷ তোমার প্রতি বিশ্বাস আমাদের হৃদয়ে সৃষ্টি করো, যেন আমাদের মধ্য দিয়ে তোমার আশির্বাদ প্রবাহিত হতে পারে ও জগত যেন নবসৃষ্টি রূপে শোভা লাভ করে৷
প্রশ্ন: