Previous Lesson -- Next Lesson
৩. ইস্রায়েলের অধিকাংশ লোকজনও যদি খোদার বিরুদ্ধে চলে যায় তবুও খোদা থাকবেন ধার্মিক (রোমীয় ৯:৬-২৯)
মসিহের সেবার ক্ষেত্রে পৌল ছিলেন একজন আনন্দিত সাহাবী, কিন্তু একই সময় তিনি ডুবে থাকতেন গভীর শোকে ও ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপে৷ তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, শতসহস্র অবিশ্বাসি লোকজন পুনর্জাত হয়ে খোদার রাজ্যে প্রবেশ লাভ করছে, অথচ হাজার হাজার মনোনীত ব্যক্তিবর্গ মসিহ এবং তার রাজ্য ঘৃণা করে চলছে, তাঁর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তার কথা শুনতে ও তাঁর পথে চলতে প্রকাশ করছে অনিহা৷
ক) খোদার প্রতিজ্ঞা কেবল ইব্রাহীমের ঔরষজাত সন্তানদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবার নয় (রোমীয় ৯:৬-১৩)
রোমীয় ৯:৬-১৩
৬. আল্লাহর কালাম যে মিথ্যা হয়ে গেছে তা নয়, কারণ যারা ইসরাইল জাতির মধ্যে জন্মেছে তারা সবাই সত্যিকারের ইসরাইল নয়৷ ৭. ইব্রাহিমের বংশের বলেই যে তারা তাঁর সত্যিকারের সন্তান তা নয়, বরং পাক-কিতাবের কথামত, 'ইসহাকের বংশকেই তোমার বংশ বলে ধরা হবে'৷ ৮. এর অর্থ হল, ইসরাইল জাতির মধ্যে জন্ম হয়েছে বলেই কেউ যে আল্লাহর সন্তান তা নয়, কিন্তু আল্লাহর ওয়াদা মতো যাদের জন্ম হয়েছে তাদেরই ইব্রাহিমের বংশের বলে ধরা হবে৷ ৯. সেই ওয়াদা এই ঠিক সময়ে আমি ফিরে আসব এবং সারার একটি ছেলে হবে৷ ১০-১২ কেবল তা-ই নয়, রেবেকার যমজ ছেলেরা একই পুরুষের সন্তান ছিল৷ সেই পুরুষটি ছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষ ইসহাক৷ সেই ছেলে দু'টি জন্মের আগে যখন তারা ভালো বা খারাপ কিছুই করে নি আল্লাহ তখনই রেবেকাকে বলেছিলেন, বড়টি ছোটটির গোলাম হবে৷ এতে আল্লাহ দেখিয়েছিলেন যে, নিজের উদ্দেশ্য পূর্ণ করবার জন্য তিনিই বেছে নেন; কোনো কাজের ফলে তিনি তা করেন না বরং তাঁর ইচ্ছামতোই তিনি মানুষকে ডাকেন৷ ১৩. আর তাই পাক-কিতাবে লেখা আছে, ইয়াকুবকে আমি মহব্বত করেছি, কিন্তু ইসকে অগ্রাহ্য করেছি৷
রোমের ইহুদি ও মসিহি উভয় দলের কাছেই ছিলো অজানা বিষয় আইনজ্ঞ পৌল এ সত্যটিকে বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন তাদের কাছে৷ তিনি তাদের কাছে লিখলেন, কেবলমাত্র খোদার কালামই হলো সত্য আর এ কালামের ক্ষমতা আছে আজব নিয়ম-কানুনের বিষয় বিশ্লেষণ করার৷ আর এ কালামের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে সকল রহস্যের জবাব৷ এ জবাবের রয়েছে দু'টি দিক:
প্রথমতঃ ইব্রাহীমের ঔরষজাত সকল সন্তানই কিন্তু প্রতিজ্ঞাত সন্তান নয়৷ খোদা ইসমাইলকে মনোনীত করেন নি মসিহের পিতৃ পুরুষ হিসেবে৷ ইসমাইল এবং তার বংশধর ধর্মীয় গন্ডির বাইরে পড়ে রয়েছে ও ইয়াকুবের বংশের মনোনয়নের বাইরেও রয়েছে তারা৷ এ ক্রমধারার বিষয়ে আমরা জানতে পারি, মানুষের ঔষরজাত সন্তান তার রুহানি সন্তানরূপে পরিগণিত হবার নয় এবং তা পরবতর্ী ধারা ধরে রাখে না৷ মসিহি পরিবারে যতলোকের জন্ম হয় জন্মের সাথে সাথে তারা যে সত্যিকারের মসিহি হয়ে ওঠে তা ভাবার কোনো কারণ নেই, তাদের আবশ্যক ব্যক্তিগতভাবে খোদার কাছে ফিরে আসা, খোদার উপর বিশ্বাস করা৷ খোদার সন্তান আছে কিন্তু নাতি-পুতি নেই৷
এ সত্য আমাদের কাছে ব্যাখ্যা দেয় যে, সকল মনোনীত ইহুদি খোদার সন্তান নয়, কেবল যারা স্বেচ্ছায় হৃদয় খুলে দেয় মসিহের সুসমচারের প্রতি তারাই হলো খোদার প্রকৃত সন্তান৷ ইব্রাহিম নবীকে খোদার পোষ্য হিসেবে যে অধিকার দিয়েছেন সেই একই অধিকার তিনি মসিহের অনুসারীদের দান করেছেন, তবে তা ফলপ্রসু হয় ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তির ওপর৷
দ্বিতীয়তঃ আমরা কিতাবুল মোকাদ্দসে দেখতে পাই, ইসহাকের স্ত্রী রেবেকার জমজ সন্তান প্রসব করার পূর্বে খোদা তাকে বললেন প্রথম সন্তানটি দ্বিতীয় সন্তানের দাস হবে৷ অর্থাত্ প্রথম সন্তানটি দ্বিতীয় সন্তানের সেবক হবে (পয়দায়েশ ২৫:২৩) উভয়ই একই পিতার সন্তান ছিলেন৷ কিন্তু খোদা পূর্ব থেকেই তাদের জানতেন যে তাদের কোষ ও জীন ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বৃদ্ধি পাবে৷
যাহোক, খোদা ছোট্ট সন্তান ইয়াকুবকে বাছাই করলেন আর বড়টি অর্থাত্ এসৌকে বাদ দিলেন যদিও ইয়াকুব চারিত্রিক দিক দিয়ে এসৌর চেয়ে উত্তম ছিলেন না, তবে বিশ্বাস করার মনোভাবের দিক দিয়ে এসৌর চেয়ে উত্তম ছিলেন, আর তিনি আন্তরিকভাবে হয়েছিলেন অনুতপ্ত৷ এসৌর বিষয়ে তেমন চারিত্রিক বৈশিষ্টের কথা কিতাবুল মোকাদ্দসে দেখা যায় না৷ এ ঘটনা আমাদের কাছে বিশদভাবে ব্যাখ্যা প্রদান করে, মানুষের মনোনয়ন হলো তার পূর্ব থেকে স্থির করা বিষয় নির্ভর করে খোদার সর্বদশর্ীতার সাথে তার নিজের ইচ্ছার সংমিশ্রণের ফল৷
কেউ খোদাকে দোষারোপ করতে পারে না এ বলে যে, তিনি ব্যক্তিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, কেননা আমাদের রহস্য আমরা জানিনা, অথবা আমাদের দেহে কোন উত্তরাধিকার রয়েছে তাও জানিনা৷ খোদা তাঁর সিদ্ধান্তে হলেন পবিত্র, ন্যায়পরায়ন ও নির্দোষ৷
কতিপয় ধর্মবেত্তা প্রকাশ করেন খোদার মনোনয়ন মানুষের সত্তার অথবা কর্মের ওপর সম্পর্কযুক্ত নয়, কিন্তু তা কেবল নির্মাতার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল, আর মানুষ খোদার অভিপ্রায় ও পরিকল্পনা বুঝতে পারে না৷ তবে সকলেই যে এ বিষয়ে ঐক্যমত্যে থাকবেন তা নয়, কেননা আমাদের খোদা হলেন পিতা যিনি কেবল পবিত্রই নন, তিনি প্রেম ও অনুকম্পার আধারও বটে৷
মসিহের সেবামূলক কাজের সময়, তিনি সিদ্ধান্তস্থানীয় বক্তব্যে বলেছেন, 'আমার মেষগুলো আমার কথা শোনে, আর আমি তাদের জানি, আর তারা আমাকে অনুসরণ করে৷ আর আমি তাদের অনন্ত জীবন দান করি' (ইউহোন্না ১০:২৭-২৮)৷ সকলেই যে তাঁর কথা শুনতে পায় তা কিন্তু নয়৷ আর যারা শুনতে পায় তাদের সকলেই যে আহবানে রাজি থাকে তাও বলা যাবে না, অথবা তাঁর আজ্ঞানুযায়ী যে কাজ করে তাও ঠিক নয়৷ আমরা মাত্র একটি শ্রেণী খুঁজে পাই, একটি জাতি অথবা কেবল একটি পরিবার খুঁজে পাওয়া ভার যারা সুসমাচার শ্রবণ করে কিন্তু অর্থ বোঝে না, আর অন্যরা সুসমাচারে পরিপূর্ণতা লাভ করে ও শান্তিতে ভরে ওঠে৷
প্রার্থনা: হে বেহেশতি পিতা, আমরা তোমাকে ধন্যবাদ দেই কেননা তুমি ইসহাক ও ইয়াকুবকে বেঁছে নিয়েছো, আর তাদের সম্মান দিয়েছো মসিহের পূর্বপুরুষ হিসেবে, যদিও আসলে তারা কোনো ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন না৷ আমাদের বিশ্বাস বাড়িয়ে দাও, যেন তোমার নামে আমরা সমস্যাবলি জয় করতে পারি, আর আমাদের ভিতরগত সকল দোষের ওপর লাভ করতে পারি বিজয়, আর আমাদের পরিচালনা করো বিনম্রতার দিকে, আত্ম-অস্বীকৃতির দিকে আর আমরা যেন নিজেদের সম্মানবোধে অন্যদের তুচছজ্ঞান না করি৷
প্রশ্ন:
- ৫৭. ইসহাকের বাছাই করণের তাত্পর্য এবং তার পুত্র ইয়াকুবের মনোনয়নের অর্থ কি বুঝা যায়?৫৮. খোদার মনোনয়নের রহস্য কি?