Previous Lesson -- Next Lesson
৫. পাপের পথে মসিহকে ব্যতিত মানুষ সর্বদা ব্যর্থ হতে বাধ্য (রোমীয় ৭:১৪-২৫)
রোমীয় ৭:১৪-২৫
১৪. আমরা জানি শরীয়ত রুহানি, কিন্তু আমি গুনাহ-স্বভাবের অধীন বলে গুনাহের গোলাম হয়েছি৷ ১৫. আমি যে কি করি তা আমি নিজেই বুঝি না, কারণ আমি যা করতে চাই তা করি না বরং যা ঘৃণা করি তা-ই করি৷ ১৬. যা চাই না তা-ই যখন আমি করি তখন আমি এটাই স্বীকার করি যে, শরীয়ত ভালো৷ ১৭. তাহলে দেখা যায়, আমি নিজেই এই সব করছি না, কিন্তু আমার মধ্যে যে গুনাহ বাস করে সে-ই আমাকে দিয়ে তা করাচ্ছে৷ ১৮. আমি জানি আমার মধ্যে, অর্থাত্ আমার গুনাহ-স্বভাবের মধ্যে ভালো বলে কিছু নেই৷ যা সত্যিই ভালো তা করবার আমার ইচ্ছা আছে কিন্তু শক্তি নেই৷ ১৯. যে সব ভালো কাজ আমি করতে চাই তা করি না, বরং তার বদলে যা চাই না সেই সব খারাপ কাজই আমি করতে থাকি৷ ২০. যা করতে চাই না তা-ই যখন আমি করি তখন আসলে আমি নিজে তা করি না, বরং আমার মধ্যে যে গুনাহ বাস করে সে-ই আমাকে দিয়ে তা করাচ্ছে৷ ২১. তাহলে আমি নিজের মধ্যে একটা নিয়মকে কাজ করতে দেখতে পাচ্ছি৷ সেই নিয়মটা হলে এই যা ভালো তা যখন আমি করতে চাই তখন খারাপী সব সময় আমার মধ্যে উপস্থিত থাকে৷ ২২. আমার দিল আল্লাহর শরীয়তে আনন্দিত হয়; ২৩. তবুও আমি দেখতে পাচ্ছি যে, একটা অন্য রকমের নিয়ম আমার শরীরের মধ্যে কাজ করছে যা ভালো আমার মন তা ভলো বলেই গ্রহণ করে, কিন্তু এই অন্য নিয়মটি আমার মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং আমাকে বন্দি করে রাখছে৷ আমাদের মধ্যে যে গুনাহ আছে এই নিয়মটা তারই৷ ২৪. কি হতভাগা মানুষ আমি! আমার মধ্যে এই যে গুনাহ-স্বভাব যা মৃতু্য আনে, তার হাত থেকে কে আমাকে রক্ষা করবে? ২৫. আমাদের হযরত ঈসা মসিহের মধ্য দিয়ে আমি আল্লাহকে শুকরিয়া জানাই যে, তিনি আমাকে রক্ষা করেছেন৷ তাহলে দেখা যায় যে, মনের দিক থেকে আমি আল্লাহর শরীয়তের গোলাম, কিন্তু গুনাহ-স্বভাবের দিক থেকে আমি গুনাহের নিয়মের গোলাম৷
পৌল প্রকাশ করেছেন মসিহের সাথে যারা অদ্যাবধি রুহানিভাবে যুক্ত হয় নি তেমন প্রাণীক মানুষজন শরীয়তের বিষয় সদা-সর্বদা থাকে ভীত সন্ত্রস্থ৷ এ পাঠ্যাংশ তিনি পাঠ করেন নাই, যা হলো আত্ম-উপলব্ধির জন্য অতি উত্তম প্রেরণা, দার্শনিক গবেষণার ক্ষেত্রে অথবা মতবাদের ক্ষেত্রে, কিন্তু তিনি প্রাণীক মানুষকে প্রকাশ্যে তুলে ধরেছেন, ব্যক্তিগত স্বীকৃতির দ্বারা৷ পাকরূহ তার সাহাবি সুলভ বিবেকের ওপর প্রভাব ফেলেছেন, যার ফলে তিনি বুঝতে সক্ষম হয়েছেন, খোদার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অতি ক্ষুদ্র ব্যবধানও তার জীবনে মারাত্মক কুফল বয়ে আনতে পারে৷
পৌল বলেছেন, যতোটা আমার নিজের কর্মক্ষমতার দিকে দৃষ্টি করি তাতে প্রমাণ হয় আমি জাগতিক মানুষ৷ প্রত্যেকটি ব্যক্তি জাগতিক, কেননা তাকে যে মহিমা খোদা দিয়েছিলেন সে তা ইতোমধ্যে হারিয়ে ফেলেছে৷ সকলেই পাপ করেছে এবং খোদার গৌরব নষ্ট করে বসেছে৷ সকলেই একসাথে বিনষ্ট আর শরীয়তের প্রভাব তাদের অহমিকা ও স্বার্থপরতার কারণে তাদের বিবেকের উপর যাতনা দিচ্ছে৷ সাহাবি নিজেও আশা হারিয়ে বসেছেন, খোদার কালামের ওপর, কারণ তারা বর্ণনা শুনতে পেয়েছেন: 'যেমন আমি পবিত্র তদ্রুপ তোমাকেও পবিত্র হতে হবে', অথবা মসিহের আজ্ঞার দ্বারা তাদের অনুতপ্ত হতে হবে৷ 'তোমাকে খাঁটি হতে হবে, যেমন তোমার বেহেশতি পিতা খাঁটি৷' মনস্তাতি্বকভাবে পৌল যন্ত্রণা ক্লীষ্ট অবস্থায় আক্ষেপ করে বলছিলেন, প্রাণীক মানুষ খোদার শর্ত নিজের শক্তি, বুদ্ধি ও মেধার দ্বারা পরিপূর্ণভাবে পালন করার প্রশ্নই জাগে না৷ মানুষের অক্ষমতা দুর্বলতা স্বীকার করা কতইনা লজ্জাজনক!
তা সত্ত্বেও, ভালো কিছু করার জন্য প্রত্যেক মানুষের মনে প্রবল একটি আগ্রহ সদা বাস করে, সে চায় পূতপবিত্র জীবন যাপন করতে৷ যতই ক্ষুদে বা নিম্মস্তরের লোক হোক না কেন, তার মধ্যেও এমন সুন্দর আগ্রহ কাজ করে৷ তাই, আমরা কেবল পাপ ও এর শক্তি বিষয়েই কথা বলবো না, অথবা আমরা অন্য লোকের কাছে নিজেদের অহমিকা প্রকাশ করবো না, কিন্তু আমাদের স্বীকার করতে হবে, প্রত্যেকের হৃদয়ে খোদার শরীয়ত অবস্থান করে, কেননা, কোনো মানুষই এমন খুঁজে পাওয়া যাবে না যে কিনা ভালো হতে না চায়৷ দুঃখের বিষয় হলো, যিনি এ আহ্বানে সাড়া দিতে চান তিনি বারবার ব্যর্থ হয়ে পড়েন, আর কাজে কর্মে ভালো কাজের বিরুদ্ধে চলেন৷ মানুষের বিষয় এটাই হলো রহস্য, তিনি নিজেই নিজের শত্রু৷ সে নিজের শুভ ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা করে, আর তার বিবেকের কন্ঠনালি চেপে ধরে৷ আমাদের মধ্যে যে পাপ আছে তা আমাদের মনের শক্তির চেয়ে বেশি শক্তিধর৷ খোদার শরীয়ত প্রত্যেকের ওপর কর্তৃত্ব করে তার ভালো ইচ্ছা সত্ত্বেও৷
কেন আমরা পবিত্র জীবন যাপন করতে পারি না, আর খোদার প্রেমে অবিচল থাকতে পারি না? কেননা যাদের খোদার সাথে সংযোগ থাকে না তারা থাকে পাপের অধীনে৷ যে কেউ পাপ করে সেতো পাপের গোলাম৷ বিশ্বাসীদের মধ্যেও পাপের প্রবণতা দেখা যায় যদি না সে থাকে মসিহের নিয়ন্ত্রণে৷ আমাদের শরীরে এমন কোনো শক্তি নেই যা দিয়ে খোদার ইচ্ছে মতো কাজ করতে পারি৷ এমন সিদ্ধান্ত মানুষের চরম অক্ষমতার প্রকাশ ঘটায়৷ পৌল নিজেও এমন অবস্থা স্বীকার করেছেন, তিনি বলেছেন, 'আমি জানি আমার মধ্যে (যার অর্থ আমার মাংসিক শরীরে) কোনো ভালো কিছুই নেই... কারণ আমি যে সকল ভালো কাজ করতে চাই আসলে তা আমি করি না, কিন্তু যে মন্দ কাজের থেকে আমি বিরত থাকতে চাই তাই আমি করে বসি, তাই আমি অভ্যাস করি,' পৌলের সাথে আপনি কি তেমন দোষ স্বীকার করে থাকেন, আর স্বীকার করেন যে আপনি একজন দোষী ব্যক্তি? অনন্তকালীন বিচারকের দয়ার হাতে আপনি কি নিজেকে, নিজের কলুষিত জীবনসহ সমর্পর্ণ করবেন?
পৌল তাই যথার্থ বলেছেন, প্রত্যেকে পাপের গোলাম৷ কেননা, এর ক্ষমতা নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিস্তার লাভ ও প্রভাবিত করেছে পাপ রূপে৷ আমরা যে মন্দ শক্তির হাতে বন্দি তাও যেন নিয়ম পদ্ধতিগত, আর পাপের এ বাঁধন ক্রমশই পীড়াদায়ক হয়ে চলছে, কেননা আমাদের মন জানে আমাদের যথাযথ করনীয় কর্তব্য, আর তা আমরা করতে আগ্রহী, কিন্তু করে উঠতে পারছি না৷ এর ফলে আমাদের মনে হতাশার সৃষ্টি হয়, কেননা আপনার নিজসত্ত্বা বন্দি খাঁচার শৃঙ্খল খোলার জন্য প্রচেষ্টা করে চলে, অথচ তা থেকে পারছেন না বের হতে৷ আমরা সকলে স্বীয় স্বার্থপরতার কাছে বন্দি৷ যাহোক, মসিহ আপনাকে ডেকে বলছেন, সাথে সাথে খোদার পবিত্রতার চেয়ে কোনো অংশে তা কম নয়৷ আপনি কি জানেন প্রত্যেক মানুসের মধ্যে স্কেজফ্রিনিয়া নামে একটা রোগ রয়েছে, যা তার চিন্তা ও কর্মের সাথে সংযোগসূত্র বিচ্ছিন্ন করে রাখে? সে ভালো কিছু করতে চায় কিন্তু নিজে নিজে তা করতে পারে না৷
আসলে কি কোনো সাহায্য অবশিষ্ট নেই? পৌল আমাদের স্বীয় নোংরা অন্তরের গভীরের খবর জ্ঞাত হবার জন্য টেনে নিয়ে গেছেন, দেখিয়েছেন স্বধার্মিকতার মধ্যে নাজাতের চিহ্নমাত্র খুঁজে পাবার নয়, আপনার সরলতা, কর্মক্ষমতা, যোগ্যতা অথবা শরীয়তের কোথাও নাজাত খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়৷ পৌলের সাক্ষ্য কি আপনার ভাসাভাসা বিশ্বাস স্পর্শ করেছে, সমস্ত প্রকার হতাশাবাদী মানবীয় প্রচেষ্টা থেকে অপসারণ করতে সক্ষম হয়েছে? শিক্ষকগণ সকলে মিথ্যবাদী, দার্শনিকগণ নির্বোধ হতে বাধ্য যদি না তারা পাকরূহের দর্শণ লাভ না করে থাকেন৷ তারা নিজেদের সীমাবদ্ধতা মানতে নারাজ৷ আশির্বাদ পুষ্ট সেই সকল বিশ্বাসীকুল যারা প্রভুর পবিত্রতার সম্মুখে স্বীকার করে যে প্রভুর পরশ ব্যতিত তারা মিথ্যার স্তুপ, গুনাহগার, আর কেবল ধ্বংসস্তুপ৷ আশির্বাদপ্রাপ্ত সেই ব্যক্তি যিনি জানতে পেরেছেন ও স্বীকার করেছেন শেষ বিচারের ভয়াবহতা আর তার স্বীয় দাসত্বের অবস্থা, মুক্ত হতে পেরেছেন সর্বপ্রকার মানবীয় ধার্মিকতার প্রতি অনুরাগ আর তিনি বিশ্বাস করতে পারেন না মানুষের ধার্মিকতার ওপর কিন্তু একমাত্র মসিহের ওপরই করেন নির্ভর৷
খোদার শুকরিয়া! ঈসা মসিহ হলেন বিজয়ী, তাকে ব্যতিত আমরা পরাভূত ও আত্মপ্রবঞ্চিত, যেমন অন্যান্য লোকজন রয়েছে৷ তিনি আমাদের সত্য ও প্রকৃত শক্তি দান করেছেন৷ তাঁর পাকরূহ আমাদের স্বান্তনা দান করেছেন, দিয়েছেন অনন্ত জীবন নাজাত একমাত্র পবিত্র নাজাতদাতার নামে৷
প্রার্থনা: হে পবিত্র পিতা, আমরা আপনার আরাধনা করি ও গৌরব করি সর্বান্তকরণে৷ আপনি কখনোই আমাদের ত্যাগ করেন নি, করেন নি হতাশ, কিন্তু আপনার পুত্রকে আমাদের কাছে প্রেরণ করেছেন যিনি হলেন সকলের জন্য নাজাতদাতা ও মুক্তিদাতা৷ তার ধার্মিকতাই হলো আমাদের সম্পদ যা পাকরূহের মাধ্যমে আমাদের কাছে হয়েছে দত্ত৷ আমরা আমাদের মন তার জন্য উম্মুখ করে রেখেছি যেন তিনি এসে আমাদের পাপের কয়েদখানা খুলে দিতে পারেন, আর আমাদের করে তোলেন স্নাতশুভ্র, শুভ আচরনোপযোগী, সকল বিশ্বাসীদের নিয়ে, স্বদেশ ও বিদেশ বিশ্বের সকলকে নিয়ে৷
প্রশ্ন:
আমি জানি আমার মধ্যে, অর্থাত্ আমার গুনাহ-স্বভাবের মধ্যে ভালো বলে কিছু নেই৷
যা সত্যিই ভালো তা করবার আমার ইচ্ছা আছে কিন্তু শক্তি নেই৷
যে সব ভালো কাজ আমি করতে চাই তা করি না,
বরং তার বদলে যা চাই না সেই সব খারাপ কাজই আমি করতে থাকি৷
(রোমীয় ৭:১৮-১৯)