Previous Lesson -- Next Lesson
ঘ) ত্বকচ্ছেদ রুহানি বিষয়ে কোনো হিতকর নয় (রোমীয় ২:২৫-২৯)
রোমীয় ২:২৫-২৯
২৫ তুমি যদি শরীয়ত মেনে চল তবে খত্না করাবার মূল্য আছে, কিন্তু যদি শরীয়ত অমান্য কর তবে খত্না করানো হলেও আল্লাহর কাছে তুমি খত্না-না-করানো লোকেরই মত৷ ২৬ এজন্য কোন খত্না-না-করানো লোক যদি শরীয়তের দাবি-দাওয়া মেনে চলে তবে আল্লাহ কি তাকে খত্না করানো হয়েছে বলেই ধরবেন না? ২৭ তোমার কাছে তো লেখা শরীয়ত আছে এবং তোমার খত্না করানোও হয়েছে৷ কিন্তু তুমি যদি শরীয়ত অমান্য কর তবে যার খত্না করানো হয় নি অথচ শরীয়ত পালন করছে, সে কি আইন অমান্য করবার জন্য তোমাকে দোষী করবে না? ২৮ কেবল বাইরের দিক থেকে যে ইহুদি সে আসল ইহুদি নয়৷ শরীরের বাইরে খত্না করানো হলেই যে আসল খত্না করানো হল তাও নয়৷ ২৯ কিন্তু দিলে যে ইহুদি সে-ই আসল ইহুদি৷ আসল খত্না করানোর কাজ দিলের মধ্যেই হয়৷ ওটা রুহানি ব্যাপার, লিখিত আইন মানার ব্যাপার নয়৷ এই রকম লোক মানুসের প্রশংসা পায় না বটে, কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা পায়৷
শরীয়তের অনুসারী আর জনগণের শিক্ষক হিসেবে ইহুদি বংশোদ্ভুত মসিহিদের বিশেষ প্রাধিকার ও গর্ব পৌল ভেঙ্গে দিলেন তখন তিনি রূহের মাধ্যমে তাদের কতিপয় লোকের বক্তব্য ও ইতিবাক প্রতিক্রিয়া শুনতে পেলেন, 'হ্যা, আসলে আমরা ভুলের মধ্যে আছি, কেননা খোদা ছাড়া আর কেউ খাঁটি নয়৷ তবে আমাদের কাছে ত্বকচ্ছেদের নিয়ম ও প্রতিজ্ঞা রয়েছে, সর্বশক্তিমান এ দায়িত্ব আমাদের দিয়েছেন, এ প্রতীকের দ্বারা শরীয়ত প্রতিষ্ঠা করেছেন আমাদের পিতা ইব্রাহীম এবং তার সমস্ত সন্তানদের সাথে৷ আমরা খোদার সাথে যুক্ত, আমরা ধার্মিক বলে নয় বরং তিনি আমাদের বেছে নিয়েছেন৷'
(২৫ নং আয়াত) তখন পৌল, যিনি মুসার শরীয়তের বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন, জবাবে তাদের ভ্রান্ত ধারণার বিষয়ে বললেন, ইব্রাহীমের সাথে কৃত চুক্তির ফলে শরীয়ত বাতিল হয়ে যায় নি, বরং চুক্তি শরীয়তের দাবি প্রতিষ্ঠা করে, শরীয়ত চুক্তির ওপর নির্ভরশীল, যেমন প্রভু বলেছেন, ইব্রাহীম নবীর সাথে খোলামেলাভাবে; 'আমি সর্বশক্তিমান খোদা; আমার সম্মুখে নির্দোষ অবস্থায় গমনাগমন কর' (পয়দায়েশ ১৭ ঃ ১)৷ চুক্তি বহাল করার শর্ত হিসেবে উক্ত আয়াতটি দাঁড়িয়ে আছে৷ ইব্রাহীম নবী যখন প্রথম প্রতিজ্ঞায় আস্থা স্থাপন করতে ব্যর্থ হলেন, আর খোদার পরিচালনার বাইরে এক পুত্রের জন্ম দিলেন, যে হলো ইসমাইল, প্রথমজাত, মিশরীয় দাসীর গর্ভে৷
এভাবে পৌল ইহুদি বংশোদ্ভুত মসিহিদের দেখিয়ে দিলেন শরীয়ত ব্যতিত কোনো চুক্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়, আর ত্বকচ্ছেদেরও কোনো স্বার্থকতা নেই শরীয়ত পালন করা না হলে৷ নীতিগতভাবে, তিনি ত্বকচ্ছেদকে একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রকাশ করলেন যে খোদা পাপীদের পূতপবিত্র করেন তার গোত্র থেকে আর বিশ্বাসীকুল এবং তার সন্তানগণ খোদার বাধ্য হয়ে চলবে৷
যাহোক, এ নীতি কেবলমাত্র তাদের জন্য যারা খোদার বাধ্য জীবন যাপন করে চলেন৷ বিশ্বাসীকুল যখন শরীয়ত অমান্য করে খোদার বিরুদ্ধে পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে তখন তাদের অচ্ছিন্নত্বক হিসেবে গণ্য করা হয়, যতোই সে চ্ছিন্নত্বক হোক না কেন, সে খোদার থেকে দূরে সরে যায়, হয়ে পড়ে খোদার কাছে অজ্ঞাত৷
(২৬ নং আয়াত) পাকরূহের শক্তিতে যদি কোনো পরজাতিয় শরীয়ত মাণ্য করে চলে, তবে শারীরিক দিক দিয়ে তাকে অচ্ছিন্নত্বক বলা হলেও খোদার কাছে চ্ছিন্নত্বক বলে গণ্য হবে, শরীয়তের মধ্যে নীত হবে, অনন্তকালের জন্য বাছাই করা হবে কেননা বাছাই করার নিয়ম ও চুক্তির অর্থ হলো মনোনীতদের সংগ্রহ করা৷ আচরণে যদি কেউ নৈতিকভাবে বাছাইকৃত হয় তবে সকল বাধা ও বিধি-বিধান অতিক্রম করে তাকে মনোনীত সন্তান হিসেবে বরণ করা হবে৷
(২৭ নং আয়াত) শরীয়ত অমান্যকারী ইহুদি (ছিন্নত্বক) খোদার কাছে অসূচি বা খত্নাবিহীন হিসেবে গণ্য৷ একজন অইহুদিও ইহুদির মতো গৃহীত হতে পারে যদি সে শরীয়ত পালনকারী হয়, কিন্তু শারীরিকভাবে ছিন্নত্বক হওয়া সত্ত্বেও তাকে বিচারের দায়ে দাড় করানো হবে, যতোই তার শারীরিকভাবে সুন্নত করা হোক, শরীয়ত মান্য না করে সেও বিচারের দায়ে দণ্ডিত৷ ছিন্নতক কোনো চিহ্ন হতে পারে না নাজাতপ্রাপ্তিতে৷ মানুষের পবিত্র কাজ, আচরণ প্রমাণ করে সে খোদার সাথে যুক্ত, আর তার দুর্বলতায় খোদার শক্তি কাজ করে চলছে৷
(২৮ নং আয়াত) ইহুদিদের ঐতিহ্যগত শিক্ষার বিষয় এ সুক্ষ্ম দিয়ে তিনি 'ইহুদি' শব্দের ওপর বর্ণনা দিলেন, যা সর্বকালে স্মরণে রাখা আবশ্যক৷ সে ইহুদি নয় যে কিনা ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, অথবা ইব্রানী ভাষায় কথা বলে, হোক না নাকের ডগা সূক্ষ্ম অথবা শরীয়ত বিশ্বাস করলেই সে ইহুদি হতে পারে না, থাক না তা ত্বকচ্ছিন্ন, অথবা শনিবার প্রার্থনা করে৷ তাকেই ইহুদি বলে গণ্য করা হবে যে খোদার সাথে স্থাপিত সম্পর্কের প্রমাণ দিয়েছে প্রেম, বিনম্রতা, পবিত্রতা এবং খাঁটি পথে পরিচালিত হয়ে৷ পাককালামের বর্ণনা অনুযায়ী ঈসা মসিহ একজনই হলেন খাঁটি ইহুদি৷ কেননা তিনিই একগুয়ে ইহুদিদের থেকে ছিলেন সম্পূর্ণ বিপরীত৷ ইহুদিরা তাকে সলিব বিদ্ধ করে হত্যা করেছে, তাদের ভন্ডামি চরিতার্থ করেছে, তার বিনম্র আত্মার জন্য ইব্রাহীমের বংশদর অদ্যাবধি মসিহের লোকদের ওপর তাড়না অত্যাচার করে চলছে৷ 'ইহুদি' শব্দের বর্ণনা যেভাবে পৌল দিয়েছেন তাতে আজ আমাদের মনের পরিবর্তন অত্যাবশ্যক৷
(২৯ নং আয়াত) ছিন্নত্বক প্রমান বহন করে না যে সে বিশ্বাসী ব্যক্তি বা জাতির সাথে খোদা রয়েছেন, শতবার তাদের নাম পবিত্র পুস্তকে লেখা থাকলেও তেমন হবার নয়, কেননা খোদা অলস সহচর চান না তার সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে, তেমন প্রিয়পাত্র, যার হৃদয় থাকবে পাকরূহে পরিপূর্ণ, খোদা তেমন ব্যক্তিকেই খুঁজে ফিরছেন৷ কেবলমাত্র নতুন জন্মপ্রাপ্ত ব্যক্তি খোদার নজরে তাঁর চুক্তির জন্য যোগ্য সহচর, তিনি সকলকে আশির্বাদ দান করেন যারাই নিয়ত ও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি সাধনকল্পে পাকরূহের ফল বহন করে চলে৷ তথাপি, যারা নিজেদের ইহুদি বা মসিহি বলে ঘোষণা দেয়, অথচ বাস্তবে মসিহের আত্মার দ্বারা সাধিত মহব্বতের কাজের বিরোধিতা করে, তারা খোদার কাছে গ্রহণযোগ্য হবার নয়, থাকনা তাদের খাঁটি বিশ্বাস, তাদের তাঁর শত্রু হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তিনি হবেন তাদের বিচারক৷
প্রার্থনা: হে পবিত্র পিতা; আমরা তোমাকে ধন্যবাদ দেই, অতীতে তোমার বন্ধু ইব্রাহীমের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্বের সম্পর্কে যুক্ত ছিলে এবং তার সন্তানদের সাথেও তেমন সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলেছো, আর সমর্্পকের বাহ্যিক প্রমাণ স্বরূপ ছিন্নত্বকের চিহ্ন দিয়েছো৷ আমরা তোমাকে ধন্যবাদ জানাই, কেননা তুমি আমাদের যুক্ত করে নিয়েছো নতুন চুক্তি মোতাবেক৷ যদি আমরা পরিপূর্ণ পবিত্রতার পথে জীবন যাপন না করে থাকি তবে আমাদের ক্ষমা করো, আমরা আমাদের নতুনত্ব নিয়ে এবং হৃদয়ে ছিন্নত্বক করে যেন তোমার সাথে যুক্ত থাকতে পারি৷ সমস্ত আজব আত্মার কবল থেকে আমাদের রক্ষা করো, আর আমাদের দান করো বিনম্রতা, প্রেম, মসিহেস্থিত মহব্বত, যেন সদা-সর্বদা তাঁকে অনুসরণ করে চলতে পারি৷
প্রশ্ন:
কিন্তু তোমার মন কঠিন; তুমি তো তওবা করতে চাও না৷
সেজন্য যেদিন আল্লাহর গজব প্রকাশ পাবে সেই দিনের জন্য তুমি তোমার পাওনা শাস্তি
জমা করে রাখছ৷ সেই সময়েই আল্লাহর ন্যায়বিচার প্রকাশ পাবে৷
তিনি প্রত্যেকজনকে তার কাজ হিসাবে ফল দেবেন৷
(রোমীয় ২:৫-৭)