Previous Lesson -- Next Lesson
ঙ) ইহুদিদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ খোদার ক্রোধ থেকে তাদের রক্ষা করতে পারেনি (রোমীয় ৩:১-৮)
রোমীয় ৩:১-৫
১ তাই যদি হয় তবে ইহুদিদের বিশেষ কি লাভ হয়েছে? খত্না করাবারই বা মুল্য কি? ২ সব দিকেই যথেষ্ট লাভ হয়েছে৷ প্রথমতঃ আল্লাহ তাঁর কালাম ইহুদিদেরই দিয়েছিলেন৷ ৩ অবশ্য তাদের মধ্যে কিছু লোক বেঈমানী করেছে বলে কি আল্লাহও বেঈমানী করবে? ৪ নিশ্চয় না৷ সব মানুষ মিথ্যাবাদী হলেও আল্লহ সব সময় সত্যবাদী৷ পাক-কিতাবে লেখা আছে 'কাজেই তোমার রায় ঠিক, তোমার বিচার নিখুঁত৷' ৫ কিন্তু আমাদের অন্যায় কাজ থেকে আরও স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, আল্লাহ সব সময় ন্যায় কাজ করেন৷ তাহলে আমরা কি বলবো যে, তিনি যখন আমাদের শাস্তি দেন তখন অন্যায় করেন? অবশ্য কথাটা আমি মানুষ হিসাবে বলছি, আসলে তিনি কখনও অন্যায় করেন না৷
রোমীয় জামাতের কাছে এ পত্র লেখার পূর্বে তথাকার সদস্যদের মনে জানার অনেকগুলো প্রশ্ন ছিল৷ ইহুদিগণ যে বিশেষ অধিকার ও সম্মানের পাত্র বলে গণ্য অযিহুদিগণ তা মনে করতো না৷ পৌল যখন লিখলেন শরীয়ত ও ত্বকচ্ছেদ তাদের দোষী বলে সাব্যস্থ করবে, তখন অইহুদিগণ এ বর্ণনায় সন্তুষ্ট হলেন৷
অন্যদিকে, ইহুদিদের মধ্য থেকে যারা মসিহকে অনুসরণ করেছে, তাদের মধ্যে যারা শরীয়তকে কঠোরভাবে পালনের ওপর জোর দিত, তারা বিশ্বাসের ফলে ধার্মিকতা লাভ হয় এ বিষয়কে প্রশ্ন বিদ্ধ করে রেখেছিল৷ পৌলের ব্যাখ্যায় তারা সন্তুষ্ট হতে পারে নি, কারণ পৌল তাদের একচেটিয়া অধিকার ও চুক্তি অগ্রাহ্য করেছিল৷
পৌল তাঁর প্রচার যাত্রার সময় এ সকল অভিজ্ঞতা অর্জন ও তাদের মনোভাব বুঝতে পেরেছিলেন৷ তিনি পূর্বেই তাদের ঐ সকল প্রশ্নের জবাব তাঁর পত্রের মাধ্যমে দিয়েছিলেন৷ তিনি মনে করেছিলেন, যেন কেউ তাকে বলছেন; 'পৌল, তুমি ঠিক বলেছো, ইহুদিরা আমাদের চেয়ে কোনো অংশে উত্তম নয়৷' সহাস্যে পৌল জবাবে তাকে বললেন, 'হে প্রিয় ভ্রাতঃ, তোমার ভ্রান্তি রয়েছে, অদ্যাবধি ইহুদিদের বড় ধরণের সুযোগ রয়েছে৷ তা তাদের জাতীয় পরিচয়ের কারণে না, নয় তাদের প্রতিভার কারণ, না তাদের জাতীয়তার অধিকার, এগুলো কেবল ছাই ও ধুলি ছাড়া আর কিছুই নয়৷ তাদের বিশেষ অধিকার রয়েছে শুধু খোদার কালামের হেফাজতকারী হিসেবে৷ এ প্রত্যাদেশ চিরদিনের জন্য তাদের অধিকার ও গর্ব অক্ষুণ্য রাখবে৷
তারপর পৌল মনে মনে ভাবলেন আর একটি আপত্তি জেগেছে; 'আসলে তারা না বিশ্বস্ত না শরীয়তের পালনকারী৷' পৌল এ বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন অভিযোগ তুললেন এ বলে, 'আপনারা কি মনে করেন, মানুষের ব্যর্থতা খোদার বিশ্বস্ততা ও প্রতিজ্ঞা অকার্যকর করে দিতে পারে? খোদা না থাকেন দ্বিধান্বিত না তিনি মিথ্যা বলেন৷ তাঁর কালাম হলো চিরন্তন সত্য যা হলো গোটা বিশ্বের ভিত্তিমূল৷ মানুষের অবিস্বস্ততা সত্ত্বেও খোদার রহমত বিশ্বস্ত ও অনন্তকালস্থায়ী৷ মানুষের পাপের কারণে খোদা যদি পুরাতন চুক্তি বাতিল বলে ফেলে দিতেন তবে বর্তমান ব্যবস্থা পাওয়া সম্ভব ছিল না৷ আসলে, বর্তমানে আমরা নবীদের যুগের চেয়ে অধিক পাপ করে থাকি, তবু খোদার আশির্বাদ তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি উপভোগ করে থাকি৷ আমরা আমাদের প্রত্যাশা আমাদের ব্যর্থতার ওপর নির্ভর করি না, অথবা সাফল্যের কথা ভাবি না, কিন্তু কেবলমাত্র খোদার রহমতের ওপর আমাদের সমস্ত নির্ভরতা রাখছি৷ আমরা স্বীকার করছি আমাদের মিথ্যাচারিতা এবং সকলেই মিথ্যাবাদী, আমরা এও সাক্ষ্য দিই যে খোদা একাই সত্যবাদী নির্ভরযোগ্য৷ তাঁর প্রতিজ্ঞা ও সত্যবাদিতা কখনোই ব্যর্থ হবার নয়৷
রোমীয় ৩:৬-৮
৬ আল্লাহ যদি অন্যায় করেন তবে তিনি কেমন করে মানুষের বিচার করবেন? ৭ কেউ হয়তো বলবে, 'আমার মিথ্যা কথা বলবার দরুন আরও ভালোভাবে প্রকাশ পায় যে, আল্লাহ সত্যবাদী৷ এতে আল্লাহ গৌরব লাভ করেন তখন গুনাহগার বলে আমাকে দোষী করা হয় কেন?' ৮ খুব ভালো, তাহলে কি আমরা এই কথাই বলব, 'চল, আমরা খারাপ কাজ করতে থাকি যাতে সেই খারাপীর মধ্য দিয়ে ভাল আসতে পারে?' কোন কোন লোক আমাদের নিন্দা করে বলে যে, আমরা এই রকম কথাই বলে থাকি৷ তাদের পাওয়না শাস্তি তারা পাবে৷
পৌল আমাদের প্রত্যাশার ওপর জোর দিয়েছেন যা কেবল খোদার বিশ্বস্ততার ফলেই হয়ে থাকে, তিনি আত্মায় শুনতে পেয়েছেন মন্দ আত্মার আর্তনাদ আপত্তিকরভাবে চিত্কার করে চলছে; আমাদের পাপের মধ্য দিয়ে খোদার অনুকম্পা ও বিশ্বস্তা যদি প্রকাশ পায় তবে তার ধার্মিকতা আর থাকলো কোথায়? খোদার জন্য এটা অন্যায় হবে না যখন তিনি আমাদের অবিশ্বাস ও পাপের জন্য আমাদের শাস্তি প্রদান করেন, যখন বিশ্বব্যাপী মানুষের অপরাধ ও দুনর্ীতি খোদার মহান বিশ্বস্তা প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়? তাই, আসুন খোদাকে গৌরবান্বিত করার জন্য আমরা আরো অধিক পাপ কাজ করে চলি!
পৌল নীরব থাকলেন না এ ধরণের মারাত্মক দোষারোপের মুখে৷ তিনি বিশ্লেষণ করলেন এবং আরো গভীরের অর্থ প্রকাশ করলেন আর একটি আপত্তির মধ্য দিয়ে৷ ব্যাখ্যা দিলেন, তিনি তাদের সাহাবি হিসেবে ভাবলেন না বরং মাংসিক মানুষ হিসেবে দেখেছেন৷ তিনি বললেন, নিশ্চয়ই, যদি খোদার বিশ্বস্তা আমাদের অপরাধের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে থাকে, তবে খোদার জন্য জগতের বিচারক হওয়া অপরাধ হবে; আর আমাদের মিথ্যাচার যদি তার সত্যকে সমর্থন করে তবে জগতকে দোষী করার অধিকার আর তাঁর থাকতে পারে না৷ তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের জন্য উচিত হবে পাপ কাজ চালিয়ে যাওয়া যাতে ভালো কাজের গৌরব হয়৷
এ নেতিবাচক আলোচনায় পৌল মুল প্রশ্নের জবাব দিলেন না, কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বললেন, বিশ্লেষণ করলেন, প্রশ্ন করে মন্দ আত্মাকে পরিষ্কার করে প্রকাশ করে দিলেন, তাঁর সম্মুখে আসন্ন বিপদের সম্ভাবনা সত্যেও তিনি যুক্তি তর্কে বিষয়টি পরিষ্কার করে দিলেন৷ তারপর জবাব সংক্ষেপে দুটি শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করলেন; প্রথমতঃ 'নিশ্চয়ই নয়!' যা গ্রীক মূল বচনে রয়েছে, 'আমি বলব যে এ চিন্তাটি আমার মধ্যে নেই' এর সাথে আমি একমত নই, আদৌ নই৷ খোদা আমার স্বাক্ষী যে এ ধরণের খোদার নিন্দা সূচক চিন্তা আমার হৃদয়ে আদৌ নেই৷ আর দ্বিতীয়তঃ তিনি বললেন, খোদার বিচার ঐসকল খোদা নিন্দুকদের ওপর অবশ্যই পতিত হবে, তারা খোদার গজব থেকে কোনোভাবেই রেহাই পাবে না৷ তিনি তাদের তাত্ক্ষণিক ধ্বংস করে ফেলবে৷ এ সাহাবি সূচক বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই, আমরাও সময় সময় মসিহের শত্রুদের মুখোমুখি হয়ে থাকি, তখন সর্বপ্রকার যুক্তি জাল ও প্রশ্নবান বন্ধ করে দিতে হয় যেন আমরা খোদার নিন্দায় জড়িয়ে না পড়ি৷ তখন আমাদের সাহস রাখতে হবে আলোচনার পরিসমাপ্তি টানার জন্য, আর লোকদের খোদার সম্মুখে এবং তাঁর গৌরবোজ্জল ন্যায় বিচারের মুখোমুখি দাড় করানো সমোচিত কাজ হবে৷
প্রার্থনা: হে পবিত্র খোদা, আমাদের সকল প্রকার অবাধ্যজনিত প্রশ্নের জন্য ক্ষমা চাচ্চি৷ তোমার ধৈর্যের জন্য ধন্যবাদ দেই, আমাদের অপরাধের জন্য, অজ্ঞতার জন্য, তুমি আমাদের ধ্বংস করো নি কিন্তু তুমি আমাদের কাছে ডেকে নিয়েছো, যুক্তি প্রমাণ দিয়েছো যেন তোমার কালাম শ্রবন করতে পারি, আর তোমার পাকরূহের আহ্বানে রাজী হতে পারি৷ আমাদের মধ্য থেকে আপত্তিজনক সকল প্রশ্ন মুছে ফেলো, তোমার প্রেমের পরিকল্পনা পরিপন্থি প্রশ্ন ও চিন্তা সমূহ শেষ করে দাও যেন তোমার সাথে পূর্নাঙ্গ ঐক্যে জীবন কাটাতে পারি৷ হে প্রভু, অবাধ্য আত্মার সন্তানে আমরা পরিনত হতে চাই না৷ তাই, তোমার পুত্রের বিনম্রতা আমাদের শিক্ষা দাও, তোমার সাহাবিদের প্রজ্ঞায় আমাদের প্রজ্ঞাবান করো, যেন অন্যের সাথে আলাপ করলে আমাদের মানবীয় জ্ঞান ও যুক্তি পরামর্শ নিয়ে সর্বক্ষেত্রে সেবা কাজ করে যেতে পারি৷
প্রশ্ন: