Previous Lesson -- Next Lesson
খ) হযরত পৌলের রোমে যাবার জন্য দীর্ঘ আকাঙ্খা (রোমীয় ১:৮-১৫)
রোমীয় ১:৮-১২
৮ প্রথমে আমি ঈসা মসিহের মধ্য দিয়ে তোমাদের সকলের জন্য আমার আল্লাহকে শুকরিয়া জানাচ্ছি, কারন তোমাদের ঈমানের কথা সারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে পড়ছে৷ ৯ ইবনুল্লাহর বিষয়ে সুসংবাদ তবলিগ করে আমার সমস্ত দিল দিয়ে আমি আল্লাহর এবাদত করছি৷ আমি যতবার মুনাজাত করি ততবারাই যে তোমাদের কথা মনে করে থাকি, তিনি তার স্বাক্ষী৷ ১০ আমার মুনাজাত এই যে, আল্লাহর ইচ্ছাতে আমি যেন এই বার কোনো রকমে তোমাদের কাছে যেতে পারি৷ ১১ তোমাদের শক্তিশালী করে তুলবার জন্য কোনো রুহানি দান যেন তোমরা আমার মধ্য দিয়ে পেতে পার সেজন্যই আমি তোমাদের সঙ্গে দেখা করতে চাই৷ ১২ তার মানে আমরা সবাই যেন একে অন্যের ঈমান থেকে উত্সাহ পাই৷
রোমের জামাতের বিষয়ে হযরত পৌল অনেক কিছুই শুনেছিলেন তাঁর প্রচার যাত্রার সময়৷ তিনি কতিপয় জামাত-সদস্যের সাথে দেখা করেছিলেন, বুঝতে পেরেছিলেন, তাদের বিশ্বাস খাঁটি বিশ্বাস, আর তারা ছিলেন ইমানে পরিপক্ক৷ আন্তরিকভাবে তিনি খোদার শুকরিয়া আদায় করলেন এ কুদরতের বিষয়ে, কেননা প্রত্যেকজন জীবন্ত প্রাণবন্ত মসিহি হলেন মসিহের সাথে যুক্ত, আর এ মৌলিক পরিবর্তনের জন্য আমাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা আবশ্যক৷ যেখানেই লোকজন পাকরূহের পরিচালনায় খোদা ও তাঁর পূত্রের সেবা করে সেখানেই পিতার এবাদত অপরিহার্য, দিবারাত্র আনন্দ উত্সাহ নিয়ে প্রার্থনারত থাকতে হবে৷
হযরত পৌল খোদাকে সম্বোধন করেছেন 'আমার খোদা' বলে৷ তাতে মনে হবে তিনি খোদাকে একান্ত আপন করতে পেরেছেন৷ তিনি জানতেন তাঁর আত্মা খোদার সাথে যুক্ত হয়ে গেছে নতুন চুক্তি ও ব্যবস্থার ফলে৷ আর আন্তরিকভাবে তিনি পেরেছেন খোদাকে মহব্বত করতে৷ তার প্রাণবন্ত সম্পর্ক সত্ত্বেও তিনি নিজের নামে খোদার কাছে প্রার্থনা করেন নি, বরং মসিহের নামে তিনি খোদার কাছে মুনাজাত করেছেন৷ কেননা তিনি জানতেন, আমাদের সর্বপ্রকার প্রার্থনা এমনকি ধন্যবাদ জ্ঞাপন খোদার গৌরবের সান্বিন্ধে পৌছাবার অধিকার রাখে না৷ আমরা যতই নিবেদিত হয়ে খোদার কাছে সমর্পিত হই না কেন, সব প্রচেষ্টায়ই হতে হবে মসিহের পূতপবিত্র রক্তে ব্যবহারের উপযোগে করা পবিত্র খোদার দরবারে উপস্থাপন করার জন্য৷ কেবলমাত্র তাঁর পবিত্রকরণের মাধ্যমেই আমরা খোদার কাছে প্রার্থনা করতে পারি, যিনি তার পাকরূহ আমাদের মধ্যে ঢেলে দেন, যেন তার নাম পবিত্রভাবে নিতে পারি এবং স্বানন্দে করতে পারি তার আরাধনা৷ তাঁর সকল সেবক তাঁর কাছে বড়ই পবিত্র এবং তারা সহদাস হিসেবে মহব্বতের বাধনে থাকে যুক্ত৷
তাদের সেবার পরিতৃপ্তি হলো সুসমাচার৷ আমরা লক্ষ্যকরি, পৌল তাঁর ভাষণের প্রথম উক্তিটি শুরু করেছেন, সুসমাচার দিয়ে, 'খোদার সুসমাচার', আর নবম বাক্যে দেখতে পাই, 'তাঁর পুত্রের বিষয়ক সুসমাচার'৷ এ বাক্যের মাধ্যমে তিনি বুঝতে চেয়েছেন, ঐশি নাজাত নির্ভর করে বা এর মুল বিষয়বস্তু নির্ভরশীল হলো তার পুত্রের উপর৷ পৌলের লক্ষ ও উদ্দেশ্য মসিহের পুত্রত্ত্ব কেন্দ্রিক অর্থাত্ মসিহ হলেন খোদার পুত্র আর খোদা হলেন পিতা৷ যে কেউ এ সুসমাচার কার্যতঃ অস্বীকার করে আর উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে প্রত্যাখ্যান করে সে হয়ে পড়ে অভিশাপগ্রস্থ৷
পিতা, পুত্র ও পাকরূহের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত থেকে পৌল জীবন যাপন করতেন৷ তিনি পবিত্র ত্রিত্ত্বের ঐক্যের বিষয়ে সর্বদা ব্যক্ত করতেন আর এ ঐক্যের আলোকে রোমের জামাতের কথা চিন্তা করতেন এবং উক্ত জামাতের জন্য মুনাজাত করতেন৷ জাতীয় প্রচারক নিজের কর্মব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও জামাতের কথা কখনোই ভুলতেন না, এবং বিশ্বস্তভাবে সকল ব্যক্তিবর্গের জন্যও মুনাজাত করতেন৷ ধৈর্যসহকারে মুনাজাত না করে ও পাকরূহের ক্ষমতা ছাড়া কোনো বিশ্বাসি বিশ্বস্তভাবে পালের পালক হতে পারেন না৷ কোনো ব্যক্তির মধ্য দিয়ে যদি শক্তি বাহির হয় তবে বুঝতে হবে প্রেম, প্রার্থনা ও খোদা ও মানুষের আকাঙ্খার সংযোগ রয়েছে তথায়৷
রোমে যাবার প্রবল আগ্রহ বছরের পর বছর পুষে রেখেছিলেন হযরত পৌল৷ বিশেষ করে সেই সময়টাতে যখন তিনি বলেছিলেন 'অদ্য' যার অর্থ দাঁড়য় যখন তিনি এনাটোলিয়া, মেসিডোনিয়া এবং গ্রীসে সেবা কর্ম চালাচিছলেন৷ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ইটালি যাবার সময় তার অত্যাসন্ন৷
তথাপি তিনি তার প্রচার যাত্রা নিজের পরিকল্পনা ও ইচ্ছায় নিরুপণ করতে পারেন নি, তিনি নিজেকে খোদার ইচ্ছার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে ছিলেন, কেননা খোদার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যদি কেউ কোনো পদক্ষেপ নেয় তবে তাকে আক্ষেপ করতে হয়, ব্যর্থ হয়ে যায়, সমস্যায় ভোগে আর কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়ে৷ পৌল যে বন্দী তা কিন্তু তার নিজের ইচ্ছায় হয় নি, বরং তিনি যা কিছু করেছেন তার সবটুকু তার বেহেশতি পিতার ইচ্ছা ও পরিচালনায় হয়েছে৷
তাঁর এ সমর্পণ রোমে প্রতিষ্ঠিত জামাতের ভাইদের সাথে দেখা করার আগ্রহ এতটুকু দমাতে পারে নি, যদিও তিনি কখনোই সেখানে যান নি বা তাদের সাথে দেখাও হয় নি৷ তিনি জানতেন, তিনি পাকরূহের দ্বারা সম্পূর্ণ অভিষিক্ত ও পরিপূর্ণ৷ তিনি জীবন্ত আগ্নেয়গীরির মতো, যে কিনা জ্বলন্ত লাভা দিকে দিকে ছড়িয়ে ফেরে, আর সে কারণে রোমে যাবার প্রবল আগ্রহ বোধ করেছিলেন মসিহের কর্তৃক যে দায়িত্ব লাভ করেছেন তা রোমের জামাতের কাছে প্রচারের মাধ্যমে আশির্বাদের ভাগিদার হিসেবে গণ্য করা চলে৷ রোমের জামাত যাতে পুণর্জাগ্রত হতে পারে, সেবার জন্য প্রস্তুত হয়, প্রেম, বিশ্বাস ও প্রকৃত বিশ্বাসে যেন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে প্রচেষ্টা ছিল তার৷ সেবা কাজের এটা হলো একটা ধারণা আর প্রধান লক্ষ্যবিন্দু হলো প্রেরিতদের কাজ ইমানদার ভাই-বোন যেন শক্তিশালী ও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে৷
পৌল একজন বড় মাপে দানশীল হিসেবে রোমে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করেন নি, নিজেকে অতীব বিনম্র করেন৷ তিনি লিখেছেন, তিনি কেবল দেবার জন্যই রোমে প্রবেশ লাভ করার আগ্রহ পোষণ করেন নি বরং তাদের কথা শুনে এবং তাদের দেখার মধ্য দিয়ে কিছু পেতে চান৷ তিনি ঐ কাজ করেছিলেন, খোদা তাকে ব্যবহার না করে প্রত্যক্ষভাবে যা কিছু করেছিলেন সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এবং রোমের সকলে মিলে আনন্দিত হয়েছিলেন ঐশি সান্ত্বনাদাতার উপস্থিতিতে৷
হযরত পৌল অবশ্য পূর্ব থেকেই সাখ্য দিয়েছিলেন এ বলে যে তিনি নতুন কোনো বিশ্বাস নিয়ে উপস্থিত হন নি, কিন্তু একই বিশ্বাস, প্রজ্ঞা, ক্ষমতা প্রত্যেক খাঁটি ইমানদারের মধ্যে কার্যকর হয়ে থাকে, আর তারাই হলেন মসিহের রুহানি পরিবারের সদস্য৷ যে কেউ একাধিক জামাতের কথা দাবি করে সে মিথ্যাবাদি, কেননা পাকরূহ হলেন একক, মসিহও একক, এবং পিতাও মাত্র একজন৷ যেখানেই বিশ্বাসীকুল মিলিত হয়, তারা একত্রিত হয় একই পিতার সন্তান হিসেবে, যদিও তারা সকলে সকলকে পূর্ব থেকে চেনে না৷ তারা মহানন্দে আনন্দিত হয়, আর একই মনে আন্তরিকতা নিয়ে মিলিত হয়, একই আত্মার প্রজন্ম হিসেবে, একই পরিবারের সদস্য একই লক্ষ্য ও স্বার্থে একীভূত হয়৷
প্রার্থনা: হে পিতা আমরা তোমার আরাধনা করি৷ তুমি বিশ্ব জুড়ে তোমার জামাত ও ইমানদারদের একীভূত করেছো, আর তুমিই তা প্রতিষ্ঠা করেছো, তাদের পুষ্ট করেছো তোমার চরিত্র আদর্শ দিয়ে৷ আমাদের ভাই-বোন যারা বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাদের জন্য প্রার্থনা করতে শিক্ষা দাও৷ তোমার বিশ্বস্ত সন্তানদের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি, কেননা যতজনই পাকরূহের দ্বারা নব জন্ম লাভ করেছে, তারা সকলেই এক একজন ঐশি কুদরত৷ আমাদের চোখ খুলে দাও যেন আমরা একে অপরকে বুঝতে ও ভালোাবাসতে পারি, তোমার উপস্থিতিতে আনন্দ উল্লাস করতে পারি৷ আমাদের প্রজ্ঞা দাও এবং ক্ষমার গুণক্ষমতা প্রদান করো ফলে আমাদের সহভাগিতা বৃদ্ধি লাভ করে এবং তোমার সত্যে পায় প্রতিষ্ঠা৷ আমরা কখনো যেন পিতা, পুত্র এবং পাকরূহের সহভাগিতা থেকে পিছলে না পড়ি৷
প্রশ্ন: