Previous Lesson -- Next Lesson
২. বিশ্বাসঘাতকটি প্রকাশিত হয়ে পড়লো এবং অপ্রতিভ হলো (যোহন ১৩:১৮-৩২)
যোহন ১৩:২১-২২
২১. এই সমস্ত কথা বলিবার পরে ঈসা মসিহ অন্তরে অস্থির হইলেন৷ তিনি বলিলেন, 'আমি তোমাদের সত্যই বলিতেছি, তোমাদেরই মধ্যে একজন আমাকে শত্রুদের হাতে ধরাইয়া দিবে৷' ২২. ঈসা মসিহ কাহার কথা বলিতেছেন তাহা বুঝিতে না পারিয়া সাহাবিরা একজন অন্যজনের দিকে তাকাইতে লাগিলেন৷
ঈসা মসিহ তার সাহাবিদেরকে পারস্পরিক ভালোবাসা এবং সেবার বিষয় বলেছেন৷ তিনি তাদের সামনে অবনমিত অবস্থা এবং নম্রতার আদর্শ তুলে ধরেছিলেন, এবং তাদের কাছে ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন যে তার রাজত্ব দূর্বলতার মধ্যে দিপ্তী দেবে যাতে করে তারা অবগত হয় যে তিনি প্রভু, কর্তা এবং ঘটনাসমুহের পরিচালক, এমনকি মৃতু্যর সময়ও৷ এই ব্যাখ্যার অংশ হিসেবে ঈসা মসিহ এহুদার বিশ্বাসঘাতকতাকে প্রকাশ করেন এবং তার অপরাধ সাধনকে মানিয়া নেন এ কারণে যে, এহুদা কেবলমাত্র তার ব্যক্তিগত ষড়যন্ত্র অনুযায়ী এ কাজ করছে না কিন্তু বেহেশতের নিদের্শনা থেকে তা হচ্ছে৷
ঈসা মসিহ তার সাহাবিদের কাছে একথা প্রকাশ করলেন যে তাদের মধ্যে একজন তাকে ইহুদি পরিষদের কাছে অর্পণ করবে৷ আনন্দ উত্সবের সময় এই ঘোষণা একটি বিস্ফোরণের মতো এসেছিল৷ এই ঘটনাটি ঈসা মসিহ ভেবে-চিন্তে বলেননি কিন্তু তিনি অন্তরে অস্থির হয়েছিলেন যেমন তিনি লাসারের কবরের কাছে অস্থির হয়েছিলেন৷ তিনি বিশেষভাবে দুখ পাচ্ছিলেন এই ভেবে যে তার পিতা তাকে ত্যাগ করতে পারেন৷ ঈসা মসিহ এহুদাকে ভালোবাসতেন এবং তাকে মনোনীত করেছিলেন; এটা অসম্ভব মনে হয়েছিল যে একজন মনোনীত বন্ধু খোদার পুত্রের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারে৷ যদিও কিতাবুল মোকাদ্দসের জবুর কিতাবের ৪১ : ৯ এ তার উল্লেখ আছে, 'যে আমার সঙ্গেই খাওয়া দাওয়া করে সে-ও আমার বিরুদ্ধে পা উঠিয়েছে৷
এতে করে সাহাবিরা একে অপরের বিষয়ে চিন্তা করতে লাগলো, 'এই কি সেই বিশ্বাসঘাতক?' তারা সন্দেহের মধ্যে পড়লো কি করে একজনের পক্ষে এই বিশ্বাস ঘাতকতা করা সম্ভব৷ ঘৃণা এবং প্রত্যাখ্যানের মধ্যদিয়ে ঈসা মসিহকে ত্যাগ করার মনোভাব সাহাবিদের মনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিলো৷ তাদের মনের প্রকৃত অবস্থা ঈসা মসিহের কাছে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হয়ে পড়েছিলো কেননা রুহানি আলোর পরীক্ষায় তারা দাঁড়াতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ৷
যোহন ১৩:২৩-৩০
২৩. তাহাদের মধ্যে যাহাকে ঈসা মসিহ মহব্বত করিতেন তিনি ঈসা মসিহের পাশেই ছিলেন৷ ২৪. শিমোন পিতর তাঁহাকে ঈশারা করিয়া বলিলেন, 'উনি কাহার কথা বলিতেছেন, জিজ্ঞাসা কর৷' ২৫. সেই সাহাবি তখন ঈসা মসিহের দিকে ঝুঁকিয়ে বলিলেন, 'প্রভু সে কে?' ২৬. ঈসা মসিহ উত্তর দিলেন, 'এই রুটির টুকরাটা গামলাতে ডুবাইয়া যাহাকে দিব, সে-ই সেই লোক৷' আর তিনি রুটির টুকরাটা গামলাতে ডুবাইয়া শিমোন, ইস্কারিয়োতের ছেলে এহুদাকে দিলেন৷ ২৭. রুটির টুকরাটা লইবার পরেই শয়তান এহুদার মধ্যে ঢুকিল৷ ঈসা মসিহ তাহাকে বলিলেন, 'যাহা করিবে তাড়াতাড়ি করো৷' ২৮. যাহারা ঈসা মসিহের সঙ্গে খাইতে বসিয়াছিলেন, তাহারা কেহই বুঝিলেন না, কেন ঈসা মসিহ এহুদাকে এই কথা বলিলেন৷ ২৯. কেহ কেহ ভাবিলেন, ঈদের জন্য যাহা দরকার ঈসা মসিহ এহুদাকে তাহা কিনিয়া আনিতে বলিলেন, কিংবা গরিবদের কিছু দিতে বলিলেন, কারণ তাহাদের টাকার বাক্স এহুদার নিকটেই থাকিত৷ ৩০. রুটির টুকরাটা লইবার সঙ্গে সঙ্গে এহুদা বাহিরে চলিয়া গেল৷ তখন রাত্রি হইয়াছে৷
এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে, যা বিশ্বাসঘাতকতার ফলস্বরূপ হয়েছিল, আমরা মহব্বত ও ক্ষমার একটি চমত্কার সাক্ষ্য দেখতে পাই৷ ইউহোন্না ঈসা মসিহের পাশেই বিশ্রাম নিচ্ছিল৷ প্রচারক ইউহোন্না এই সুসংবাদের মধ্যে তার নিজের নাম একবারও উল্লেখ করেনি, কিন্তু ঈসা মসিহের কাছাকাছি থাকার কথা উল্লেখ করেছে যা ছিল ভালোবাসার নিদর্শন৷ ঈসা মসিহের কাছ থেকে ভালোবাসা পাবার থেকে তার কাছে অন্য কোনো কিছুই বড় ছিল না৷ এ ব্যাপারে সে নিজের নামকে বাদ দিয়েছিল এবং খোদার পুত্রকে মহিমান্বিত করেছিল৷
পিতর এতই লাজুক ছিল যে ঈসা মসিহের কাছে সরাসরি বিশ্বাস ঘাতকের পরিচয় জিজ্ঞাস করতে পারেনি, একই সময় নিজের আবেগকে ধরে রাখতে অসমর্থ ছিল৷ সে অঙ্গ ভঙ্গির মাধ্যমে যোহনকে বিশ্বাস ঘাতককে খুঁজে বের করতে বললো৷
ইউহোন্না ঈসা মসিহের দিকে ঝুঁকে জিজ্ঞেস করলো, 'সে কে?' ঈসা মসিহ নিরবে এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন কিন্তু বিশ্বাস ঘাতকের নাম বললেন না, শুধুমাত্র নিরব অংগ ভংগি করলেন৷ ঈসা মসিহ চাননি এই পর্যায়ে বিশ্বাস ঘাতকের নাম প্রকাশ্যে বলতে৷ এহুদার নরম হওয়ার একটি সম্ভাবনা তার ছিল৷ ঈসা মসিহ রহমতের রুটি ভাঙ্গলেন যা তার সাহাবিদেরকে তার সাথে একটিত্র করে এবং এক টুকরো রুটি পাত্রের মধ্যে ডুবিয়ে এহুদাকে পরিবেশন করলেন৷ এই কাজের উদ্দেশ্য ছিল সাহাবিদেরকে অনন্ত জীবন পাবার জন্য শক্তিশালী করা৷ কিন্তু যেহেতু এহুদার বিশ্বাস ঘাতকতা করার অভিপ্রায় ছিল, তাই ঐ এক টুকরো রুটি কোনো কাজে আসেনি বরং এটা তাকে কঠিন করেছিল৷ রহমত পাবার জন্য তার হৃদয় বন্ধ ছিল এবং শয়তান তার মধ্যে ঢুকেছিল৷ কি এক ভীতিকর দৃশ্য! তার সার্বভৌম ইচ্ছার মধ্য দিয়ে ঈসা মসিহ কঠিন হৃদয়ধারী ব্যক্তিকে আরও কঠিন করেছিল৷ ঈসা মসিহ যখন তাকে রুটি প্রদান করছিল শয়তান তখন তার চিন্তার সাথে খেলা করছিল৷ সে রুটি গ্রহণের পর দুষ্ট আত্মা তার ওপর ভর করেছিল৷ বিশ্বাস ঘাতকের বিষয়ে ঈসা মসিহের বিচার তাকে বেহেশতি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করেছিল এবং তাকে শয়তানের কাছে অর্পণ করেছিল৷
সহসা এহুদা নিজেকে প্রকাশিত হতে দেখেছিল যখন সে এক টুকরা রুটি নিচ্ছিল৷ তখন ঈসা মসিহের বিশেষ নির্দেশ তাকে আঘাত করে বললো, 'তোমার মন্দ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দেরী কর না কিন্তু সেটা এখনই কর কারণ শয়তানকে তার কাজ শেষ করতে দাও এবং তার পরিবর্তে শুভ ফলাফল বয়ে আনবে৷'
এহুদাকে তাড়াতাড়ি কাজ করবার জন্য ঈসা মসিহের নির্দেশকে উপলব্ধি করতে তার সাহাবিরা ব্যর্থ হয়েছিল৷ সাধারণত তিনি তার সঙ্গীদের জন্য খাদ্যদ্রব্য কিনে আনতে তাকে নির্দেশ দিতেন৷ ইউহোন্না কখনোই এহুদার এই ভীতিকর দৃশ্যটিকে ভোলেননি যা ছিল ঈসা মসিহের উপস্থিতির মধ্যে তার নূরের থেকে অন্ধকারের দিকে চলে যাওয়া৷
যোহন ১৩:৩১-৩২
৩১. এহুদা বাহিরে চলিয়া যাইবার পরে ঈসা মসিহ বলিলেন, 'মনুষ্যপুত্রের মহিমা এখন প্রকাশিত হইল এবং তাহার মধ্যে খোদার মহিমা প্রকাশ পাইল৷ ৩২. খোদার মহিমা যখন তাহার মধ্যে প্রকাশিত হইল তখন খোদাও মনুষ্যপুত্রের মহিমা, নিজের মধ্যে প্রকাশ করিবেন এবং তাহা তিনি শিঘ্রই করিবেন৷
এই বিশ্বাস ঘাতকতার কাজের মধ্য দিয়ে ঈসা মসিহ কিভাবে মহিমান্বিত হলেন? কেমন করে খারাপ কাজের মধ্য দিয়ে ভাল ফল আসতে পারে?
যখন তার মনোনীত সাহাবি তাকে ত্যাগ করলো ঈসা মসিহ দূঃখিত হলেন৷ তিনি প্রেমের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন যেন বিশ্বাস ঘাতক ফিরে আসে যাতে এটা না ঘটে৷ কিন্তু এহুদা দ্রুত ইহুদি পরিষদের কাছে গেল যারা রক্ষীদেরকে অস্ত্রে সজ্জিত করলো ঈসা মসিহকে রাতের মধ্যেই গ্রেফতার করতে৷
ঈসা মসিহ শয়তানের প্রলোভনকে প্রতিহত করেছিলেন একজন রাজনৈতিক নাজাত-দাতা না হবার জন্যে যখন তিনি এহুদাকে তার কাজ সম্পাদন করতে পাঠালেন৷ তিনি খোদার মেষশাবক হিসেবে মৃতু্যবরণ করতে চেয়েছিলেন মানব জাতিকে নম্রতা ও দুর্বলতার মধ্য দিয়ে উদ্ধার করতে এবং তার মৃতু্যর মধ্য দিয়ে ঘোষণা করতে আত্মকোরবানীর ভালোবাসা তার মহিমার অপরিহার্য বৈশিষ্ট৷
ঈসা মসিহ ব্যক্তিগত মহিমা চাননি, কিন্তু তার মৃতু্যর মধ্য দিয়ে পিতার মহিমা চেয়েছিলেন৷ তার পিতা তাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন পথভ্রষ্টদের রক্ষা করতে৷ পতিত মানবজাতির মধ্যে পিতার ভাবমূর্তিকে পুত্র নবায়িত করতে চেয়েছিলেন৷ এই নবায়নের জন্য ঈসা মসিহ পিতাকে প্রকাশিত করেছিলেন এবং তাদেরকে খোদার পিতৃসুলভ দয়ার ওপর বিশ্বাস আনতে লালন করেছিলেন৷ কেবল শিক্ষাই যথেষ্ট নয়, কারণ পাপের মধ্য দিয়ে খোদা এবং তার সৃষ্টির মধ্যে একটি প্রতিবন্ধক খাড়া হয়েছিল৷ পুত্রকে মৃতু্যবরণ করতে হয়েছিল যাতে করে এই প্রতিবন্ধক ভেঙ্গে ফেলা যায় যা খোদা থেকে আমাদেরকে পৃথক করে রাখে এবং ন্যায়পরায়ণতার প্রয়োজনীয়তা পূরণ হতে পারে৷ ঈসা মসিহের মৃতু্য ছাড়া পিতার গৌরব প্রকাশের চাবিকাঠি৷ ঐ মৃতু্য ছাড়া পিতার বিষয়ে সত্য জ্ঞান আসতে পারে না, অথচ কোনো খাঁটি নয় সম্ভব পুনর্জন্ম লাভ হতে পারে না দত্তক৷
ঈসা মসিহ যখন নিজেকে অস্বীকার করলেন এবং তার মৃতু্য পিতার কাছে মহিমা প্রকাশ করলো তিনি এটাও ঘোষণা করেছিলেন যে তার পিতা তার মহিমাকে তার ওপর অর্পণ করবেন যাতে সে সকল গৌরবজনক দানের উত্স হতে পারে৷ তার গ্রেফতার এবং সলিববিদ্ধ হবার আগের মুহুর্তে ঈসা মসিহ আগে থেকে দেখতে পেয়েছিলেন তার নিজের পুনরুত্থান, বেহেশতে আরোহের এবং সিংহাসনে আসন গ্রহণ৷ ঈসা মসিহকে মৃতু্যবরণ করতে হয়েছিল তার মহিমার মধ্যে প্রবেশ লাভ করতে৷
যারা ঈসা মসিহের ভোগান্তি এবং মৃতু্যকে অস্বীকার করে অথবা এটাকে দূর্বলতার নিদর্শন হিসাবে আখ্যায়িত করে তারা সবাই খোদার ইচ্ছা যা সলিবের মধ্যে নিবদ্ধ এবং পুত্রের পবিত্রতাকে উপলব্ধি করতে পারে না যিনি কবর খুলে বেরিয়ে আসেন৷
প্রার্থনা: পিতা, পুত্র এবং পাক-রূহ মুক্তি অবনমিত অবস্থা ভোগান্তি মৃতু্য এবং পুনরুত্থানের জন্য আমরা আপনাকে বিবর্ধিত করি৷ আমরা বিশ্বাস করি ঈসা মসিহের রক্তের মধ্য দিয়ে আমরা মুক্তি পেয়েছি৷ আমাদের জীবনের দূর্দশা ও বিপদের মধ্যে আপনি আমাদেরকে রক্ষা করেছেন৷ আপনি আমাদের অনন্ত জীবন প্রদান করেছেন৷ আমরা বিশ্বাস করি যে আপনার পুত্র শিঘ্রই গৌরবের সহকারে আর্বিভূত হবে৷ আমিন৷
প্রশ্ন: