Previous Lesson -- Next Lesson
১. পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির বৈথেসদাতে সুস্থকরণ (যোহন ৫:১-১৬)
যোহন ৫:১০-১৩
১০. সেই দিনটি ছিল বিশ্রাম বার৷ এইজন্য, যে লোকটিকে ভালো করা হইয়াছিল, তাহাকে ইহুদি নেতারা বলিলেন, 'আজ বিশ্রামবার; শরীয়ত মতে বিছানা তুলিয়া লওয়া তোমার উচিত নয়৷' ১১. তখন সে সেই নেতাদের বলিল, কিন্তু যিনি আমাকে ভালো করিয়াছেন তিনিই আমাকে বলিয়াছে, 'তোমার বিছানা তুলিয়া লইয়া হাঁটিয়া বেড়াও৷' ১২. তাহারা সেই লোকটিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, 'কে সেই লোক, যে তোমাকে বলিয়াছে, তোমার বিছানা তুলিয়া লইয়া হাঁটিয়া বেড়াও'? ১৩. কিন্তু যে লোকটি ভালো হইয়াছিল সে জানিত না, তিনি কে, কারণ সেই জায়গায় অনেক লোক ভিড় করিয়াছিল বলিয়া ঈসা মসিহ চলিয়া গিয়াছিলেন৷
ধর্মান্ধ আইনজ্ঞরা বাদে বৈথসাইদাতে বারান্দায় যারা উপস্থিত ছিল তারা অথিশয় আনন্দিত হয়েছিল৷ এইসব ধর্মান্ধ লোকেরা পাগলের মতো ঈর্ষান্বিত ছিল, বিশেষত যখন বিশ্রামবারে সুস্থ করা হয়েছিল৷ ঈসা মসিহ কেবল মাত্র পঙ্গু লোকটিকে সুস্থতা করেননি কিন্তু তাকে তার বিছানাসহ শহরের রাস্তা দিয়ে চলতে আদেশ দিয়েছিল৷ এতে তারা খোদার বিরুদ্ধে পাপ এবং বিশ্রাম বারের আইন অমান্য করা মনে করলো, কেননা ঐতিহ্যগত বিশ্বাসে বিশ্রামবারে সমস্ত কার্যাদি বন্ধ রাখার কথা ছিল৷ এই আইন অমান্যকারী যে কোনো ব্যক্তির জন্য মৃতু্যযোগ্য অপরাধ ছিল (গনণাপুস্তক ১৫ : ৩২-৩৬)৷ ইহুদিরা ধারণা করেছিল যে নাজাতদাতা আসতে পারেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না গোটা জাতি সম্পূর্ণরূপে বিশ্রামবার পালন করে৷ এই সমস্ত ইহুদিরা ওই লোকটিকে পাথর ছুড়ে মারেনি যে তার বিছানাপত্র নিয়ে ওই জায়গা থেকে উঠে পড়েছিল৷ কারণ এই শাস্তি দেওয়ার আগে তাকে সতর্ক করে দিতে হতো৷ এই প্রতিবাদ ভীতি প্রদর্শন হিসেবেও মনে করা হয়েছিল৷ আরোগ্যলাভকারী ব্যক্তিটি নিজপক্ষ সমর্থন করে উল্লেখ করেছিল যে এটা ঈসা মসিহের আদেশ ছিল৷ বিছানা বহন করা পুরোপুরি আরোগ্য লাভের একটি শর্ত ছিল৷
আইনজ্ঞরা অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হয়েছিল এবং এই সুস্থতা দানে আনন্দ পায়নি৷ তারা ঈসা মসিহের ভালোবাসার কর্তৃত্ব যা তিনি সুস্থতা দানের মধ্যে দেখিয়েছিলেন তা উপলব্ধি করতে পারেনি৷ তারা ঈর্ষা এবং ঘৃণার সাথে আলোচনা করতে লাগলো আরোগ্য দানকারীর ব্যাপারো৷ তিনি কোনো সাহসে বিশ্রামবারে পঙ্গু লোকটিকে তার বিছানা বহন করতে নির্দেশ দিয়েছিল৷ সুতরাং তাদের মতে ঈসা মসিহ ছিল একজন আইন লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি এবং মৃতু্যর যোগ্য৷
আরোগ্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি আরোগ্যদানকারীকে চিনতো না যেহেতু ঈসা মসিহ একজন বহিরাগত ব্যক্তি ছিলেন৷ বৈথসাইদাতে এটা তার প্রথম আগমণ ছিল৷ আরোগ্যর পর মনে হয়েছিল তিনি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন৷ ঈসা মসিহ চাননি মোজেজার ওপর ভিত্তি করে তার বিশ্বাস আসুক, কিন্তু তার ভালোবাসার জন্য এটা হোক৷
যোহন ৫:১৪-১৬
১৪. ইহার পরে ঈসা মসিহ সেই লোকটিকে এবাদতখানায় দেখিতে পাইয়া বলিলেন, 'দেখ, তুমি ভালো হইয়াছ৷ পাপে জীবন আর কাটাইও না, যেন তোমার আর ক্ষতি না হয়৷' ১৫. তখন সেই লোকটি গিয়া ইহুদি নেতাদের বলিল যে, তাহাকে যিনি ভালো করিয়াছেন, তিনি ঈসা মসিহ৷ ১৬. বিশ্রাম বারে ঈসা মসিহ এই সমস্ত কাজ করিতেছিলেন বলিয়া ইহুদি নেতারা তাঁহাকে কষ্ট দিতে লাগিলেন৷
ঈসা মসিহ চেয়েছিলেন আরোগ্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিটি তার পাপসমূহ থেকে মুক্তি পাবার মধ্য দিয়ে সম্পূর্ণভাবে আরোগ্যলাভ করুক৷ তিনি লোকটিকে এবাদতখানায় খোদার প্রসংশা করতে দেখতে পেলেন৷ সে এই সময় ঈসা মসিহকে দেখে ভীত এবং আনন্দিত হয়েছিল৷ আমরা জানি ঈসা মসিহ তাকে কী বলেছিল: তুমি আরোগ্যলাভ করেছ৷ তোমার জন্য কী পরিমান বিস্ময়কর ব্যাপার ঘটেছে তা অনুধাবন করবার চেষ্টা করো৷ তুমি আটত্রিশ বছর যাবত্ অসুস্থ ছিলে৷ এটি একটি বেহেশতি কাজ, কোন মানুষের কাজ নয়৷ মনুষ্যদেহধারী খোদা নিজেই তোমার হৃদয়ের চোখকে খুলে দিয়েছেন৷
তুমি তোমার পাপের কথা জান৷ খোদা ব্যতীত এই জীবন দুর্দশার কারণ৷ আমার সুস্থতা দানের মধ্য দিয়ে তোমার পাপসমূহ ক্ষমাপ্রাপ্ত হলো৷ তার ভিতরকার সত্বাকে আরোগ্যলাভের জন্য ঈসা মসিহ তাকে আজ্ঞা পালন করতে এবং পাপ না করতে আদেশ করলেন৷ ক্ষমা পাবার পর একটা সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়, যা হলো, একই পাপে ফিরে না যাওয়া৷ যে কেউ ঈসা মসিহের শক্তিশালী বাক্যকে গ্রহণ করে এবং দুঃখের সাথে অনুতপ্ত হয়, সে বেহেশতি ক্ষমতা লাভ করে এবং খোদার সাহায্য নিয়ে দুষ্টকে পরাস্ত করতে পারে৷ ঈসা মসিহ আমাদের কাছে অসম্ভব কিছু চান না, বরং আমাদেরকে রুহ দান করেন কারণ সেই ক্ষমতোা আমাদের দেহজাত প্রলোভন ও ঘৃণাকে দমন করতে পারে৷ সত্যের রুহ দুষ্টকে পরিহার এবং প্রতিহত করতে আমাদেরকে সক্ষম করে৷
কখনো কখনো খোদা তার ভালোবাসার মধ্য দিয়ে ব্যাধি ও ক্ষত সমূহ দিয়ে আমাদেরকে বিশোধিত করেন, যাতে আমরা তার কাছে ফিরে যাই৷ অন্য সময় সম্পদ এবং বিলাসিতা বেহেশত থেকে শাস্তিস্বরূপ এসে থাকে কারণ আমরা খোদা থেকে দূরে থাকি৷ যখন কোন ব্যক্তি পৈশাচিক হয়ে উঠে, পরিণতিতে তখন তার অনন্ত বিনাস ঘটে৷ পাপের মধ্যে থেকো না, কিন্তু যেকোন কুকর্মের দাসত্বে যে তুমি ফেঁসে আছো তা ঈসা মসিহের কাছে স্বীকার কর এবং তোমার মুক্তির জন্য তাঁর কাছে সাহায্য চাও৷ তোমার পাপের বিষয়ে ঈসা মসিহের কাছে কোন নিরপেক্ষ অবস্থান নিও না৷ তোমার পাপ প্রবণতাকে ভেঙে ফেল তোমার ত্রাণকর্তাকে চুক্তিনামার মধ্য দিয়ে প্রতিশ্রুতি দাও৷ তিনি সম্পূর্ণভাবে তোমাকে রক্ষা করবেন৷
কী আশ্চর্য ব্যাপার! ঈসা মসিহের কাছ থেকে পরামর্শ পাবার পর আরোগ্য লাভকারী ব্যক্তিটি ইহুদিদের কাছে ছুটে গেল এবং তাদের বললো যে নাসরতীয় তাকে মসিহ সুস্থ করেছে এবং বিশ্রামবারে আইন ভেঙে তাকে বিপথে চালিত করেছে৷ আইনজ্ঞরা হয়তো আশা করেছিল সে হয়তো ঈসা মসিহের ওপর গোয়েন্দাগিরি করছে যাতে করে তাকে গ্রেফতার করা যায়৷
এবাদতখানা ধৌতকরণের সময় ইহুদি ঈমামেরা ঈসা মসিহের প্রতি যে ঘৃণা দেখিয়েছিল তা এতেঠটা প্রচণ্ড ছিল না যতটা এই সুস্থতাদানের পরে ঈসা মসিহের বিরুদ্ধে ফরিশিদের শত্রুতা জম্মে ছিল৷ ঈসা মসিহ তাদের ন্যায়পরায়ণতাকে নগণ্যভাবে দেখেছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন যে ন্যায়পরায়ণতা আইন কানুন মেনে চলার মধ্য দিয়ে আসে না যা স্বার্থপর উদ্দেশ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ৷ খোদা চান কৃপা এবং ভালোবাসা৷ ভালোবাসা ব্যতীত পবিত্রতা হলো মিথ্যা৷ খোদা আমাদের মধ্যে কৃপা খোঁজেন, ধমর্ীয় আচার অনুষ্ঠান নয়৷ কৃতজ্ঞতার বিষয় হলো, খোদা আমাদেরকে হাজার রকমের আইন কানুন থেকে মুক্ত করেছেন এবং বেহেশতি নির্দেশ হিসেবে আমাদেরকে ভালোবাসা দিয়েছেন৷
প্রশ্ন: