Previous Lesson -- Next Lesson
ঘ) যুগের শেষ দিকে ইয়াকুবের বংশের নাজাত প্রদানের রহস্য (রোমীয় ১১:২৫-৩২)
রোমীয় ১১:২৫-৩২
২৫. ভাইয়েরা, তোমরা যেন নিজেদের জ্ঞানী মনে না কর সেজন্য আমি একটা গোপন সত্য তোমাদের জানিয়ে রাখতে চাই৷ সেই সত্য এই অ-ইহুদিদের সংখ্যা পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বেশীর ভাগ বনি-ইসরাইলদের অন্তর কঠিন হয়েই থাকবে৷ ২৬. আর এভাবে গোটা ইসরাইল জাতি নাজাত পাবে৷ পাক-কিতাবে লেখা আছে, সিয়োন থেকে নাজাতদাতা আসবেন; তিনি ইয়াকুবের বংশের লোকদের মধ্য থেকে আমার প্রতি ভয়হীনতা দূর করবেন৷ ২৭. আমি যখন তাদের গুনাহ দূর করব তখন এটাই হবে তাদের জন্য আমার দোয়াযুক্ত ব্যবস্থা৷ ২৮. সুসংবাদের দিক থেকে তোমাদের ভালোর জন্যই তারা এখন আল্লাহর শত্রু৷ কিন্তু আল্লাহর বেছে নেবার দিক থেকে পূর্বপুরুষদের জন্য তারা আল্লাহর মহব্বতের পাত্র৷ ২৯. আল্লাহ যা দান করেন এবং যাকে ডাকেন সেই বিষয়ে তাঁর মন তিনি বদলান না৷ ৩০. যেমন তোমরা এক সময় আল্লাহর অবাধ্য ছিলে কিন্তু ইহুদিদের অবধ্যতার জন্য এখন আল্লাহর দয়া পেয়েছ, ৩১. ঠিক তেমনি করে তোমরা দয়া পেয়েছ বলে তারাও এখন অবাধ্য হয়েছে যন তারাও এখন পেতে পারে৷ ৩২. আল্লাহ যেন সকলকে দয়া দেখাতে পারেন সেজন্য তিনি সবাইকে অবাধ্যতার মধ্যে বন্দী করে রেখেছেন৷
পৌল তাঁর পাঠকদের রক্তের ভাইয়ের স্থানে দেখেছেন আর তাঁর এ বক্তব্যের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন, খোদা হলেন তাঁর পিতা এবং তাঁর পাঠককুলও হলেন খোদার সন্তান৷ সর্বপ্রকার চিন্তা, গবেষণা, পূর্ব থেকে বাছাইকরণ, তাত্তি্বকভাবে পূর্ণতা পেতে পারে না এ ধারণার বসবতর্ী থেকে 'খোদা ধরা ছোয়ার বাইরে' তবে তার পূর্বে পরিচিত খোদার সাথে সম্পর্ক যুক্ত হতে হবে, যিনি আমাদের জীবন্ত প্রভু মসিহের পিতা, আমাদের পবিত্র পিতা মহ্বত ও প্রেমে পূর্ণ৷
সূচনা বক্তব্যের পরে পৌল এমন একটি রহস্যপূর্ণ বিষয়ের কথা প্রকাশ করলেন যা তিনি নিজে জানতেন না, পিতা প্রভু তাঁর কাছে পরিষ্কার করে প্রকাশ করেছেন বিধায় জানতে পেরেছেন৷ তাই সকল ব্যাখ্যাকারি, প্রচারক ও ধর্মত্ববিদগণের কাছে পৌল অনুরোধ করেছেন নিজেদের মতবাদ খোদার কালামের সাথে যোগ না দিতে ও ইয়াকুবের বংশের মতবাদ জুড়ে না দিতে বরং মনোযোগসহ খোদার কালামে সম্পূর্ণরূপে ধ্যান করতে৷ যে কেউ নিজের চিন্তাধারা প্রচার করে সে দায়বদ্ধ হয়ে পড়ে, কারণ সে নিজেকে চুতুর এবং জ্ঞানী ভেবে বসে আছে, আর দ্রুত সে রসাতলে পতিত হয়ে পড়ে৷ আর প্রার্থনাসহ যে শক্তভাবে খোদার কালাম ধরে রাখে, আর পাকরূহের কালাম শ্রবন করে, ধিরে ধিরে সে জ্ঞানে বৃদ্ধিলাভ করে, বুঝতে পারে খোদার প্রেমের রহস্য, যিনি হলেন আমাদের বেহেশতি পিতা৷
যে রহস্যের কথা পৌল বলেছেন তা শেষ বিচারের দিন সংক্রান্ত যার রয়েছে বহুদিক:
ইস্রায়েল জাতির হৃদয় কঠিন হবার বিষয়টিকে পুরু কাপড়ে নির্মিত তাবুর সাথে তুল্য, যা এর মধ্যে বাসকারী লোকদের সূর্যের খরতাপ থেকে রক্ষা করে, কিন্তু দৃষ্টিশক্তি ঢেকেও দেয় আর শ্রবণে বাধা সৃষ্টি করে৷ তারা না দেখতে পারে না পড়তে পারে, না পারে শ্রবণ করতে, যতোই তাদের প্রখর শ্রবণ শক্তি থাক না কেন (ইয়ারমিয়া ১৬:৯-১০)
ইয়াকুবের বংশের সকলেই যে হৃদয় কঠিন করে রেখেছে তা নয় তবে অধিকাংশ তদ্রুপ৷ মসিহের সাহাবিগণ, প্রেরিতগণ এবং প্রাথমিক জামাতের লোকজন আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হয়ে তরীকাবন্দিদাতা ইয়াহিয়ার কাছে তরীকা গ্রহণ করেছিরেন৷ তিনি নাজাতদাতা মসিহের আগমনের জন্য তাদের প্রস্তুত করেছিলেন আর তারা তার লোকদের সমাজে বসবাস করতেন, আর তারা ঐশি নূরের গৌরবজনক মহিমা দেখতে পেয়েছিলেন৷
ইশাইয়া নবীর কিতাব অনুযায়ী ইয়াকুবের বংশের হৃদয় কঠিন হয়েছিল মসিহের আবির্ভাবের ৭০০ বত্সর পূর্বে (ইশাইয়া ৬: ৫-১৩) মসিহ উক্ত বিষয়টি পরিষ্কারভাবে স্বীকার করেছেন (মথি ১৩:১১-১৫), আর পৌল দুঃখের সাথে বিশদভাবে বর্ণনা দিয়েছেন (প্রেরিত ২৮:২৬-২৮)৷ তাদের হৃদয়ের কাঠিন্যতা মারাত্মক আকারে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিল যখন তারা তাদের রাজাকে সলিবে হত্যার জন্য সিদ্ধান্ত নিল, আর প্রত্যাখ্যান করলো পাকরূহকে হৃদয়ে বসবাস করতে৷ রোমীয় সম্রাট তারপর তাদের ক্রীতদাস হিসেবে বিশ্বের সর্বত্র পাঠিয়ে দিলো৷
ইহুদিদের মনের কঠিন অবস্থা চিরজীবন থাকবে না৷ যতক্ষণ পর্যন্ত না অন্যান্য জাতির একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকজন বিশ্বাসী না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তা থাকবে৷ অন্যান্য জাতির গুনাহগার লোকজন তওবা করে প্রভুর কাছে ফিরে আসার পরে খোদা ইহুদি জাতিকে চূড়ান্ত সুযোগ দান করবেন অনুতাপ ও মসিহের মধ্যে পুনর্জাত হবার জন্য৷
কিন্তু সে কোন ইস্রায়েল জাতি, যারা যুগের শেষ সময়ে নাজাত লাভ করবে, পৌল কি এদের প্রসঙ্গে, কথা বলেছেন যে কথাটা জামাতে ও জনগনের জন্য চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী সংবাদ? (বর্তমানে রাষ্ট্রীয় কর্মযজ্ঞের কথা আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে পড়ে না, এটা হলো রুহানি সম্রাজ্য৷)
সারমর্মঃ মসিহের নজরে কে যে সত্যিকারের ইহুদি সে বিষয়ে আমাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবার প্রয়োজন নেই৷ কিতাবুল মোকাদ্দস শিক্ষা দেয় যে 'ইস্রায়েল' শব্দটি রাজনৈতিক কর্মকান্ড বা প্রশাসনিক রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর কথা বলে না, বলে না একটি বিশেষ দল বা গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে, কিন্তু প্রাথমিক দিক দিয়ে একটি রুহানি সত্যের বিষয় ঘোষণা দেয়৷ বর্তমানে ইয়াকুবের বংশের হাজার হাজার সন্তান নব জন্মপ্রাপ্ত রয়েছে যারা ছড়িয়ে রয়েছে মধ্যপ্রাশ্চে, ইউরোপে, আমেরিকায়, যারা হলো সত্যিকারের মনোনীত লোক, মসিহের রুহানি শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ৷ আমরা জানি না কত অধিক পরিমানে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, তবে একটা বিসয় জানি, তারা মারাত্মকভাবে তাড়িত নির্যাতিত হচ্ছে মসিহের শত্রুদের হাতে, কিংবা নিজ দেশে কিংবা পরদেশে, পৃথিবীর সর্বত্র৷ যাহোক, মসিহ নিজেই তাদের চয়ন করবেন তাঁর ওপর বিশ্বাসী মৃতদের আত্মা সকল, আর তাদের পবিত্র সিংহাসনের সামনে তুলে ধরবেন (প্রকাশিত কালাম ১৩:৭, ১৪:১-৫)৷
যে কেউ রোমীয়দের কাছে লেখা পৌলের পত্র নিয়ে গভীরভাবে ধ্যানমনন করে (রোমীয় ১১ ঃ ২৬-২৭) সে দেখতে পাবে ইয়াকুবের সন্তানদের নাজাত সংক্রান্ত সকল ভবিষ্যদ্বানী কতকগুলো ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে:
পৌল সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন ইহুদি জাতির ধার্মিক গোষ্ঠি সুসমাচারের শত্রুতে পরিণত হলো নতুন ব্যবস্থার কারণে৷ যাহোক, এ সমস্যা সৃষ্টির কারণে অবহেলিত জাতি সমূহ মসিহের মাধ্যমে নাজাত লাভ করলো, আর বিশ্বাসে খোদার রহমতের অধিকারী হলো৷
একই সময় অইহুদিদের জন্য মনোনীত প্রচারক ইহুদিদের কাছেও নিশ্চয়তা দিলেন, যারা রোমীয় জামাতের শত্রু ছিলেন তারা খোদার কাছে অদ্যাবধি প্রেমের পাত্র বলে হচ্ছে বিবেচিত, কেননা তাদের পিতা, পিতামহদের বিশ্বাস আর তাদের বিশ্বস্ত থাকার জন্য মনোনয়ন৷ এভাবেই যে কেউ খোদার দ্বারা মনোনীত হয় তারা নিয়ত মনোনীতই থাকেন, এমনকি তাদের দ্বারা কৃত পাপকর্ম অথবা খোদার মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করা হলেও৷ বিশ্বাসের ফলে সকল প্রকার রুহানি আশির্বাদ ও প্রাধিকার বিশ্বাসীকে যা কিছু দেয়া হয় তা অপরিবর্তনীয় বিশ্বস্ততার সাথে চলতে থাকবে (রোমীয় ১১:২৯)৷ তাই আমাদের যেভাবে বেছে নেয়া হয়েছে তাতে যেন কোনো প্রকার সন্দেহের সৃষ্টি না হয়, আমাদের ধার্মিক বলে গণ্য করা হয়েছে, খোদার কালামের ওপর আস্থা রাখুন, যেমন একটি শিশু তার পিতার কথায় রাখে আস্থা বিশ্বাস৷
রোমীয় ১১:৩০-৩১ পদে ইয়াকুবের সন্তানদের নাজাতের বিষয়বস্তু ও লক্ষ্যবিন্দুকে সামনে রেখে পুনরায় পৌল তাঁর পত্রের দ্বিতীয় খন্ডে একই বিষয় জোরালোভাবে বর্ণনা দিয়েছেন৷ তিনি চেষ্টা করেছেন রোমের জামাতের শত্রুদের হৃদয়ে গুরুত্বের সাথে প্রবৃষ্ট করাতে৷
ফলস্বরূপ, যে কেউ পত্রের দ্বিতীয় অংশ বুঝতে চায়, যা পৌল রোমের জামাতের কাছে লিখেছেন, তাকে অবশ্যই গভীরভাবে মনোনিবেশ করতে হবে এ সকল নীতিমালার দিকে আর অনুরোধ ও প্রার্থনায় পরিণত করতে হবে ঐসকল নাজাতবিহীন লোকদের জন্য যেন তারাও নাজাত লাভ করতে পারে৷
পৌল আন্তরিকভাবে এ নীতিমালা লক্ষ্য করেছেন, আর তা খোদার প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধা ও এবাদতের কাজে প্রয়োগ করেছেন৷ তিনি পবিত্র সত্তাকে মহিমান্বিত করেছেন, কেননা ইহুদিদের অবাধ্যতা ও বিদ্রোহের বিষয়ে তিনি জানতেন আর এর ফলে তিনি পুনরায় তাদের সকলের কাছে যেন করুনা প্রকাশ করতে পারেন কেননা নাজাত সকলের জন্যই হয়েছে প্রস্তুত যা কেবল বিশ্বাসের ফলেই হবে লব্ধ (রোমীয় ১১:৩২)৷
পৌল সকল লোকের জন্য শর্তশূন্য পুনর্মিলনের কথা প্রচার করেন নি, তিনি বলেন নি যে যুগের শেষ দিকে তার প্রেমের কারণে সকল পাপী মুক্তপাপ করবেন, দোযখ খালী করে ফেলবেন, খোদাদ্রোহী সকলকে মুক্ত করবেন, তাতে তাদের মুক্ত হবার ইচ্ছা থাক বা না থাক৷ এ বিশ্বাস তারাই পোষণ করে যারা শয়তানের পূজা করে আর উক্ত শয়তান সাথে নিয়ে বেহেশতে প্রবেশ করতে চায়৷ এ প্রবণতা কেবল প্রতারণা ও অহমিকা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ কেননা খোদা একদিকে প্রেম অন্য দিকে সত্য আর তাঁর ন্যায়পরায়নতা হলো অবিভাজ্য৷
পৌলের প্রত্যাশা ছিল, সকলে তওবা করবে এবং নাজাতদাতার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে ইহুদি সমপ্রদায়ের মুক্তি লাভ করবে, আর এ বিষয়ে মসিহ নিজেও খুবই সংযত ছিলেন৷ যারা গরীবদের মহব্বত করে না, ঘোষণা অনুযায়ী, শেষ বিচারের দিনে তিনি তাদের বলবেন, 'দূর হও আমার কাছে থেকে, তোমরা অভিশপ্ত' (মথি ২৫:৪১) ইউহোন্নার কাছে মসিহের প্রকাশ করা কালামে উক্ত ভিতিকর সত্য বিষয় নিশ্চিত করে বলা হয়েছে (প্রকাশিত কালাম ১৮:৯-১৪; ২০:১০; ২১:৮)
প্রার্থনা: আমাদের বেহেশতি পিতা, আমরা আনন্দ করি, উল্লাস করি, কারণ তোমার প্রতিজ্ঞা সদাসর্বাদ সত্য, বাস্তবতা ও পূর্ণতা লাভ করে৷ আমরা তোমাকে ধন্যবাদ দেই ইয়াকুবের বংশের অবশিষ্ট পবিত্র সন্তানদের জন্য, যারা বিভিন্ন গোত্রের মধ্য থেকে অদ্যাবধি বেঁচে রয়েছে, অনুতপ্ত হয়েছে এবং মসিহের অভিষেক ও শান্তি বরণ করে নিয়েছে৷ পাকরূহের শক্তিতে চলার তৌফিক ও বাধ্যতার মনোভাব আমাদের দান করো আর যেন সাগ্রহে নাজাতদাতা মসিহের আগমনের অপেক্ষায় থাকতে পারি সে ধৈর্য দান করো৷
প্রশ্ন:
- ৭৭. কোন কারণে খোদার প্রতিজ্ঞা কোনো অবস্থায় ব্যর্থ হয় না কিন্তু টিকে থাকে অনন্তকাল ধরে?৭৮. করা রুহানি ইস্রায়েল?