Previous Lesson -- Next Lesson
ক) মানুষেরা ঈসা মসিহের দিকে ঝুকে পড়ে (যোহন ২:২৩-২৫)
যোহন ২:২৩-২৫
২৩. ঈদুল ফেসাখের সময়ে ঈসা মসিহ জেরুজালেমে থাকিয়া যে সমস্ত আশ্চর্য কাজ করিতেছিলেন তাহা দেখিয়া অনেকেই তাহার ওপর ঈমান আনিল৷ ২৪. ঈসা মসিহ কিন্তু তাহাদের নিকট নিজেকে ধরা দিলেন না, কারণ তিনি সমস্ত মানুষকে জানিতেন৷ ২৫. মানুষের বিষয়ে কাহারও সাক্ষ্যের দরকারও তাহার ছিল না, কারণ মানুষের মনে যাহা আছে তাহা তাহার জানা ছিল৷
খোদার নির্ধারিত মেষশাবক ঈসা মসিহ জেরুজালেমে এসেছিলেন এবং তার ভালোবাসা ও ক্ষমতোার অনেক নির্দশন দেখিয়েছিলেন৷ এতে করে তিনি অনেক মানুষের মনোযোগ আর্কষণ করেছিলেন এবং অনেকের মুখে মুখে তার নাম ছড়িয়েছিল, তারা চুপি চুপি বলছিল, 'ইনি কি একজন নবী, না অগ্রবতর্ী ইলয়াস, অথবা হয়তো মসিহ?' অনেকেই তার কাছে গেল এবং বিশ্বাস করলো যে তিনি খোদার কাছ থেকেই এসেছেন৷
ঈসা মসিহ তাদের হৃদয়কে দেখতে পেলেন কিন্তু কাউকেই নিজের সাহাবি হিসেবে মনোনীত করলেন না৷ তখনো পর্যন্ত তারা তার রুহানি ব্যক্তত্বকে আবিষ্কার করতে পারেনি কেননা তারা পার্থিবভাবে চিন্তা করছিল৷ তাদের মনে ছিল রোমের শাষণ থেকে মুক্তি, যথাযোগ্য কর্মজীবন এবং আরামদায়ক ভবিষ্যত্৷ ঈসা মসিহ সব মানুষকে চিনতেন, তার চোখে কোনো হৃদয়ই লুকায়িত ছিল না৷ একজনও খোদাকে আন্তরিকভাবে সন্ধান করেনি৷ তারা যদি খোদাকে আন্তরিকভাবে খুঁজতো তাহলে তারা জর্দানে বাপ্তিস্ম নিত এবং তাদের পাপ স্বীকার করতো এবং অনুতপ্ত হতো৷
ঈসা মসিহ আপনার হৃদয়, কল্পনা, প্রার্থনা এবং পাপ সমূহকে জানেন৷ তিনি আপনার চিন্তাধারা এবং ওগুলোর উত্সের কথাও জানেন৷ তিনি এটা উপলব্ধি করেন যে আপনি একটি বেশ ভালো ও ন্যায়পরায়ণ পূর্ণ জীবন চান৷ কখন আপনার গর্ব খর্ব হবে? এবং কখন আপনি নিজে স্বার্থপরতা থেকে সরে আসবেন যাতে করে আপনি পাক-রুহের দ্বারা পূর্ণ হতে পারেন?
খ) একটি নতুন জন্মলাভের প্রয়োজন (যোহন ৩:১-১৩)
যোহন ৩:১-৩
১. ফরিশিদের মধ্যে নিকদিম নামে ইহুদিদের একজন নেতা ছিলেন৷ ২. একদিন রাত্রে তিনি ঈসা মসিহের নিকটে আসিয়া বলিলেন, 'হুজুর, আমরা জানি, আপনি একজন আলেম হিসেবে খোদার নিকট হইতে আসিয়াছেন, কারণ আপনি যে সমস্ত আশ্চর্য কাজ করিতেছেন, খোদা সঙ্গে না থাকিলে কেহ তাহা করিতে পারে না৷' ৩. ঈসা মসিহ নিকদিমকে বলিলেন, 'আমি আপনাকে সত্যই বলিতেছি, নতুন করিয়া জন্ম না হইলে কেহ খোদার রাজ্য দেখিতে পায় না৷'
নিকদিম নামে জনতার মধ্য থেকে একজন উপস্থিত হলেন যিনি খুবই ধার্মিক এবং প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন এবং যিনি স্যানহেড্রিনে সত্তর জনের মধ্যে একজন ছিলেন৷ তিনি মসিহের ভিতর খোদার ক্ষমতোাকে উপলব্ধি করলেন৷ হয়তোবা তিনি চেয়েছিলেন এই নতুন নবী এবং ইহুদি পরিষদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করতে৷ একই সময় তিনি প্রধান ঈমাম এবং সাধারণ জাতিগোষ্ঠীর লোকদেরকে ভয় করতেন৷ ব্যক্তি ঈসা মসিহের ব্যাপারে তিনি অনিশ্চিত ছিলেন৷ তিনি অন্ধকারের মধ্যে গোপনে ঈসা মসিহের কাছে এসেছিলেন ঈসা মসিহকে পরীক্ষা করবার জন্য তার দলে যোগ দেবার আগে৷
গুরু খেতাব দিয়ে নিকদিম বেশির ভাগ মানুষের দৃষ্টিকে প্রকাশ করছিলেন ঈসা মসিহের ব্যাপারে যে পাক কিতাব শিক্ষা দিয়েছিল কিছু অনুসারীদের সাথে৷ তিনি সম্মত হলেন যে ঈসা মসিহ খোদার কাছ থেকে প্রেরিত হয়েছিলেন এবং তাকে নির্দশন দ্বারা প্রত্যয়ন করেছিলেন৷ তিনি স্বীকার করেছিলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি খোদা আপনার সাথে আছেন এবং আপনাকে সমর্থন করেন৷ আপনি হয়তোবা ঈসা মসিহ হতে পারেন?' এটা ছিল আরও বেশি পরোক্ষ স্বীকৃতি৷
ঈসা মসিহ তার প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন, তবে সেটা ঈসা মসিহের কাছে যেত যে সমস্ত নেতারা তাদের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করেই তিনি নিকদিমের বিপথগামী হৃদয়, তার পাপসমূহ এবং ন্যায়পরায়ণতার জন্য তার আকাঙ্ক্ষা দেখতে পেয়েছিলেন৷ তিনি তাকে সাহায্য করতে পারতেন কেবলমাত্র তার আধ্যাত্মিক অন্ধত্বকে দেখানোর পর৷ নিকদিমের ধর্মানুরাগ সত্ত্বেও সে সত্যিকারভাবে খোদাকে চিনতে পারেনি৷ ঈসা মসিহ তার কাছে খুবই মনখোলা ছিলেন এবং বললেন, 'সত্যই কোন মানুষ তার নিজের প্রচেষ্টায় খোদাকে চিনতে পারে না, তার প্রয়োজন হলো আধ্যাত্মিক পুনজন্মর্ের যা বেহেস্তী রুহ থেকে আসে৷'
এই ঘোষণা ছিল ধর্মতত্ত্ব এবং মতোবাদের ওপর ঈসা মসিহের বিচার যার ভিত্তি ছিল কেবলমাত্র যুক্তিবিদ্যা৷ কারণ খোদার বিষয়ে জ্ঞান বুদ্ধিগত বা তাত্তি্বক বক্তৃতার মধ্য দিয়ে আসে না কিন্তু নূতন জন্মলাভের মধ্য দিয়ে আসে৷ একটি রেডিও সেট যা টেলিভিশনের মতো না, যার গাঁটগুলিকে আপনি ইচ্ছামতো চালনা করতে পারেন কিন্তু আপনি কোনো ছবি দেখতে পাবেন না৷ ছবি দেখার জন্য প্রয়োজন হলো রেডিও থেকে সম্পূর্ণ একটি আলাদা সেটের৷ তাই সাধারণ মানুষ ও তার ধর্মানুরাগ এবং কার্যাবলি সত্ত্বেও খোদাকে দেখতে পারে না, এবং চিন্তা বা অনুভূতি দিয়েও না৷ এই আধ্যাত্মিক উপলব্ধির প্রয়োজন হলো একটি আমূল পরিবর্তনের, একটি বেহেস্তি জন্মলাভ এবং একটি নতুন সৃষ্টির৷
যোহন ৩:৪-৫
৪. তখন নিকদিম তাহাকে বলিলেন, 'মানুষ বৃদ্ধ হইয়া গেলে কেমন করিয়া তাহার আবার জন্ম হইতে পারে? দ্বিতীয় বার মায়ের গর্ভে ফিরিয়া গিয়া সে কি আবার জন্মগ্রহণ করিতে পারে৷' ৫. উত্তরে ঈসা মসিহ বলিলেন, 'আমি আপনাকে সত্যই বলিতেছি, পানি এবং পাক-রুহ হইতে জন্ম না হইলে কেহই খোদার রাজ্যে ঢুকিতে পারে না৷
ঈসা মসিহের উত্তরের অর্থ হলো খোদা সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং নিকদিমকে বিভ্রান্ত করেছিল৷ তিনি দ্বিতীয় জন্ম সম্পর্কে কিছু শোনেন নাই৷ এই কথা শোনার পর তিনি হতবুদ্ধি হয়েছিলেন ফিরে যেতে পারে৷ এই উত্তর অদূরদর্শিতাকে নির্দেশ করে যা জ্ঞানের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি হয়েছিল৷ তিনি এই কথা বুঝতে পারেননি খোদা যিনি পিতা তার রুহ দিয়ে সন্তান সৃষ্টি করতে পারেন৷
ঈসা মসিহ নিকদিমকে ভালোবাসতেন এবং তাকে স্বীকার করালেন যে সে খোদার রাজ্যের পথকে এই ঘোষণা দিয়ে যে তিনিই ছিলেন সত্য৷ আমাদেরকে এটা বিশ্বাস করতে হবে যে, দ্বিতীয় জন্ম ব্যতিত আমরা খোদার রাজ্যে প্রবেশ করতে পারি না এবং এটাই একমাত্র উপায়৷
দ্বিতীয় জন্ম কী? এটা হলো একটি জন্ম কেবলমাত্র ধারণা নয়, অথবা মানুষের প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে আসে না যেহেতু কেউই নিজেকে নিজে জন্ম দিতে পারে না, খোদা জীবনদাতা এবং পিতা হয়ে আসেন৷ এই আধ্যাত্মিক জন্ম হলো একটি রহমতো, ঠিক একটা চরিত্রের সংস্কার নয় অথবা একটা সামাজিক নিয়মানুবর্তিতা নয়৷ সবাই প্রথম জীবন থেকেই দুষ্ট এবং উন্নতির আশায় থাকে নিরাশ৷ আধ্যাত্মিক জন্ম হলো মানুষের জীবনের মধ্যে খোদার প্রবেশলাভ৷
এটা কী করে সম্ভব? ঈসা মসিহ নিকদিমকে বললেন এটা অর্জিত হয় পানি এবং রুহের মাধ্যমে৷ যোহনের বাপ্তিস্ম পানি এবং বিবাহ ভোজসভার বিশুদ্ধ করণ পাত্রগুলির কথা বলে৷ পুরাতন নিয়মের লোকেরা জানত অজু করতে পানির প্রয়োজন হয় যা পাপ ধৌতকরণের চিহ্ন হিসেবে ধরা হতো৷ যেমন ঈসা মসিহ বলতেন, 'তোমরা কেন বাপ্তিস্মদাতার কাছে যাও না, তোমাদের পাপ সকল স্বীকার কর এবং বাপ্তিস্ম নাও'৷ অন্য কোথাও ঈসা মসিহ বলেছিলেন, 'কেউ যদি আমাকে অনুসরণ করে, নিজেকে অস্বীকার করতে হবে, তাকে ক্রুশ গ্রহণ করতে হবে, এবং আমার পিছনে পিছনে আসতে হবে'৷ ভাই, আপনার দোষ সকল স্বীকার করুন, আপনার গুনাহের জন্য খোদার বিচারকে গ্রহণ করুন৷ আপনি কলুষিত এবং বিনষ্টের পথে৷
পানি দ্বারা বাপ্তিস্ম নেওয়ার ব্যাপারে ঈসা পরিতৃপ্ত ছিলেন না, কিন্তু প্রায়শ্চিত্তকারীদেরকে পাক-রুহের দ্বারা বাপ্তিস্ম নিয়ে ভগ্ন হৃদয় মানুষদেরকে একটি নতুন জীবন সৃষ্টির জন্য পরিতৃপ্ত ছিলেন৷ তার ক্রুশ বিদ্ধের পর আমরা জানলাম তার রক্ত দ্বারা আমাদের বিবেকের ধৌতকরণ হয়েছে৷ এই ধৌতকরণ পাক-রুহের কাজ৷ মানুষ যখন রুহের দ্বারা পরিচালিত হয় তখন সে অনন্ত জীবন এবং তার ফল পায় এবং ঈসা মসিহের দ্বারা চালিত হয়ে একটি ভালো মানুষে পরিণত হয়৷ এই রূপান্তর ঘটতে সময় লাগে ঠিক যেমন গর্ভের মধ্যে ভ্রূনের বৃদ্ধি ঘটে এবং জন্ম নেয়৷ তাই বিশ্বাসীদের মধ্যেও দ্বিতীয় জন্ম ঘটে৷
এটাকেই ঈসা মসিহ তার ধর্মশিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে তৈরি করেছিলেন, যেটা হলো খোদার রাজ্যের আসল বিষয়বস্তু৷ সুতরাং এই রাজ্য কী? এটা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন অথবা অর্থনৈতিক তত্ত্ব নয়, কিন্তু পিতা, পুত্র এবং পাক-রুহের দ্বারা পুনর্জন্মের সহভাগিতা৷ এই আর্শিবাদের রুহ তাদের ওপরে আসে যারা নিজেদেরকে মসিহের কাছে সমর্পণ করে, এবং তাদের রাজা বলে স্বীকার করে এবং তাকে মেনে চলে৷
প্রার্থনা: প্রভু ঈসা মসিহ, আমার পুনর্জন্মের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ দেই যা কেবল রহমতের মধ্য দিয়ে এসেছে৷ তুমি আমার আধ্যাত্মিক চক্ষু খুলে দিয়েছে৷ আমাকে তোমার ভালোবাসার মধ্যে থাকতে দাও৷ যারা তোমাকে বিশ্বস্তভাবে সন্ধান করে তাদের চোখ খুলে দাও এবং তাদেরকে পাপসমূহ বুঝতে দাও এবং স্বীকার করতে দাও, যাতে করে তারা তোমার পাকরুহের শক্তি দ্বারা নবজীবন পায়, এবং তাদেরকে তোমার রক্ত ঝরার সাথে রাখ যাতে করে তারা তোমার অনন্ত সহভাগিতার মধ্যে থাকতে পারে৷
প্রশ্ন: