Previous Lesson -- Next Lesson
২. আমরা মসিহের ওপর বিশ্বাসে ন্যায়বান বলে প্রতিপন্ন হয়েছি (রোমীয় ৩:২৭-৩১)
রোমীয় ৩:২৭-২৮
২৭. এর পর মানুষের গর্ব করবার আর কি আছে? কিছুই নেই৷ কিন্তু কেন নেই? মানুষ শরীয়ত পালন করে বলে কি তার গর্ব করবার কিছু ইে? তা নয়৷ আসল কথা হলো, ঈমানের মধ্যে গর্বের জায়গা নেই, ২৮ কারণ আমরা জানি, আল্লাহ মানুষকে তার ঈমানের জন্য ধার্মিক বলে গ্রহণ করে, শরীয়ত পালন করবার জন্য নয়৷
সলিবের মাধ্যমে জগতকে খোদার সাথে পুনর্মিলন ও ন্যায়বান বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ যাহোক, কেবলমাত্র বিশ্বাসের দ্বারাই মানুষ ন্যায়বান বলে গৃহীত হয়ে থাকে৷ 'বিশ্বাস' শব্দটিকে আমরা দেখতে পাই ৯ বার ২১ আয়াত থেকে ৩১ আয়াতের মধ্যে, যেখানে সাহাবি প্রত্যয়ের সাথে বলেছেন, কেবল জীবন্ত কর্মক্ষম বিশ্বাসের মাধ্যমেই তোমরা নাজাত পেয়েছো৷
এ নীতি সকল ধর্ম ও দর্শনে একটি আমূল পরিবর্তন বয়ে আনে, যেহেতু খোদা পাপীদের শাস্তি না দিয়ে সকল মানুষকে সমভাবে ক্ষমা করে দিয়েছেন৷ সুতরাং পরিশ্রম, পুরষ্কার, ভালো কাজ এবং শরীয়তের নিয়মানুবর্তিতা নিয়ে জগতের প্রচলিত নীতি ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে, কেননা খোদা আমাদের উদারভাবে ক্ষমা করেছেন, তাঁর অনুগ্রহের যুগে নিয়ে এসেছেন, আর শরীয়তের শৃঙ্খল থেকে করেছেন মুক্ত৷ শরীয়তের অধীনে আপনি যদই ধমর্ীয় বিধিবিধান কৃচ্ছ্রতা পালন করুন না কেন, আপনি কিন্তু গুনাহগারই থেকে যাবেন, যতই রোজা থাকেন, দান খয়রাত দিন না কেন, এবং ধার্মিকতার পরাকাষ্ঠা আপনার থাক না কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি মসিহের ধার্মিকতা ও বেগুনাহ রক্ত ধন্যবাদ ও বিশ্বাসে গ্রহণ না করছেন আপনি যেই তিমিরে রয়েছেন সেই তিমিরেই থেকে যাবেন৷ এ পবিত্রকরণ ও ন্যায় পরায়নতার ক্ষেত্রে আপনার কোনোই ভুমিকা নেই৷ তা খোদার তরফ থেকে উপহার হিসেবে আপনার কাছে এসেছে৷ তিনি সম্পূর্ণভাবে আপনাকে ন্যায়পরায়ন হিসেবে বেছে নিয়েছেন৷ তা আপনার ধার্মিকতা বা সরলতার জন্য দত্ত হয় নি, কিন্তু মসিহের পূতপবিত্র রক্ত আপনার বিবেক অন্তরাত্মা পাকসাফ করে তুলেছে বিধায় হয়েছে সম্ভব৷ কি অপরূপ করুনা রয়েছে আমাদের জন্য!
বিশ্বাস বলতে বুঝা যায় এ অনুগ্রহের প্রতি রয়েছে আপনার স্বীকৃতি, রয়েছে ধন্যবাদ এবং প্রদানকারীর সাথে ঘটেছে আন্তরিক মিলন৷ আমরা যারা অপরাধি তাদের প্রতি সলিবেহত মসিহ হলেন খোদার দান৷ খোদা তাঁর মাধ্যমে আমাদের কাছে নেমে এসেছেন এবং স্নাতশুভ্র করেছেন, নিজেকে আমাদের কাছে দান করেছেন, আর গুনাহগারদের করেছেন ন্যায়বান৷ তাই মসিহের সাথে দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকুন, প্রার্থনাশীল ও বিশ্বাস সহ, যেন তাঁর শক্তিধর ধার্মিকতা আপনাকে শক্তিধর করে তুলতে পারে৷ তাঁর প্রেমের স্বীকৃতি দিয়ে তাঁর মধ্যে সমর্পিত থাকুন৷
বিশ্বাস গুনাহগারদের নাজাত দান করে৷ বিশ্বাস মানুষের চিন্তাধারাকে বদলে দেয়৷ নিজের প্রচেষ্টায় নাজাত অর্জন এবং অহংকার ও স্বধার্মিকতাকে সম্পূর্ণ অকার্যকর করে তোলে, কেননা মসিহের জ্ঞানের আলোকে আমরা আমাদের অবস্থান দেখতে পাই যা কেবল মুর্খতাই মাত্র, হিংসাপ্রবণ, দোষী, আর হতাশায় ভরা৷ করুনাময় খোদা ভিন্ন আমাদের কোথাও নাজাত প্রাপ্তির উপায় নেই৷ আপনি উত্তরাধিকারের বলে উন্নত হতে পারেন না, অথবা অতি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা অর্জনের দ্বারা তা লাভ হয় না, অথবা বিশেষ জাতিগোষ্টির কারণে অথবা অন্য কোনো কিছু, আপনি নাজাত পান নি ঐতিহ্যের কারণে, বিশেষ শিক্ষালাভের ফলে, মেধারগুনে, কিন্তু মসিহের উপর বিশ্বাস স্থাপনের ফলে হয়েছে আপনার নাজাত লাভ৷ তাই খোদার পুত্রের উপর সমর্পিত হোন আর তাঁর নতুন চুক্তিতে আবদ্ধ হোন, তাকে ছাড়া আপনার জীবন পাপের অতলে মৃত পড়ে থাকে, কেবল তাঁর মধ্যে আপনি সত্যিকারার্থে নাজাত প্রাপ্ত, আর আপনার ধার্মিকতা বইতে থাকবে অনন্তকাল ধরে৷ খোদাকে সন্তুষ্ট করার ভিন্ন কোনো উপায় নেই, মসিহের রক্তে বিশ্বাস স্থাপন ব্যতিরেকে, আর মসিহের মধ্যে জীবন যাপন করার ফলে৷ খোদা তাঁর নিজের ধার্মিকতা আপনার উপর অর্পন করেছেন, তাই তাঁর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করুন, কেননা বিশ্বাস নিজেই আপনাকে মসিহের আশির্বাদ, ক্ষমতা ও অধিকারের যোগ্য ভাগীদার হিসেবে যোগ্য করে তোলে৷
রোমীয় ৩:২৯-৩১
২৯ আল্লাহ কি তবে কেবল ইহুদিদেরই, অ-ইহুদিদের নয়? জ্বী, নিশ্চয় তিনি অ-ইহুদিদেরও আল্লাহ, ৩০ কারণ আল্লাহ তো মাত্র একজন৷ তিনি ইহুদিদের যেমন ঈমানের মধ্য দিয়ে ধার্মিক বলে গ্রহণ করবেন তেমনি অ-ইহুদিদেরও করবেন৷ ৩১ এই ঈমানের জন্য কি আমরা তাহলে শরীয়ত বাতিল করে দিচ্ছি? কখনও না, বরং শরীয়তের কথা যে সত্যি তা-ই আমরা প্রমাণ করছি৷
এ বিশদ পত্রটি পৌল রোমের জামাতের কাছে লিখেছেন৷ ন্যায় প্রতিপাদনের বিষয় প্রত্যয়ের সাথে ও সংক্ষিপ্তাকারে ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন, তিনি তাঁর আত্মায় কিছু আপত্তিজনক উক্তি শুনতে পাচ্ছিলেন৷
গ্রীকদের বক্তব্য হলো; 'মসিহের মৃতু্য যদি শরীয়তের লোকদের ঘৃণীত পাপের মাগফেরাতের জন্য খোদার ধার্মিকতা প্রকাশ করে, তবে সলিব কেবল তাদের জন্য হবে প্রযোজ্য, আর আমরা অবশ্যই রয়ে গেলাম শরীয়ত মুক্ত৷'
পৌল তাদের প্রশ্নের জবাব দিলেন; 'কিন্তু খোদা সকল মানুষের গুনাহ ক্ষমা করেছেন৷ ইহুদিদের জন্য একজন খোদা নন, আর অন্য একজন খোদা হলেন অন্যান্য জাতির জন্য, আসলে খোদা মাত্র একজনই আছেন, তিনি মসিহের সলিবে মৃতু্যর মাধ্যমে নাজাত করেছেন, খত্না করানো অথবা খত্না না করানো উভয় দলের লোকদের তাদের বিশ্বাসের মাধ্যমে৷'
তখন কতিপয় ইহুদি চিত্কার করে উঠলেন, 'অসম্ভব! এটা অসম্ভব! খত্না বা শরীয়ত ব্যতিত অন্যান্য লোক নাজাত পেয়ে যাবে, এমন চিন্তা খোদার বিরুদ্ধে নিন্দা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ পৌল তুমি খোদার প্রত্যদেশের উল্টো অর্থ করে ফেলেছো৷'
ধর্মান্ধদের প্রশ্নের জবাবে পৌল লিখলেন, 'খোদার প্রত্যাদেশের অর্থ উল্টো করা আমার পক্ষে অসম্ভব, তা দূরে থাক৷ পক্ষান্তরে, আমরা সলিবের সুখবর প্রচারের মধ্য দিয়ে শরীয়তের পক্ষ সমর্থন করছি, আর আমরা বিশদ ব্যাখ্যা দিচ্ছি যে, খোদার কোরবানির বর্ণনা হলো শরীয়ত৷ শরীয়তের সকল দাবি-দাওয়া সলিবের মাধ্যমে পেয়েছে পরিপূর্ণতা লাভ
ধমর্ীয় গোড়া ও উদারপন্থীদের সাথে পৌলের কঠিন সংগ্রামের দ্বারা তাঁর অবস্থা আমরা বুঝতে পারি যে বিশ্বাসীদের মধ্যে সকলেই যে মনে প্রাণে খোদার ধার্মিকতা ও মহত্ত্ব মেনে নিয়েছে, আসলে তা নয়, তারা সুসমাচার বিশ্বাসে ধার্মিক বলে সাব্যস্থ হয়৷ অল্প সংখ্যকই মসিহি স্বাধীনতার পতাকা তলে জড় হয়েছে, যা শরীয়ত পালনের মাধ্যমে তথা জাতিগত অবস্থান অথবা মানবীয় চুক্তি মোতাবেক অর্জনের সম্ভাবনা ছিল না, কেবলমাত্র বিশ্বাসের মাধ্যমেই অর্জিত হয়ে থাকে৷ মসিহের ওপর আত্মসমর্পণ প্রমাণ করে আমাদের বিশ্বাসের ব্যাপ্তি৷ আর আমাদের আস্থা রয়েছে তার ওপর যিনি অনন্ত কালের জন্য আমাদের প্রেম করেছেন৷
প্রার্থনা: হে পিতা, তোমাকে ধন্যবাদ দেই, কেননা স্বধার্মিকতা থেকে তুমি আমাদের রক্ষা করেছো, আর মসিহের ক্ষমতার বলে আমাদের ধার্মিক বলে গণ্য করেছো৷ আমরা নিজেদের দিকে তাকালে দেখতে পাই, আমরা শুধুই গুনাহগার কিন্তু সলিবে হত মসিহের প্রতি যখন দৃকপাত করি, তখন আমাদের প্রতি দত্ত ধার্মিকতা দেখতে পাই৷ মিথ্যা আরাধনা থেকে আমাদের বাঁচাও, মানবীয় প্রচেষ্টা ও কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে যেন আমরা আমাদের ধার্মিকতা না খুঁজি, কিন্তু তোমার পুত্রের কোরবানির মাধ্যমে অর্জিত ধার্মিকতায় যেন সন্তুষ্ট থাকতে পারি৷ কেননা তিনি তো আমাদের স্থলেই পাপের কাফফারা পরিশোধ দিয়েছেন মর্মবিদারি সলিবে৷ সম্পূর্ন ন্যায়পরায়ন বলে গ্রহন করার জন্য আজীবন তোমার কাছে রইলাম সমর্পিত৷
প্রশ্ন:
কারণ আমরা জানি, আল্লাহ মানুষকে তার ঈমানের জন্য ধার্মিক বলে গ্রহণ করেন,
শরীয়ত পালন করবার জন্য নয়৷
(রোমীয় ৩:২৮)