Previous Lesson -- Next Lesson
গ) মায়ের কাছে মসিহের বাণী ইউহোন্না (যোহন ১৯:২৫-২৭)
যোহন ১৯:২৪খ-২৭
তা দেখে সৈন্যেরা একে অন্যকে বলল, 'এটা না ছিঁড়ে বরং ভাগ্য পরীক্ষা করে দেখি এটা কার হবে৷' এটা ঘটেছিল যাতে পাক-কিতাবের এই কথা পূর্ণ হয়, তারা নিজেদের মধ্যে আমার কাপড়-চোপড় ভাগ করছে, আর আমার কাপড়ের জন্য তারা ভাগ্য পরীক্ষা করছে৷ আর সত্যিই সৈন্যেরা এই সব করেছিল৷ ঈসার মা, তাঁর মায়ের বোন, ক্লোপার স্ত্রী মরিয়ম আর মগদলীনী মরিয়ম ঈসার ক্রুশের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ ঈসা তাঁর মাকে এবং যে উম্মতকে মহব্বত করতেন তাঁকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন৷ প্রথমে তিনি মাকে বললেন, 'ঐ দেখ, তোমার ছেলে৷' তারপরে সেই উম্মতকে বললেন, 'ঐ দেখ, তোমার মা৷' তখন থেকেই সেই উম্মত ঈসার মাকে তাঁর নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন৷
গোটা বিশ্বকে ক্ষমা করার প্রথম যে বানী মসিহ ঘোষণা করেছেন সে বিষয়ে ইউহোন্না উলেস্নখ করেন নি৷ মসিহ যে প্রতিনিয়ত ইহুদিদের ঠাট্টাবিদ্রম্নপের শিকার হয়েছেন এবং ডান দিকের ডাকাতটিকে যেভাবে ক্ষমা করেছেন সে বিষয়েও ইউহোন্না বর্ণনা দেন নি৷ উক্ত ঘটনাপুঞ্জির সাথে জামাত ইতোপূর্বে সুবিদিত ছিল৷
যাজক শেষ প্রার্থনা না করে সলিবের স্থান ত্যাগ করে গেলেন, এবং তার পর জনগণ দ্রম্নত চলে গেলেন উদ্ধার পর্বের মেষ কোরবানী দেবার জন্য৷ উদ্ধার পর্বের আয়োজনের সময় আর বেশি বাকি নেই৷ ধর্ম নেতারা জাতির মহা ধমর্ীয় পর্ব পালন করার জন্য চলে গেছেন৷ শহরের দেয়াল থেকে শিঙ্গার ধ্বনি বাজতে শুরম্ন হয়ে গেছে, মন্দিরে মেষ জবেহ হয়ে চলছে, রক্তে প্রবাহধারা বয়ে চলছে৷ মন্দিরে জয়ধ্বনি বেজে চলছে৷ শহরের বাহিরে ঐশি পূতপবিত্র মেষ অভিশপ্ত গাছে টাঙ্গানো হয়েছে এবং তাকে ঘৃণা ও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে৷ অধার্মিক রোমীয় সেনারা তিজনকে পাহারা দিয়ে ফিরছে৷
এমন সময় কতিপয় মহিলা নিঃশব্দে সলিবের কাছে এগোচ্ছিলেন, তারা নিরবে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ ঘটে যাওয়া ঘটনা তাদের বিহ্বল করে তুললো৷ সর্বশক্তিমান মহা যাতনায় তাদের মাথার উপরে সলিবে ঝুলছিলেন৷ শানত্মনার কোনো বানী আর বেরিয়ে আসছে না, প্রার্থনা করা আর সম্ভব হলো না৷ কেউ কেউ জবুরের উক্তি উচ্চারণ করছে৷
মসিহ তার মায়ের আর্তচিত্কার শুনতে পেলেন, এবং উপলব্ধি করতে পারলেন তাঁর প্রিয় সাহাবি ইউহোন্নার ঝরে পড়া অশ্রম্নবারী৷ তাঁর অচেতনতা সত্ত্বেও তার অবস্থা বুঝতে ব্যর্থ হলেন৷ হঠাত্ শব্দ শুনতে পেলেন 'নারি, তোমার পুত্রকে ধর'৷ শেষ পর্যনত্ম মসিহের মহব্বত বলবত্, জগতের পাপের কাফফারা শোধ কল্পে তাঁর মৃতু্য যন্ত্রনার মধ্যেও আপনজনদের কল্যানকর্মে তিনি ছিলেন সজাগ৷ শামাউন শিশু মসিহকে দেখে যে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন তা তাদের মনে জাগলো৷ (লুক ২ : ৩৫)৷
তাঁর মাকে অর্থ বা বাড়িঘরের ব্যবস্থা করে দিতে না পেরে তিনি মহব্বত করে ছিলেন যেভাবে তিনি তার সাহাবিদের মহব্বত করতেন৷ ইউহোন্না মসিহের মায়ের কাছে এসেছিলেন, (মথি ২৬ : ৫৬) তবুও নিজের নাম অথবা কুমারির নাম উচ্চারণ করে দৃষ্টি ফেরাতে চান নি, কেননা মসিহ তখন আত্মত্যাগের মহিমায় সলিবে যন্ত্রনাকাতর অবস্থায় ছিলেন৷ যখন তিনি ইউহোন্নাকে সম্ভোধন করলেন এবং তাঁর মায়ের দায়িত্ব তাঁর হাতে তুলে দিলেন, তখনই মসিহের সলিবের মহিমায় নিজেকে সম্পৃক্ত করলেন৷ তিনি মরিয়মকে আলিঙ্গন করলেন এবং নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলেন৷ অন্যান্য মহিলারা এ বিষয়ে সাক্ষ্য দান করলেন৷ তাদের মধ্যে এমন একজন মহিলা ছিলেন যাকে ৭টি ভুতে পাওয়া বিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে তিনি রক্ষা করেছেন৷ তিনি মসিহকে ভালোবেসেছেন এবং তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন৷
ঘ) সমাপ্তি ইউহোন্না (যোহন ১৯:২৮-৩০)
যোহন ১৯:২৮-২৯
এরপরে সব কিছু শেষ হয়েছে জেনে পাক-কিতাবের কথা যাতে পূর্ণ হয় সেইজন্য ঈসা বললেন, 'আমার পিপাসা পেয়েছে৷' সেই জায়গায় সিরকায় পূর্ণ একটা পাত্র ছিল৷ তখন তারা একটা স্পঞ্জ ইে সিরকায় ভিজাল এবং এসব গাছের ডালের মাথায় তা লাগিয়ে ঈসার মুখের কাছে ধরল৷
অনেক বড় ঘটনা সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা দেবার ক্ষমতা ও দান ছিল সুসমাচার প্রচারক ইউহোন্নার৷ গোটা দেশ যেভাবে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে সে বিষয়ে কোনোই বর্ণনা দেন নি ইউহোন্না৷ তাছাড়া জগতের পাপের প্রায়শ্চিত্ত বহন করার কারণে খোদার গজবে পতিত হবার বিষয়েও তিনি উলেস্নখ করেন নি৷ তবে আমরা জানতে পেরেছি, তিন ঘন্টা যাবত্ তার দৈহিক মৃতু্য যন্ত্রণা ভোগ করার সময়ে মৃতু্যর প্রকৃত যাতনা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন৷ মৃতু্য মসিহকে যে গিলে খেয়েছে তা তিনি প্রকাশ করেন নি বরং তিনি মৃতু্যর কাছে স্বেচ্ছায় সমর্পিত হয়েছেন৷ বিশ্বজনীন মুক্তি অর্জন করতে গিয়ে তাঁর আত্মা অবসন্ন হয়ে পড়েছিল৷ মসিহ দেখতে পেয়েছিলেন দুনিয়ার প্রত্যেকটি গুনাহগারের নাজাত লাভ সম্ভব৷ তাঁর সলিবীয় মৃতু্য গোটা বিশ্ববাসির নাজাত অর্জন করে খোদার নৈকট্য লাভের অধিকার এনে দিয়েছে এবং তাঁর মৃুত্যর সুফল তিনি পরিষ্কার দেখতে পেরেছিলেন৷
এ মূহুর্তে তাঁর ঠোট থেকে দীর্ঘনিঃশ্বাসের সাথে একটি শব্দ বেরিয়ে আসল, 'আমার তৃষ্ণা পেয়েছে৷' যিনি গোটা বিশ্ব নির্মাণ করেছেন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয় করে জল সৃষ্টি করেছেন এবং উক্ত জলের ওপর দিয়ে হেঁটেছেন, তিনি আজ তৃষ্ণার্ত৷ মনুষ্যরূপী প্রেম আজ পিতার প্রেমের কামনা করছেন, যিনি পুত্রের কাছে নিজের মুখ লুকিয়ে রেখেছেন৷ দৃশ্যটি নরকের দৃশ্য, যেখানে শারীরিক ও আত্মিক তৃষ্ণাকাতর থাকবে লোকজন, অথচ তৃষ্ণা নিবারণের উপকরণ থেকে থাকবে বঞ্চিত৷ ইতোপূর্বে আগুনের লেলিহান শিখার মধ্যে পতিত ব্যক্তির মারাত্মক তৃষ্ণাকাতর তাঁর উপর ধনি লাসারের গল্পে শিক্ষা দিয়েছেন৷ ধনি ব্যক্তিটি দোযখের জ্বালায় মারাত্মক তৃষ্ণাকাতর অবস্থায় ইব্রাহীম নবীকে অনুরোধ করেছিলেন তিনি যেন লাসারকে আজ্ঞা করেন, ঠান্ডা জলের মধ্যে আঙ্গুল ভিজিয়ে তার ঠোট ভিজিয়ে দেয়৷ মসিহ পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে শারীরিক তৃষ্ণা সহ্য করেছেন, কিন্তু নাজাত প্রদানের দায়িত্ব সম্পন্ন করা পর্যনত্ম তৃষ্ণাকাতর ছিলেন না৷ তখন পাকরূহ তাঁর কাছে প্রকাশিত হলেন, এবং নাজাতের দায়িত্ব যা হাজার হাজার বত্সর পূর্বেই ঘোষিত হয়েছে যবুর ২২ ঃ ১৩-১৮ এবং যবুর ৬৯ ঃ ২১ আয়াতে৷ আমরা জানিনা ঘৃণার বশতঃ অথবা অনুকম্পার কারণে সৈন্যরা জলমেস্ত্রিত ভিনিগার দিয়ে তাঁর তৃষ্ণা নিবারণ করেছিল কিনা৷ আমরা জানি তা সরল পানি ছিল না৷ মানবরূপী খোদার পুত্র ঠিক উক্ত মুহুর্তে অসহায় ছিলেন৷
যোহন ১৯:৩০
ঈসা মসিহ সেই সিরকা খাওয়ার পরে বললেন, 'শেষ হয়েছে৷' তারপর তিনি মাথা নিচু করে তাঁর রম্নহ সমর্পণ করলেন৷
অভিশাপের ভিনিগার মুখে দেবার পর তিনি বিজয়ী শব্দ উচ্চারণ করলেন 'সমাপ্ত হলো!' বিজয়ের পূর্বের দিনে পুত্র পিতার কাছে প্রার্থনা করেছেন সলিবে বসে যেন আমাদের পাপের প্রায়শ্চিত্ত পরিশোধের মাধ্যমে পিতা নিজেও মহিমান্বিত হতে পারেন৷ পুত্র বিশ্বাসের বলে বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর প্রার্থনার জবাব অবশ্যই মিলবে এবং পিতা যে দায়িত্ব পালন করার ভার তার ওপর দিয়েছেন তা তাঁর কোরবানির দ্বারা পূর্ণতা পাবে৷ (যোহন ১৭ : ১, ৪)
সলিবে ঝুলছেন কতই না পূতপবিত্র মসিহ৷ ঘৃণার কোনো কথাই তাঁর জিভ থেকে বেরিয়ে আসে নি৷ না বেরিয়েছে দুঃখের বিলাপ, অথবা হতাশার ৰেদোক্তি, বরং জানের শত্রম্নদের ৰমা করার ধ্বনি ও আতর্ী পিতার কাছে জানালেন৷ মসিহ জানতেন নাজাতের দায়িত্ব ও কর্তব্য তিনি পূর্ণাঙ্গরম্নপে পালন করেছেন, খোদা নাজাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে তাকেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করর জন্য মনোনীত করেছেন৷ ত্রিত্তপাকের প্রেম কেউ মাপতে পারে না, জানেনা এর বিসত্মৃতি ও গভীরতা৷ কেবলমাত্র পুত্রই পাকরূহের মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ মেষ হিসেবে প্রকাশ করতে ধরা তলে নেমে আসলেন যেন তিনি জীবনত্ম মেষ হিসেবে খাঁটি কোরবানি দিতে পারেন৷ (ইব্রানি ৯ ঃ ১৪)
শেষ বারের মতো সলিব থেকে চুড়ানত্ম বাণী ঘোষণার মধ্যদিয়ে পরিপূর্ণভাবে জগতের নাজাত দান সুসম্পন্ন হয়েছে৷ এই নাজাত আমাদের কোনো দানের ফল নয়, নয় কর্মের ফল, প্রার্থনার সৌকর্যের দ্বারাও অর্জিত হবার নয়, যা কিছু আমাদের দ্বারা করা হয় তার কোনোটাই আমাদের না পারে ধার্মিক বলে প্রতিপন্ন করতে না পারে জীবনে পবিত্রতা যোগ দিতে৷ খোদার পুত্র নিজেই চিরকালের জন্য তা অর্জন করে দিয়েছেন৷ তাঁর মৃতু্যর ফলে একটি নতুন যুগের উদয় হয়েছে, যাতে শানত্মির রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কেননা ঐশি মেষের কোরবানির ফলে বেহেশতি পিতার সাথে আমাদের পূণর্মিলন স্থাপন সম্ভব করে সেই নির্দোষ বলে প্রতিপন্ন হয়৷ কালামে ঈসা মসিহের বাণী নিয়ে যে মনত্মব্য রয়েছে তার অর্থ হলো, 'নাজাতের কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷'
শেষ পর্যনত্ম ঈসা মসিহ তাঁর মসত্মক মহিমা ও সম্মানের প্রতীক হিসেবে অবনত করলেন৷ তিনি তাঁর আত্মা পিতার হাতে সমর্পণ করলেন, যিনি অবিরত তাঁকে মহব্বত করেন৷ এই প্রেমেই তাকে সমাসীন করেছে মহিমার সিংহাসনে, যেখানে আজ পর্যনত্ম উপবিষ্ট আছেন পিতার ডান দিকে একই সাথে৷
প্রার্থনা: হে পবিত্র মেষ, যিনি বিশ্বের পাপভার তুলে নিলেন, আমার জীবন গ্রহন করার কেবল তুমিই যোগ্য শক্তি, সম্পদ, প্রজ্ঞা, ৰমতা, সম্মান, গৌরব, এবং অশির্বাদ৷ আমার মসত্মক তুলে ধরো যাতে তোমাকে দেখতে পারি৷ হে সলিববিদ্ধ মহান, আমার সকল পাপ অপরাধের জন্য তোমার কাছে ৰমা চাচ্ছি, এবং বিশ্বাস করি তোমার করম্নণা ও পবিত্র রক্তে আমাকে পূতপবিত্র করে তুলবে৷
প্রশ্ন: