Previous Lesson -- Next Lesson
৫. পুনুরুত্থানের মধ্যে সাহাবিদের আনন্দের বিষয়ে ঈসা মসিহের ভবিষ্যবাণী (যোহন ১৬:১৬-২৪)
যোহন ১৬:১৬-১৯
১৬. 'কিছুকাল পরে আর তোমরা আমাকে দেখিতে পাইবে না, আবার কিছুকাল পরে তোমরা আমাকে দেখিতে পাইবে'৷ ১৭. এই কথা শুনিয়া ঈসা মসিহের সাহাবিদের মধ্যে কয়েকজন বলাবলি করিতে লাগিলেন, 'ইনি আমাদের ইহা কি বলিতেছেন, 'কিছুকাল পরে তোমরা আর আমাকে দেখিতে পাইবে না? আবার কিছুকাল পরে তোমরা আমাকে দেখিতে পাইবে'৷ আবার তিনি বলিতেছেন, 'আমি পিতার নিকটে যাইতেছি৷' ১৮. যে কিছুকালের কথা ইনি বলিতেছেন, তাহা কি? আমরা বুঝিতে পারিতেছি না, তিনি কি বলিতেছেন৷ ১৯. সাহাবিরা যে এই বিসয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করিতে চাহিতেছেন, তাহা বুঝিতে পারিয়া ঈসা মসিহ তাহাদের বলিলেন, 'আমি যে বলিয়াছি, কিছুকাল পরে তোমরা আমাকে আর দেখিতে পাইবে না, আবার কিছুকাল পরে তোমরা আমাকে দেখিতে পাইবে৷
এই সন্ধ্যায় ঈসা মসিহ তার চলে যাবার বিষয় তিনবার বললেন৷ তার এই পুনরাবৃত্তি সাহাবিদের কাছে একটি আঘাত ছিল; তারা তার অভিপ্রায় উপলব্ধি করতে পারেনি৷ কিন্তু তিনি তার ফিরে আসার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিলেন এবং কবর থেকে তার পুনুরুত্থানের বিষয়ে উল্লেখ করলেন যা ঈদুল ফেসাখের ভোজের পরেই ঘটেছিল৷ এরপর তিনি দেয়াল ভেদ করে সাহাবিদের সামনে হাজির হলেন; পিতার কাছে যাওয়ার সময় স্বল্পক্ষনের জন্য তাদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন৷
যখন তারা জৈতুন পাহাড়ে উঠেছিল, ঈসা মসিহ তাদেরকে এই ভবিষ্যতবাণীগুলো করেছিলেন যা তারা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল৷ এর আগে তিনি তার চলে যাওয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে তাদের বলেছিলেন৷ এখন তিনি তাদের থেকে আলাদা হওয়ার ব্যাপারে বলছেন যা শিঘ্রই ঘটতে যাচ্ছে৷ তারা স্বীকার করেছিল এই পরিকল্পনা এবং উদ্দেশ্য তাদের কাছে ধাঁধার মত ছিল৷ তারা অস্থির এবং বিভ্রান্ত ছিল এবং তার বাসস্থান অর্থাত্ বেহেস্তে যাবার জন্য তারা দুঃখিত হয়েছিল৷
যোহন ১৬:২০-২৩
২০. আমি তোমাদের সত্যই বলিতেছি, তোমরা কাঁদিবে আর দুঃখে ভাঙ্গিয়া পড়িবে কিন্তু দুনিয়া আনন্দ করিবে৷ তোমরা দুঃখ পাইবে, কিন্তু পরে তোমাদের সেই দুঃখ আর থাকিবে না; তাহার বদলে তোমরা আনন্দিত হইবে৷ ২১. সন্তান হইবার সময়ে স্ত্রীলোক কষ্ট পায়, কারণ তাহার সময় আসিয়া পড়িয়াছে৷ কিন্তু সন্তান হইবার পরে দুনিয়াতে একটি নতুন মানুষ আসিবার আনন্দে তাহার আর সেই কষ্টের কথা মনে থাকে না৷ ২২. সেইভাবে তোমরাও এখন দুঃখকষ্ট পাইতেছ; কিন্তু আবার তোমাদের সংগে আমার দেখা হইবে, আর তখন তোমাদের মন আনন্দে ভরিয়া উঠিবে এবং সেই আনন্দ কেহ তোমাদের নিকট হইতে কাড়িয়া লইবে না৷ ২৩. সেই দিনে তোমরা আমাকে কোন কথাই জিজ্ঞাসা করিবে না৷ আমি তোমাদের সত্যই বলিতেছি, তোমরা আমার নামে পিতার নিকট যাহা কিছু চাহিবে তাহা তিনি তোমাদের দিবেন৷
ঈসা মসিহ সাহাবিদের চিন্তা সমূহ নির্ণয় করেছিলেন এবং তারা যা বলছিল তা বুঝতে পেরেছিলেন, যদিও তিনি তা শোনেন নি৷ তাদের আশঙ্ক্ষার জবাবে তিনি তাদের ভিতি এবং দুঃখকে প্রশমিত করেন নি কিন্তু তাদের ব্যাথা, কান্না এবং বিলাপের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন যা শিঘ্রই তাদের জীবনকে নাড়া দেবে৷ এটা ছিল একজন মহত্ রাজার মৃতু্যর মতন; লোকেরা শোকাহত হয়েছিল এবং আশা হারিয়েছিল৷ যখন সাহাবিরা দুঃখিত হয়েছিল তাদের শত্রুরা বিদ্বেসপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল৷ শত্রু বলতে ঈসা মসিহ বিশদভাবে দুনিয়াকে বুঝিয়েছিলেন, শুধু মাত্র ইহুদি শাসকদের নয়৷ ঈসা মসিহের মণ্ডলীর বাইরে সবাই পথ ভ্রষ্ট দুনিয়ার যারা খোদা থেকে দূরে এবং পাকরূহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে৷
অধিকন্তু ঈসা মসিহ তার সাহাবিদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তারা অতিশয় আনন্দ খুঁজে পাবে৷ কান্না এবং শোকের সময় হবে স্বল্পকালীন, যেমন একজন মায়ের প্রসব বেদনার মত৷ মায়েরা মনে করে প্রসববেদনা থেকে তাদের বাহুর মধ্যে তাদের নবজন্মলাভ প্রাপ্ত শিশুদেরকে জড়িয়ে ধরার আনন্দ তুলনামূলকভাবে বেশী৷
পুনুরুত্থানের সময় সাহাবিদের সকল প্রশ্ন স্তব্ধ হয়ে পড়লো৷ তাদের জন্য পাপের বিষয়গুলি স্পষ্ট হলো এবং মৃতু্যর বিষয়ে আশঙ্কা অতিক্রান্ত হলো, শয়তানের কর্তৃত্ব ধ্বংস হলো এবং তাদের উপর খোদার ক্রোধ আর থাকলো না৷ তাদের অস্বীকৃতি, ভয় এবং অবিশ্বাস ঈসা মসিহের প্রত্যাবর্তন এবং তাদের ক্ষমা পাওয়া নিবৃত্ত করেনি৷ ইহুদিরা তাদেরকে ফাঁদে ফেলতে অক্ষম ছিল কারণ প্রভূ তাদের রক্ষা করবেন৷
যোহন ১৬:২৪
২৪. এখনো পর্যন্ত তোমরা আমার নামে কিছুই চাও নাই৷ চাও, তোমরা পাইবে, যেন তোমাদের আনন্দ পূর্ণ হয়৷
তার বিদায়কালীন বক্তৃতার শুরুতে ঈসা মসিহ তার সাহাবিদেরকে জিজ্ঞাসা করলো তারা কি চায় এবং তাদের তা দেওয়া হবে যাতে করে পিতা মহামান্বিত হতে পারেন (যোহন ১৪ : ১৩)৷ এই আবেদন গুলি মণ্ডলী স্থাপন করতে এবং সুসমাচার প্রচারকার্যে সহায়তা করবে, কারণ ঈসা মসিহ চেয়েছিলেন অনেকেই ত্রিত্বক প্রেমের সহভাগীতায় আসুক৷ তাই তিনি আমাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, 'খোদার রাজ্য এবং তার ন্যায়পরায়নতা যাঞা কর এবং তোমাদেরকে এইসব কিছুই দেওয়া হইবে'৷ ঈসা মসিহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে খোদা বেহেস্তী এবং পার্থিব জিনিষের বিষয়ে যা প্রার্থনা করা হয় তার জবাব দেন, যদিও পার্থিব বিষয় থেকে বেহেস্তী বিষয়গুলোর গুরুত্ব বেশী৷
আপনার হৃদয়ের প্রশ্ন এবং অনুরোধগুলি কি? আপনার কি অর্থ, স্বাস্থ্য এবং সাফল্যের প্রয়োজন? আপনি কি অন্যদের সাথে যুক্ত হতে চান? খোদার অস্থিত্ব এবং তার করুনার বিষয় কোন সন্দেহ কি আপনাকে বাঁধা দেয়? আপনার জীবনে কি আপনি পাক-রূহের অনুপস্থিতি অনুভব করেন? আপনি কি অপরাধের বোঝা অনুভব করেন এবং কষ্টভোগ, দূর্দশা ও যন্ত্রনার কারণে আপনি কি ভোগান্তি পোহাচ্ছেন? আপনি কি মন্দ আত্মার কারণে ভয়ে কাঁপেন? আপনি কি ঈসা মসিহের আগমণ এবং তার শান্তির রাজ্যের প্রসারের জন্য অপেক্ষা করছেন? কোন প্রশ্নগুলি আপনার আত্মা, রূহ এবং দেহকে অস্থির করে তোলে? আপনি কি একজন আশাবাদী অথবা নিরাশাবাদী? আপনার অনুভূতিগুলি কি দ্রুত আঘাতপ্রাপ্ত হয়? আপনি কি আপনার প্রভূর কাছে পাকরূহে পূর্ণ হতে যাচ্ঞা করেন?
আপনার প্রত্যেকটি সমস্যার বিষয়গুলি প্রার্থনার মধ্যে রাখেন৷ আপনার বেহেস্তি পিতার কাছে আপনার হৃদয়কে খুলে দেন৷ প্রার্থনার মধ্যে বিড়বিড় করবেন না, কিন্তু যা বলবেন সে বিষয়ে ভালোভাবে চিন্তা করবেন৷ ঈসা মসিহ ইতিমধ্যে আপনাকে যে দানগুলি দিয়েছেন সে বিষয়ে আগেই চিন্তা করুন এবং সেগুলির জন্য তাকে ধন্যবাদ দিন৷ ধন্যবাদ জ্ঞাপন আমাদেরকে উপযুক্ত করে তোলে৷ আপনার পাপগুলি স্বীকার করুন, কারন বিশ্বাসের অভাব শীতল ভালোবাসা এবং স্পল্প আশা খোদার সামনে সব কিছুকে ব্যর্থতায় পর্যবশিত করে৷ তার রহমতের জন্য যাচ্ঞা করুন এবং আপনার কথা শোনার বিষয়ে তার উপরে বিশ্বাস করুন৷ কখনো ভূলে যাবেন না যে খোদা হলেন প্রেম এবং তিনি অন্যদেরকেও আর্শিবাদ করতে চান৷ আপনার বন্ধু ও শত্রুদের মধ্যে মধ্যস্থতা করুন যাতে খোদা তাদেরকে একই রহমতের মধ্যে আর্শিবাদ করেন৷ আপনি একমাত্র অভাবী ও পীড়িত নন, সকল মানুসের ভাগ্যেই এটা ঘটে৷ আপনার সকল প্রশ্ন সাহসীকতার সাথে সম্পূর্ণভাবে সরাসরি ঈসা মসিহের কাছে উপস্থাপন করেন এবং আপনার সমস্যা সমর্্পকে তাকে বলেন এবং অন্যদের পক্ষ হয়ে তাকে অনুরোধ করেন৷ তখন আপনি খাঁটি প্রার্থনার রহস্য জানতে পারবেন যা ঈসা মসিহের নামে করা হয়৷
খাঁটি প্রার্থনা হলো খোদার সাথে কথা বলা যা মিনতি, ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং এবাদতের মধ্যে করা হয়৷ এ রকম কথপোকথনকে দীর্ঘায়ীত করবেন না৷ সরলভাবে আপনি যা চিন্তা করেন তাই বলুন যেমন আপনি পিতা-মাতাকে বলেন৷ এবাদতখানার মধ্যে করগ্রাহক যথাযত ছিল যখন সে কানে কানে বলেছিল, 'প্রভূ, আমার উপর দয়া করেন, আমি একজন পাপী'৷ বেহেস্তী পিতা লাসারকে মৃতু্য থেকে পুনুরুত্থিত করেছিলেন যখন ঈসা মসিহ সহজভাবে লাসারকে পুনুরজীবিত করতে প্রার্থনা করেছিলেন৷ এটা বিশ্বাস যা মুক্তি, সাহায্য এবং সাফল্য বয়ে আনে৷ সাহস এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপনের সাথে খোদার কাছে প্রার্থনা করুন৷ আপনাকে তার সন্তান হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়৷ আনন্দের সাথে সন্তানের মত কথা বলেন, তার কাছ থেকে কোন কিছুই লুকাবেন না৷
ঈসা মসিহ আপনাকে আনন্দ দিতে চান, তা প্রথম আপনার প্রার্থনার জবাব হিসেবে নয় কিন্তু খোদা ও তার পুত্রের কথা আপনার শুনবার অধিকারের কারণে৷ কোনটি আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, দান অথবা দাতা? প্রভূ আপনাকে পূর্ণতা দেন, কিন্তু মনে রাখবেন তিনিই পূর্ণতা৷ ঈসা মসিহ আমাদের আনন্দপূর্ণ করতে চান৷ আমাদের মধ্যে আনন্দ বৃদ্ধি পায় যখন আমরা উপলব্ধি করি যে আমরা ক্রটিপূর্ণ সত্ত্বেও ঈসা মসিহ আমাদের প্রার্থনার জবাব দেন৷ আমাদের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে তিনি অন্যদেরকে আর্শিবাদ করেন এবং তাদের রক্ষা করেন৷ আমরা অতিশয় উল্লাসিত হব যখন দেখব ঈসা মসিহ বেহেস্ত থেকে মেঘের মধ্যে দিয়ে আসছেন৷ তখন আমাদের আনন্দ হবে বর্ণনাতীত৷ ঈসা মসিহের দৃষ্টি আকর্ষক আগমন কি আপনার প্রার্থনার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু হবে৷
প্রার্থনা: বেহেস্তী পিতা, আমাদের অন্তরের অন্তস্থল থেকে তোমাকে ধন্যবাদ দেই, কারণ তুমি আমাদের কাছে তোমার পুত্রকে নাজাত-দাতা হিসেবে পাঠিয়েছ৷ আমাদের পার্থিব বিষয়গুলিকে ক্ষমা কর এবং আমাদেরকে সলিবের গুরুত্বের বিষয় অবগত হতে সাহায্য কর৷ আমাদের শত্রুদেরকেও উদ্ধার কর যারা পাপের বোঝায় জর্জরিত এবং যাদের হৃদয় মন্দ এবং ঘৃণায়পূর্ণ৷ তাদেরকে তাদের দাসত্ব থেকে মুক্ত কর যাতে করে আমাদের সাথে তারা তোমার উপস্থিতির আনন্দে অংশগ্রহণ করতে পারে৷
প্রশ্ন