Previous Lesson -- Next Lesson
ক) ঈসা ব্যভিচারিণীকে অনুতাপ স্বীকারের জন্য পরিচালিত করলেন (যোহন ৪:১-২৬)
যোহন ৪:১-৬
১. ইয়াহিয়ার চেয়ে অনেক বেশি লোক যে ঈসা মসিহের উম্মত হইতেছে এবং তাহার দ্বারা বাপ্তাইজত হইতেছে তাহা ফরিশিরা শুনিয়াছিলেন৷ ২. (অবশ্য ঈসা মসিহ নিজে বাপ্তিস্ম দিতেন না, তাঁহার সাহাবিরাই দিতেন৷) ৩. ঈসা মসিহ তাহা জানিতে পারিয়া এহুদিয়া প্রদেশ ছাড়িয়া আবার গালিলে চলিয়া গেলেন৷ ৪. গালিলে যাইবার সময় তাঁহাকে শমরিয়া প্রদেশের মধ্য দিয়া যাইতে হইল৷ ৫. তিনি শুখর নামে শমরিয়ার একটা গ্রামে আসিলেন৷ ইয়াকুব তাঁহার পুত্র ইউসুফকে যে জমি দান করিয়াছিলেন, এই গ্রামটা ছিল তাহারই নিকটে৷ ৬. সেই জায়গায় ইয়াকুবের কুয়া ছিল৷ পথে হাঁটিতে হাঁটিতে ক্লান্ত হইয়া ঈসা মসিহ সেই কুয়ার পাশে বসিলেন৷ তখন বেলা প্রায় দুপুর৷
বাপ্তিস্মদাতা ঈসা মসিহকে প্রভু বলে সম্বোধন করলো, যিনি ইতিহাসের শাশ্বত রাজা হিসাবে শাষন করেন, তিনি শাস্তি দেন এবং রহমতো প্রদর্শন করেন৷ তিনি তাদের পথনির্দেশ করেন এবং বিচার করেন৷ তিনি তার মহিমা দেখেছেন এবং তাকে সম্মান করেন এই রাজকীয় পদবি নিয়ে৷
ফরিশিরা জড় হতে শুরু করলো এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হলো৷ যিহুদিয়াতে ঈসা মসিহের ধর্মপ্রচার ছিল একটি উজ্জ্বল সাফল্য৷ তিনি মানুষদেরকে অনুতাপ স্বীকার করতে ডাকলেন এবং তাদের পাপসমূহকে স্বীকার করতে বললেন বাপ্তিস্মাদাতা ইয়াহিয়া পাপ থেকে মন ফিরাবার একই আহ্বান দিয়েছিল৷ এটা এমন ছিল যে সে বাপ্তিস্মদাতার কাছ থেকে এই কাজের দায়িত্ব নিজেই নিতেন (যদিও তিনি নিজে বাপ্তিস্ম দিতেন না এবং এ দায়িত্ব তার সাহাবিদের উপরে ন্যাস্ত করতেন যারা যোহনের দলের লোক ছিল)৷ ঈসা মসিহ শিক্ষা দিয়েছিলেন যে পানির বাপ্তিস্ম কিছুই না কিন্তু তা রুহের বাপ্তিস্মের প্রতীক৷ তখনো তার সময় আসে নাই এবং নিজে বাপ্তিস্ম দিত না৷ যখন ফরীশীদের বিরোধিতা বৃদ্ধি পেল, ঈসা মসিহ উত্তর দিক থেকে চলে গেলেন৷ তার পিতার পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনি বসবাস করতেন৷ আইনজ্ঞদের সাথে খোলাখুলি সংঘর্ষে যাবার সময় তখনো আসেনি৷ ঈসা মসিহ পর্বতের দেশের মধ্যে দিয়া ভ্রমন করতে সিদ্ধান্ত নিলেন এবং শমরীয়রা ঢুকলেন যে স্থানটি গালিলের কাছে ছিল৷
শমরীয়রা তৌরাতে উল্লেখিত কোন স্বীকৃত দল ছিল না, যেহেতু তারা কিছু ইস্রায়েলীয় রক্তের সাথে সংমিশ্রিত ছিল৷ খ্রিষ্ট পূর্ব ৭২২ শতাব্দীতে যখন আশিরীয়রা শমরীয় আক্রমণ করলো তখন তারা বেশির ভাগ ইব্রাহীমের বংশধরদের মেসোপোটামিয়াতে নির্বাসিত করেছিল, তারা অন্যান্য দলগুলোকে শমরীয়তে বসবাস করতে দিয়েছিল৷ তাই এতেঠ মিশ্রন ঘটেছিল যেটা অনেক বিশ্বাসে একত্রিভূত হয়ে গিয়েছিল৷
ঈসা মসিহ সিখিমের কাছে শেখরে এসেছিলেন, যেটা মূল গোষ্ঠীপতিদের কেন্দ্র ছিল৷ এই জায়গাটি খোদার লোকদের সাথে যশুয়ার চুক্তিনামার স্থান ছিল (আদিপুস্তুক ১২ : ৬ এবং যশুয়া ৮ : ৩০-৩৫) সেখানে কাছাকাছি একটা পুরাতন কুয়া ছিল, ধারণা করা হয় যে, সেটা ইয়াকুবের ছিল (আদিপুস্তুক ৩৩ : ১৯)৷ ইউসুফের হাড়সমূহ নাবলুসের কাছে কোথাও কবর দেওয়া হয়েছিল (যশুয়া ২৪ : ৩২)৷ তৌরাতে এই স্থানটি একটি ঐতিহাসিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল৷
ঈসা মসিহ সেই কুয়ার পাশে বসে পড়লেন কারণ তিনি দীর্ঘ ভ্রমণের ফলে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন যা হয়েছিল দুপুরের গরমের কারণে৷ তিনি ছিলেন একজন খাঁটি মানুষ, ক্লান্ত এবং পিপাসিত৷ কোন দৈত্য বা দানব নন একজন মানুষ যিনি সকল মানবীয় গুণাবলি সমৃদ্ধ ছিলেন৷
যোহন ৪:৭-১৫
৭.৮. ঈস মসিহের সাহাবিরা খাবার কিনিতে গ্রামে গিয়েছেন; এমন সময় শমরীয়ার একজন স্ত্রীলোক পানি তুলিতে আসিল৷ ঈসা মসিহ তাহাকে বলিলেন, 'আমাকে একটু পানি খাইতে দাও'৷ ৯. সেই শমরীয় স্ত্রী লোকটি তাঁহাকে বলিল, 'আমি ত শমরীয় স্ত্রীলোক৷ আপনি ইহুদি হইয়া কেমন করিয়া আমার নিকট পানি চাহিতেছেন?' স্ত্রীলোকটি এই কথা বলিল, কারণ ইহুদি এবং শমরীয়দের মধ্যে ধরাছোঁয়ার বাছবিচার ছিল৷ ১০. ঈসা মসিহ সেই স্ত্রীলোকটিকে উত্তর দিলেন, 'তুমি যদি জানিতে, খোদার দান কি আর কে তোমার নিকট পানি চাহিতেছেন, তবে তুমি তাঁহার নিকট পানি চাহিতে আর তিনি তোমাকে জীবন্ত পানি দিতেন'৷ ১১. স্ত্রীলোকটি বলিল, 'জনাব, আপনার নিকট পানি তুলিবার কিছুই নাই আর কুয়াটাও গভীর৷ তবে সেই জীবন্ত পানি কোথা হইতে পাইলেন? আপনি আমাদের পূর্বপুরুষ ইয়াকুবের চেয়ে তো বড় নন৷ ১২. এই কুয়া তিনিই আমাদের দিয়াছেন৷ তিনি নিজেও তাঁহার ছেলেরা এই কুয়ার পানিই খাইতেন আর তাঁহার গরু-ভেড়াগুলিও খাইত'৷ ১৩. তখন ঈসা মসিহ বলিলেন, 'যে কেহ এই পাশর্্ব যায় তাহার আবার পিপাসা পাইবে৷ ১৪. কিন্তু আমি যে পানি দিব, যে তাহা খাইবে তাহার আর কখনো পিপাসা পাইবে না৷ সেই পানি তাহার অন্তরের মধ্যে উথলিয়া উঠা ঝরনার মতো হইয়া অনন্ত জীবন দান করিবে'৷
যখন ঈসা মসিহ কুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, একজন শমরীয় স্ত্রীলে পানি তুলতে আসিল৷ অন্য স্ত্রীলোকদের মতো সে সকালে বা বিকালে বাহির হতো না, কিন্তু দুপুরে বাহির হতো৷ তার কুখ্যাতির জন্য সে কারো সাথে দেখা করতে যেত না এবং সে যেখানেই যেত সেখানেই ঘৃণার পাত্র হিসাবে বিবেচিত হতো৷ ঈসা মসিহ দূর থেকে তার অশান্ত হৃদয়েকে দেখতে পেয়েছিলেন এবং তার বিশোধিত হবার তৃষ্ণাকে অনুভব করেছিলেন৷ তিনি তাকে সাহায্য করবার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি তার কাছে দশ আজ্ঞা নিয়ে আসেননি অথবা তাকে তিরস্কার করেননি, বরং তিনি তার কাছে সহজভাবে খাবার পানি চেয়েছিলেন৷ কিন্তু যখন স্ত্রীলোকটি তাকে ইহুদি হিসাবে চিনতে পারলো তখন সে ইতস্তত করলো৷ কারণ তার এবং ঈসা মসিহের লোকদের মধ্যে একটি ব্যবধান ছিল৷ এমনকি সে অন্য কারো বাসনপত্র কলুষিত হবার ভয়ে স্পর্শ করতো না৷ ঈসা মসিহ যদিও এমনভাবে তার সাথে ব্যবহার করলো যেন তাদের ভিতরে কোন ধমর্ীয় বাধা ছিল না এবং তিনি তাকে অনুরোধ জানিয়ে সম্মান দেখালেন৷
ঈসা মসিহের উদ্দেশ্য ছিল এই পাপী মহিলাটির মধ্যে খোদার প্রতি স্পৃহা জাগানো৷ যেহেতু জায়গাটি ছিল একটি কুয়া, সেখানে পানি সমর্্পকে কথা বলা মানানসই ছিল৷ এটা মহিলাটির মধ্যে খোদার দান পেতে আকাঙ্ক্ষা জাগিয়েছিল৷ তার উদ্দেশ্য ছিল খোদার ভালোবাসাকে মহিলাটির কাছে তুলে ধরা৷ মহিলাটি তার সর্বনাশের জন্য বিচারের অপেক্ষা করছিল না, কিন্তু এটা খোদারই দান যা তার জন্য রহমতের মধ্যে সিদ্ধ হয়েছিল৷ কী একটি চমত্কার মোজেজা৷
রহমত স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাতাসের কাছ থেকে আসে না কিন্তু একমাত্র ব্যক্তি ঈসা মসিহের কাছ থেকে আসে৷ তিনি সকল প্রতিভা ও বেহেশতি রহমতের দাতা৷ মহিলাটি ঈসা মসিহকে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখেছিল৷ তখন মসিহের মহিমা তার চোখের সামনে থেকে গুপ্ত ছিল, কিন্তু তার খাঁটি ভালোবাসা পরিষ্কারভাবে মহিলাটির কাছে প্রতিভাত হলো৷ তিনি মহিলাটিকে বললেন যে, জীবনের পানি তার কাছেই আছে৷ এই বেহেশতি পানি যা তিনি প্রদান করেন তা আত্মার তৃষ্ণাকে মেটায়৷ সব মানুষই ভালোবাসা এবং সত্যের জন্য আকাঙ্ক্ষা করে এবং খোদার কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে৷ যে কেউ ঈসা মসিহের কাছে আসে তারই তৃষ্ণা তৃপ্ত হয়৷
ঈসা মসিহ খোদার দান তাদেরকে প্রদান করেন যারা তা চায়৷ আমাদেরকে আমাদের প্রয়োজনগুলো তুলে ধরতে হবে ঠিক যেমন ঈসা মসিহ তার পানির প্রয়োজনকে তুলে ধরেছিলেন৷ যে কেউ মাথা নত করবে না এবং চাইবে না, সে বেহেশতি পানি পাবে না যা বিনামূল্যে দান করা হয়৷
মহিলাটি ঈসা মসিহকে বুঝতে ব্যার্থ হলো৷ সে বাস্তবিকভাবে উত্তর দিলো, 'পানি তোলার জন্য আপনার কোন পাত্র নাই এবং কুয়াটিও গভীর সুতরাং কীভাবে আপনি আমাকে পানি দিবেন'৷ একই সময় সে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিল কারণ সে ঈসা মসিহের দয়া এবং ভালোবাসার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল৷ তার প্রতিবেশীদের মতো ঈসা মসিহ তাকে অবজ্ঞা করেন নাই৷ মর্যাদার দিক থেকে তিনি তার থেকে দূরে ছিলেন, কিন্তু তার পবিত্রতার মধ্যে তাকে ভালোবেসেছিলেন৷ মহিলাটি কখনোই এরকম একজন খাঁটি মানুষের সাক্ষাত্ পান নাই যেমন তিনি ছিলেন৷ তাই মহিলাটি জিজ্ঞেস করলো, 'আপনি কি আমাদের পিতা ইয়াকুব থেকে মহত্? আপনার কি একটি বিস্ময়কর কাজ করবার পরিকল্পনা আছে এবং আমাদেরকে একটি নুতন কুয়া দিতে চান'৷
ঈসা মসিহ উত্তর দিলেন এবং ব্যাখ্যা করলেন যে তার মনের মধ্যে পার্থিব কোন পানির বিষয় নাই, কারণ যে কেউ প্রাকৃতিক পানি দিয়ে তার দৈহিক তৃষ্ণা মিটাবে সে আবার তৃষ্ণার্ত হবে৷ দেহ স্বাভাবিকভাবে পানিকে শুষে নেয় এবং তা ফেলে দেয়৷
যাইহোক, ঈসা মসিহ আমাদেরকে জীবন্ত পানি দেন, এবং যা সব রকমের আধ্যাত্মিক তৃষ্ণা মেটায়৷ খ্রিষ্টানরা খোদাকে অনুসন্ধান করে এবং তাকে খুঁজে পায়৷ তারা দার্শনিক নয়, তাঁর কাছে পেঁৗছানো ব্যতীত তারা সত্যকে প্রতিফলিত করার ক্ষমতোা রাখে না৷ খোদা তাদেরকে খুঁজে পেয়েছেন এবং তারা তার অপরিহার্য বৈশিষ্টকে জানে৷ তার ভালোবাসা সব সময় আমাদের প্রয়োজন মেটায়৷ তার প্রকাশিত কালাম কখনো ক্লান্তিকর অথবা পুরানো হয়ে যায় না, কিন্তু সব সময়ই প্রবাহিত হয়, নতুনভাবে নির্মল এবং খোদার জ্ঞানকে শক্তিমান করে যা শুধুমাত্র একটা চিন্তা নয়, কিন্তু ক্ষমতা, জীবন, আলো, এবং শান্ত৷ পাকরুহ হলো বেহেশতি পানির মধ্য দিয়ে খোদার দান৷
ঈসা মসিহ তিন বার দৃঢ়তার সাথে পুনরাবৃত্তি করেন যে তিনি একাই কেবল জীবন-পানির দাতা৷ কোন ধর্ম বা দল, কোন আত্মীয়তা বা বন্ধুত্ব আপনার আত্মার তৃষ্ণাকে মেটাতে পারে না, কেবলমাত্র আপনার ত্রাণকর্তা ঈসা মসিহ তা কারেন৷
যে কেউ খোদার দানকে গ্রহণ করে সেই রূপান্তরিত হয়৷ তৃষ্ণার্ত ব্যক্তি পানির ঝরনা হয়ে যায়, তখন সে অন্যদেরকে উপচেপড়া আর্শিবাদ করতে পারে, তাদেরকে রহমতো, আনন্দ এবং প্রেম এবং পাক রুহের অন্যান্য ফলগুলিও দেয়৷ ঈসা মসিহের সঙ্গে থাকলে আমরা রহমতের ওপর রহমতো পাই এবং অনেকের জন্য খোদার দান স্বরূপ হতে পারি৷
স্ত্রীলোকটি অনুভব করলো যে ঈসা মসিহ তার সাথে কথা বলার ব্যাপারে আন্তরিক এবং তিনি কোনো জাদুকর নন৷ স্ত্রীলোকটি তার কাছে জীবনের পানি চাইল৷ সে তার প্রয়োজনের কথা বললো, কিন্তু চিন্তা করতে লাগলো যে ঈসা মসিহ তখনো দুনিয়ার পানির ব্যাপারে কথা বলছেন৷ সে কল্পনা করলো ওই পানি গ্রহণ করলে তার মাথায় করে আর পাত্র বহন করার প্রয়োজন হবে না এবং যারা তাকে অবজ্ঞা করতো তাদের সাথে আর মিশতে হবে না৷
প্রার্থনা: প্রভু ঈসা মসিহ, জীবনের পানিদাতা তুমি আমাদের জ্ঞান এবং ভালোবাসার তৃষ্ণাকে মিটাও৷ আমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা করো, সকর কলঙ্ক থেকে আমাদেরকে ধৌত করো, যাতে করে পাক-রুহ আমাদের ওপর আসতে পারেন এবং চিরকাল আমাদের সাথে বাস করতে পারেন৷ আমরা যেন ঝরনার পানির মতো হতে পারি এবং অনেকে সেই পানি তোমার রুহের স্রোতের মতো গ্রহণ করতে পারে, যা আমাদের হৃদয়ে ঢেলে দেয়৷ আমাদেরকে নম্রতা, এবাদত, ভালোবাসা এবং বিশ্বাসকে শিক্ষা দাও৷
প্রশ্ন: