Previous Lesson -- Next Lesson
৩. খোদার পূর্ণতা তার দেহধারণের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হলো (যোহন ১:১৪-১৮)
যোহন ১:১৭-১৮
১৭ মুসার মধ্যে দিয়া শরীয়ত দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ঈসা মসিহের মধ্য দিয়া রহমত ও সত্য এসেছে৷ ১৮ পিতা-খোদাকে কেউ কখনো দেখেনি৷ তাঁর বুকে থাকা সেই একমাত্র পুত্র, যিনি নিজেই খোদা, তিনিই তাকে প্রকাশ করেছেন৷
তৌরাত ও ইঞ্জিলের মধ্যে পার্থক্যকে কমিয়ে আনা যায় আইনের মধ্য দিয়ে, ন্যায়পরায়ণতা এবং রহমতের মধ্য দিয়ে, ন্যায়পরায়ণতা দিয়ে৷ খোদা মুসাকে দশ আজ্ঞা দিয়েছিলেন, পশুর রক্ত কোরবানি দিয়ে এবং জীবনবিধি দিয়ে৷ যে এই ধর্মানুশাসনকে পালন করেছিল সে জীবনে পুরস্কার লাভ করেছে৷
কিন্তু যে কেউ এই আইনের একটির বিরুদ্ধেও গিয়েছে সে মৃতু্যর যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে৷ এইভাবে মৃতু্যর আগ পর্যন্ত আইন বিচার হিসেবে গণ্য হতো কারণ কোন মানুষই নিখুঁত নয়৷ তাই সর্বোচ্চ ধার্মিকতা, অনুতাপের মধ্য দিয়ে, পূর্ণ হয়েছে এবং তীব্র অনুশোচনা, সমস্ত আইন-কানুনকে মেনে চলার অসম্ভবতাকে দূরীভূত করেছে৷ উপরিগত জাতিগোষ্ঠী নিজেদেরকে ভালো হিসেবে আখ্যায়িত করেছে যেমন তাদের জীবন খোদাকে সন্তুষ্ট করেছে৷ এটা তাদেরকে অহংবাদী করেছে এবং গোঁড়ামিতে ডুবিয়ে দিয়েছে৷ তারা ভালোবাসাকে ভুলে গিয়েছিল এবং তাদের, স্বার্থপর কাজের মধ্যে যে ন্যায়পরায়ণতা, তাঁর ভিতর দিয়ে দাম্ভিক হয়ে পড়েছিল৷ অবশ্যই আইন হলো পবিত্র এক জিনিস কারণ এটা খোদার পবিত্রতাকে প্রতিফলিত করে৷ কিন্তু এর সামনেও সবাইকে দুষ্ট দেখায়৷ এইভাবে আইন আমাদেরকে নিয়ে যায় দুর্দশা ও মৃতু্যর দিকে৷
এই পারিপাশ্বর্িকতা যা মৃতু্যর ধূম্রজালে পরিপূর্ণ, প্রচারক যোহন প্রথমবারের মতো তাঁর সুসমাচারে ঈসা মসিহের কথা উলেস্নখ করেন যিনি এই সমস্ত দূর্দশা থেকে উদ্ধার করেন এবং খোদার গজব থেকে আমাদেরকে রক্ষা করেন৷ নাসারথের ঈসা মসিহ হলেন সেই প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তা যিনি খোদার প্রতিনিধি এবং পাকরুহে, পরিপূর্ণ৷ তিনি সমস্ত রাজাদের রাজা খোদার বাক্য এবং প্রধান পালক৷ তিনি হলেন সমস্ত আশা এবং ত্রাণের সম্ভাবনার মূল সারাংশ৷
ঈসা মসিহ আমাদের কাছে একটি নুতন আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে আসেন নেই বরং তিনি আমাদের মুক্ত করেছেন আইনের অভিশাপ কবল থেকে৷ তার অনুপম ভালোবাসা দিয়ে তিনি সমস্ত আইনগত দাবিকে আমাদের স্বার্থে পূর্ণ করেছেন৷ তিনি আমাদের পাপসমূহকে তুলে নিয়েছেন এবং দুনিয়ার বিরুদ্ধে বিচারকে তাঁর কাঁধে তুলে নিয়েছেন এবং এইভাবে আমাদেরকে খোদার সাথে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করেছেন৷ আমাদের পাপের কারণে খোদা এখন থেকে আর আমাদের শত্রু নন কিন্তু আমরা আমাদের প্রভু ঈসা মসিহের মাধ্যমে খোদার সাথে শান্তি লাভ করেছি৷ মানুষ-ঈসা মসিহ তাঁর বেহেস্তি পিতার কাছে আরোহন করেছেন এবং তাঁর পাকরুহ দিয়ে আমাদেরকে ভরিয়ে দিয়েছেন৷ তিনি আমাদের হৃদয়ে আইনের বিষয়ে দাগ কেটেছেন এবং আমাদের ভিতরের অনুভূতিকে খাঁটি সত্যময় এবং সম্মানিত চিন্তাধারায় পরিপূর্ণ করেছেন৷ আমরা আর বিধি-বিধান বা আইনের মধ্যে বাস করি না কারণ তিনি আমাদের মধ্যে আছেন৷ এইভাবে খোদা আমাদেরকে শক্তি দিয়েছেন তার ভালোবাসার দাবিগুলোকে পরিপূর্ণ করতে৷
ঈসা মসিহের আগমনের মধ্য দিয়ে রহমতের যুগ শুরু হয়েছে এবং আমরা তার মধ্যে বাস করি৷ তিনি আমাদের কাছ থেকে দান, সেবা বা উত্সর্গ কিছুই চান না যাতে করে আমাদের আত্ম ন্যায়পরায়ণতার স্ফীতি ঘটতে পারে, তাই তিনি তার পুত্রকে পাঠিয়েছেন আমাদের ওপর বেহস্তি ন্যায়পরায়ণতা অর্পণ করার জন্য৷ যে কেউ তাঁকে বিশ্বাস করে সেই পুরোপুরি ন্যায়পরায়ণ৷ এই কারণে আমরা তাঁকে ভালোবাসি এবং ধন্যবাদ দেই এবং তার কাছে নিজেদের জীবনকে উত্সর্গ করি কারণ তিনি আমাদেরকে পাপমুক্ত করেছেন৷
ঈসা মসিহ আমাদের অনাথদের মতো ফেলে যাননি কিন্তু আমাদের সাথেই আছেন এবং আমাদেরকে দানসমূহ দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন৷ আমরা আমাদের পাপসমুহের ক্ষমার যোগ্য নই অথবা খোদার রুহের সহভাগিতার জন্যও উপযুক্ত নই৷ অথবা তার কোনো দান বা আর্শিবাদ পাবার যোগ্য নই৷ সবকিছুই তাঁর থেকে পাওয়া রহমত৷ বস্তুত, ক্রোধ এবং সর্বনাশ ছাড়া আমরা কোনো কিছুরই যোগ্য নই৷ কিন্তু বিশ্বাসের সাথে আবদ্ধ হবার কারণে আমরা খোদার সন্তান হয়েছি মসিহের যাদের ওপর তার রহমত অর্পিত হয়েছে৷ আপনি কি গুনাহের কৃতদাস এবং রহমতের সন্তানদের মধ্যে পার্থক্য উপলব্ধি করতে পেরেছেন?
এই রহমত সেই একমাত্র পবিত্রজনের হৃদয়ে নিছক কোনো আবেগের অনুভূতি নয় বরং এটা প্রেম যার ভিত্তি হলো বৈধ অধিকারের৷ খোদা যে কাউকেই ইচ্ছা করলেই ক্ষমা করতে পারেন না কারণ পাপীর পাপ তার তাত্ক্ষণিক মৃতু্যকে প্রয়োজন হয়৷ যাই হোক ঈসা মসিহের সলিববিদ্ধতা আমাদেরকে সমস্ত ন্যায়পরায়ণতায় পূর্ণ করেছে৷ এইভাবে আমরা রহমতের অধিকার পেয়েছি এবং খোদার রহমত একটি বাস্তবতা, যাকে টলানো যায় না৷ ঈসা মসিহের মধ্যে রহমত খোদার সাথে আমাদের জীবনের বৈধ ভিত্তি৷
আপনার স্বাভাবিক প্রশ্ন, কে এই খোদা যিনি স্বাধীনভাবে কাজ করেন অথচ তার ন্যায়পরায়ণতার দ্বারা মধ্যে সীমাবদ্ধ? আমরা আপনাকে জবাব দেই৷ অনেক ধর্ম ঐকান্তিক এবং কৃচ্ছ্রের দ্বারা খোদাকে বুঝবার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু তাদের ব্যবস্থা সকল মইয়ের মতো যা মাটিতে ঠেকানো যা বেহেস্তে পেঁৗছাতে পারে না৷ কিন্তু ঈসা মসিহ হলেন স্বগর্ীয় ব্যবস্থা যা বেহেস্ত থেকে নেমে এসেছে এবং দুনিয়াতে স্থায়ীভাবে স্থাপিত হয়েছে৷ তাঁর মাধ্যমে খোদার সাথে আমাদের সাক্ষাত কাউকেই হতাশ করে না৷
শাশ্বত স্রষ্টাকে কোনো মানুষই দেখেনি, কারণ আমাদের পাপসমূহ সেই পবিত্র জন থেকে আমাদেরকে আলাদা করে রেখেছে৷ খোদার সম্পর্কে সমস্ত বক্তব্যই অস্পষ্ট, কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ কিন্তু ঈসা মসিহ তার পুত্র ছিলেন খোদার সাথে অনন্তকাল ধরে এবং স্বগর্ীয় ত্রিত্ব হলো এর একটি অপরিহার্য বিষয়৷ তাই পুত্র পিতাকে চিনত৷ আগেকার সমস্ত প্রকাশিত কালামই অপর্যাপ্ত ছিল৷ কিন্তু ঈসা মসিহ হলেন খোদার পরিপূর্ণবাক্য এবং সমস্ত সত্যের সারাংশ৷
ঈসা মসিহের বাণীর কেন্দ্রীয় বিষয় কী?
তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, কীভাবে প্রার্থনার মধ্যে খোদাকে সম্বোধন করতে হয় তা হলো 'আমাদের বেহেস্তি পিতা'৷ খোদাকে এইভাবে সম্বোধন করার মাধ্যমে তিনি আমাদের কাছে প্রকাশ করলেন যে. খোদার অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হলো তার পিতৃত্ব৷ খোদা একনায়ক বা দখলকারী বা ধ্বংসকারী কেউ নন৷ অথবা তিনি বেদনা-বোধহীন এবং উদাসীন কোনো সত্তা নন৷ তিনি আমাদের যত্ন নেন, যেন একজন পিতা তাঁর সন্তানের ব্যাপারে চিন্তা করেন৷ যেমন মাটিতে পড়ে গেলে তাকে তুলে উঠানো এবং তাকে ধৌত করা এবং তাকে ছেড়ে না যাওয়া, যাতে করে এই পাপের পৃথিবীতে সে হারিয়ে না যায়৷ যখন আমরা জানতে পারি, খোদা আমাদের বেহেস্তি পিতা, যিনি আমাদের দুশ্চিন্তা থেকে সৃষ্ট চরম দুদর্শা এবং আমাদের পাপসমুহ তুলিয়া নেন৷ কারণ আমাদের পিতার কাছে ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা পবিত্রতা ও সমাদরে বরণ লাভ করি৷ আমরা চিরকালই খোদার সাথে বাস করি৷ এই ধমর্ীয় বিপ্লব এই পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরেছে পিতার নামে যা হলো একটি নতুন ইসায়ী চেতনা যা ঈসা মসিহ আমাদের কাছে এনেছেন৷ মসিহের সমস্ত কথা এবং তার কাজের সারাংশ এই পিতৃসুলভ নামের মধ্যেই রয়েছে৷
ঈসা মসিহ মনুষ্যদেহ ধারণের আগে পিতার সাথেই ছিলেন৷ এই সুন্দর ধারণা আমাদের কাছে ঈসা মসিহ এবং খোদার ভিতরে প্রেমের সম্পর্ককে প্রকাশ করে৷ মৃতু্য এবং পুনুরুত্থানের পরে পুত্র পিতার কাছে ফিরে যায়৷ তিনি শুধুমাত্র খোদার দক্ষিণ হস্তের ওপর বসেননি কিন্তু পিতার বক্ষের মধ্যে বসেছেন৷ এটার অর্থ হলো যিনি প্রথম থেকে পিতার সাথে ছিলেন ইনিই তিনি৷৷ তাই খোদা সম্পর্কে মসিহের সমস্ত বক্তব্য সত্য৷ খোদাকে তো আমরা ঈসা মসিহের মধ্যে দেখি৷ যেমন পুত্র তেমনি পিতা এবং যেমনি পিতা তেমনি পুত্র৷
প্রার্থনা : আমাদের স্বর্গস্থ পিতা, আমরা তোমার প্রশংসা করি এবং তোমাকে ধন্যবাদ দিই, কারণ তুমি তোমার প্রিয় পুত্রকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছিলে৷ আমরা তোমার কাছে নতজানু হই কারণ তুমি আমাদেরকে আইনের বিভীষিকা থেকে মুক্তি করেছ এবং আমাদেরকে তোমার বেহেস্তি ধার্মিকতার মধ্যে বসিয়েছ৷ আমরা তোমাকে প্রতিটি অধ্যাত্মিক দানের জন্য ধন্যবাদ দিই এবং তোমাকে প্রশংসিত করি কারণ আমাদেরকে পিতা বলে ডাকার অধিকার দিয়েছ৷
প্রশ্ন: