Previous Lesson -- Next Lesson
২. পুনরুত্থিত মসিহ তাঁর ধার্মিকতার পূর্ণতা আমাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করেন (রোমীয় ৫:৬-১১)
রোমীয় ৫:৬-৮
৬. যখন আমাদের কোনো শক্তিই ছিল না তখন ঠিক সময়েই মসিহ আল্লাহর প্রতি ভয়হীন মানুষের জন্য, অর্থাত্ আমাদের জন্য প্রাণ দিলেন৷ ৭. কোনো সত্ লোকের জন্য কেউ প্রাণ দেয় না বললেই চলে৷ যিনি অন্যের উপকার করেন সেই রকম লোকের জন্য হয়তো বা কেউ সাহস করে প্রাণ দিলেও দিতে পারে৷ ৮. কিন্তু আল্লাহ যে আমাদের মহব্বত করেন তার প্রমাণ এই যে, আমরা গুনাহগার থাকতেই মসিহ আমাদের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন৷
খোদার ক্রোধ ও ন্যায় বিচারের প্রদর্শনের পর পৌল আমাদের প্রকৃত অনুতাপের জন্য প্রেরণা দিলেন, আর আমাদের একগুয়েমি ও কঠিন হৃদয় ভেঙ্গে ইমানের দ্বারা ধার্মিকতা লাভের জন্য প্রস্তুত হতে ও মহান প্রত্যাশার দিকে তাকাতে বললেন আর খোদার নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ত প্রেমে জীবন যাপন করার তাগিদ দিলেন৷ যদিও আমরা নাজাতের এ সুযোগ পৌছেছি তবুও আমাদের স্মরণ রাখতে হবে অতীতের দিনগুলোর কথা যেন অহমিকায় আক্রান্ত হয়ে না পড়ি৷
রুহানি দানগুলো যেমন শান্তি, প্রেম, পবিত্রতা, বিশ্বাস, আশা এবং ধৈর্য আমাদের দ্বারা উত্পন্ন হবার নয়, না মানবীয় শক্তিতে তা অর্জন করা সম্ভব৷ মসিহের মৃতু্যর ফলেই তা হয়েছে, যিনি তাঁর জীবন দান করেছেন, কেবল তাঁর প্রিয় ভাইদের জন্যই নয় কিন্তু অধার্মিক লোকদের জন্যও প্রাণ দিয়েছেন যাদে মধ্যে আমরা অনবরত করছি ওঠা বসা, করছি বসবাস৷ মানুষগুলো যেনো ইবলিসের সক্রিয় বোমা৷ সে কেবল নিজেকেই কলুষিত করে না কিন্তু অন্যসকলকেও কলুষিত করে ছাড়ে৷ তাই মসিহ আমাদের ভালোবেসে নিজের প্রাণ দান করলেন৷
বিনম্রতার মধ্য দিয়ে খোদার মহান প্রেমের পরিচয় পাই৷ কদাচিত্ লোকজন পাওয়া যায় যারা নিজেদের আরাম আয়েশ, সময়, অর্থ-সম্পদ আর সুবিধা-সুযোগ অথবা নিজ জীবন তাঁর রুগ্ন ভাইয়ের কল্যাণের জন্য ত্যাগ করতে রাজী থাকে৷ সম্ভবতঃ কেউ নিজ দেশের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত থাকতে পারে, অথবা তার সন্তানদের জন্য অথবা কোনো মাতা তার সন্তানের জন্য জীবন কোরবানি দিতে প্রস্তুত হতে পারে, তবে কেউই দোষী অথবা ঘৃণিত শত্রুদের জন্য প্রাণ কোরবানি দিতে রাজি হবে না, কেবলমাত্র খোদাই তা করেছেন
এ বিনম্রতার মাধ্যমে খোদার সবিশাল প্রেম প্রত্যক্ষ করে থাকি৷ আমরা যখন খোদার অবাধ্য শত্রু ছিলাম, পুতপবিত্র খোদা আমাদের মহব্বত করেছেন৷ পাপের প্রায়শ্চিত্ত শোধকল্পে অর্থাত্ খুনিদের জন্য তিনি তাঁর পুত্রের মধ্য দিয়ে আমাদের পাপীদের সঙ্গ নিলেন৷ এর চেয়ে অধিক প্রেম আর কি হতে পারে, বন্ধুর জন্য নিজের প্রাণ দান করার চেয়ে! মসিহের বাক্যের দ্বারা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে তিনি তাঁর শত্রুদের বন্ধু বলে সম্বোধন করেছেন, কেননা তিনি সকলকে মহব্বত করেন এমন কি মৃতু্য অবধি৷
খোদার মহব্বত এতটাই বিশাল যে তিনি আমাদের সকল পাপ অপরাধ সলিবে আত্মাকোরবানির দ্বারা পরিশোধ দিয়েছেন, আমাদের পাপে পতিত হবার পূর্বেই এমনকি আমাদের ভূমিষ্ট হবার পূর্বে তিনি তা করেছেন৷ তাই আমাদের নিজেদের ধার্মিক হিসেবে গণ্য করার কোনোই ফালতু প্রচেষ্টা করার প্রয়োজন নেই, যা প্রয়োজন তা হলো মনে প্রাণে ঐশিদত্ত আশির্বাদ বিশ্বাসে গ্রহন করা, আর আস্থা রাখা যে আমরা ইতোপূর্বে ধার্মিক বলে মনোনীত হয়েছি৷ ফলে মসিহের নাজাতদানকারী শক্তি আমাদের মধ্য দিয়ে হচ্ছে বাস্তবায়িত৷
রোমীয় ৫:৯-১১
তাহলে মসিহের রক্তের দ্বারা যখন আমাদের ধার্মিক বলে গ্রহণ করা হয়েছে তখন আমরা মসিহের মধ্য দিয়েই আল্লাহর শাস্তি থেকে নিশ্চয়ই রেহাই পাব৷ ১০. আমরা যখন আল্লাহর শত্রু ছিলাম তখন তাঁরই পুত্রের মৃতু্যর মধ্য দিয়ে তাঁর সঙ্গে আমাদের মিলন হয়েছে৷ এভাবে মিলন হয়েছে বলে মসিহের জীবন দ্বারা আমরা নিশ্চয়ই নাজাত পাব৷ ১১. কেবল তা-ই নয়, যাঁর দ্বারা আল্লাহর সঙ্গে আমাদের মিলন হয়েছে সেই হযরত ঈসা মসিহের মধ্য দিয়ে আল্লাহকে নিয়ে আমরা আনন্দও বোধ করছি৷
তাই এই মুহুর্তে আনন্দে নাচতে শুরু করুন! কেননা আমাদের বিশ্বাসে মসিহের সাথে যুক্ত হবার ফলে আমরা খোদার কাছে ধার্মিক বলে হয়েছি বিবেচিত৷ ইবলিসের কোনোই অধিকার নেই আমাদের বিরুদ্ধে নালিশ করে৷ মসিহের পূতপবিত্র রক্ত আমাদের দেহ-মন-আত্মা সবকিছু পবিত্র করে দিয়েছে৷ এ পবিত্রতার অবস্থা চিরকাল চলতে থাকবে, কেননা মসিহের সুপারিশ কেয়ামতের দিনেও অর্থাত্ শেষ বিচারের দিনেও আমাদের রক্ষা করার জন্য৷
পৌল কতিপয় নাজাতের সত্যের গভীরে আমাদের নিয়ে গেছেন নিম্নের কতিপয় বিশ্লেষণ:
প্রথমতঃ আমরা যখন খোদার শত্রু হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে জীবন যাপন করতাম তখনই খোদার সাথে আমরা হয়েছি প্রেমের বাধনে যুক্ত৷ এ পুনর্মিলন আমাদের বিনামূল্যে অর্থাত্ আমাদের কোনো মাশুল দেয়াও হয়েছে সম্পন্ন৷ বাস্তবতা হলো, আমরা সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত ও অযোগ্য পুনর্মিলনের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার, তা হলো একমাত্র খোদার প্রেম রহমের দান৷ এ পুনর্মিলন সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র খোদার পুত্র যিনি মানবরূপে ধরাপৃষ্টে আগমন করেছেন এবং আমাদের মতো গুনাহগারদের জন্য পাপের প্রাশ্চিত্ত শোধ দিয়েছেন বিধায়৷
দ্বিতীয়তঃ মসিহের মৃতু্যর ফলে যদি এ বিশাল পরিবর্তন ঘটতে পারে তবে জীবন্ত পুনরুত্থিত নাজাতের জন্য কতইনা মহান কর্ম সাধন করে চলবেন৷ তাই আমরা সাগ্রহে স্থির মনোনিবেশ সহকারে সর্বান্তকরণে আমরা তাঁর ইচ্ছা পুরণ করতে খোদার সাথে হয়েছি যুক্ত, চাই, যাতে করে তাঁর ক্ষমতা ও কুদরত আমাদের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়৷ এভাবেই অনন্ত জীবন যা হলো মসিহের জীবন, আমাদের বিশ্বাসের ফলে আমাদের মধ্যে এসেছে খোদার মেষের মধ্য দিয়ে, আর এই মেষশিশুই হলেন পাকরূহ, আর পাকরূহ হলেন স্বয়ং খোদা নিজেই, অর্থাত্ তিনি রয়েছেন আমাদের অন্তরে৷ এই ঐশি আয়াত প্রতিষ্ঠা করে আমাদের হৃদয়ে শান্তি, আনন্দ, প্রশান্তি এবং প্রশংসা৷ আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দান করেছেন একমাত্র পাকরূহ, কেননা, যে কেহ মহব্বতে জীবন যাপন করে, তিনি খোদার মধ্যে জীবন যাপন করেন এবং খোদাও তাঁর মধ্যে বসবাস করে থাকে৷
তৃতীয়তঃ এভাবে পৌল সত্সাহসে গৌরবের উচ্চ শিখরে পৌছাতে পেরেছিলেন, তিনি বলেছেন, 'আমরা খোদার মধ্যে আনন্দ করি,' যার অর্থ হলো পবিত্র সত্ত্বা আমাদের মধ্যে নিয়ত বসবাস করে চলছেন, আর আমরাও তাঁর সাথে, তাঁর মধ্যে জীবন কাটাই; আমরা যে কেবলমাত্র তাঁর সাথে পুনর্মিলিতই হয়েছি তাই নয়, কিন্তু পাকরূহ যিনি নিজেই খোদা, তিনি আমাদের দেহকে পিতা,পুত্র, পাকরূহের আবাসভূমিতে করেছেন পরিণত৷ আপনার মধ্যে খোদার উপস্থিতি রয়েছে তা জানতে পেরে আপনি কি উত্ফুল্ল নন? অনুতপ্ত ও বিনম্র মানুষে পরিণত হোন, নিজেকে মৃতবত্ ভাবুন, প্রভুর আরাধনা করুন, দেখুন সম্মানিত পদে মসিহ আপনাকে উনি্নত করেছেন৷
প্রার্থনা: আমরা সেজদা-অবনত প্রেমের শক্তির কাছে, ঘোষণা দিচ্ছি সলিবে হত মসিহের বিষয়ে, আর আমরা আমাদের দেহ ঐশি প্রেম প্রকাশের জন্য সমর্পন করেছি, যিনি অবনত তাকেও আমাদরে সাথে যুক্ত করেছি৷ আমরা আমাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাই না, কিন্তু ঐশি প্রেমের পারাবারে ডুবে গেছি৷
প্রশ্ন: