Previous Lesson -- Next Lesson
চ) মসিহের কবর সম্পন্ন (যোহন ১৯:৩৮-৪২)
যোহন ১৯:৩৮
এই সমসত্ম ঘটনার পরে অরিমাথিয়া গ্রামের ইউসুফ ঈসার লাশটা নিয়ে যাবার জন্য পীলাতের কাছে অনুমতি চাইলেন৷ ইউসুফ ছিলেন ঈসার গোপন উম্মত, কারণ তিনি ইহুদি নেতাদের ভয় করতেন৷ পীলাত অনুমতি দিলে পর তিনি এসে ঈসার লাশ নিয়ে গেলেন৷
পরিষদের ৭০জন সদস্যের মধ্যে সকলে রাজী বা খুশি ছিলেন না ঈসা মসিহের বিরম্নদ্ধে এমন রায় ঘোষণা দেওয়াতে৷ ভূতাত্তি্বক খনন কার্য পরিচালনার ফলে ইদানিং প্রত্মতাত্তি্বক আবিষ্কারের মাধ্যমে দেখা যায় অনত্মতঃ দুই জন ছিলেন ভিন্নমতে যারা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু পরিশেষে সর্বসম্মতিক্রমে সুবিচারের হলো গর্ভপাত, আর কুসংস্কারের হলো বিজয়৷ এ বিষয়ের উপর জোর দিতে গিয়ে জেরার কাজ পুনঃপুনঃ করা হয়েছে, আর সতর্কতার সাথে রায় প্রদান করা হয়েছে৷ অনুমিত হচ্ছে, ঈসা মসিহের ৰেত্রে উক্ত নিয়ম পালনে দুই জন প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ তাদের মধ্যে একজন হলেন আরিমাথিয়ার ইউসুফ, যিনি ছিলেন ঈসা মসিহের গোপন সাহাবি (মথি ২৭ : ৫৭ এবং মার্ক ১৫ : ৪৩)৷ তিনি পরিষদের পদ থেকে বাদ না পড়ার বিষয়ে সচেতন ছিলেন এবং জাতীয় কার্যক্রমের বলয় থেকে তার প্রভাব যাতে কমে না যায় সে বিষয়ে তিনি সজাগ ছিলেন৷ তার প্রজ্ঞার পরিপক্কতার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই৷ কাইয়াফার কুটকৌশল তথা অবিচারের কারণে তিনি (ইউসুফ) কাইয়াফার ওপর অসন্তুষ্ট ছিলেন৷ ইউসুফ তার মৌনতা দূর করে প্রকাশ্যে ঈসা মসিহের সমর্থন করলেন কিন্তু এ স্বীকৃতি অনেক বিলম্বেই প্রকাশ করা হলো৷ কিন্তু এ স্বীকৃতি যুক্তিজালে খ-িত ও প্রত্যাখ্যাত হলো, আর ঈসা মসিহকে সলিব বিদ্ধ করার রায়ই হলো কার্যকর৷
ঈসা মসিহের মৃতু্যর পর ইউসুফ পীলাতের কাছে গেলেন কেননা তাঁর সে অধিকার ছিল৷ পীলাত তাঁর যুক্তি সমর্থন করলেন এবং ঈসা মসিহের দেহটি সলিব হতে নামিয়ে কবরস্থ করার রায় প্রদান করলেন৷
পীলাত ইহুদিদের অপরাধের কারণে আর একবার প্রতিঘাত করলেন ঈসা মসিহের দেহটিকে দাফন করার হুকুম দিয়ে, কেননা সলিব বিদ্ধ দোষী ব্যক্তিদের মরদেহ ছেচড়ে টেনে নিয়ে হিনোন নামক উপত্যকায় ছুড়ে মারা হতো, যেখানে শিয়াল কুকুর লাশের ওপর হামলে পড়তো এবং উক্ত স্থানটি ছিল অবিরত প্রজ্জলিত অগি্নকু-৷ পিতা তাঁর পুত্রকে রৰা করলেন লজ্জাজনক পরিস্থিতি থেকে৷ সলিবে তিনি তার স্বতঃস্ফুর্ত আত্মকোরবানি ঐশি কোরবানি হিসেবে সম্পন্ন করলেন৷ তাঁর বেহেশতি পিতা ইউসুফকে পাঠালেন তাকে সম্মানিত কবরে দাফন করার জন্য৷
যোহন ১৯:৩৯-৪২
আগে যিনি রাতের বেলায় ঈসা মসিহের কাছে এসেছিলেন সেই নীকদমও প্রায় তেত্রিশ কেজি গন্ধরস ও অগুর মিশিয়ে নিয়ে আসলেন৷ পরে তাঁরা ঈসার লাশটি নিয়ে ইহুদিদের দাফন করবার নিয়ম মত সেই সমসত্ম খোশবু জিনিসের সঙ্গে লাশটি কাপড় দিয়ে জড়ালেন৷ ঈসাকে যেখানে ক্রুশের উপরে হত্যা করা হয়েছিলো সেই জায়গায় একটা বাগান ছিল আর সেখানে একটা নতুন কবর ছিল৷ সেই কবরের মধ্যে কাউকে কখনও দাফন করা হয় নি৷ সেই দিনটা ছিল ইহুদিদের ঈদের আয়োজনের দিন, আর কবরটাও কাছে ছিল বলে তাঁরা ঈসাকে সেই কবরেই দাফন করলেন৷
হঠাত্ করে নীকদিম নিজেও সলিবের কাছে এসে দাঁড়ালেন৷ পরিষদের সদস্যদের মধ্যে তিনিই হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি ঈসা মসিহের সলিবে মৃতু্যর রায়ের বিরোধিতা করেছিলেন৷ গোপনে চক্রানত্মমূলক যে রায় ঘোষিত হতে যাচ্ছিল উক্ত রায় বাতিল করার জন্য তিনি খুবই চেষ্টা করেছিলেন৷ এবং চেষ্টা করেছিলেন ন্যাজ্যভাবে সভাসদদের নিয়ে বাসত্মবতার প্রমাণ করা (ইউ ৭ : ৫১)৷ তিনি ৩২ কিলোগ্রাম মহামূল্যবান সুগন্ধি আতর ও মসলা নিয়ে হাজির হলেন এবং তত্সঙ্গে কাফনের কাপড় নিয়েও আসলেন, সাহাযা্য করলেন ইউসুফকে মসিহের লাশ সলিব থেকে নামানোর জন্য৷ তাকে সম্বানত্ম পরিবারের লোকদের মতো করে দাফন করার জন্য মসলা মাখালেন শতছিন্ন মরদেহে মাখালেন এবং কাফনের কাপড় দিয়ে জড়ালেন, দোয়া মুনাজাত করে কবরে শায়িত করার জন্য প্রস্তুত করলেন৷ সময়ের স্বল্পতার কারণে শুক্রবার বিকেল ছয় ঘটিকার পূর্বেই তাকে দাফন করতে হবে, কেননা বিশ্রামাবার শুরম্ন হয়ে যাবে আর তখন প্রথাগতভাবে বিশ্রামবারে সর্বপ্রকার কাজকর্ম থাকে নিষিদ্ধ৷ দাফন কর্মের জন্য তাদের হাতে খুবই কম সময় অবশিষ্ট ছিল৷ আমাদের প্রভুর পিতা উক্ত দুই ব্যক্তিকে পরিচালনা করেছিলেন পুত্রের সম্মান দেখানোর জন্য৷ ফলে যিশাইয় নবীর ভবিষ্যদ্ধানী পূর্ণ হলো৷ যেখানে বলা হয়েছে (যিশাইয় ৫৩ : ৯) তাকে ধনি ও সম্বানত্ম ব্যক্তিদের করে শায়িত করা হবে৷
পাথর খুড়ে কবর তৈরি করা বড়ই ব্যয়বহুল বিষয়৷ ইউসুফের পৰে সাধ্যমত সম্মান প্রদর্শন করার আর কোনো ব্যবস্থা ছিল না, তাই তার নিজের জন্য খোদাই করা ব্যয়বহুল কবরে মসিহকে দাফন করলেন৷ কবরটি ছিল সলিবের কাছাকাছি শহর রৰার দেয়াল ঘেষা সেখানে ঈসা মসিহের মরদেহ কাপড়ে জড়িয়ে পাথরের একটা টুকরোর ওপর শায়িত করলেন সুগন্ধি মসলা ও আতর ঢেলে মরদেহ ভিজিয়ে দিলেন, নিকদিমই উক্ত আতর ও সুগন্ধি তাঁর সম্মানার্থে নিয়ে এসেছিলেন৷
সত্যিকারার্থে ঈসা মসিহ মৃতু্য বরণ করেছেন, তিনি মানুষ হিসেবে অর্থাত্ তাঁর পার্থিব জীবনের অবসান ঘটালেন তেত্রিশ বত্সর বয়সে৷ মৃতু্যর জন্যই তাঁর জন্ম হয়েছে৷ প্রেমের পাত্রের প্রতি মহব্বত প্রকাশের সর্বোত্তম ব্যবস্থা বা প্রকাশ হলো তার জন্য জীবন পর্যনত্ম দান করা৷
প্রার্থনা: ঈসা মসিহ, তোমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি, কেননা তুমিই আমাদের স্থলে প্রাণ উত্সর্গ করে আমাদের মুক্তপাপ করেছো৷ আমরা সকল বিশ্বাসীবর্গ তোমাকে ভালোবাসি, তুমি আসমানি গজব থেকে আমাদের বাঁচিয়েছে, আর আমাদের সাথে ত্রিত্তপাকের মধ্যে এক মধুময় সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছো৷ আমার এ জীবন তোমার হাতে তুলে দিলাম, তোমার সলিব বহন করার যোগ্য সাহাবি হিসেবে গড়ে তোলো৷
প্রশ্ন: