Previous Lesson -- Next Lesson
২. রাজমুকুটে ভূষিত করবার আবেদন প্রত্যাহার করলেন৷ (যোহন ৬:১৪-১৫)
যোহন ৬:১৪-১৫
১৪. ঈসা মসিহের এই আশ্চর্য কাজ দেখিয়া লোকেরা বলিতে লাগিল, 'দুনিয়াতে যে নবীর আসিবার কথা আছে, ইন সত্যই সেই নবী৷' ১৫. ইহাতে ঈসা মসিহ বুঝিলেন, লোকেরা তাহাকে জোর করিয়া তাহাদের রাজা করিবার জন্য ধরিতে আসিতেছে৷ সেই জন্য, তিনি একাই আবার সেই পাহাড়ে চলিয়া গেলেন৷
ঈসা মসিহ মানব জাতিকে নিজের মতে আনতে দুনিয়াতে এসেছিলেন৷ পাঁচ হাজার লোককে খাওয়ানোর পর, লোকেরা আগ্রহভরে তার চারিদিকে জড় হয়েছিল৷ তারা হাততালি দিয়েছিল এবং নেচেছিল তাকে রাজা হিসেবে সশ্রদ্ধ স্বীকৃতি দেবার জন্য৷ তারা উপলব্ধি করেছিল, এই গালিলিয় ছিল খোদার লোক; খোদার কন্ঠস্বর তার মধ্য দিয়ে এসেছিল এবং খোদার ক্ষমতা তার মধ্য দিয়ে বিবর্ধিত হয়েছিল৷ প্রকৃতি তার আজ্ঞা পালন করেছিল৷ তিনি তাদেরকে রুটি দিয়েছিলেন যেমন মুসা মরুপ্রন্তরে তা করেছিলেন৷ ঘৃণিত জাতিকে সত্য পথে চালিত করবার জন্য তিনি প্রতীশ্রুতি নবী ছিলেন (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮ : ১৫) তারা এটাও চিন্তা করেছিল যে, যদি ঈসা মসিহ তাদের রাজা হয় তাদেরকে ভবিষ্যতে কোনো কাজ বা পরিশ্রম করার প্রয়োজন হবে না৷ 'আমরা পবিত্র কেতাব অধ্যয়ন করতে এবং এবাদত করতে সময় পাব, এবং তিনি আমাদেরকে বিনামূল্যে খাদ্য দেবেন৷ এরকম একজন রাজা যথেষ্ট শক্তিশালী হতে পারে রোমীয় সৈন্যদের পরাজিত করতে৷ তিনি এমনকি বেহেশত থেকে আগুন নিক্ষেপ করে তাদেরকে শেষ করে দিতে পারেন৷ সুতরাং তাকে মুকুট পরানো হোক এবং রাজা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হোক'৷ তাদের মধ্যে একজন তার নিকটে গেল তাকে তাদের কাঁধে বহন করতে৷ তারা তাকে সমর্থন দেবে এই আশায় যে তিনি তাদেরকে জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে৷
এই জনপ্রিয় আন্দোলনে ঈসা মসিহের অবস্থান কী ছিল? তিনি কি এই উত্থানের অগ্রগতিতে আনন্দিত হয়েছিলেন অথবা তার প্রতি তাদের বিশ্বাসের জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়েছিলেন? তিনি কি প্রলোভনের কাছে বশীভূত হয়েছিলেন এবং অবিশ্বাসীদের সাহায্য নিয়ে রাজ্য গড়তে চেয়েছিলেন? অথবা তিনি কি তাদের পরিকল্পনাকে হটিয়ে দিয়েছিলেন? না, তিনি একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি কিন্তু মরু-প্রান্তরে চলে গেলেন৷ তিনি মানুষ দ্বারা সৃষ্ট কিছু হতে চাননি, তিনি খোদাকে তুলে ধরতে পরিতৃপ্ত ছিলেন৷ তিনি এই সকল কৌতূহলীদের অবস্থা জানতেন; তারা ভাবাবেগে মাতাল হয়ে তার উপদেশ শুনতে অসমর্থ ছিল৷ এটা ছিল একটা রাজনৈতিক একাত্মতা যা একটি ধারণার মধ্যে একসাথে একীভূত ছিল৷
পার্থিব রাজ্য স্থাপন করার কোনো ইচ্ছাই ঈসা মসিহের ছিল না, বরং একজন একজন করে মানুষদেরকে অনুতাপ ও নবজন্মের দিকে চালিত করতে চেয়েছিলেন৷ কেহই স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না, পাপ মোচনের মধ্য দিয়ে দ্বিতয়বার জন্মগ্রহন না করে৷ লোকেরা মোজেজাগুলি ও নিদর্শনগুলির উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিল৷ তারা পার্থিব রুটির কথা চিন্তা করেছিল; তিনি পাক-রুহের কথা বলেছিলেন যা আরও গভীরতম ক্ষুধাকে নিবৃত্ত করে৷ তারা পার্থিব রাজ্য এবং উবে যাওয়া গৌরবের কথা বুঝিয়েছিল; তিনি ক্রুশকে বেছে নিয়েছিলেন তার রাজ্যের ভিত্তি হিসেবে৷ অনুতাপ এবং দ্বিতীয় জন্ম ছাড়া আপনি ঈসা মসিহের সম্ভাষণকে উপভোগ করতে পারেন না৷
ঈসা মসিহ জনতার সশ্রদ্ধ স্বীকৃতি পাবার প্রয়োজন মনে করেন নি৷ তিনি মানুষের গৌরব গ্রহণ করেননি, কিন্তু তাঁর পিতার কন্ঠস্বর শুনতেন৷ শয়তানের প্রলোভন থেকে তিনি তার হৃদয়কে রুদ্ধ করেছিলেন৷ তিনি প্রার্থনা বন্ধ করে তার পিতাকে ধন্যবাদ দিলেন এবং মিনতি করলেন অন্ধটির চোখ দুটি যাতে রুহের শক্তিতে খুলে যায়৷ মানুষের দ্বারা রাজমুকুট পড়তে তিনি রাজী হননি, একথা জেনে যে, তারা একদিন 'হোশান্না' বলে চিত্কার করবে এবং পরের দিন তাকে 'ক্রুশবিদ্ধ কর' একথা বলবে৷ ঈসা মসিহ আমাদের হৃদয়কে জানেন এবং কখনো বিপথে পরিচালিত করেন না৷
৩. চরম দুর্দশার সময় ঈসা মসিহ তার সাহাবিদের কাছে আসলেন (যোহন ৬:১৬-২১)
যোহন ৬:১৬-২১
১৬, ১৭ সন্ধ্যা হইলে পর ঈসা মসিহের সাহাবিরা সাগরের পারে গেলেন, আর নৌকায় উঠিয়া কফরনাহুম শহরে যাইবার জন্য সাগর পার হইতে লাগিলেন৷ সেই সময় অন্ধকার হইয়াছিল, আর তখনো ঈসা মসিহ তাহাদের নিকটে আসেন নাই৷ ১৮. খুব জোরে বাতাস বহিতেছিল বলিয়া সাগরেও বড় বড় ঢেউ উঠিতেছিল৷ ১৯. তিন চার মাইল নৌকা বাহিয়া যাইবার পর তাঁহারা দেখিলেন, ঈসা মসিহ সাগরের ওপর দিয়া হাঁটিয়া তাঁহাদের নৌকার নিকটে আসিতেছেন৷ ২০. ইহা দেখিয়া সাহাবিরা খুব ভয় পাইলেন৷ তখন ঈসা মসিহ তাহাদের বলিলেন, 'ভয় করিও না; এ আমি৷' ২১. সাহাবিরা তাহাকে নৌকায় তুলিয়া লইতে চাহিলেন; আর তাহারা যেখানে যাইতেছিলেন নৌকাটি তখনই সেখানে পেঁৗছিয়া গেল৷
ঈসা মসিহ যখন গোলানের চূড়ায় নির্জনতার মধ্যে ছিলেন তিনি দূরের থেকে তার সাহাবিবদের পরিশ্রান্ত দেখতে পেলেন, কারণ তারা ঝড়ের সাথে মোকাবেলা করছিল৷ যখন রাত্রি হয়ে আসলো তিনি হ্রদের ঢেউয়ের ওপর দিয়ে তাদের দিকে পায়ে হেঁটে গেলেন৷ তিনি তাদেরকে এই বিপদের সামনে একা ফেলে যাননি, কিন্তু তারা তাকে ভূত ভেবে ভুল মনে করেছিল এবং ভয় পেয়েছিল৷ জেলেরা কখনো কখনো কল্পনা করে যে তারা ভূতদের দেখে, কারণ, তারা রাত্রিকালে বেশির ভাগ সময়ই পানির ওপরে থাকে৷ ঈসা মসিহ আসলেন এবং স্পষ্টভাবে বললেন, 'এ আমি'৷ এই অভিব্যক্তি প্রেরিতদের বিশ্বাসের ভিত্তি হিসাবে রয়ে গেল৷ তৌরাতে আমরা এরকম সদৃশ্য কথা পেয়েছি যেমন 'আমি হই যা বিশ্বাসীদেরকে প্রভুর উপস্থিতিকে বর্ণনা করে৷ সাহাবিরা অনুধাবন করলো যে, সব কিছুর ওপর ঈসা মসিহের কর্তৃত্ব রয়েছে; তার হাতের মধ্যে অসংখ্য রুটিতে পূর্ণ হলো, ঢেউগুলি তাকে ওপরে নিয়ে আসলো, ঝড় তার আদেশে প্রশমিত হলো৷ এ সকল উপলব্ধি করার পরও তারা তখনো ভীত ছিল৷ তাই তিনি তাদেরকে ভয় না পেতে আদেশ করলেন৷ এই নির্দেশ, 'ভয় করিও না' এ কথাটি তার অনুসারীদের জন্য তিনি সব সময় বলতেন, এবং কিতাবুল মোকাদ্দসে এই কথাটি ৩৬৫ বার উল্লেখিত হয়েছে, বছরে প্রতিদিন একবার করে৷ ঈসা মসিহের উপস্থিতির ওপর বিশ্বাস আমাদের ভয়কে পরাস্ত করে৷ তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন অথবা তোমার সমস্যা যত প্রচণ্ডই হোক না কেন, ঈসা মসিহ বলেন, 'এ আমি, ভয় করিও না'৷
সাহাবিরা যখন ঈসা মসিহকে চিনতে পারলো তখন তারা অভিভূত হলো এবং তাকে নৌকায় উঠতে বললো৷ সাথে সাথেই তারা কিনারায় পৌছে গেল৷ এটা হলো একই দিনে মোজেজার তৃতীয় অংশ৷ ঈসা মসিহ হলেন স্থান ও সময়ের প্রভু এবং তিনি বিশ্বাসীদের নৌকাকে ঝড় এবং মহা তরঙ্গের মধ্যেও গন্তব্য স্থানে পেঁৗছাইয়া দিতে পারেন৷ তিনি তার সাহাবিদেরকে ভালোবাসেন এবং তাদের কাছে আসেন, কিন্তু তার ওপর সম্পূর্ণ বিশ্বাসের প্রয়োজন হয়৷ তিনি তার ওপর তাদের আস্থাকে শক্তিশালী করেন, অন্ধকার এবং পরীক্ষার মধ্যে যাতে করে ভয় দূরীভূত হয় এবং তারা সব সময় তার প্রতি অনুরক্ত থাকে৷
প্রশ্ন: