০১ - সূচনা: দশ আজ্ঞার সর্বোত্তম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
দিলি্ল থেকে কাশ্মিরের শ্রীনগরে যাত্রিগণ উড়ে চলছেন, সহসাই দেখতে পাবেন, মাথা উঁচু করে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে ধুসর ধবলিত পর্বতশৃঙ্গ, বড়ই চমত্কার ভঙ্গিতে, আর তা হলো বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বত হিমালয়, উত্তর ভারতের সীমানা ঘেষে অস্তিত্বমান৷ উচ্চ শৃঙ্গগুলো গভীর উপত্যকা সৃষ্টি করে দাঁড়িয়ে আছে৷ কতিপয় শৃঙ্গ মেঘে পরিবেষ্টিত অবস্থায় আছে দাঁড়িয়ে৷ সর্বোচ্চ শৃঙ্গটি আট হাজার মিটার আর তার চেয়ে অগণিত রয়েছে পাঁচ হাজার মিটারের উঁচু উঁচু শৃঙ্গ৷
দর্শনাথর্ীগণ ভূমিতে অবতরন করার পরে আশ্চার্য ও বিহ্বল হলেন ধমর্ীয় ও সাংস্কৃতিক গোষ্টির মহামিলনের মেলবন্ধ দেখে৷ হিন্দু সম্প্রদায়, বৌদ্ধ সম্প্রদায়, ইহুদি, মসিহি, মুসলমান এবং নাস্তিকের সহ অবস্থান রয়েছে এ স্থানে৷ মন্দির, গির্জা, মসজিদ, প্রভৃতি সাইনবোর্ডগুলো প্রতিযোগীতামূলক দর্শনাথর্ীদের আকর্ষণ করে চলছে৷ এই নিভৃত অংশে পাঁচটি আলাদা আলাদা জাতি সহাবস্থান করে চলছে৷ যেমন ভারতবর্ষ, পাকিস্তান, আফগানিস্থান, রাশিয়া এবং গণপ্রজাতন্ত্রী চীন৷ যে কোনো ভ্রমণকারী কাশ্মিরের যে কোনো গ্রাম বা শহরের মধ্যে ঘুরতে যাবেন, স্থানিয় জনগণের সাথে আলাপচারিতায় অনুভব করতে পারবেন, একটা উদ্ধেগ উত্কন্ঠা তাদের পেয়ে বসেছে৷ আসলে বিগত ১৯৯১ সনে একটি গৃহযুদ্ধ তাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত শান্তি নষ্ট করে ফেলেছে৷ উপত্যকাটি অশান্তিতে ভরে গেছে৷
বিশ্বের প্রসিদ্ধ ধর্মমতবাদ ও ধর্মাবলম্বিদের মধ্যে প্রচলিত প্রথা ও আইনকানুন আর প্রত্যেকটি সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ অবলোকন করা হলে মনে হবে, হিমালয়ের শৃঙ্গগুলোর মতোই তারা নিজ নিজ অবস্থানে মাথা উঁচু করে স্বস্ব বৈশিষ্ট নিয়ে আলাদা হয়ে থাকবে গোটা জীবন৷ অসংখ্য পুস্তক লেখা হচ্ছে, অগণিত পাঠ্যক্রম প্রস্তুত করা হচ্ছে, তবুও ক্ষুদে ক্ষুদে শৃঙ্গগুলোকে যেমন বড় বড় শৃঙ্গ আড়াল করে রাখে, তেমনই প্রত্যেকে ধমর্ীয় মতবাদ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আপন আপন স্থানে, ধমর্ীয় বাণীর মুল উদ্দেশ্য সম্ভব হচ্ছে না বাস্তবায়ন করা৷
হাজার প্রকার মতবাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বা সর্বোচ্ছ শৃঙ্গটি দশ আজ্ঞা বলে অভিহিত৷ মেষ পালক মুসা নবীর সাথে খোদা কথা বলেছেন, প্রকাশ করেছেন তাঁর পরিকল্পনা এবং তিনি দুটি প্রস্তর ফলকে দিলেন নিজ হাতে লিখে৷ ইহুদি পিতা পিতামহগণ বড়ই সম্মানের সাথে তা ধারণ করেন, কেননা সিনয় পর্বতে খোদা তাদের সাথে চুক্তি প্রতিষ্ঠা করেন, তাদের বড়ই সম্মান দান করেন৷ ইহুদিদের মসজিদে আজ পর্যন্ত অর্থাত্ ৩৩০০ বত্সর ধরে তা নিয়মিত পাঠ করা হয়৷
মসিহিগণ অবশ্য দশ আজ্ঞাকে তাদের বিশ্বাসের অপরিবর্তনশীল ভিত হিসেবে মান্য করেন৷ ঈসা মসিহ সুনিশ্চয়তা দিয়ে বলেছেন, 'আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আসমান ও জমীন শেষ না হওয়া পর্যন্ত, যতদিন না তৌরাত কিতাবের সমস্ত কথা সফল হয় ততদিন সেই তৌরাতের একবিন্দু কি এক মাত্রা মুছে যাবে না৷ (মথি ৫:১৮)
মুসলিম সম্প্রদায় মুসা নবীকে 'কলিমল্লাহ' বলে অভিহিত করেন, যার অর্থ দাঁড়ায় খোদার মুখপাত্র৷ তাদের ধারণা, তিনি খোদার রাসূল এবং রাজনৈতিক নেতা, যিনি একাধারে ধমর্ীয় প্রাধিকার ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারি ছিলেন৷ তাদের বিশ্বাস, ইতিহাসের মহান ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি একজন৷
'দশ আজ্ঞা' খোদা মুসা নবীর মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন যা নবীদের গ্রন্থে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং বিশ্বাসের ভিত হিসেবে আজ পর্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে৷ যে কেউ এই আইন কানুন নিয়ে পড়াশুনা করেন, করেন গবেষণা, তিনিই জ্ঞানের অধিকারি হয়ে থাকেন৷ আর যারা এ কানুন অমান্য করে চলে তারা হয়ে পড়েছে দুষ্ট দুনর্ীতিগ্রস্থ, যার ফল দাঁড়ায় ধ্বংস আর বিনাশ৷ ধ্বংসস্তুপ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে ব্যক্তিকে অবশ্যই 'দশ আজ্ঞা' অধ্যয়ন করতে হবে আন্তরিকভাবে৷
কাশ্মিরের প্রেক্ষাপটে 'দশ আজ্ঞা' নিয়ে ধ্যনমনন করার প্রয়োজনীয় হয়ে দেখা দিয়েছে৷ কেননা এখানেই খোদার প্রকৃত সত্যের সাথে বিরোধিতা করে চলছে বর্তমানের মতবাদগুলো, আর মানুষের জীবনের বর্তমান অবস্থা নিত্যদিন ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নবীদের কিতাবে বণর্ীত ঐশি প্রতিরক্ষা দুর্গে অর্থাত্ দশ আজ্ঞার কাছে৷ এ পুস্তকটি রচিত হয়েছে কতিপয় উচ্চ শিক্ষিত যুব সমাজের মধ্যে যথেষ্ট আলোচ্য এবং বিষদ যুক্তিতর্কের মাধ্যমে গ্রহিত সিদ্ধান্তের বিবরণ৷ এ যুবকেরা বিভিন্ন ধমর্ীয় প্রেক্ষাপটে মানুষ হয়েছে যারা এবং প্রকৃত সত্য খুঁজে বেড়াতো, যা তাদের জীবনের গতিধারা এবং সাফল্যের জন্য ছিল পদ-নির্দেশিকা, এবং সেই আদিযুগের 'দশ আজ্ঞা' বর্তমান অত্যাধুনিক যুগেও তার প্রাসংগিকতা রয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করা৷ যে কেউ এ আজ্ঞা সমূহ নিয়ে চিন্তা করেন, করেন গবেষণা, সেই লাভ করবে প্রচুর বিজ্ঞতা যা তার জীবনে বয়ে আনবে নিত্যদিনের সাফল্য৷