Previous Lesson -- Next Lesson
খ) শরীয়ত না বিবেক মানুষকে দংশন করে? (রোমীয় ২:১২-১৬)
রোমীয় ২:১২-১৬
১২ মুসার শরীয়তের বাইরে থাকা অবস্থায় যারা গুনাহ করে তারা শরীয়ত ছাড়াই ধ্বংশ হবে৷ কিন্তু যারা শরীয়তের ভিতরে থাকা অবস্থায় গুনাহ করে তাদের বিচার শরীয়তের দ্বারা হবে৷ ১৩ যারা কেবল শরীয়তের কথা শোনে তারা আল্লাহর চোখে ধার্মিক নয়, কিন্তু যরা শরীয়ত পালন করে, আল্লাহ তাদেরকেই ধার্মিক বলে গ্রহণ করবেন৷ ১৪ অ-ইহুদিরা মুসার শরীয়ত পায় নি, কিন্তু তবুও তারা যখন নিজে থেকেই শরীয়ত মত কাজ করে তখন শরীয়ত না পেয়েও তারা নিজেরাই নিজেদের শরীয়তপন্থী হয়ে ওঠে৷ ১৫ এতে দেখা যায় যে, শরীয়ত মতে যা করা উচিত তা তাদের দিলেই লেখা আছে৷ তাদের বিবেকও সেই একই সাক্ষ্য দেয়৷ তাদের চিন্তা কোন কোন সময় তাদের দোষী করে, আবার কোন কোন সময় তাদের পক্ষেও থাকে৷ ১৬ আল্লাহ যেদিন ঈসা মসিহের মধ্য দিয়ে মানুষের গোপন সব কিছুর বিচার করবেন সেই দিনই তা প্রকাশ পাবে৷ আমি যে সুসংবাদ তবলিগ করি সেই অনুসারেই এই বিচার হবে৷
রোমের জামাত দুটি দলের দ্বারা সংগঠিত ছিল৷ একদল ছিল ইহুদিদের মধ্য থেকে মসিহি আর একদল ছিল গ্রীক ও রোমীয় জাতি থেকে মসিহে বিশ্বাসীবর্গ৷ প্রথম দলের শরীয়তের ওপর জ্ঞান ছিল আর তারা ঐতিহ্যগত পুরাতন যুগের নবীদের কাছে দত্ত প্রতিজ্ঞার ওপর আস্থাবান ছিল্ আর অইহুদের মধ্য থেকে আগত মসিহিগণ ঐশি প্রত্যাদেশের বিষয় কিছুই জানতো না নিজের জীবনে তেমন প্রয়োগের প্রশ্নও ছিল না৷ তবে তারা মসিহের আত্মার বসে অর্থাত্ পাকরূহের নিয়ন্ত্রণে জীবন যাপন করতো৷
ইহুদিদের মধ্য থেকে মসিহিদের নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছেন শরীয়ত অনুযায়ী তাদের বিচার করবেন, কেননা শরীয়তের মাধ্যমে খোদা নিজের পবিত্রতা প্রকাশ করেছেন৷ খোদার কালাম শুনিলেই নাজাত লাভ হয় না, রুহানি চিন্তাচেতনা এমনকি দীর্ঘকালীন প্রার্থনা ও যথেষ্ট নয়, খোদা চাচ্ছেন হৃদয়ের ও মনের বাধ্যতা৷ তিনি চাচ্ছেন তাঁর কালাম আমাদের মধ্যে জীবন্ত হয়ে উঠুক, আর আমাদের জীবন তাঁর কালামের আলোকে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে উঠুক৷ ইহুদিদের বিচার করা হবে শরীয়ত অনুযায়ী, যতোটা তার কালাম ভঙ্গ করেছে তদনুযায়ী, কেননা শরীয়ত ভঙ্গ করা হলো খোদার বিরুদ্ধে শত্রুতার সমপর্যায়ে পড়ে৷
পৌল যখন এ সত্যের বিষয়ে তাদের কাছে লিখেন, তখন তিনি রূহের দ্বারা অনুপ্রানিত হন, বুঝতে পারেন ইহুদিদের মধ্য থেকে যারা মসিহের অনুসারী হয়েছেন তাদের মন্তব্য হলো, 'আমাদের কোনো শরীয়ত নেই, আমরা দশ শরীয়ত বলতে কিছুই জানি না; তাহলে শেষ বিচারের দিনে কেমন করে খোদা আমাদের বিচার করবেন? বিচারের দন্ড থেকে আমরা মুক্ত৷'
আন্তরিকতার সাথে তিনি তাদের এ প্রশ্নের জবাব দিলেন, খোদার ধার্মিকতা কোনো অবস্থাতেই পরিবর্তন হবার নয়, যারা শরীয়ত অমান্য করে তেমন ক্ষেত্রেও শরীয়ত একই ও অপরিবর্তনীয় থাকবে৷ কেউ যদি শরীয়তের বিষয় না শুনে বা না জেনে থাকে অথবা খোদার মহব্বত ও পবিত্রতার বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ থাকে, তাতে কি আর এসে যায়, স্রষ্টা প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে সচেতনতা, সাবধনতা, নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা, বিচক্ষণতা বাচাই করার ক্ষমতা, ভর্তসনা করার ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছেন৷ এই সাবধানকারী মাঝেমধ্যে নীরবতা অবলম্বন করতে পারে যেমন স্থগিত অবস্থা বা গলাটিপে মারার মতো অবস্থা৷ তবে অবশ্যই ত্রুটি-বিচু্যতি সে দেখিয়ে দেয়৷ হয়ত আপনার ভিতরে একটা প্রবল যন্ত্রণা কাজ করতে থাকে৷ আপনার মধ্যে খোদার সুরতের যেটুকুই অবশিষ্ট থাক না কেন তাকে কোনো অবস্থাতেই নিস্তব্ধ করে রাখা সম্ভব নয়৷ আপনার বিবেক আপনাকে শাসন করবে৷ খোদার রহমত ছাড়া আপনার স্বস্তি ও শান্তি নেই৷ এ কারণে বহুলোক শোকার্ত ও ভীত থাকে, কেননা তারা নিজেদের বিবেকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে চলে, তিনি নিজেদের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয় না, যদিও তাদের বিবেক তাদের কাজকর্ম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ও বাধা দান করে৷ আপনার বিবেকের জন্য খোদাকে কি ধন্যবাদ দিয়ে থাকেন? সুসমাচারের আলোকে আপনার বিবেককে প্রশিক্ষণ দিন, খোদার মহব্বতে তা রঞ্জিত করুন যেন আপনাকে সাবধান করতে আরো পরিষ্কার ও সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে খোদার নির্দেশ মোতাবেক, সর্বপ্রকার ভালো কাজ করার নিমিত্তে আপনি হয়ে ওঠতে পারেন পরিপক্ক ও প্রস্তুত৷ তখন আর শেষ বিচারের সম্মুখে পতিত হতে হবে না, কেননা আপনি আপনার হৃদয়ে খোদার কন্ঠস্বর শুনতে পান এবং সে অনুযায়ী জীবন-যাপন করে চলছেন৷
কিন্তু আপনি যদি গভীরভাবে মসিহের কালামে প্রবেশ না করেন, আর বিবেকের আপত্তির হাত থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত না হন, উপরন্তু নিজের একগুয়েমিতে চলতে থাকেন, আর নিজেকে ন্যয়বান বলে প্রতিপন্ন করতে থাকেন, তেমন ক্ষেত্রে আপনার বিবেক শেষ বিচারের দিনে আপনারই বিরুদ্ধে সাক্ষ্য বহন করবে৷ বিবেক খোদার পক্ষ সমর্থন করবে আর আপনাকেই দোষী করবে৷ আপনার ভীতির হাত থেকে বেঁচে যাবার আর কোনো উপায় থাকবে না, কেবল সুসমাচারের ওপর নির্ভরশীল হওয়া ছাড়া, আপনাকে দেখানো হবে আপনার বিচারক তিনি নিজেই, স্বয়ং নাজাতদাতা৷ তাই অতি সত্ত্বর মসিহের কাছে ছুটে আসুন, আপনার আত্মা ও ইচ্ছাশক্তি বিশ্রাম পাবে৷
আপনি কি জানতেন, খোদার শেষ বিচারের ভার খোদা মসিহের হাতে তুলে দিবেন? আপনি কি জানতেন এ বিচারকের নাম কেবল 'মসিহ' নয় কিন্তু 'ঈসা' (ঈসা মসিহ)? এ দুটি নামের মধ্যে পার্থক্য হলো 'ঈসা' নামের অর্থ হলো তাঁর ব্যক্তিগত নাম, আর 'মসিহ' হলো তাঁর দায়িত্ব৷ মসিহ হলেন অভিষিক্ত জন, যিনি আশির্বাদ পুষ্ট আর খোদার চরিত্রে পরিপূর্ণ, যার পরিপূণ এবং চুড়ান্ত ক্ষমতা রয়েছে, তিনিই প্রাধিকার প্রাপ্ত শেষ বিচার পরিচালনা করার জন্য এবং নাজাত দানের জন্য৷
এভাবে হযরত পৌল বলতে পেরেছেন, খোদা জগতকে দোষী সাব্যস্থ করবেন তার সমস্ত কুদরতে মধ্য দিয়ে সুসমাচারের আলোকে, যে সুসমাচার প্রভু মসিহের বিসয়ে প্রকাশ করেছেন৷ যা কিছু প্রকাশিত হয়েছে সুসমাচারের সে বিষয়ের সাথে আমাদের পরিচিত হওয়া আবশ্যক৷ তার পত্রে সংযোজন করেছেন রোমীয়দের জন্য যা হলো বিচারের দিনের বিষয়ে৷
প্রার্থনা: হে পূতপবিত্র খোদা, আমি আমাকে যতোটা জানি তার চেয়ে তুমি আমাকে বেশি জানো৷ আমার সমস্ত কাজ তোমার কাছে অবারিত৷ আমি আমার পাপ স্বীকার করছি৷ তোমার কাছে অনুরোধ জানাই, আমার সকল গোপন ভ্রান্তি আমার কাছে প্রকাশ করো যেনো ঐ সকল তোমার পুত্রের আলোর কাছে সমর্পণ করতে পারি, অতি দ্রুত যেন তা করতে পারি, সেই ভয়াবহ মহা বিচারের দিন হাজির হবার পূর্বে৷ আমাকে ক্ষমা করো, তোমাকে মান্য করে চলতে পারি নি, আমার বিবেকের ডাকে সাড়া দিতে না পারার জন্য, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে তোমার ডাকে জবাব না দেবার জন্য৷ আমার মধ্যে স্থিরতা ও ক্ষমতা দাও যেন তোমার প্রেমের আজ্ঞাসমূহ পালন করে চলতে পারি৷
প্রশ্ন: