Previous Lesson -- Next Lesson
ক) যে কেউ অন্যের বিচার করে সে তো পরিষ্কার নিজেকে দোষী সাব্যস্থ করছে (রোমীয় ২:১-১১)
রোমীয় ২:৬-১১
৬ তিনি প্রত্যেকজনকে তার কাজ হিসাবে ফল দেবেন৷ ৭ যারা ধৈর্যের সংগে ভালো কাজ করে তারা আল্লাহর কাছ থেকে প্রশংসা, সম্মান এবং ধ্বংসহীন জীবন পেতে চায়, আল্লাহ তাদেরই অনন্ত জীবন দেবেন৷ ৮ কিন্তু যারা নিজেদের ইচ্ছামত চলে আর সত্যকে না মেনে অন্যায়কে মেনে চলে, আল্লাহ তাদের ভীষণ শাস্তি দেবেন৷ ৯ যারা গুনাহ করে বেড়ায় তাদের প্রত্যেকের দুঃখ-কষ্ট ও দুর্দশা হবে প্রথমে ইহুদিদের, তার পরে অ-ইহুদিদের৷ ১০ কিন্তু যারা ভালো কাজ করে তারা প্রশংসা, সম্মান ও শান্তি লাভ করবে প্রথমে ইহুদিরা, তারপর অ-ইহুদিরা৷ ১১ এতে দেখা যায় আল্লাহর চোখে সবাই সমান৷
প্রিয় ভ্রাতাঃ খোদার বিচারের নীতির বিষয়ে কি আপনার জানা আছে? সমস্ত মানুষ সেই কঠিন জটিল সন্ধিক্ষণে ছুটে চলছে৷ কিন্তু জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ব্যক্তি তিনি যিনি উক্ত সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে চলেন৷ করুনার সাহাবি পরিষ্কারভাবে তা আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন, শেষ বিচারের দিনে আমাদের ভালো ও মন্দ কাজের চুলচেরা বিচার পরীক্ষা নিরীক্ষা হবে, যা হবে আমাদের বিচার করার ভিত্তি৷ মথির বণর্ীত সুসমচার ২৫ অধ্যায়ে মসিহ আমাদের কাছে বিশ্লেষণ করেছেন, যে মহব্বতের প্রয়োগ তাদের প্রতি যারা ব্যার্থ, সর্বনিম্ন, ঘৃণিত, গরীব, সরলমনের অধিকারী, যারা খোদার কাছে, খোদার নজরে করুনার পাত্র৷ মসিহ শর্ত আরোপ করেন নি রোজাদার, প্রার্থনাশীল, হজ্জব্রত পালনকারী, দান খয়রাত প্রদানকারী, ভালো ভালো কাজের লোক বরং দীনহীনদের প্রতি দয়াপ্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে৷
খোদার মহব্বতে গোপনে যে সকল কাজ আপনি করে থাকেন, তাতে বুঝা যায়, আপনার হৃদয় কোমল বা কঠিন, অহংকারী না দয়ালু৷ আপনি কি একজন শিক্ষিত লোক, যে কিনা ঘৃণা ও অবজ্ঞা প্রকাশ করে অশিক্ষিত ও সাধারণের প্রতি? মসিহের প্রেম কি আপনাকে ঐ সকল ব্যার্থ, পরিত্যাক্ত, বিধবা, এতিমদের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে পৌছে দিচ্ছে? কেবল প্রেমের তাগিদে কৃত কাজের পুরষ্কার রয়েছে তার কাছে আপনি কতটা এবাদত বন্দেগি করলেন, অথবা ধর্মিয় আনুষ্ঠানিক কতোটা নিপূণভাবে পালন করলেন সে দিকে তার নজর নেই৷
পৌল দেখিয়েছেন আমাদের হৃদয়ে খোদার মহব্বত ঢেলে দেবার জন্য একমাত্র উপায়৷ যিনি খোদার গৌরবের দিকে মনোনিবেশ করেন, অর্থ ও ক্ষয়িষ্ণু সম্মানের দিকে মনোযোগ না দিয়ে খোদার নৈকট্য কামনা করেন, তিনিই খোদার কৃপায় হয়ে যান পরিবর্তিত৷ যিনি খোদার গৌরব যাজ্ঞা করেন, নিজের অহমিকা ভেঙ্গে ধুলিস্যাত্ করে ফেলেন, নিজের সম্মানের জন্য লালায়িত হয় না৷ তেমন অনুতপ্ত ব্যক্তি নিজের হৃদয় খোদার কাছ থেকে মাগফেরাত লাভের জন্য খুলে দেন, তিনিই খোদার করুনা শক্তিধর বর্মের মতো শক্ত হাতে আপ্রান ধরে রাখে৷ যারাই তাঁর মরণশীল অবস্থা বুঝতে পারে, অনন্ত জীবনের জন্য আকাঙ্খা প্রকাশ করে, এবং বিশ্বাসে তা গ্রহণ করে, তিনি অনন্তকালীন রূহের পরিকল্পনা অনুযায়ী তা মেনে নেয়৷ সুতরাং, সজাগ হউন, আপনার নিজের কর্মফলের দ্বারা আপনি নাজাত লাভ করেন নি বরং আপনার দুর্বলতায় আপনার উদগ্র আগ্রহের কারণে খাদার শক্তি আপনার কাছে এসেছে, আর তাঁর মহব্বত আপনার আত্মাকে জয় করেছে, যেন তাঁর মহব্বতের উদ্দেশ্য আপনি বুঝতে ও বহন করতে সক্ষম হন৷ আপনি কি খোদাকে খুঁজবেন অনন্ত জীবন বেঁচে থাকার জন্য?
যে ব্যক্তি মন্দ কাজে থাকে ব্যস্ত, সে মন্দ কাজ করার জন্য জন্ম লাভ করে নি অথবা ধ্বংসের ধারক বাহক হিসেবে তার জন্ম হয় নি অথবা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবার জন্যও তাকে সৃষ্টি করা হয় নি, আসলে সত্য মেনে নিতে অস্বীকার করার ও অবাধ্যতার করণে নিজেকে নিজে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে৷ মন্দ কাজ হঠাত্ করে ঘটে না৷ সুদীর্ঘ কাল ধরে ভুল পথে চলার ফলে তা ঘটে৷ আমাদের বিবেক সর্বদা অনুপোযুক্ত কাজের বিরোধিতা করে৷ খোদার পাকরূহকে যেন দুঃখ না দেই সে বিষয়ে আমাদের সাবধান ও ভর্তসনা করে৷ তা সত্ত্বেও যে একরোখা হয়ে ওঠে, আর খোদার কথায় কর্ণপাত না করে, সে তখন অবাধ্য মন্দ আত্মার দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়ে, আর নির্লজ্জের মতো অনুতাপের ধার না ধরে বিবেককে গলা টিপে হত্যা করে অপরাধ কর্মে এগিয়ে যায়৷ আমাদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের কাজ হলো আমাদের চারপাশে প্রলোভনের প্রভাবের ফল, যেমন যৌন আবেদন মূলক ছবি, বইপুস্তক, বাজে লোকদের সাথে মেলামেশা করার জন্য এমনকি আমাদের নিজেদের হৃদয়ে যে সকল বাজে চিন্তা দিবানিশি আলোড়িত হচ্ছে ঐ সকল দিকগুলো নিয়ত মন্দ কাজে আমাদের আকর্ষণ করে৷
যে কেউ খোদার রূহের পরিকল্পনার বিরোধীতা করে সেই বিচারের দায়ে পড়ে, খোদার বিশেষ দান গ্রহণে তার হৃদয় থাকে বন্ধ, সর্বশক্তিমান প্রভুকে সে করে ঘৃণা, আর তাঁর বিরুদ্ধে সে থাকে ক্ষিপ্ত৷ খোদার দেওয়া শাস্তি অবশ্যই অবাধ্য লোকদের ওপর পতিত হবে আর তার ফলে তার জীবন হয়ে পড়বে দুর্বিসহ৷ আপনি কি মসিহের ক্ষমতার ছায়াতলে জীবন যাপন করেন, মহ্ববতের আবেশে অথবা ন্যায়পরায়ন বিচারকের ক্রোধের অধীনে ডুবে আছেন? এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যাবার উপায় আপনার নেই৷ সুতরাং, প্রস্তুত হউন, সেই দিনের জন্য যখন ভালো মন্দের মধ্যে পার্থক্য করা হবে৷
তার বর্ণনায় দেখা যায় প্রথমে ইহুদিদের ওপর বিচারক্রিয়া শুরু হবে, পৌল বুঝতে চেয়েছেন, নবীদের জামানায় একটা বড় ধরণের দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তেছে, তাই খোদা তাদের কাছে সর্বপ্রথম হিসাব চাইবেন৷ ইহুদিদের মধ্যে যে কেউ পাকরূহের পরিচালনায় খোদার নিটকে চলে আসে, মহিমান্বিত জনের নূরে উজ্জ্বল হয়ে ওঠবে৷ আর যে কেউ হৃদয়ের কাঠিন্য নিয়ে মন্দ আচরণ চালাতে থাকে, অন্যান্যদের সাথে তাকে দোযখে ফেলে দেয়া হবে, কেননা পাকরূহকে তার অবাধ্য জীবন পবির্তন করার সুযোগ সে দেয় নি৷
গ্রীক, মঙ্গোলিয়া এবং নিগ্রো সকলেই এবং সকল ভাষাভাসি, নৃগুষ্টি সকলের সম অধিকার রয়েছে খোদার সান্বিদ্ধে পৌছার, কেননা তিনিই মানুষের স্রষ্টা, সকল মানুষের, আর তাঁর মধ্যে জাতিভেদ বলতে কিছুই নেই৷ সকলৈই তাঁর কাছে সমান৷ ধনী ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট সমূহও তাঁর প্রভার কাছে ম্লান হয়ে পড়বে৷ আমরা বিশ্বের নির্মাতার সামান্যই মাত্র৷ মায়েরা পরিবারে সেবা দিয়ে ফিরছে, আর মসিহের আত্মা নিবেদিত সাধারণ ভাইয়েরা যতোটা আলো ছড়ায় তার কাছে বিশপ, প্রশিদ্ধ নেতৃবর্গ ও চিত্র তারকাগণ অতটা প্রখর নয়৷
খোদা তাঁর মহব্বতের মাপকাঠিতে আমাদের মুল্যায়ন করবেন৷ পরিবর্তন ও ঐশি প্রেমে পুষ্ট হবার জন্য যে কেউ নিজেকে তাঁর হাতে সপে দেয় সেই হয় তার কাছে গ্রাহ্য৷ কিন্তু যে তার হৃদয় কঠিন করে রেখেছে আর অন্যের চেয়ে নিজেকে বেশি ভালোবাসে, সে খোদার থেকে দূরে সরে যাবে এবং চরম ঘৃণার মধ্যে হবে পতিত৷ খোদা ন্যায়বান এবং বিশ্বস্ত তার মধ্যে পক্ষপতিত্ত্বের দোষ নেই৷
আমরা স্বীকার করি যে, মানুষের মধ্যে একজনও ধার্মিক বলতে নেই৷ খোদার মতো করুনাবিষ্টও কেউ নেই৷ যে কেউ মহব্বতের ঝরনার হাতে সমর্পিত হয় সেই হয়ে ওঠে ধার্মিক, কেননা যারা তাঁকে খোঁজে বেহেশতি পিতার ক্ষমতা তাদের পরিবর্তন করে দেয়৷ তথাপি মনে করা ঠিক হবে না যে উক্ত পরিবর্তন এবং প্রস্তুতি খোদার রহমতের জন্য দ্রুত হয়ে থাকে সাধিত৷ অহমিকা ও একগুয়েমির ওপর বিজয় লাভে সময়ের প্রয়োজন পড়ে, আর পতিতদের খুব অল্প সংখ্যকই পরিবর্তিত হয়ে খোদার সেবক হতে চায়৷ এ কারণে মসিহ আমাদরে অগ্রবতর্ী হয়ে ব্যভিচারি, কর গ্রহিতাদের সাথে একত্রে ভোজন করেছেন, যেন আমরা কঠিন হৃদয়ের পরিবর্তে কোমল হৃদয়ের অধিকারী হতে পারি এবং কঠিন হৃদয়েকে অস্বীকার করে সমস্ত লোকদের মহব্বত করতে শিখি৷
দীর্ঘ সহিষ্ণুতার সাথে যারা মহব্বতের কাজে নিবেদিত রয়েছে তাদের পুরষ্কারের সম্বন্ধে আপনি কি জ্ঞাত আছেন? খোদা তাঁর নিজের মহিমা দিয়ে তাদের আবৃত করবেন যারাই রহমতের রূহের কাছে থাকে উম্মুক্ত৷ সুতরাং ঐশি পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা প্রথম পরিকল্পনার চেয়ে কোনো অংশে ক্ষুদ্রতর নয়৷ নিজ সুরতে তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, চেয়েছিলেন তাঁর সমস্ত মহিমা ও চারিত্রিক বৈশিষ্টসমূহ উক্ত পাত্রের (মানুষ) মদ্যে ঢেলে পূর্ণ করতে৷ যারাই অপাংক্তেয় তাদের ওপর যারা কৃপা করে তাদের তিনি মহব্বত করেন৷ তাঁর ধার্মিকতার জন্য যারাই তাড়িত ও নিগ্রীহিত হয় তাদের হৃদয়ে মসিহের শান্তি সদা বিরাজমান থাকে৷
বিচারের শেষে কোমল হৃদয়বানদের তাদের থেকে আলাদা করা হবে যারা আপন আপন হৃদয় কঠিন করে রেখেছিল৷ যারাই খোদার আনন্দে যুক্ত হয়েছে, তারাই এ সুযোগ লাভ করেছে৷ আর যারা নিজ নিজ হৃদয় কঠিন করে রেখেছে, পাকরূহকে পাত্তা দেয় নি, তাদের মধ্যে পরিবর্তন সাধনকল্পে তারা উত্তরোত্তর ধ্বংসের পথে অনন্ত জ্বালাময়ী দোযখের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে এবং তথায় শাস্তি ভোগ করতে থাকবে৷ প্রতারিত হবেন না৷ খোদাকে নিয়ে তামাশা করা যায় না, যে যা বুনিবে সে তো সেই ফসল কাটিবে৷
প্রার্থনা: হে প্রভু, আমার প্রেম অতীব নগণ্য, উপরন্তু আমার স্বার্থপরতা প্রকান্ড৷ তোমার সম্মুখে আমি অসূচি৷ আমার পাপ ক্ষমা করো৷ তোমার প্রেমের কর্মকান্ডের প্রতি আমার নজর খুলে দাও৷ ত্যাগী জীবনে পরিচালনা দান করো, যেন ভালো কাজ করে চলতে পারি, কেননা আমার মধ্যে ভালো বলতে কিছুই নেই৷ আমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করো৷ আর তোমার প্রেমে আমার হৃদয় ভরে দাও, ফলে আমি তাদের খুঁজে বের করতে পারি যারা রয়েছে অবহেলিত, তাদের সাথে ওঠাবসা করার মনমানসিকতা সৃষ্টি করো আমার মধ্যে, তাদের ভালোবাসার শক্তি দাও, আশির্বাদ যেন করতে পারি, আর যারা অনন্ত বিনাশের দিকে ছুটে চলছে তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য প্রবল প্রেমের শক্তি আমাকে দান করো৷
প্রশ্ন: