Previous Lesson -- Next Lesson
১. জাতির বিরুদ্ধে খোদার গজব প্রকাশিত হয়েছে (রোমীয় ১:১৮-২১)
রোমীয় ১:২৪-২৫
২৪ এজন্য আল্লাহ মানুষকে তার দিলের কামনা-বাসনা অনুসারে জঘন্য কাজ করতে ছেড়ে দিয়েছেন৷ ফলে তারা একে অন্যের সঙ্গে জঘন্য কাজ করে নিজেদের শরীরের অসম্মান করেছে৷ ২৫ আল্লাহর সত্যকে ফেলে তারা মিথ্যাকে গ্রহণ করেছে৷ সৃষ্টিকর্তাকে বাদ দিয়ে তারা তাঁর সৃষ্ট জিনিসের পূজা করেছে, কিন্তু সমস্ত প্রশংসা চিরকাল সেই সৃষ্টিকর্তারই৷ আমিন
২৪ নাম্বার আয়াতে প্রকাশ করেছে খোদার গজবের প্রথম প্রকাশ৷ পবিত্র বিচারক তাদের ছেড়ে দিয়েছেন যারা তাকে জানা সত্ত্বেও সম্মান দেখান না, ফলে তারা তাদের হৃদয়ের অভিলাস অনুসারে পতিত হবে৷ আসলে তারা অবাধ্যতার কারণে রুহানিভাবে অন্ধ হয়ে গেছে৷ খোদাকে তারা আর জীবনের কেন্দ্রে স্থলে দেখতে পায় না, বরং নিজেরা নিজেদের জীবনের কেন্দ্রে বসিয়ে নিয়েছে৷ যারা খোদাকে মহব্বত করে না একগুয়েমি তাদের সকলের জীবনে প্রধান অন্তরায়৷ ফলে তাদের জীবনের গতিপথ বদলে গেছে, তাদের জীবনের শেষ দিনগুলো খোদার নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে চলতে থাকে৷ তখন তাদের জীবন মাংসিক আরাম আয়েস ও অভিলাসের দ্বারাই হয় চালিত ও খোদার প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য পরিহার করে তাঁর অস্তিত্ব সম্পূর্ণ অস্বীকার করে চলে৷
মানুষের ইচ্ছাশক্তি যখন তার অভিলাশের হাতে বন্দী হয়ে পড়ে, তখন পাপ কেবল মতবাদ ও চিন্তা-চেতনার মধ্যেই প্রকাশ পায় না, বলতে গেলে সকল পাপই শরীরের বাইরে ঘটে থাকে, যখন উক্ত ব্যক্তির জীবন কলুষিত হয় তখন তার আচরণে তা প্রকাশ পায়৷ আপনার বিবেক সর্বদা মন্দ কাজের বিরোধিতা করে চলে, কেননা পাপের কাজে লিপ্ত হলে আপনি আপনার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত খোদার সুরত কালিমায় ভরে দিচ্ছেন৷ আপনার দেহ পাকরূহের থাকার ঘর, আর আপনার শরীরের বিরুদ্ধে কৃত পাপ কাজ খোদার গৃহকে কলুষিত করা হয়, আপনার দেহ খোদার সুরতে হয়েছে গড়া, তা ঘৃণা ও নোংড়া করায় খোদার গৃহ কলুষিত করা হয়৷
অপবিত্রতার দিকে বহু পদক্ষেপ রয়েছে৷ মানুষ যখন খোদার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তখন স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সে অস্বাভাবিক অবস্থায় পড়ে যায়, আর বেআইনি বিষয়টাকে আইনানুগ ন্যাজ্য বিষয় বলে মনে করে, আর খোদার আজ্ঞার বিকৃত অর্থ করাই হলো বিবেক বিবর্জিত পাপ৷ বিকৃত ব্যক্তি ব্যতিক্রমী হয়ে থাকে যে অন্যকেও করে তোলে কলুষিত, তার নিজের মন্দ অভিলাসের হাতে থাকে বন্দি৷ প্রলোভনের সাগর কতইনা গভীর, দেহ ও আত্মার কলুষতার ফল, পাকরূহের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া জীবন থেকে কতোইনা অভিশাপ আসে! আসলে পাপের বাহ্যিক আকার শুরুতে মধুময় ও আরামদায়ক৷ কিন্তু আমরা যখন তা বাস্তবায়ন করতে শুরু করি ঠিক তখনই বুঝতে পারি এর ভয়াবহতা, আমরা নিজেদের কাছে নিজেরা লজ্জিত হয়ে পড়ি৷ একইভাবে শেষ বিচারের দিনে বহুজন হতভম্ব হয়ে পড়বে যখন তাদের গোপন পাপকৃয়া প্রকাশ হয়ে পড়বে৷
পাপের অস্তিত্ব দুনর্ীতিপরায়ন কাজ নয়, তা হলো ভুল আরাধনা৷ খোদার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়ার প্রতিক্রিয়া হলো মানুষের হৃদয়টা কলুশিত হয়ে পড়া, ফলে প্রভুকে ছেড়ে দিয়ে উদ্দেশীনভাবে জীবন যাপন করতে শুরু করে৷ যে খোদাকে স্বীকার করে না সেই বাধ্য হয় নিজের জন্য প্রতিমা প্রস্তুত করতে, কেননা দিক নির্দেশনা ব্যতিত কেউই বাঁচতে পারে না৷ যাহোক, সমস্ত প্রতিমা মিথ্যা, ক্ষয়িষ্ণু ও মানুষের হাতের সৃষ্টি৷ কেউ যদি জীবন ও অনন্তকালের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারতো তবে সে কখনোই অর্থ, আত্মা, বইপুস্তক, পার্থিব মানুষের হাতে বন্দী হতো না৷
মাত্র একজনই আছেন যিনি আমাদের সম্মান ও প্রশংসার দাবিদার৷ তিনিই সর্বশক্তিমান; তাকে ছাড়া কিছুই হবার নয়, তিনি সর্বজ্ঞানি, তিনিই করুনানিধি তার সৃষ্টির জন্য৷ তাঁর প্রশংসা সদা-সর্বদা আমাদের মুখে ধ্বনিত হতে থাক, কেননা তিনিই উন্নত ও অভ্রান্ত৷ আর তাঁর মধ্যে কোনো অধার্মিকতার লেশমাত্র নেই৷ প্রত্যেক সকালে তার প্রেম নিত্য নতুন হয়ে আমাদের কাছে হাজির হয়৷ তাঁর বিশ্বস্বতা মহান৷ তার না আছে মৃতু্য না আছে পরিবর্তন৷ তিনি তাঁর অপারেজয় ধৈর্য দিয়ে আমাদের ধরে রাখেন৷ সমস্ত মানুষও যদি তাঁর দিকে ফিরে আসে তবে সকলেই নিজেদের জীবনের ভিত্তি খুঁজে পাবে তার কাছে, জীবনের মূল্যবোধ ও প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু ফিরে পাবে৷
পৌল তার বর্ণনাকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মোহরাঙ্কিত করেছেন এ বলে, মহান স্রষ্ঠা সর্বদা আশির্বাদপুষ্ট, বক্তব্যের শেষে 'আমিন' বলে প্রকাশ করেছেন যেন তাঁর ভাষণ ও প্রার্থনা ও সাক্ষ্যদান স্বরূপ৷ 'আমিন' শব্দের অর্থ হলো 'তাই হোক'৷ সত্যিকারার্থে, নিশ্চিতরূপে এবং সুনিশ্চিতভাবে, খোদা সর্বক্ষেত্রে অতুলনীয়৷ প্রভু তাঁর ঐশি বিষয়কে আমাদের চিন্তা পরিকল্পনা এবং কর্মকান্ডের বিষয়বস্তুতে পরিণত করেন, ফলে আমাদের জীবন ও মনমানসিকতা সুস্থ ও প্রকৃতিস্থ হয়ে ওঠবে৷ খোদাকে বাদ দিয়ে যে বিশ্বটিকে আমরা দেখতে পাই তাতো পরিষ্কার দোযখের পূর্বাভাসমাত্র, যারাই নিজেদের হৃদয় নিঃসৃত কামনা ও অভিলাষের হাতে ছেড়ে দিয়েছে তারাই কলুষিত হয়ে পড়েছে ও লজ্জাজনক অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছে৷
প্রার্থনা: হে পূতপবিত্র পিতা, আমরা তোমার আরাধনা করি, কেননা তুমি অনন্তকালীন স্থায়ী পিতা, তুমিই আমাদের পাক পবিত্র ও ন্যায়বান করে গড়ে তুলছো৷ তুমি আমাদের সর্বোত্তম আকারে সৃষ্টি করেছো, ধরে রেখেছো তোমার দয়ার হস্তে৷ আমরা তোমাকে মহব্বত করি, অনুরোধ জানাই, তোমার সান্বিন্ধে আমাদের হৃদয়কে ধরে রাখো যেন তোমার জন্যই জীবন যাপন করতে পারি, তোমাকে সম্মান দেখাতে পারি, সদা-সর্বদা ভক্তি প্রকাশ করতে পারি৷ তোমার থেকে সরে যাবার অপরাধ থেকে আমাদের ক্ষমা করো আর সকল প্রকার কৃত অপরাধের কালিমা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করো৷ আমাদের নিজেদের প্রতিমার কবল থেকে আমাদের মুক্ত করো যেন তোমাকে ছাড়া জগতের আর কোনো কিছুর মোহে অন্ধ হয়ে না পড়ি৷
প্রশ্ন: