Previous Lesson -- Next Lesson
গ) নিয়ত বিশ্বাসের ফলেই খোদার ধার্মিকতা আমাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত ও বাস্তবায়িত হয়ে থাকে (রোমীয় ১:১৬-১৭)
রোমীয় ১:১৬
ঈসা মসিহের বিষয়ে এই যে সুসংবাদ তাতে আমার কোনো লজ্জা নেই, কারণ এই সুসংবাদই হলো আল্লাহর শক্তি যার দ্বারা তিনি সব ঈমানদারদের নাজাত করেন- প্রথমে ইহুদিদের, তারপর অ-ইহুদিদের৷
রোমে 'সুসমাচার' শব্দটি যে সুপরিচিত এবং আনন্দদায়ক শব্দ সে বিষয়ে হযরত পৌলের পূর্ব থেকে জানা ছিল৷ তখন অনেক সুসমচার প্রচলিত ছিল৷ অর্থাত্ খুশির খবর প্রচার রাজকীয় পরিবারের মধ্যে হতো, রাজধানির লোকজন তেমন খবর শোনার জন্য উত্সুক থাকতো৷
রাজকীয় ঘোষণার মতই তিনি নাজাতের বিষয় ঘোষণা দিতেন, যেন তিনি বলতে চেয়েছেন, 'সুসমাচারের বিষয়ে আমি লজ্জিত নই, যা প্যালেস্টাইনের মতো ছোট্ট একটি উপনিবেশ থেকে এসেছে৷ তা সত্ত্বেও আমি চাই খোদ রাজধানিতে এ সুখবর পৌছে দিতে৷ আমি তোমাদের কাছে খুশির খবর বয়ে এনেছি, আর উক্ত খুশির খবর হলো, খোদার একজন একক পুত্র আছেন, যিনি সমস্ত যুগকলাপ সৃষ্টির পূর্ব হতেই আছেন বর্তমান, যিনি আমাদের নৌকট্যে আসার জন্য ঐশি সত্তা নিয়ে মানবরূপ ধারন করলেন৷ গোটা বিশ্ববাসিকে পাপের কবল থেকে গুনাহ মুক্ত ও নাজাত দান করার নিমিত্তে নিজের পূতপবিত্র জীবন দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত শোধ দিলেন, করলেন তাদের মুক্ত সকল প্রকার অভিশাপ ও অভিযোগ থেকে৷ আমার পত্র বর্ণনা করে না মরণশীল রাজার মরণমীল পুত্রের জন্মের বিষয় বরং অনন্তকালীন রাজার অনন্তকালীন পুত্রের বিষয়ে ঘোষণা৷ যদি রাজকীয় সুসংবাদ জগতের রাজাদের যুদ্ধ জয়ের বিষয়ে ঘোষণা দিয়ে অথবা রাজপরিবারের শখের খেলা-ধুলার বিজয়ের বিষয় অথবা রাজকীয় ভোজের বিষয় হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে হাজার হাজার লোক খেয়ে দেয়ে পরিতৃপ্ত হলে তেমন সুসংবাদ তারা ঘোষণা দিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আমি বয়ে এনেচি এমন সুসংবাদ যা হলো বিশ্বের তাবত্ মানুষের মুক্তির সুসংবাদ, মুক্তি পাপের কবল থেকে, মৃতু্যর কবল থেকে, অভিশপ্ত শয়তানের করাল গ্রাস থেকে, খোদার গজব থেকে এবং কেয়ামতের ভয়াবহ বিচারের হাত থেকে৷ রোমীয় সুসংবাদ থেকে আমার সুসংবাদ সর্বোত্তম, কেননা এটা হলো সার্বজনীন, বিশাল, অনন্তকালীন শক্তি এবং গৌরবান্বিত৷ এটা কোনো মনস্তাত্তিক ভীতের ওপর দাঁড়িয়ে নয়, পুথিগত নয় অথবা ফালতু প্রত্যাশার ওপরও নির্ভরশীল নয় বরং একক ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে প্রস্তুত হয়েছে৷
রোমীয়গণ ইহুদিদের দেয়া মসিহ শব্দের নানাবিধ অর্থ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে৷ তারা এর অর্থ বুঝতে পেরেছে কেবল 'অভিষিক্ত একজন' যা রাজাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ক্ষুদ্র একটি শব্দ৷ যা তার দেওয়ানি দায়িত্বের অতিরিক্ত প্রাধিকার বলে মনে করা হতো যা হলো মহা ইমাম হিসেবে৷ রাজা কতকগুলো প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্বের অধিকর্তা, দায়িত্বে থাকতেন যেমন, রাজনৈতিক, সামরিক, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সবগুলো কাজের সমন্বয়কারী হিসেবে এবং জনগণের মধ্যস্থকারীর ভুমিকা অর্থাত্ শান্তি শৃঙ্খলা ও আশির্বাদ নিশ্চয়তা প্রদানকল্পে৷
যাহোক, মসিহ হলেন প্রভুদের প্রভু, যার হাতে বেহেশত ও দুনিয়ার সমস্ত ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে৷ তিনিই হলেন প্রধান ইমাম, একমাত্র মধ্যস্থতাকারী আর খোদার সামনে আমাদের হয়ে নিয়ত সুপারিশ করে চলছে৷
সুসমাচারের প্রথমে এ ঘোষণার মাধ্যমে হযরত পৌল কেবল মসিহের খোদার পুত্র হিসেবে প্রাপ্য অধিকারের ও তার রুহানি উত্কর্ষতার বিষয়ই বর্ণনা দেন নি, তিনি বিষদভাবে প্রকাশ করেছেন প্রভু হিসেবে, রাজা হিসেবে, শাসক হিসেবে, পুনর্মিলনকারী হিসেবে তিনি একাই সমস্ত প্রাধিকারের অধিকারি, বিশ্বের নাজাতদাতা যে উপধিটি ছিল রাজার নিজস্ব উপাধি৷
'খোদার পুত্র' এ সুসংবাদ এবং তার বিভিন্ন দায়িত্ব কেবলমাত্র চিন্তাপ্রসূতই ছিল না৷ এটা বিস্ফোরণকারী ক্ষমতা গোটা বিশ্বের সকল ক্ষমতার চেয়ে বিশাল৷ কেননা সুসমাচার খোদার সকল শক্তি ধারণ ও বহন করে৷ খোদা নিজেই উপস্থিত আছেন সুসমাচারের মধ্যে৷ কালো অক্ষরের মধ্য দিয়ে তিনি কথা বলেন, শ্রোতাদের পরিবর্তিত এক নতুন মানুষে সৃষ্টি করেন এবং যাদরে তিনি ডাকেন তাদের নতুন সৃষ্টি হিসেবে গড়ে তোলেন৷ সুতরাং উক্ত কিতাবখানি সাধারণ কিতাব থেকে অনেক উর্দ্ধে যা আর দশটি বইয়ের সাথে সমপর্যায়ে গণ্য করার উপায় নেই, তাকে ফেলে রাখা চলবে না, তাকে বিশেষ স্থানে রাখুন কেননা এ কিতাব অন্যান্য কিতাবের ফানুষতা দেখিয়ে দেয়৷ সুসমাচার নিজেই খাঁটি, যেমন খোদা নিজেই খাটি, তিনি নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার শক্তিতে সদাপূর্ণ৷
আমাদের মন্দ জগতকে ধ্বংস করার জন্য খোদার শক্তি মসিহের সুসমাচারের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় নি বরং জগতকে রক্ষা করার জন্য হয়েছে তা প্রকাশিত, কেননা খোদা চাচ্ছেন সকল মানুষই যেন নাজাত লাভ করে এবং সত্যের প্রকৃত জ্ঞানের সাথে হতে পারে সুপরিচিত৷ আমাদের বেহেশতি পিতা স্বেচ্ছাচারি রাজা নন৷ তাঁর পুত্রের মধ্য দিয়ে প্রকাশিক সুসমাচার গ্রহণ করার জন্য তিনি কাওকে জোর জবরদস্তি করেন না, বরং তাঁর সত্যের পয়গাম সহজ সরলভাবে সকলের কাছে উম্মুক্ত করে রেখেছেন৷ মসিহের কালামের প্রতি কেউ যদি হৃদয় খুলে ধরে, আর তাকে বিশ্বাস করে, তবে তিনি খোদার শক্তির অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন৷ বিশ্বাস ব্যতিরেকে নাজাত লাভ কোনোভাবেই সম্ভব নয়৷ যে কেউ বিশ্বাস পূর্বক খোদার পুত্র মসিহের সাথে যুক্ত হয়েছেন, খোদা তাঁর ঐশি গুনাবলি তার মধ্যে অর্থাত্ ইমানদারদের মধ্যে ঢেলে দেন, তাকে করেন পূতপবিত্র, আলাদা করেন এবং নতুন সৃষ্টি হিসেবে গড়ে তোলেন৷
যে কেউ মসিহের ওপর বিশ্বাস করেন এবং হৃদয় দুয়ার খুলে দেন তার প্রতি এবং বিশ্বাস করেন কেবলমাত্র খোদার পুত্রই হলেন নাজাতের একমাত্র উপায় তিনিই নাজাত লাভ করেন৷ ইমানের মধ্য দিয়ে বিশ্বাসীগণ পেয়ে যায় মাগফেরাত ও মৃতু্য থেকে পুনরুত্থান৷ রোমীয়দের প্রতি লেখা পত্রে ইমানকেই প্রধান্য ও চুড়ান্ত বিষয় হিসেবে অত্র পত্রে দেখানো হয়েছে, কেননা ইমান ছাড়া খোদাকে চেনা সম্ভব নয়, সম্ভব নয় তার প্রেম ও ক্ষমতা উপলব্ধি করা৷ যাহোক, যে কেউ বিশ্বাস করে সেই নির্দোষ নাজাত প্রাপ্ত এবং বেঁচে থাকে চিরকার রুহানি জীবন নিয়ে৷
ইহুদিরা এ শান্তিজনক সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছিল, কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকে মসিহকে প্রত্যাখ্যান ও ঘৃণা করে তাকে শেষতক সলিব বিদ্ধ করে হত্যা করেছে৷ যাহোক, বিনম্রচিত্ত লোকজন তাকে জানতে পেরে তাকে বিশ্বাস করেছিল৷ তারা পাকরূহে পূর্ণ হয়েছিলেন আর খোদার প্রেমে জীবন যাপন করতে লাগলেন৷ ত্রিত্তপাকের ক্ষমতা, অদ্যপর্যন্ত প্রথম দিকের বিশ্বাসীদের প্রচারের ফলে জনগণের মধ্যে বিরাজমান হয়ে আসছে৷
ইহুদিদের একটি ক্ষুদ্র অংশ মসিহের মাধ্যমে অর্জিত নাজাত আন্তরিকভাবে বরণ করে নিলেন, তখন গ্রীক ও অন্যান্য জাতি নিজেদের হৃদয় নাজাতের সুসমাচারের জন্য খুলে দিল আর অগ্রজদের সাথে যুক্ত হলো৷ তারা বুঝতে পেরেছিল যে এ সুখবর নিছক অন্তঃসার শুন্য কোনো বাক্য নয়, তা খোদার শক্তিতে ভরা, বিশ্বাসীদের জীবন্ত মসিহের সাথে যুক্ত করে, আর এ চুক্তি স্থাপিত হয়েছে অনন্তকালের জন্য৷
প্রিয় ভ্রাতা: বিচক্ষণতার সাথে আপনি যদি এ সুসমাচার পাঠ করে থাকেন, তবে তার বাক্যের দিকে হৃদয় খুলে দিন, মসিহের ঐশি ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস করুন, আর মুনাজাতের মাধ্যমে তার সাথে কথা বলুন, তখনই আপনি বুঝতে পারবেন, সলিবে হত ও পুনরুত্থিত মসিহই হলেন গুনাহগারদের মহা ইমাম ও নাজাতদাতা, রাজাদের রাজা, বিশ্বের তাবত্ গুনাহগারদের উদ্ধারকর্তা৷ সাহসের সাথে তার কাছে এগিয়ে আসুন৷ সুসমাচারে ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করুন, আপনার দুর্বলতা সমুহ খোদার রহমত ও শক্তিতে আলোকোজ্জল হয়ে ওঠবে৷
প্রার্থনা: হে খোদা, পিাত, পুত্র ও পাকরূহ আমরা তোমার গৌরব করি, কেননা, তুমি নিজেকে মসিহের সুসমাচারের মাধ্যমে ঘোষণা করেছো এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে তুমি আমাদের পূতপবিত্র করেছো, আর পরিপূর্ণ সত্তা নিয়ে আমাদের মধ্যে বসবাস করে চলছো৷ আমরা আরও গৌরব করি করি তোমার কালাম ও ক্ষমতা কর্মরত রয়েছে অত্র পত্রের মধ্য দিয়ে এবং ইঞ্জিল শরীফের প্রত্যেকটি পুস্তকের মধ্য দিয়ে আমাদের কাছে প্রকাশ করে৷ আমাদের দৃষ্টি ও মন খুলে দাও যেন তোমার কন্ঠ শুনতে পারি, তোমার ওপর আস্থা রাখতে পারি, আর আমার জীবন সম্পূর্ণভাবে তোমার পরিচালনা ও ব্যবস্থার ওপর সমর্পন করতে পারি৷
প্রশ্ন: