Previous Lesson -- Next Lesson
১. এবাদতখানা পরিষ্কারকরণ (যোহন ২:১৩-২২)
যোহন ২:১৩-১৭
১৩ ইহুদিদের ঈদুল ফেসাখের সময় নিকটে আসিলে পর ঈসা মসিহ জেরুজালেমে গেলেন৷ ১৪ তিনি সেখানে দেখিলেন, লোকেরা এবাদতখানার মধ্যে গরু, ভেড়া আর কবুতর বিক্রি করিতেছে এবং টাকা বদল করিয়া দিবার লোকেরাও বসিয়া আছে৷ ১৫ এই সমস্ত দেখিয়া তিনি দড়ি দিয়া একটা চাবুক তৈরি করিলেন, আর তাহা দিয়া সমস্ত গরু, ভেড়া এবং লোকদেরও সেই জায়গা হইতে তাড়াইয়া দিলেন৷ টাকা বদল করিয়া দিবার লোকদের টাকা-পয়সা ছড়াইয়া দিয়া তিনি তাহাদের টেবিল গুলি উল্টাইয়া ফেলিলেন৷ ১৬ যাহারা কবুতর বিক্রি করিতেছিল ঈসা মসিহ তাহাদের বলিলেন, 'এই জায়গা হইতে এই সমস্ত লইয়া যাও৷ আমার পিতার ঘরকে ব্যবসার ঘর করিও না৷' ইহাতে পাক কিতাবে লেখা এই কথাটা তাহার সাহাবিদের মনে পড়িল- 'তোমার ঘরের জন্য আমার যে গভীর মহব্বত, সেই মহব্বতই আমার অন্তরকে জ্বালাইয়া তুলিবে৷'
ইহুদিদের ঈদুল ফেসাখের সময় ঈসা মসিহ জেরুজালেমে গেলেন, যেখানে সারা দুনিয়া থেকে হাজার হাজার ইহুদিরা জড় হতো৷ তারা মেষশাবক উত্সর্গ করতো যাতে করে খোদা তাদের ওপর থেকে তাঁর ক্রোধ উঠিয়ে নেন৷ রক্ত ঝরা ব্যতীত পাপ মোচন হতো না এবং পুনর্মিলন ব্যতীত এবাদত হলো অসাড়৷ সুতরাং ঈসা মসিহ জর্দানে প্রতীকী স্বরূপ তাদের গুনাহ তুলিয়া লইলেন৷ তাদের পক্ষে তিনি মৃতু্যর বাপ্তিস্ম গ্রহণ করলেন, এটা একটি নিদর্শন যে তিনি খোদার প্রচণ্ড ক্রোধকে বহন করলেন৷ তিনি গভীরভাবে জানতেন যে, তিনি খোদার মনোনীত মেষশাবক৷
তিনি যখন নগরীতে ঢুকলেন তখন তিনি এবাদতখানার সীমানায় পেঁৗছিলেন৷ জাঁকজমক অট্টালিকা তার মনে কোন দাগ কাটতে পারেনি, কিন্তু তিনি নিজের আত্ম উত্সর্গের মধ্যে দিয়ে মানব জাতির মুক্তির বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছিলেন৷ আশ্চর্যজনকভাবে এবাদতখানায় তিনি কোনো শান্ত পরিবেশ দেখতে পাননি৷ তিনি যা দেখতে পেয়েছিলেন তাহলো ধুলাবালি এবং পশুদের রক্ত ঝরা৷ তিনি আরো শুনেছিলেন টাকা বদলকারীদের চিত্কার যারা বিদেশি টাকাকে ইহুদি টাকায় বদল করছিল ওই সমস্ত তীর্থ যাত্রীদের পাওনা পরিশোধের জন্য৷
এবাদতখানায় এই সমস্ত হইচই একটি ধর্মমতো নির্দেশিত হয়ে যে ন্যায়পরায়ণতা টাকা এবং বিশেষ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আনা সম্ভব৷ তীর্থ যাত্রীরা এই ধারণা পোষণ করতো যে রহমতো এবং ন্যায়পরায়ণতাকে ধমর্ীয় আচার পালন এবং অর্থ দান করে কেনা যায়, এবং তখনো সচেতন ছিল না যে ভালো কাজের মধ্য দিয়ে মুক্তি পাওয়া যায় না৷
এটা দেখে ঈসা মসিহ তার ক্রোধযুক্ত ন্যায়পরায়ণতা দেখালেন৷ খাঁটি এবাদতের জন্য উদ্দীপনা তাকে ওই সমস্ত বণিকদের মালপত্র ছুড়ে ফেলতে এবং তাদের টাকা-পয়সাগুলো ধুলায় মিশিয়ে ফেলতে চালিত করলো৷ আমরা তাকে কাউকে আঘাত করার ব্যাপারে শুনি নাই, কিন্তু তার কন্ঠস্বর একটি আঘাতের মতো বলে দিলো যে, খোদা তাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন যারা তার মহিমাকে স্বীকার করবে না৷ এই দুনিয়াতে এমন কোন ধার্মিকতা নাই যা খোদাকে সন্তুষ্ট করে, তাকে সন্তুষ্ট করে কেবল মাত্র ভগ্ন হৃদয়কারী যারা সেই পবিত্র জনের কাছে আত্মসমর্পণ করে৷
খোদার পবিত্রতার ব্যাপারে মানুষের উদাসিনতায় ঈসা মসিহ দুঃখ পেলেন৷ এই অবহেলা এবং অজ্ঞানতা যা দেখতে পাওয়া যায় ভাসাভাসা ধর্ম-কর্মের মধ্যে এবং এগুলো হৃদয় ও মনকে অন্ধকারে আবৃত করে, এমনটি যদিও অনুশাষণ দেওয়া হয়েছিল ১৩০০ বছর আগে৷ এর মধ্য দিয়ে ঈসা মসিহ স্বগর্ীয় ক্ষোভ এবং পবিত্র উদ্দীপনা প্রর্দশন করলেন এই এবাদতখানার কেন্দ্রকে ধৌত করবার জন্য৷ কেন্দ্রটি গোটা অবস্থাকে প্রতিফলিত করেছিল৷ ধর্মের মর্মস্থলকে তিনি সংস্কার করতে চেয়েছিলেন, খোদার প্রতি মানুষের মনোভাবের মৌলিক পরিবর্তনের জন্য৷
যোহন ২:১৮-২২
১৮ তখন ইহুদি নেতারা ঈসা মসিহকে জিজ্ঞাসা করিলেন, 'কিন্তু এই সমস্ত করিবার অধিকার যে তোমার সত্যই আছে, তাহার কি প্রমাণ তুমি আমাদের দেখাইতে পার?' ১৯ উত্তরে ঈসা মসিহ তাহাদের বলিলেন, 'খোদার ঘর আপনারা ভাঙিয়া ফেলুন, তিন দিনের মধ্যে আবার আমি তাহা উঠাইব৷' ২০ এই কথা শুনিয়া ইহুদি নেতারা তাহাকে বলিলেন, 'এই এবাদতখানাটা তৈরি করিতে ছেচলি্লশ বত্সর লাগিয়াছিল, আর তুমি কি তিন দিনের মধ্যে ইহা উঠাইবে৷' ২১ ঈসা মসিহ কিন্তু খোদার ঘর বলিতে নিজের দেহের কথাই বলিতেছিলেন৷ ২২ তাই ঈসা মসিহ মৃতু্য হইতে জীবিত হইয়া উঠিলে পর তাহার সাহাবিদের মনে পড়িল যে, তিনি তাহাদের ওই কথাই বলিয়াছিলেন৷ তখন সাহাবিরা পাক-কিতাবের কথায় এবং ঈসা মসিহ যে কথা বলিয়াছিলেন তাহাতে বিশ্বাস করিলেন৷
এবাদতখানা ধৌতকরণ এবং বণিকদের আর্তনাদের ব্যাপারে ইহুদি ইমামেরা জানতে পেরেছিল, তাই তারা দ্রুত ঈসার কাছে গেল এবং জিজ্ঞাসা করলো, 'কে তোমাকে এই কাজ করতে অধিকার দিয়েছে? কে তোমাকে পাঠিয়েছে? আমাদের কাছে তোমার কর্তৃত্বের বলিষ্ঠ প্রমাণ দাও৷' তারা ধৌতকরণের ব্যাপারে কোনো আপত্তি করেনি, তারা অনুভব করেছিল কোনো মানবসুলভ ক্ষোভের থেকে এই কাজ করছিল না কিন্তু খোদার ঘরের সম্মানের জন্য পবিত্র উদ্দীপনা নিয়ে এটা করছিল, এবং যাতে জনগণের সত্য এবাদতের উত্সাহ ফিরে আসে, বরং তারা চেয়েছিল তার এই কার্যের কারণ এবং উদ্দেশ্যর ব্যাপারে নিশ্চিত হতে৷ তাই ঈসা মসিহ তাদের চোখে শত্রু হলো, কারণ তিনি এবাদতখানার সংস্কার চেয়েছিলেন তাদের ইমামতির প্রতিষ্ঠানের ওপর কোনো দায়িত্ব নেই৷
ঈসা মসিহ তাদেরকে ভণ্ডামিপূর্ণ এবাদতের জন্য তীব্রভাবে তিরস্কার করলেন, কারণ তারা বেশি পছন্দ করতো দলবদ্ধ ও কলহপূর্ণ এবাদতকারীদের এবং সম্পদের ক্ষমতোা যা খোদার উপস্থিতির মধ্যে শান্ত ভাব৷ ঈসা মসিহ দূরদৃষ্টির সাথে দেখতে পেলেন এবাদতখানার ধ্বংস যা হয়েছিল ভাসাভাসা এবাদত এবং তাদের অজ্ঞানতার ফলস্বরূপ৷ পূর্ণাঙ্গ ধমর্ীয় আচার অনুষ্ঠান এবং পরিকল্পিত আবেগ মানুষকে রক্ষা করে না বরং হৃদয়ের পরিবর্তন ঘটায় যা খোদার মুক্তির সত্যের মধ্যে দিয়ে রূপান্তরিত হয়৷
এই মুক্তির উপস্থিতি যা মনুষ্যদেহধারী তাদের মধ্যেই দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ ঈসা মসিহ ছিলেন সত্য এবাদতখানা৷ ঈসা মসিহের মধ্যে খোদা সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷ যেমন ঈসা মসিহ বলেছিলেন 'আমার এই দেহের এবাদতখানাকে ধ্বংস কর কারণ তোমরা খোদার জন্য আমার উদ্দীপনাকে সহ্য করতে পার না৷ এই অসম্ভব কাজটি তোমরা করবে এবং এই এবাদতখানাকে ভেঙে ফেলবে কিন্তু আমি সেই দেহকে তিন দিনের ভিতর উত্থিত করবো, আমি কবর থেকে উঠে আসবো৷ তোমরা আমাকে মেরে ফেলবে কিন্তু আমি জীবন্ত কারণ আমি নিজেই সেই জীবন, রক্ত মাংসে খোদা৷ তোমরা আমাকে হত্যা করতে পার না৷' এইভাবে ঈসা মসিহ তার পুনরুত্থানকে পরোক্ষভাবে ঘোষণা করেছিলেন৷ আজ পর্যন্ত এই পুনরুত্থান সর্ব স্রেষ্ঠ মোজেজা৷
ইহুদি ইমামদের প্রতিনিধিরা এবাদতখানার ব্যাপারে এই রূপক কাহিনিটি বুঝতে পারেনি৷ তারা তাকিয়েছিল মর্মর পাথরে তৈরি স্তম্ভ গুলো ও চকচকে গম্বুজগুলোর দিকে এবং ধারণা করলো যে, স্বগর্ীয় বাসস্থানে দাঁড়িয়ে সে খোদাকে নিন্দা করেছে, যে বাসস্থানটি হেরোদ ৪৬ বছর ধরে তৈরি করেছিল৷ তারা পাথরগুলি সম্পর্কে কথা বলেছিল যা তার দেহকে বোঝায়৷ তার কার্যাবলির শুরুতে এই অত্যাবশ্যকীয় আলোচনাগুলি আরও একবার উত্থিত হয়েছিল স্যানহেড্রিনে তার বিচারের সময়, তা ছিল মিথ্যা সাক্ষ্য দ্বারা তৈরি৷
স্পষ্টভাবেই তৌরাতের লোকেরা ঈসা মসিহের মাধ্যমে এই নতুন বিশ্বাসকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিল৷ এমনকি সাহাবিরা ও এই নূতন ধর্মের অন্তর্নিহীত অর্থকে বুঝতে পারেনি, যতক্ষণ পর্যন্ত না ঈসা মসিহের মৃতু্য এবং পুনরুত্থান হয়েছিল৷ এরপর তারা উপলব্ধি করে কী করে খোদার পুত্র পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করে এবং পুনরুত্থিত হয়৷
আজ তিনি আমাদের সাথে সেই আধ্যাতিক এবাদতখানায় আছেন যার জীবস্ত প্রস্তরখণ্ডগুলি আমরা নিজেরাই৷ পাক-রুহ সাহাবিদেরকে পুরাতন পাক-কিতাবের অর্থ বুঝতে আলোকিত করেছিল, যা ঈসা মসিহেরই কথা ছিল৷ তারা বিশ্বাসে দৃঢ় ছিল এবং একসাথে খোদার পবিত্র এবাদতখানা হয়ে রইলো৷
প্রার্থনা: প্রভু ঈসা মসিহ তুমি খোদার বাসস্থান এবং খোদা ও পাপীদের সাক্ষাতের স্থান৷ আমাদেরকে অনুতাপ স্বীকারে অভ্যস্ত করতে সাহায্য করো যাতে করে এবাদতের মধ্য দিয়ে তোমার পরিপূর্ণতার মধ্যে পূর্ণ হতে পারি এবং এবাদতখানায় পাক রুহের সাথে একাত্ব হতে পারি এবং সকল সময় পিতাকে গৌরবান্বিত করতে পারি৷
প্রশ্ন: