Waters of Life

Biblical Studies in Multiple Languages

Search in "Bengali":
Home -- Bengali -- The Ten Commandments -- 11 Ninth Commandment: Do Not Bear False Witness Against Your Neighbor
This page in: -- Afrikaans -- Arabic -- Armenian -- Azeri -- Baoule? -- BENGALI -- Bulgarian -- Cebuano -- Chinese -- English -- Farsi? -- Finnish? -- French -- German -- Gujarati -- Hebrew -- Hindi -- Hungarian? -- Indonesian -- Kiswahili -- Malayalam? -- Norwegian -- Polish -- Russian -- Serbian -- Spanish -- Tamil -- Turkish -- Twi -- Ukrainian? -- Urdu? -- Uzbek -- Yiddish -- Yoruba?
ব্যাখ্যা ৬: দশ আজ্ঞা - মানুষকে অপরাধের কবল থেকে রক্ষা করার প্রতিরক্ষা কবজ সম দেয়াল৷ প্রথম খন্ড
সুসমাচারের আলোকে হিজরত পুস্তকের ২০ অধ্যায়ে বর্ণীত দশ শরীয়তের ব্যাখ্যা

১১ - নবম আজ্ঞাঃ প্রতিবেশির বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিবে না



হিজরত ২০:১৬
'তোমরা তোমাদের প্রতিবেশির বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিবে না


১১.১ - জিহ্বার ক্ষমতা

যদিও জিহ্বা শরীরের একটি ক্ষুদ্র অংগ তবুও এর রয়েছে অসীম ক্ষমতা৷ কখনো কখনো অর্থ ও মূল্যবান ঔষধের চেয়েও এটি অধিক শক্তিধর৷ আমাদের জিহ্বা থেকে বেরিয়ে আশা বাক্যকে দিয়াশলাইয়ের সাথে তুলনা করা চলে, যেমন একটা কাঠি দিয়ে জঙ্গলের শুকনো ডালপালা জ্বালিয়ে দেয়া যায়৷ কিন্তু একটি দরকারি শব্দ জাহাজের হাইলের মতো জাহাজটিকে ঘুরিয়ে নিরাপদ পোতাশ্রয়ের মধ্যে চালিয়ে নেয়া চলে৷ জিহ্বা দিয়ে মানুষ মিথ্যা কথা বলে ও খোদার দূর্ণাম করে অথবা সত্য কথা বলে, খোদার গৌরব প্রশংসা করে৷ ভেঙ্গে পড়া ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দান করে৷ কেন এমন হয়? তার পত্রের তৃতীয় অধ্যায়ে ইয়াকুব তিনটি সাহায্যকারি উপমা রেখেছেন, যেগুলো আমাদের অনুতাপের দিকে করে পরিচালনা৷ আমরা যে সকল কথা বলি তা খোদার কালামের সাথে তুলনা করে দেখতে হবে সঠিক রয়েছে কিনা, কেননা প্রত্যেকটি দুষ্ট কথা হৃদয়ের কলুষতার নির্দেশ দিয়ে থাকে যা তখনও পূণর্জাত হয়ে পড়ে নি৷ আবার প্রত্যেকটি ভদ্র কথা হৃদয়ে বাসকারি মসিহের রূহ অর্থাত্‍ পাকরূহের অস্তিত্ব প্রকাশ করে৷


১১.২ - আমাদের পবিত্রকরণের অপরিহার্যতা

আমাদের জিহ্বাকে পরিষ্কার করণ ও মনের নবিনি করণের জন্য নাজাতদাতা মসিহের কাছে আসতে হবে যেন আমরা সত্য কথা বলতে পারি৷ সম্মানিত নবী প্রচারক ইশাইয়া ভয়ে প্রকম্পিত হয়েছিলে যখন তিনি পবিত্র খোদার সম্মুখে দাঁড়িয়েছিলে তার লোকদের ত্রিত্তপাক আল্লাহ পাকের দরবারে একীভুত করতে চেয়েছিলেন৷ তিনি হতভম্ব হয়েছিলেন মাবুদের যুব্বার ঝলর দেখতে পেয়ে, তিনি কেঁদে ফেললেন, 'তখন আমি বললাম, হায়, আমি ধ্বংস হয়ে গেলাম, কারণ আমার মুখ নাপাক এবং আমি এমন লোকদের মধ্যে বাস করি যাদের মুখ নাপাক৷ আমি নিজের চোখে বাদশাহকে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে দেখেছি৷ তখন একজন সরাফ হাতে একটা জ্বলন্ত কয়লা নিয়ে আমার কাছে উড়ে আসলেন; কয়লাটা তিনি ধূপগাহের ওপর থেকে চিমটা দিয়ে নিয়েছিলেন৷ সেই কয়লাটা তিনি আমার মুখে ছুঁইয়ে বললেন, দেখ, এটা তোমার মুখ ছুঁয়েছে; তোমার অন্যায় দূরা করা হয়েছে এবং তোমার গুানহ মুছে ফেলা হয়েছে' (যিশাইয় ৬:৫-৭)৷

খোদার সাথে সাক্ষাত্‍ পাবার পরে মানুষ নিজের হৃদয়ের মধ্যে স্তুপীকৃত দুষ্টতা ও প্রতারণার উপস্থিতি পরিষ্কার দেখতে পায়৷ এ দৃষ্টান্ত থেকে বুঝা যায়, সদা প্রভু হলেন আমাদের জন্য চুড়ান্ত মাপকাঠী৷ তাঁর আলোকে আমরা আমাদের নোংরামী স্পষ্ট দেখতে পাই, আর এ সকল অপবিত্রতায় আমরা হয়ে আছি পরিপূর্ণ৷ মানুষ বাহ্যত জীবন যাপন কর চলছে, সে পূতপবিত্র খোদার সাথে যুক্ত বা তাঁর সম্মুখীন হতে অনিহা প্রকাশ করে৷ মানুষের নোংরা স্বভাবের পরিবর্তন তখনই আসবে যখন সে পূতপবিত্র মাবুদের কাছে সমর্পিত হবে৷ তাঁর পরশে সবকিছু সরস হতে বাধ্য৷ হযরত পিতর ভূমিতে পড়ে গেলেন খোদার মহা শক্তির পরিচয় এবং অভিজ্ঞতা লাভ করার পরে৷ চিত্‍কার করে তিনি বললেন, 'নৌকায় এত মাছা বোঝাই করলেন যে, সেগুলো ডুবে যাবার মত ছিল৷ এ দেখে শিমোন-পিতর ঈসা মসিহের সামনে উবুড় হয়ে পড়ে বললেন, হুজুর, আমি গুনাহগার; আমার কাছ থেকে চলে যান' (লুক ৫:৮)৷ তিনি জানতেন শান্ত মসিহ তার দিকে তাকানোর সাথে সাথে পাপের শুপ্ত সঞ্চয় প্রকাশ হয়ে পড়লো৷ যদিও প্রভু জানতেন যে পিতর তাকে তিনবার অস্বীকার করবে আবার ঐ পিতরই হবে মানুষ ধরা জেলের দৃষ্টান্ত৷

মসিহ হলেন মানবরূপি 'সত্য' এবং তার রূহ হলো বিশেষভাবে পাকরূহ (ইউহোন্না ১৪:১৭)৷ আমরা যতবার মিথ্যা কথা বলি এবং তর্কাতকর্ী করি ততবার তিনি অর্থাত্‍ পাকরূহ দুঃখ পান৷ খোদা কারো বিরুদ্ধে অপবাদ দেন না, অথবা তিনি কারো সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেন না৷ তিনি পূতপবিত্র এবং তার কালামও সত্য আর যথাসময় পাবে পরিপূর্ণতা৷ তিনি আমাদের নবায়ন করে দিতে চান আর সুসজ্জিত করে তুলতে চান আন্তরিক হবার জন্য৷ তিনি প্রেমের সাথে সত্য প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ করে চলছেন৷ কঠোর ও নিরুত্তাপ কন্ঠে কারো মুখের ওপর সত্য প্রকাশ করা আর তাকে খুন করা একই কথা৷ তবে চাটুকারিতা ও সত্য গোপন করার অর্থ হলো আপনি মিথ্যা কথা বলছেন, প্রভেদ নেই যতটাই আপনি তাকে প্রেম করুন না কেন৷ ভণ্ডামিপূর্ণ প্রশংসা ও মিথ্যা দুর্ণাম একই সাথে চলে৷ তাই সত্য ব্যতিরেকে প্রেম মিথ্যার নামান্তর এবং প্রেমহীন সত্যও ভয়াবহ৷


১১.৩ - মিথ্যা ও তার উত্‍স

ত্রিত্তপাকের আল্লাহ নিজেই সত্য৷ কিন্তু শয়তান হলো মিথ্যাবাদী এবং সকল মিথ্যাচারের পিতা, প্রথম থেকেই সে খুনি৷ ঈসা মসিহ তাকে মন্দ বলে এবং এই জগতের রাজা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন৷ শয়তানের কাছ থেকে যা কিছু উত্‍পন্ন হয় তার সবটাই মিথ্যা, বাহ্যত তা সত্যের মোড়কে আবৃত থাকতে পারে, তাতে কিছু এসে যায় না৷

মন্দের আত্মা বিবি হাওয়াকে প্রতারিত করেছিল৷ তার চাতুর্যপূর্ণ প্রশ্ন খোদার বিষয়ে সত্য এলোমেলো সন্দিহান করে তুললো, মনে সন্দেহের সৃষ্টি করলো৷ বিবি হাওয়ার খোদার ওপর নির্ভরতা সন্ধিগ্ধ করে তুলেছিল৷ হাওয়া বিবির অহংকার, লোভ এবং খোদাদ্রোহীতা পরবতর্ী সময়ে খোদার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ দ্রোহে রূপ নিল৷

বাপ্তিস্ম গ্রহণের সাথে সাথে পাকরূহ মসিহকে প্রান্তরে চালনা করে নিলেন দিয়াবল মন্দ আত্মার দ্বারা প্রলূব্ধ ও পরিক্ষিত হবার জন্য৷ চলি্লস দিবা রাত্র রোজা ও প্রর্থনারত থাকায় তিনি প্রলুব্ধকারীকে প্রতিহত করলেন, প্রলুব্ধকারী এসেছিল আজে বাজে প্রশ্ন করে তার বিশ্বাসের ভিতে চির ধরাবার জন্য৷ শয়তান তাকে বললো, 'যদি তুমি খোদার পুত্র হয়ে থাকো...' যদি তিনি তোমাকে বলে থাকেন, 'তুমি খোদার পুত্র' তবে উক্ত সত্যের প্রমাণ হওয়া দরকার৷ যদিও সে সত্য প্রকাশ করেছিল তবু তাতে ছিল দুষ্ট পরিকল্পনা, মসিহের হৃদয়ে খোদার ওপর বিশ্বাসে সন্দেহ সৃষ্টি করা, আসলে তিনি বেহেশতি পিতার পুত্র কি না৷ দুষ্ট আত্মা চেয়েছিল পিতার থেকে পুত্রকে আলাদা করে দিতে, আর তাঁকে ভুল পথে চালিত করতে; চেষ্টা করেছিল নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য৷ মসিহ নিজের বাক্য দ্বারা শয়তানের প্রশ্নের জবাব দিলেন না৷ শয়তানের সাথে বিতর্কেও তিনি নামলেন না, অথবা নিজের সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতার আলোকেও কোনো জবাব দিলেন না৷ তার পরিবর্তে তিনি বললেন, 'লেখা আছে' মসিহ খোদার প্রকাশিত কালামের সমর্থন করলেন, আর তা ছিল যথোপযুক্ত জবাব শয়তানের চালাকির বিরুদ্ধে৷ কিতাবুল মোকাদ্দস, খোদার কালামের ওপর নির্ভর করা ছাড়া মিথ্যার জনক শয়তানের বিরুদ্ধে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেবার আর কিছুই নেই৷

এটা শ্লেষাত্মক বক্তব্য যে শয়তানও কিতাবুল মোকাদ্দস জানে এবং সুকৌশলে তা প্রয়োগ করে থাকে৷ শয়তান মসিহের জবাবের পাল্টা জবাব দিল, তাও কিতাবুল মোকাদ্দসের আয়াতের উল্লেখ করে৷ তুবও সে প্রসঙ্গক্রমে আয়াতের উল্লেখ করেছে মসিহ যেন পিতার বিশ্বস্ততার পরীক্ষা করে যা ছিল সম্পূর্ন নিষিদ্ধ৷ ঈসা মসিহ পুনরায় জবাব দিলেন 'লেখা আছে, তুমি তোমার প্রভু খোদাকে পরীক্ষা করবে না,' ঐশি সত্যের আলোকে শয়তানের সমস্ত চালাকি ও মন্দ উদ্দেশ্য প্রকাশ পেলো৷ খোদার পুত্রের সাথে শয়তানের কঠিন দ্বন্ধে এটা প্রমাণ হলো, শয়তান মিথ্যা ছাড়া কিছুই বলে না, তা তার বক্তব্যে ২/৪টি সত্যের মিশ্রন থাকলেও তার মুল উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিকে ভ্রান্ত পথে পরিচালনা করা৷ তথাপিও তার বক্তব্য প্রতারণা ও দ্রোহ যা শেষতক সরাসরি খোদার বিরুদ্ধে এবং তাঁর পুত্রের বিরুদ্ধে হয় চালিত৷ পরীক্ষা করে দেখুন, মসিহের আগমনের পরবতর্ী সময়ে যে সকল দর্শণ ও ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছে, আপনি ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, কতোটা প্রতারণামূলক ঐ সকল ধমর্ীয় মতবাদ এবং যুক্তিজাল, যদিও এগুলোর মধ্যে জড়িয়ে আছে সত্য-মিথ্যার জগাখিচুড়ি৷ বর্তমানে শয়তান একই কাজ করে চলছে; সত্যের পক্ষে বিশ্বাসী এবং আগ্রহী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রচার করে ফিরছে যে কিতাবুল মোকাদ্দস কলুষিত করে ফেলেছে, বাতিল ও ইচ্ছামাফিক সুবিধামত লিখে নিয়েছে, মানুষের হাতে লেখা হয়েছে এমন হাজার প্রকারের অপবাদ চাপিয়ে দিচ্ছে৷ শয়তানের এ ধরণের কুমন্ত্রা আপনার হৃদয়ে প্রবেশ করতে দিবেন না৷ পরিবর্তে মসিহ যেমন যুদ্ধ করেছেন আমাদেরও তেমনই যুদ্ধ করে চলতে হবে 'লেখা আছে...'৷


১১.৪ - সবচেয়ে মারাত্মক মিথ্যাচার

বিশ্বের বিভিন্ন দৃষ্টিকোন এবং মতাদর্শগুলো কেবল মিথ্যা প্রচার করেই ফিরছে না, উপরন্তু জাঁকালো ও প্রশংসিত করে রাখছে কতকগুলো যা দেখে মনে হবে সামাজিক বন্ধন সৃষ্টিকল্পে ওগুলো অত্যাবশ্যক৷ যাহোক, সাধারণ অর্থে এসকল বিশ্বদৃষ্টি কেবল ভুলের ফসল৷ শ্লেষাত্মকভাবে বলা হলে যা দাঁড়ায়, খন্ডিত সত্য প্রতারণার সমর্থন করে৷ মনে হবে, ইসলাম একজন অজানা লোকের কাছে 'আল্লাহর ধর্ম' মৌখিকভাবে প্রচারিত ও পরিবেশিত কিতাবুল মোকাদ্দসের সত্যের বিক্রিত রূপ যা সংগৃহিত হচ্ছে ইঞ্জিল শরীফ ও নবীদের গ্রন্থ অর্থাত্‍ কিতাবুল মোকাদ্দস থেকে৷ তবে সকল মুসলমানই কিন্তু একটি বিষয়ে জোর দাবি তুলে আসছে, আর তা হলো মসিহের আত্মকোরবানি হয় নি, অর্থাত্‍ তাকে সলিব বিদ্ধ করে হত্যা করা হয় নি৷ তারা বুঝতেই চায় না যে তারা সকলে গুনাহের সাগরে ডুবন্ত, হারিয়ে যাওয়া, আর গুনাহের শাস্তির জন্য মসিহের সলিব ছাড়া, দেবার মতো তাদের আর কিছুই নেই মুক্তি পাবার৷ মসিহ গোটা বিশ্ববাসির মুক্তির জন্য এ আত্মকোরবানি দিয়েছেন৷ সমাজতান্ত্রিক ও অন্যায় মতবাদও সুক্ষভাবে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ভ্রান্ত সত্যকে পোষকতা দিয়ে চলছে আর ফল দাঁড়িয়েছে নাস্তিকতার বিস্তার৷

কতিপয় উদারনীতি সমর্থনকারী ধর্মতত্তবিদ এবং খুদে গোষ্টি প্রেক্ষাপট অনুযায়ী কিতাবুল মোকাদ্দস থেকে আয়াত চয়ন করে নতুন বই প্রকাশ করে এবং তদানুযায়ী মানুষকে ধারণা দেয়, কিন্তু ভুলটা হলো, তারা প্রচার করে না কেবলমাত্র মসিহ হলেন ধ্যান-ধারণার ও জীবনের উত্‍স৷ মসিহকে এড়িয়ে কেউই পিতার কাছে কোনোভাবেই আসার ক্ষমতা রাখে না৷ মসিহ সলিব বিদ্ধ হয়ে মৃতু্য বরণ করলেন এবং মৃতু্য থেকে পুনরুত্থিত হলেন অনন্ত সত্যের বাস্তব রূপদান করার জন্যই৷ মহান প্রভুর সামনে আমরা সকলেই মিথ্যাবাদী অপরাধী, কিন্তু যে কেউ তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখে তাকেই করা হবে পরিবর্তন, ফলে সত্য ও ন্যায়ভাবে জীবন যাপন করতে পারবে, আর মিথ্যার অরণ্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে৷

ক্ষুদে বা বিশ্বজনীন ঝরের বেগে ধাবমান প্রচার যন্ত্রগুলোকে আমরা বন্ধ করতে পারবো না, তাদের মধ্যে রয়েছে টেলিভিশন, রেড়িও, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন, আচার-অনুষ্ঠান ও সর্বজনীন পানাহারের উত্‍সব, সকলেই স্বল্পবিস্তার আদিমতম মিথ্যার প্রচার চালিয়ে আসছে৷ এ সকল ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে বিভ্রান্ত করা, তার কুফল আগে ভাগেই যায় বোঝা৷ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রত্যেক বক্তা তার বিরুদ্ধ পক্ষের কুত্‍সা রটনা করেই হয়ে পড়ে ক্লান্ত, নিজেদের এমনভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় যেন তারাই একমাত্র সত্যে বিরাজমান আর একমাত্র সমাধান৷ ক্ষুদ্র সমাধান উড়ে যায় আর বিশাল ভুলগুলো হুল হয়ে ফোটে, জ্বালায় কাঁদায়৷ ভাজ দেয়া সত্য মানুষকে বিমোহীত করে বোকা বানায় এবং সাজানো খবর ঘৃণার উদ্রেক সৃষ্টি করে৷


১১.৫ - নিত্যদিনকার মিথ্যাচার

মিথ্যাচার কেবল যে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যকেই নিয়ন্ত্রণ করে তা নয় বরং তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকেও করে নিয়ন্ত্রণ৷ সত্য দ্রুত পরাহত হয়ে পড়ে আর মিথ্যাদুর্ণাম চায়ের দোকানে বসেও আলোচনা করে, প্রচার করে৷ দুর্নামগ্রস্থ ব্যক্তি কোথাও দাঁড়ালে বা আলোচনা করতে শুরু করলে জনগণ সুকৌশলে বিষয়বস্তু ঘুরিয়ে দেয় যা আমরা গোটা জীবন দেখে আসছি৷ কারো হৃদয় ভেঙ্গে দেবার মতো হয়তো কোনো মিথ্যা কথা আমরা বলি নি, কিন্তু কাউকে অবমানিত করি, অথবা জনসমক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করি, অনুপ্রানিত হই 'মিথ্যার পিতার' প্রেরণায়৷ সত্যিকারার্থে আমাদের তওবা করতে হবে, এবং লোকদের অনুপস্থিতিতে কথা বললেও মনে করতে হবে আলোচনার টেবিলে উক্ত আলোচ্য ব্যক্তি রয়েছে উপস্থিত৷ নির্দোষ মিথ্যা বলা! অর্ধ সত্য বলা! এ ধরণের প্রবণতা অবশ্যই মৃতু্যদায়ক৷ এ ধরণের বচসার অবসান ঘটানো সম্ভব যদি আমরা সোজাসুজি আলোচ্য ব্যক্তির কাছে গিয়ে আলোচনা করি এবং মুল ঘটনা পুরোটা জেনে নেই, তখন আর অনুমানের প্রয়োজন থাকলো না, সত্য-মিথ্যার মধ্যে মিশ্রনের প্রয়োজন রইলো না৷ জেনে শুনে সঠিক ব্যক্তির সঙ্গ দেয়া অনেক ভালো গড্ডালিকা প্রবাহে না ভেসে৷ নবম আজ্ঞাটি আমাদের শিক্ষা দেয়, জীবিত মাছ যেমন স্রোতের বিপরীতে চলে একইভাবে মিথ্যার স্রোতের বিপরীতে আমাদের চলতে হবে৷ কখনো কখনো নিজেদের জটিল অবস্থার মধ্যে হাবুডুব খেতে দেখি, তখন অপ্রিয় সত্যের পক্ষে রায় দিতে হয়৷ মানুসের মুখের দিকে তাকিয়ে আমরা সত্য গোপন করে বসি, যে ব্যক্তি বা দল বন্ধু-বান্ধব পরিবার-পরিজন যারা অনুপস্থিত তাদের বিষয়ে কথা বলা ঠিক নয়৷ সুযোগ মতো আমরা বিপক্ষের অনুপস্থিতিতে সত্য-মিথ্যার ভাঁজ দিয়ে কথা বলে বলি৷ তার কারণ আমার ভুল বক্তব্য ও ভুল শিক্ষাটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভুলের সমাহার করে চলি৷ ইদুর যেমন দ্রুত গর্ত খুঁজে পায় পালাবার জন্য কতিপয় ব্যক্তি নিজেকে জ্ঞানবান পুন্যবান প্রমান করার জন্য না না অজুহাত দেখায়৷

মিথ্যাচার সমাজটাকে বিষাক্ত করে তুলছে৷ কেউহ অন্যকে আর বিশ্বাস করে না৷ অনেকের প্রবণতা, তারা যা বলছে আসলে তার সম্পূর্ণ বিপরীত তাদের মনোবাসনা৷ ভুল বুঝাবুঝি মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে ছাড়ে, ঐক্য ভেঙ্গে ফেলে; যেমন কাঁচের পাত্র ভাগ করে নেয়া৷ মিথ্যা মানুষকে পৃথক করে ফেলে! ঘৃণার সৃষ্টি হয়, আর নিরবতার মুহুর্তে এর কার্যকারিতা শুরু করে৷ মসিহের শক্তি আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে হবে, আর নির্ভিকভাবে আমাদের মিথ্যাচার, অসত্য কথাবার্তা তথা দুর্ণাম বদনাম স্বীকার করতে হবে প্রকাশ্যে৷ যাদের সাথে আমাদের দন্ধ রয়েছে তাদের কাছে খোলাখুলি ক্ষমা চাইতে হবে৷ তখন প্রত্যয় সৃষ্টি হবে আর ধ্বংস হবে মিথ্যা গর্ব৷


১১.৬ - কে তার ভাইকে সঠিকভাবে বুঝতে পারে?

আমাদের নিজেদের পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন, খোদা আসলে যে নজরে মানুষকে দেখে, আমরা কি তদ্রুপ আমাদের ভাই-বোনদের সম নজরে বিবেচনা করি কি না? বাহ্যিক দৃষ্টিতে আহরিত বিচার-আচার মসিহ অগ্রাহ্য করেছেন, তিনি বলেছেন, বিচার করো না, পাছে তুমি বিচারিত হয়ে না পড়ো৷ যে মানদন্ডে তুমি তাকে মাপছ ওই একই মানদন্ড দিয়ে তোমাকেও মাপা হবে৷ তুমি যেভাবে মেপে দাও তোমাকেও সেই একইভাবে মেপে দেয়া হবে৷ 'তোমরা অন্যের দোষ ধরে বেড়িয়ো না যেন তোমাদেরও দোষ ধরা না হয়, কারণ যেভাবে তোমরা অন্যের দোষ ধর সেইভাবে তোমাদেরও দোষ ধরা হবে, আর যেভাবে তোমরা মেপে দাও সেইভাবে তোমাদের জন্যও মাপা হবে৷ তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটা আছে কেবল তা-ই দেখছ, অথচ তোমার নিজের চোখের মধ্যে যে কড়িকাঠ আছে তা লক্ষ্য করছ না কেন? যখন তোমার নিজের চোখেই কড়িকাঠ রয়েছে তখন কি করে তোমার ভাইকে এই কথা বলছ, এস, তোমার চোখ থেকে কুটাটা বের করে দিই? ভন্ড! প্রথমে তোমার নিজের চোখ থেকে কড়িকাঠটা বের করে ফেল,তাতে তোমার ভাইয়ের চোখ থেকে কুটাটা বের করবার জন্য স্পষ্ট দেখতে পাবে (মথি ৭:১-৫)৷

মসিহের পর্বতে দত্ত উপদেশের আলোকে কেউ যদি এ আজ্ঞার কিছুটা অংশও বুঝতে পারে তবে তাত্‍ক্ষণিকভাবে সে নিজ মুখ অন্যের পর্যালোচনা থেকে বন্ধ করবে এবং স্বীয় অবস্থান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করবে, অন্যকে বিচার করার পূর্বে৷ সম্ভবতঃ আমাদের কোনো এক ভাই বড় ধরনের ভুল কাজ করে ফেলেছে, যেমন চোখের মধ্যে ক্ষুদ্র বালু কণা, কিন্তু আমরা স্বীকার করতে চাইনা যে আমাদের চোখে ইতোমধ্যে অগণিত তক্তা জমা হয়ে আছে, নিজেদের চোখের তক্তা বহাল তবিয়তে রেখে দিয়ে অন্যের চোখ থেকে ক্ষুদ্র কণা বের করা আমাদের জন্য হবে অসম্ভব৷ মসিহ আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়ে উপ্ত ঘৃণা, কলুশিত চিন্তা, নোংরা কর্ম, লোভ, প্রতারণা, কপটতা, ভণ্ডামি, পিতামাতার প্রতি অসম্মান প্রকাশ এবং প্রভুর দিন এ সকল পাপ থেকে মুক্তি পেতে হবে৷ যে কেউ নিজেকে অস্বীকার করে পাকরূহের হাতে নিয়ন্ত্রিত হয়ে চলে, অহংকারের পথ ত্যাগ করে, খোদা যেমন মানুষকে মহব্বত করে সেও তদ্রুপ মহব্বত করতে চায় যারাই লাভ করে মাবুদের অশেষ আশির্বাদ৷

আমরা অন্যের বিচার সঠিকভাবে করতে পারি না, কেননা তাদের ভিতর বাহির পূর্ণাঙ্গভাবে জানিনা৷ তাদের মতো পরিস্থিতিতে যদি আমরা পড়তাম তখন আমরা কী করতাম? আলোচ্য ব্যক্তি যদি আমাদের মতো আশির্বাদের মধ্যে বিচরণ করার সুযোগ পেতো, যেমনটা আমরা পেয়েছি, তবে তার প্রতিক্রিয়া কি হতো? কথাচ্ছলে মসিহ বলেছেন, 'নিজেদের মতো করে তোমরা তোমাদের প্রতিবেশিকে মহব্বত করবে৷' খোদা আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছেন, তাদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া কতোটা গুরুত্ববহ, যখন তাদের নিয়ে প্রসঙ্গ জাগে, আমাদের অবশ্যই তাদের প্রেম করা আবশ্যক৷

সাক্ষী হিসেবে শপথ গ্রহণে আমাদের সমস্যা হলো, কে জানে আসল ঘটনা যা ঘটেছে এবং তার সত্যাসত্য বিষয়? খোদা যেমন সবকিছু সবিস্তারে দেখতে পান, অবশ্যই আমরা তেমন দেখতে পাই না৷ ভাইদের বিষয়ে বিচারের সময় আমাদের দেয়া রায় খাটো বা অসম্পূর্ণ থাকতে বাধ্য৷ আমাদের ঘাটতির বিষয়ে যদি আমরা জানতে পারি তবে কোনো বিষয় শুনামাত্র তাত্‍ক্ষণিকভাবে ঝাপ দিতে পারতাম না, এবং উপসংহারে গিয়ে সংহার করতে পারতাম না, তাই সবকিছু আগাগোড়া তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, এবং বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে হবে৷ প্রভু আমাদের দৃষ্টি মায়ের স্নেহভরা দৃষ্টিতে পরিণত করে দিবেন বর্তমানে যা হয়ে আছে পুলিশের নজর৷


১১.৭ - কীভাবে সত্যকে আমরা করবো পরিবেশন?

আমাদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কী করে আমরা 'সত্য' সঠিকভাবে জানতে পারি? 'মিথ্যা' কি আমরা অত্যাবশ্যক হিসেবে মনে করি এবং 'সত্য' কি মন্দ কিছু? কখনোই না, অসম্ভব! প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে সত্যের বিষয় সাক্ষ্য দিতে হবে আমাদের জানা মতো৷ খোদার কাছ থেকে প্রজ্ঞা চেয়ে নিতে হবে, যেন আমাদের ভাইবোনদের বিরুদ্ধে অন্যায় প্রসূত কোনো আচরণ না করতে হয়৷ নির্যাতন নিপীড়নের সময় বিশ্বাসী ভাইবোনদের বিশেষ ঐশি দয়া লাভ করতে হবে, যেন তারা সত্য প্রকাশে সঠিক উপায়ে বাস্তবতার নিরীখে পথ সমাধান লাভ করে৷ পাকরূহের পরিচালনায় আমাদের চলতে হবে, ফলে কোনো বিশ্বাসি ভাইবোনের জীবন যেন নষ্ট হয়ে না যায়৷ আমাদের প্রকৃত সত্য প্রকাশ করা প্রয়োজন তবে পরিপূর্ণ সত্য অবশ্যই বলতে হবে অন্যের কল্যাণ সাধনকল্পে৷ যারা মসিহকে অদ্যাবধি বিশ্বাস করে না, তারা হয়তো ভাববে, আমরা মিথ্যা কথা বলছি, তার কারণ হলো সত্যের রূহ তাদের মধ্যে উপস্থিত নেই৷ তারা বুঝতে পারে না, পাকরূহ সদাসর্বদা আমাদের প্রেরণা দিচ্ছে সত্য প্রকাশের জন্য৷

কিতাবুল মোকাদ্দস নিয়ত প্রেরণা দিচ্ছে নিত্যদিন নিজেদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে, প্রশিক্ষিত করছে, তা স্কুলে হোক, সমাজে হোক, পরিবারে হোক, ভাই বোনদের ভালো কাজগুলো প্রকাশ্যে তুলে ধরতে, প্রসংশা করতে আর তাদের ভুলগুলো নিয়ে বচসা না করতে৷ শত্রুমিত্র সকলের ক্ষেত্রেই আমরা যেন সত্য বিষয়ের ভিত্তিতে, ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করি৷ করিন্থীয় জামাতের কাছে হযরত পৌল বলেছেন, 'মহব্বত সব সময় ধৈর্য ধরে, দয়া করে, হিংসা করে না, গর্ব করে না, অহংকার করে না, খারাপ ব্যবহার করে না, নিজের সুবিধার চেষ্টা করে না, রাগ করে না, কারও খারাপ ব্যবহারের কথা মনে রাখে না, খারাপ কিছু নিয়ে আনন্দ করে না বরং যা সত্য তাতে আনন্দ করে৷ মহব্বত সব কিছুই সহ্য করে, সকলকেই বিশ্বাস করতে আগ্রহী সব কিছুতে আশা রাখে আর সব অবস্থায় স্থির থাকে৷ এই মহব্বত কখনও শেষ হয় না৷ নবী হিসেবে কথা বলবার যে ক্ষমতাআছে তা শেষ হয়ে যাবে; বিভিন্ন ভাষায় কথা বলবার যে ক্ষমতা আছে তা চলে যাবে; জ্ঞান আছে, তাও শেষ হয়ে যাবে; কারণ আমরা সব বিষয় পুরোপুরি ভাবে জানি না, নবী হিসেবেও পুরোপুরি ভাবে কথা বলতে পারিনা৷' (করিন্থীয় ১৩:৪-৮)৷

প্রেমের আবেশে আমরা যদি হই পরিচালিত তবে পাপীদের আর আমরা বিচার করবো না৷ বরং আমাদের সাধ্যমত সবকিছু বুঝতে চেষ্টা করবো, সাহায্য করবো অথবা ব্যক্তিকে প্রেম ও বিনম্রতার মনোভাব নিয়ে টেনে তুলবো৷ ইফিষীয়দের কাছে হযরত পৌল লিখেছেন, তত্‍কালীন সময় ইফিষীয় জামাতের লোকজন মসিহের তাবলীগের কাজে যথেষ্ট পরিপক্ক হয়ে উঠেছিলেন, 'এইজন্য তোমরা মিথ্যা ছেড়ে দাও এবং একে অন্যের কাছে সত্যি কথা বল, কারণ আমরা সবাই একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত' (ইফিষীয় ৪:২৫)৷ আমরা প্রকৃত সত্য জানার জন্য সর্বদা চেষ্টা করে থাকি৷ তথাপি, পাকরূহের বিষয়ে যতোই পরিপক্ক হই না কেন, শয়তান সর্বদা আমাদের পিছনে লেগে আছে, প্রলুব্ধ করছে মিথ্যা বলার জন্য, অন্যকে বিচারিত করার জন্য এবং ভিন্নমতাবলম্বী লোকদের ওপর রাগান্বিত হবার জন্য৷ মসিহকে যেভাবে প্রলুব্ধ করা হয়েছে আমাদেরকেও সেইভাবে প্রলোভন দেখানো হবে৷ এ কারণে ইফিষীয় জামাতের কাছে লিখেছেন, 'শেষে বলি, প্রভুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাঁরই দেওয়া মহা শক্তিতে শক্তিমান হও৷ যুদ্ধের জন্য আল্লাহর দেওয়া সমস্ত সাজ-পোশাক ডপরে নাও, যেন তোমরা ইবলিসের সব চালাকির বিরুদ্ধে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পার৷ আমাদের এই যুদ্ধ তো কোনো মানুষের বিরুদ্ধে নয়, বরং তা অন্ধকার রাজ্যের সব শাসনকর্তা ও ক্ষমতার অধিকারীদের বিরুদ্ধে, অন্ধকার দুনিয়ার শক্তিশালী রূহদের বিরুদ্ধে, আর আকাশের সমস্ত ভূতদের বিরুদ্ধে' (ইফিষীয় ৬:১০-১২)৷

ইউহোন্না যাকে মহব্বতের সাহাবি বলা হয়, তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন মানুষের মিথ্যা বলার মুল কারণ 'এরপরে ঈসা মসিহ ও তাঁর উম্মতেরা ইহুদিয়া প্রদেশে গেলেন৷ সেখানে তিনি তাঁর উম্মতদের সঙ্গে কিছু দিন থাকলেন এবঙ লোকদের তরিকাবন্দী দিতে লাগলেন৷ শালীম নামে একটা গ্রামেরকাছে ঐনোন বলে একটা জায়গায় তখন ইয়াহিয়াও তরিকাবন্দী দিচ্ছিলেন, কারণ সেই জায়গায় অনেক পানি ছিল আর লোকেরাও এসে তরিকাবন্দী নিচ্ছিল' (ইউহোন্না ২:২২-২৩)৷ 'সেই দিনটি ছিল বিশ্রামবার৷ এইজন্য যে লোকটিকে ভালো করা হয়েছিল তাকে ইহুদি নেতারা বললেন, আজ বিশ্রামবার, শরীয়ত মতে বিছানা তুলে নেওয়া তোমার উচিত নয়' (ইউহোন্না ৫:১০)৷ ত্রিত্তের খোদার ওপর আপনার বিশ্বাস ও নির্ভরতা, যিনি আপনার জীবনের প্রধান চালিকা শক্তি, আপনাকে বাস্তব জীবনে সত্যবাদী হিসেবে করবেন পরিচালনা৷


১১.৮ - কোরানে খোদার কৌশল প্রদর্শণ

বিশেষভাবে ইসলামের দৃষ্টিতে 'সত্য' অজানা অচেনা রূহ৷ সুরাহ আল ইমরানে আমরা দেখতে পাই, 'তারা ছিল ধুর্ত, আল্লাহ হলেন ধুর্ত এবং সকল ধুর্তদের ওপর আল্লাহ হলেন সর্বোত্‍কৃষ্ট ধুর্ত৷' এক্ষেত্রে ধুর্ততা বুঝতে মসিহকে মেরে ফেলার জন্য ইহুদিদের ষড়যন্ত্র বুঝানো হয়েছে৷ ইসলামের ধারণা মোতাবেক আল্লাহ তাদের বোকা বানিয়েছেন, সলিবের যন্ত্রণা থেকে মসিহকে রক্ষা করেছেন, এবং তাকে জীবন্ত তুলে নিয়েছেন৷ এর অর্থ হলো, আল্লাহ মসিহকে সলিববিদ্ধ হয়ে মারা যেতে দেন নি, তাঁর ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে তিনি নিজের কাছে তুলে নিয়েছে৷ এ প্রচেষ্টা ঐতিহাসিক সত্যের পরিষ্কার বিকৃতি করণ যা স্থান ও কালের ব্যবধানে করা হয়েছে৷ আল্লাহর সঠিক বৈশিষ্ট সলিবের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে, তাকে প্রমাণ করতে হয়েছে যে তিনি কোনো সত্য ব্যক্তিসত্তা নন, তিনি সত্য খোদা নন, তিনি সত্যের শত্রু, সকল ধুর্তের উপরের ধুর্ত ব্যক্তি মাত্র৷ সকল সত্যের পরিপূর্ণতা হলো সলিব, ইসলামে আল্লাহর প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরেছে৷ সলিবের মর্মার্থ ও অত্যাবশ্যকতা অভিশপ্ত শয়তানই কেবল প্রত্যাখান করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে, তার কারণ হলো মানুষ যেন প্রকৃতার্থে নাজাত লাভ করতে না পারে এবং মসিহের সাথে অনন্ত জীবন বেঁচে থাকতে না পারে এটা হলো শয়তানের ব্রত৷

ইসলাম কোরানের মধ্য দিয়ে আল্লাহকে প্রকাশ করেছে 'সর্বশ্রেষ্ঠ ধুর্ত' খায়রুল মাকেরিন হিসেবে৷ ব্যতিক্রমহীনভাবে তার অনুসারিরা ধুর্ততাকে একটি গুণ হিসেবে বিবেচনা করে এবং এটাই আইনানুগ পন্থা যা কিছু তারা অধিকারে আনতে চায় এবং যেকোনো মূল্যে এ মতবাদ প্রচার করার জন্য মরিয়া হয়ে লাগবে, তাতে আশ্চর্য হবার কি আছে৷ চারটি ক্ষেত্রে প্রতারণা ও মিথ্যার আশ্রয় নিতে মুহাম্মদ আইনানুগ অধিকার দিয়েছেঃ যেহাদের ক্ষেত্রে, ইসলাম প্রচারের প্রয়োজন, শত্রুদের পুনর্মিলনের ক্ষেত্রে, প্রয়োজনে পুরুষ স্ত্রীর কাছে মিথ্যা বলতে পারে৷ এবং স্ত্রীও তার স্বামীর কাছে প্রয়োজন বোধে মিথ্যা বলতে পারবে৷ ইসলামে আপনি আপনার বন্ধু বা শত্রুকে বিশ্বাস করতে পারেন না৷ প্রত্যেকে প্রত্যেককে অবিশ্বাস করে, কারণ মুসলমানদের মধ্যে আস্থার অভাব রয়েছে৷


১১.৯ - খোদার সত্য প্রতিষ্ঠা না জীবনের প্রয়োজনের তাগিদে মিথ্যাচার

সলিব বিদ্ধ এবং মৃতু্য থেকে পুনরুত্থিত সেই মহান সত্তাকে যদি আপনি বিশ্বাস না করেন তবে সত্যের রূহ আপনার কাছে আসবে না৷ আপনার পুরো জীবনটা মিথ্যাচার ও আত্ম প্রবঞ্চনায় ভরা, তার কারণ, আপনি মসিহের সলিবে আত্মকোরবানি অস্বীকার করেছেন৷ অনুতপ্ত মিথ্যাবাদি ও গুনাহগারদের গুনাহের কাফফারা পরিশোধ করার জন্যই মসিহ সলিব থেকে পূতপবিত্র রক্ত ঝরিয়েছেন এবং তাদের প্রায়শ্চিত্ত সাধন করেছেন৷ মৃতু্য থেকে পুনরুত্থানের পর তিনি তাঁর পাকরূহকে অর্থাত্‍ সত্যের রূহ, তাদের ওপর অভিষেক করলেন যারা পিতার আজ্ঞা মোতাবেক বিশ্বাসে ছিলেন অপেক্ষামান৷ আগুনের জিহ্বার মতো করে তাদের প্রত্যেকের ওপর বর্শিত হলো পাকরূহ৷ মসিহ তাঁর সাহাবিদের দ্বারা যা করতে চেয়েছেন তা এক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হলো৷ তাদের মিথ্যাচারের জিহ্বা পুড়ে পরিবতর্ীত হয়ে নতুন হবে, রুহানি জিভে রূপান্তরিত হবে, আর তখন সম্ভব হবে অনন্ত সত্যের বয়ান ঘোষণা দিতে৷ অনন্ত সত্য কতই না মহান! অনন্ত সত্য বলতে কী বুঝানো হয়? খোদা হলেন আমাদের পিতা, মসিহ হলেন প্রভু ও নাজাতদাতা এবং পাকরূহ হলেন আমাদের মধ্যে বসবাসকারী সান্ত্বনাদাতা৷ ত্রিত্তপাক হলেন অনন্ত বাস্তবতা, পাকরূহ মসিহের সাহাবীদের মাধ্যমে তা প্রকাশ করে ফিরছেন৷ আমাদের সুযোগ ও অধিকার এভাবে হয়েছে অর্জিত, যেন প্রেমের সাথে আমরা সত্য প্রকাশ করি, বিশ্বের সকলের জন্যই তিনি পাপের প্রায়শ্চিত্ত সলিবে করেছেন পরিশোধ৷

এটা কতই না চমত্‍কার যখন আপনি একজন প্রার্থনাশীল বন্ধু পাবেন যিনি প্রেমের আবেশে সত্যের ঘোষণা দিবে! তিনি তাদের চেয়ে, যারা কেবল আপনার প্রশংসায় থাকে ডুবে হাজার বার আপনার জন্য উত্তম ৷ তাই প্রভুর কাছে আমাদের প্রার্থনা করা প্রয়োজন, যেন প্রেমের সাথে সত্য বিষয় ঘোষণা করতে পারি আর আমাদের বন্ধু মহলের জন্য দোয়া করতে পারি৷ মসিহ এজন্য আজ্ঞা দিয়েছেন, 'তোমাদের 'হঁ্যা' যেন 'হ্যা' হয় আর 'না' যেন 'না' হয়৷ এর অতিরিক্ত যা কিছু তা ইবলিসের কাছ থেকেই আসে (মথি ৫:৩৭)৷ মসিহের কাছে আমাদের বিনীত প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের সত্যবাদী এবং প্রেমের সাথে সত্য কথনে সাহায্য করে৷

www.Waters-of-Life.net

Page last modified on August 01, 2017, at 05:29 PM | powered by PmWiki (pmwiki-2.3.3)