০৫ - তৃতীয় আজ্ঞা: বিনা প্রয়োজনে খোদার নাম মুখে এনো না
হিজরত ২০:৭
কোনো বাজে উদ্দেশ্যে তোমরা তোমাদের মাবুদ আল্লাহর নাম নেবে না৷ যে তা করবে তাকে মাবুদ শাস্তি দেবেন৷
০৫.১ - খোদার নাম
স্রষ্টাকে ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না৷ মানুষ তো খোদার সুরতেই সৃষ্ট, তথাপি মানুষ খোদা থেকে বিচ্ছিন্ন৷ যুগ যুগ ধরে মানুষ বিশ্বের এই অন্ধকারে খুঁজে ফিরছে, অতীব আগ্রহ নিয়ে, সেই হারানো গৃহ এবং সেই গোপন উত্স৷ খোদার বিকল্প খোদা সে তৈরি করে চলছে হাজার উপায়ে, আর ঐসকল বিকল্প খোদার ছবি দিয়ে মানুষের বা নির্মাতাদের অন্তর্নিহিত ভয়াবহ ও উদ্ধেগাকুল অভিব্যক্তি প্রকাশ পায় যা মানুষের শুপ্ত কামনা বাসনার প্রকাশ মাত্র৷ যাদু বিদ্যার পিছনে সে অর্থ ব্যয় করে, হস্ত দেখা রাশিফলের উপর করে নির্ভর, যার কোনোটাই তাকে দিতে পারে না প্রতিরক্ষা৷ মুসলমান সমপ্রদায় কালো পাথরে চুমু খায় অতীব ভক্তিশ্রদ্ধার সাথে, তাদের ধারণা বেহেশতি পবিত্র স্থানে বসানো৷ বৌদ্ধগণ বুদ্ধদেবের মূর্তি যা স্বর্ণ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে তার পূজা করে৷ ভক্তগণের অজ্ঞাতসারে বুদ্ধ হাসছেন তাদের অসাড়তা দেখে৷
প্রভু প্রত্যক্ষভাবে নিজেকে প্রকাশ করেছেন, 'আমি সর্বশক্তিমান, আমিই প্রভু,' যারা তাঁকে খুঁজে ফিরছে তাদর ব্যর্থ প্রচেষ্টার অবসান হতে পারে এ ঘোষণার ফলে৷ জ্বলন্ত ঝোপের মধ্যে তাঁর প্রকাশ হলো একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, কেননা প্রভু যেমন নিজেকে প্রকাশ করেছেন তেমন নিজের নাম ঘোষণা দিয়েছেন দর্শনের মধ্যে৷ কিতাবুল মোকাদ্দস অর্থাত্ নবীদের জামানায় এবং মসিহের মাধ্যমে খোদা বহুবার আত্মপ্রকাশ করেছেন মানবজাতির কাছে৷ কিতাবুল মোকাদ্দস ৬৩৮টি নাম ও গুনবাচক নাম প্রকাশ করেছেন ত্রিত্ত্বপাকের বিষয়ে৷ সেমিটিক ভাষায় প্রত্যেকটি গুনবাচক শব্দ আলাদা নাম বলে ধরা হয়৷ তাই খোদা কেবল ধার্মিকই নন, তিনি একমাত্র ধার্মিক সত্ত্বাত্ত বটে, যার মধ্যে সকল ধার্মিকতার কেন্দ্রীভূত অবস্থান ঘটেছে৷ তিনি কেবল পবিত্রই নন, বরং তিনি একমাত্র পবিত্র ব্যক্তি যার মধ্যে সকল পবিত্রতার পূর্ণতা রয়েছে বিদ্যমান৷ এ নামগুলো তার মহিমার কিরণ প্রকাশ করে৷ যাকগে, যে নামটি বার বার প্রকাশ পেয়েছে তা হলো 'সর্বশক্তিমান' (৬৮২৮ বার নবীদের গ্রন্থে প্রকাশ পেয়েছে)৷ এ নামের অর্থ হলো সর্বশক্তিমান পালনকর্তা, একমাত্র পবিত্রব্যক্তি, নির্দোষ ব্যক্তি, ঐতিহাসিক প্রভু, যিনি কখনোই তাঁর বিশ্বস্ততা থেকে সরে যান নি, এবং ভবিষ্যতেও কখনো বদলাবে না৷
০৫.২ - ইঞ্জিল শরীফে প্রভুর বর্ণনা
প্রভু নিজেই মানবরূপ ধারণ করলেন নাসরতের ঈসা মসিহের মাধ্যমে৷ নতুন নিয়মে অর্থাত্ ইঞ্জিল শরীফে বিষয়টি বিধৃত হয়েছে ফেরেশতা, নবী এবং সকল বিশ্বাসীগণ ঐক্যমত্যে আছেন এবং স্বীকার করেন 'মসিহ হলেন প্রভু'৷ তথাপি মসহি নিজেকে মহিমান্বিত করেন নি, সদাসর্বদা তাঁর বেহেশতি পিতার গৌরব বহন করেছেন৷ বাস্তবিক পক্ষে তিনি আমাদের প্রার্থনা শিখিয়েছেন 'আমাদের বেহেশতি পিতা, তোমার নাম পবিত্র বলে মান্য হোক'৷ এ প্রার্থনায় পিতার নামে সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে, প্রকাশ করা হয়েছে গৌরব পবিত্রতা যা অন্য নামের চেয়ে অনেক উধের্্ব৷ আমাদের পিতার পরিচয় মসিহ যেভাবে প্রকাশ করেছেন তাতে খোদার বিষয়ে আমরা অনেক উচ্চস্তরের জ্ঞান লাভ করতে পেরেছি৷
বিনম্রতার মানবরূপ প্রকাশ হলো ঈসা মসিহ৷ লজ্জাজনক সলিবে আত্মকোরবানির মধ্য দিয়ে তিনি পবিত্র পিতা ও গুনাহগারদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করেছেন৷ সে কারণে খোদা তাকে সবচেয়ে সম্মানিত স্থানে উনি্নত করেছেন, সকলে যাতে তাকে শ্রদ্ধাভক্তি করে, প্রত্যেকে তার সম্মুখে প্রণতি জানায় 'আল্লাহ এজন্যই তাঁকে সবচেয়ে উঁচুতে উঠালেন এবং এমন একটা নাম দিলেন যা সব নামের চেয়ে মহত্, যেন বেহেশতে, দুনিয়াতে এবং দুনিয়ার গভীরে যারা আছে তারা প্রত্যেকেই ঈসার সামনে হাঁটু পাতে, আর পিতা আল্লাহর গৌরবের জন্য স্বীকার করে যে, ঈসা মসিহই প্রভু'৷ পাকরূহ মসিহের প্রকৃত নামের উপর গৌরব প্রকাশ করে আসছে শুরু থেকে, যেন সকলে জানতে পারে 'তিনি প্রভু'৷ একই সময় পাকরূহ এও ঘোষণা দিয়ে ফিরছে খোদার ঐক্যের বিষয়ে অর্থাত্ পিতা, পুত্র ও পাকরূহের ঐক্যের দ্বারা অবস্থান করেন৷ মহব্বতের ঐক্যের মাঝে অন্তর্নিহিত রয়েছে খোদার প্রকৃত সত্ত্বা৷ মহামতি দাউদ নবী খোদার কালাম জানতে পেরেছিলেন, 'মাবুদ আমার প্রভুকে বললেন, যতক্ষণ না আমি তোমার শত্রুদের তোমার পায়ের তলায় রাখি, ততক্ষণ তুমি আমার ডান দিকে বস'৷
০৫.৩ - খোদার নাম বলতে কী বুঝা যায়?
কেউ যখন কোনো অপরিচিত শহরে আসে তখন তার পরিচিত কোনো বন্ধুর ঠিকানা পেলে খুশি হয়৷ তিনি তখন তার বন্ধুকে ডাকতে পারে এবং তাকে পরিচালনা করার জন্য নির্ভর করতে পারে৷ যিনি খোদার নাম জানেন তিনি সুখি ব্যক্তি কেননা তিনি তার টেলিফোন নাম্বার পর্যন্ত জানেন, 'তোমার বিপদের দিনে তুমি আমাকে ডেকো; আমি তোমাকে উদ্ধার করব আর তুমি আমাকে সম্মান করবে'৷ আামদের জীবন্ত প্রভু বেহেশতে ঘুমিয়ে থাকেন না, তিনি অতি আগ্রহে আমাদের রুহানি ফোন পাবার জন্য অপেক্ষাতে আছেন৷
যতবার খোদার সাথে আমাদের সাক্ষাত্ ঘটে ততবার তিনি দেখিয়ে দেন পাপ অপরাধের সাথে আমাদের সম্পৃক্ততা, দেখিয়ে দেন আমাদের একাকীত্ব ও পথহারা অবস্থা৷ তার পবিত্রতার মহিমা আমাদের সংকীর্ণ নৈতিকতা ও মিথ্যা মানবতা প্রকাশ করে প্রমাণ করে আমাদের আসল অবস্থা৷ খোদার সদগুণ আমাদের উত্সাহিত করে, আমাদের পাপস্বীকার করতে আর তাঁর বিনম্রতা প্রকাশ করে, আমাদের মধ্যে রয়েছে পুঞ্জিভূত বিষাক্ত গর্ব৷ খোদার নাম জানার ফলে ভগ্নান্তকরণ ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে খোদার সাথে যুক্ত হতে উত্সাহিত হয়৷
খোদার উপর আমাদের বিশ্বাস যতোটা বৃদ্ধি পায় ততোটা আমাদের অবস্থান তৃতীয় হুকুমের মধ্যে প্রোথিত হতে থাকে৷ যেমন তিনি বলেছেন, আমিই প্রভু, তোমাদের খোদা, সেখানে সম্বন্ধ পদ সর্বনাস 'তোমার' অর্থ প্রকাশ করে, স্রষ্টা তার সৃষ্টির সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন, যদিও তারা গুনাহগার ঘাটতিতে ভরা জীবন এবং বড়ই দুর্বল৷ তিনি নিশ্চয়তা দিচ্ছেন তাদের রক্ষা করার এবং তাঁর বিশ্বস্ততা দিয়ে ভরাট করার৷ ইঞ্জিল শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী দেখা যায়, তিনি আমাদের খোদার পরিবারে সংযুক্তি দান করেছেন, সেখানে রুহানি দেহে মসিহ হলেন মাথা আর আমরা হলাম তার অংগ-প্রত্যঙ্গ, কর্মীবাহিনী৷ এই দুষ্ট বিনষ্ট বিশ্বকে রক্ষা করার জন্য পিতা পুত্র ও পাকরূহের সমন্বয়ে এবং আমরা যে তার কর্মীবাহিনী আমাদের সকলকে ঐকে এনে তিনি উদ্ধার কাজ পরিচালনা করে চলছেন৷ তাঁর করুনার কারণে তিনি তাদের প্রাধিকার দিয়ে থাকেন, তাঁর উপর আস্থা রেখে, উদ্ধার কর্ম চালিয়ে নেবার জন্য৷
০৫.৪ - অনর্থক খোদার নাম ব্যবহার করা
এমন একটি বিশ্বে আমরা বসবাস করছি যে বিশ্বটি কিতাবুল মোকাদ্দসের বণর্ীত খোদার দ্বারা গভীরভাবে রয়েছে প্রভাবিত৷ তা সত্ত্বেও অল্প সংখ্যক লোক সর্বান্তকরণে তাকে বিশ্বাস করে৷ কেউ যদি খোদার উপস্থিতিতে জীবন না কাটায়, অথচ প্রভুর নাম মুখেই ব্যবহার করে তবে সে শেষ হয়ে যাবে৷ এই লোকেরা উদাসীনভাবে তার কথা বলে যেমন মূল্যহীন অর্থ ব্যয় করছে নিষ্ফল কাজে৷ নবজন্মপ্রাপ্ত লোকজন পর্যন্ত পাকরূহকে দুঃখ দিয়ে থাকে তাদের মুখ থেকে বাহির করা নিষ্ফল কথার দ্বারা৷ তারা চিন্তাভাবনা না করে খোদার নাম উচ্চারণ করে থাকে৷ তৃতীয় আজ্ঞা আমাদের যেমন সাবধান করেছে তেমন সুরক্ষা দিচ্ছে যেন আমরা অনর্থক তার নাম অপ্রয়োজনে ব্যবহার না করি৷ চিন্তাভাবনা না করেই যখন আমরা তার নাম কাজে লাগাই তখন আমরা দেখতে পাই, আমাদের জীবন কতই ক্ষুদ্র হতে থাকে৷
নাম কাওয়াস্তে যারা মসিহি, তারা কথায় কথায় বলতে থাকে 'খোদার দোহাই, খোদার কসম' এভাবে খোদাকে অপব্যবহার করে চলে৷ এদেরকে ঐসকল শিশুদের সাথে তুলনা করা চলে যারা টেলিফোন নিয়ে খেলা করে, কোনো একটা নাম্বার সংগ্রহ করে, তবুও উক্ত নাম্বারে কোনো কথা বলে না, যদিও ওপ্রান্ত থেকে কলটি জরুরী ভেবে শ্রবণে মনোনিবেশ করে, কিন্তু কোনো কথা শুনতে না পেয়ে চিন্তায় পড়ে৷ যদি এমন আচরণ বার বার করতে থাকে তবে উক্ত ব্যক্তিটি বিরক্ত হবে এবং কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে৷ আমরা যখন কথা বলি, খোদা তখন আগ্রহ ভরে শুনতে রাজী থাকেন৷ কি চিন্তা করে আপনি তার নাম ব্যবহার করেন? নিষপ্রোজনে যদি তার নাম ব্যবহার করেন তবে দেখা যাবে কত অল্প সময় আপনার জীবনকাল চলছে এ মহীতলে, প্রভুর সাথে৷
০৫.৫ - মুসলমানগণ আল্লাহর নামে কথা বলে৷
মুসলমানগণ প্রায়শই আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে এ ভেবে, সে ন্যয়বান হতে পারবে এবং বিশ্বযোগ্য হয়ে ওঠবে, হতে পারবে নির্ভরযোগ্য৷ তার বিশ্বাস যতবার আল্লাহ শব্দটি সে উচ্চারণ করবে ততটা গুনাহ তার মাফ হয়ে যাবে৷ এ ধারণাটি জন্মেছে অর্থহীন এবাদত পদ্ধতির কারণে অথচ অনর্থক তাঁর নাম উচ্চারণের অপরাধে সে দন্ডযোগ্য, অপরাধী হতে থাকে৷ এর মধ্যদিয়ে পরিষ্কার বুঝা যায়, একজন মুসলমান ব্যক্তিগত সম্পর্কে খোদার সাথে যুক্ত নয়৷ তার এবাদত হলো না বুঝে মনিবের সাথে কথা বলা, প্রয়োজন নেই জানায় তিনি শুনছেন কি শুনছেন না, তার দায়িত্ব সে পালন করে চলছে মাত্র৷
অধিকন্তু তাদের দৈনন্দিনব প্রার্থনা মুখস্ত বাক্য পাঠের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র৷ বলতে গেলে সকল মুসলমান এবাদতে ১৭ বার সুরাহ ফাতেহা পড়তে বাধ্য, কখনো নিরবে, কখনো শব্দ করে, তাদের পাঁচ ওয়াক্ত আনুষ্ঠানিক নামাজের সময়৷ গোটা বিশ্বজুড়ে প্রায় একশত কোটি মুসলমান সুরাহ ফাতেহা আরবি ভাষায় নামাজে উচ্চারণ করতে বাধ্য৷ মজার বিষয় হলো ৮০ কোটি মুসলমান আরবি ভাষা বোঝেনা, অর্থ জানেনা, সম্পূর্ণ অজ্ঞ এ ভাষাতে৷ দুর্ভাগ্যবশতঃ অধিকাংশ জামাতে প্রভুর প্রার্থনাটি সুর করে সমন্বয়ে এর প্রকৃত অর্থ না বুঝে পাঠ করার প্রথা রয়েছে৷
০৫.৬ - সন্দিগ্ধ প্রার্থনা ও অযথা যুক্তিজাল দাড় করানো
কেবলমাত্র মুসলমানগণই তাদের প্রথাসিদ্ধ প্রার্থনা চিন্তাভাবনা না করেই পেশ করে না, অগণিত মসিহিগনও তেমন প্রথাসিদ্ধ প্রার্থনা করে যাকে তেমনিভাবে মায়েরা শিশুকে যেমন ঘুম পাড়ানোর গান শুনিয়ে থাকে৷ এটা আমাদের দুঃসাহস, কোনো জবাব প্রত্যাশা না করে আমরা খোদার সাথে কথা বলে চলি৷ অথচ আমাদের ধ্যান মনে থাকে পার্থিব ব্যবসা বাণিজ্য, নানা চিন্তাভাবনা, তুচ্ছনীয় বিষয়াদি৷ দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা চলে, আমাদের দেশ প্রধানের সাথে দেখা করার সুযোগ ঘটেছে এবং তাঁর সাথে একান্ত গোপন আলাপ করার সুযোগ পর্যন্ত ঘটেছে, তেমন ক্ষেত্রে পূর্ব থেকেই কি আমাদের আলোচ্য বিষয় ঠিক করে রাখবো না এবং যাকিছু অতীব গুরুত্বপূর্ন তা নিয়ে কি কথা বলবো না? খোদা কি মানুষের চেয়ে নিম্মানের? চিন্তাভাবনা না করে যারা খোদার সাথে কথা বলে তারা খোদাকে অপমান করে৷
ধর্মতত্ত্ববীদগণ সময় সময় তৃতীয় আজ্ঞার চরমলঙ্ঘন করে এবং পাকরূহকে দারুণভাবে ব্যথিত করে যখন তারা কিতাবুল মোকাদ্দাস অধ্যয়ন ও প্রচার করে এর কুদরতী কাজগুলো নিয়ে আলোচনা করে, খোদার নানা প্রকার গুণাবলি নিয়ে ব্যাখ্যা দেয় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পরীক্ষাগারের গবেষণার বিষয় যেন প্রকাশ করে থাকেন, অথচ তিনি যে জীবন্ত সর্বত্র বিরাজমান যে কোনো আলোচনার ক্ষেত্রে তিনি থাকেন হাজির এ সত্যটি যায় তারা ভুলে৷ বিষয়ভিত্তিক নিরপেক্ষ আলাপ করতে পারি না খোদা বিষয়ক আলোচনার ক্ষেত্রে৷ তিনি জীবন্ত সত্ত্বা, সর্বত্র সর্বসময়ে বিরাজমান থাকেন আমাদের সাথে৷ আমাদের আলোচনা তিনি শুনতে পান৷ দূর থেকে তিনি আমাদের হৃদয়ের চিন্তা সকল জানেন৷ তাই খোদাভয় ও তাঁর প্রতি যথাযথ সম্মান যে কোনো ধমর্ীয় আলোচনা নিঃসন্দেহে খোদার তৃতীয় আজ্ঞার অবমাননাকর অপরাধ৷
০৫.৭ - অপরাধের কাজে খোদার নামে ব্যবহার
অভিশাপ তাদের উপর রয়েছে যারা খোদার কালাম গুলিয়ে ফেলে, পরিহাস করে এবং ঠাট্টাবিদ্রুপের স্থলে মজা করে৷ সকল নামের উধের্্ব যে নাম সেই নাম নিয়ে তারা অপব্যাখ্যা করে, তাদের না আছে ভয় না আছে খোদার প্রতি সম্মান৷ তাই যারা না খোদার কালাম তামাসার বস্তুতে করে পরিনত তাদের সাথে আমরা যুক্ত হতে পারি৷ পরিবর্তে তামাশাকারীদের বারণ করব এবং আমরা খোদার পক্ষাবলম্বন করব৷ যারা বই লেখে এবং নাটক লেখে তারা জানে ধমর্ীয় শব্দপ্রয়োগের প্রভাব, তাই তারা যেন তেমন শব্দ প্রয়োগ করেন তাদের লেখা লেখিতে সে অনুরোধ রাখবো তাদের কাছে৷ কিন্তু তাদের সাহিত্যে তারা ব্যবহার করে না 'পাপ' 'দোযখ' 'বিনাশ' এ সকল শব্দের পরিবর্তে সাধারণ শব্দ ব্যবহার করে ফলে এড়িয়ে চলবে শাস্তি তাদের উপরই এসে বর্তায়৷
মানুষ কখনো কখনো একে অপরের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে, আর রাগের বসে গালমন্দ দিতে শুরু করে৷ মজার বিষয় হলো গালিগালাজের শব্দ গুলো চয়ন করে 'খোদা' 'আল্লাহ' অথবা 'মসিহ' এসব শব্দ দিয়ে একজন অন্য জনকে ভর্তসনা দেয়৷ তারা প্রতিজ্ঞা করে অথবা অভিশাপ দেয় চিন্তাভাবনা না করেই, ধমর্ীয় শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে৷ একদা এক পালক ইট নির্মাণ করার ময়দানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তিনি শুনছিলেন, তারা উচ্চস্বরে অভিশাপ দিচ্ছিলো আর কিড়াকসম খেয়ে বাগবিতন্ডা করছিল, পালক মহোদয় তাদের কাছে গিয়ে জানতে চাইলেন, আসলে তারা সবসময় এমন প্রার্থনা করে কিনা৷ 'আপনারা কি সর্বক্ষণ এমন উচ্চস্বরে প্রার্থনা করে থাকেন?' লোকটি হতভম্ব হয়ে জবাব দিলেন, 'আমি প্রার্থনা করছিলাম না৷' পালক জিজ্ঞেস করলেন, 'আমি তো শুনতে পেয়েছি খোদাকে ডাকতে, আর তিনি অবশ্যই জবাব দিবেন' মজুরেরা তাত্ক্ষনি থেমে গেল৷
একজন অন্যজনের বিরুদ্ধে প্রায়শই আজেবাজে কথা বলে এমনকি চরম ঘৃণা ভরা হৃদয় দিয়ে ঐসকল গারিগালাজ বাহির হয় নিজেদের স্বজন-প্রিয়জনের বিরুদ্ধেও৷ মসিহ এসকল অভিশাপকে খুনের সাথে তুলনা করেছেন, কেননা ঐসকল বকাঝকা খোদার সুরত নষ্ট করে দেয়৷
০৫.৮ - খোদার সাবধানবাণী: কঠিনশাস্তি
তৃতীয় আজ্ঞায় রয়েছে মারাত্মক হুশিয়ারী৷ যারা নিরর্থক খোদার নাম ব্যবহার করে অবশ্যই খোদা তাদের মারাত্মক শাস্তি দিবেন৷ এতদসত্ত্বেও মানুষ তার কৃত অপরাধ ও ভণ্ডামি ঢেকে রাখার জন্য আর নিজেকে ন্যায়বান প্রমাণ করার জন্য খোদার নাম ব্যবহার করে থাকে৷ বর্তমানে একজন অন্যজনকে খুব অল্পই বিশ্বাস করে কারণ আদৌ সত্য কথা বলে না এমনকি শপথ নেয়ার সময়ও তারা মিথ্যার আশ্রয় নেয়৷ মসিহ পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে শপথ করা নিষেধ করে দিয়েছেন, 'তোমাদের কথার 'হঁ্যা' যেন 'হঁ্যা' আর 'না' যেন 'না' হয়; এর বেশী যা, তা ইবলিসের কাছ থেকে আসে৷ আমরা যদি শপথ করি আর মিথ্যা কথা বলি, আমরা কেবল মানুষের সাথেই মিথ্যা বলছি না, বরং খোদার বিরুদ্ধে সে মিথ্যাচার করা হচ্ছে৷ মিথ্যা শপথ তৃতীয় আজ্ঞা লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত, যেখানে খোদা নিষেধ করে দিয়েছেন, অনাহুত খোদার নাম ব্যবহার না করতে৷ এ কারণে কিতাবুল মোকাদ্দসে বণর্ীত রয়েছে, 'খোদাভয় জ্ঞানের আরম্ভ' আমাদের প্রত্যেকের অন্তরে খোদার প্রতি ভয় থাকা আবশ্যক, নতুবা আমরা পাপকার্যে নিমগ্ন হয়ে পড়বো৷
খোদা উক্ত ব্যক্তির বিসয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, যে কিনা খোদার পরিচয় জানা সত্ত্বেও মসিবতের সময় তার শরণ নেয় না তার কাছে ফরিয়াদ করে না, তাঁর নির্দেশনা খোজে না, সোজা চলে যায় গণকের কাছে, যে কিনা বৃথাই খোদার নাম মুখে আনে আর বৃথাই অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিষয় প্রকাশ করে (দ্বিতীয় বিবরণী ১৮:৯)৷ খোদা বলেন, 'যে লোক আমার প্রতি বেঈমানী করে ভূতের মাধ্যমের কাছে যায় কিংবা ভূতের সংগে সম্বন্ধ রাখে এমন লোকের কাছে নিজেকে বিকিয়ে দেয় আমি তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব এবং তার জাতি থেকে তাকে মুছে ফেলব৷' মৃতদের আত্মার সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা এবং তাদের কাছ থেকে বার্তা খোজা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷ বিতর্কের উর্দ্ধে এ পাপ মানুষকে খোদার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং ব্যক্তির হৃদয় উম্মুক্ত করে দেয় মন্দ আত্মা ও শয়তানের প্রবেশের জন্য৷ এ নাস্তিক্য খোদার নজরে ব্যভিচারের তুল্য৷ এটা এতটা ভয়াভহ ও অবিশ্বস্ত যেমন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীর অর্থ বেত্স্যাবৃত্তিতে ব্যয় করার তুল্য৷ আশ্চর্য হবার কারণ নেই, খোদা এ ধরণের ধৃষ্টতাকে 'বেঈমানী' বলে চিহ্নিত করেছেন (লেবীয় ২০:৬) এবং ঐ সকল ব্যক্তিদের 'নষ্ট ও অবিশ্বস্ত জাতি' বলে সাব্যস্ত করেছেন৷
আফ্রিকা ও এশিয়াতে জনগণ যাদুমন্ত্র দিয়ে লোকদের মুগ্ধ করে মন্দ আত্মার হাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য৷ গভীর বিশ্বাস নিয়ে প্রচুর পরিমাণে অর্থ ব্যয় করে তারা এর আয়োজনে৷ তারা 'মনোমুগ্ধকর পত্র' লেখে বাণিজ্যে সাফল্য অর্জনের জন্য এবং স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রেমপ্রীতি বৃদ্ধির জন্য৷ যে জাতি এমন প্রথায় বিশ্বাস করে, আসলে তারা সত্যিকারার্থে খোদার পরিচয় জানতে ব্যর্থ হয়েছে৷ কোনো কোনো দেশে যাদুবিদ্যার প্রচলন রয়েছে, রয়েছে কুসংস্কার ও প্রেতসিদ্ধি আর তা জাতীয় টেলিভিশনে করা হয় প্রদর্শন৷ মসিহি হিসেবে এ সকল প্রদর্শন ও শিক্ষাকে শয়তানের আক্রমন মনে করি আর তা সাধারণ দর্শকদের উপর৷ আসলে তারা যা করে তা যেন দোযখের দরজা খুলে দিচ্ছে সাধরণ জনতার জন্য৷ খোদা আমাদের সাবধান করে দিচ্ছেন এ সকল ক্ষতিকারক বিপদের হাত থেকে, কেননা এ ধরণের প্রক্রিয়া খোদার কাছ থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছে৷ সকল প্রকার বাধন থেকে মুক্ত করার ক্ষমতা একমাত্র মসিহই রাখেন৷ রাশিচক্র বিদ্যা, হস্তরেখা বিদ্যা, দেহকে শূন্যে ভাসানোর বিদ্যা, ও ভবিষ্যতের বিষয়ে বক্তব্য, যাদুমন্ত্র সবগুলোই সরাসরি দোযখের উন্মুক্ত পথ৷ ভারতের প্রত্যেক হোটেলে ভবিষ্যত্ বক্তা অপেক্ষামান থাকে প্রত্যেকে বোর্ডারের ভাগ্য গণনার জন্য৷ তারা তীরবিদ্ধ চোখ একে দেয় যার ফলে কুনজর হয়ে যায় দূরীকৃত৷ কেউ কেউ নিজ নিজ গাড়িতে তাবিজ রেখে দেয় দুর্যোগ দুর্বিপাকের হাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য৷ এরা অন্ধকারের শক্তির উপর এতটা নির্ভরশীল যতোটা তাদের নির্মাতা বেহেশতি পিতার উপর নির্ভর না করে৷ আসলে তারা অদ্যাবধি বর্তমান যুগের অপশক্তির ওপর নির্ভরশীল, যে কারণে এসকল আনুষ্ঠানিতার অনুশীলন করে চলে৷
০৫.৯ - খোদার নিন্দা
কতিপয় ব্যক্তি খোদার নাম এতটাই ব্যবহার করে, শপথ ও প্রতিজ্ঞা করে খোদা ও মসিহের নামে যা সীমা লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে৷ তারা নিজেদের ঐ সকল ব্যক্তির সমপর্যায়ে নিয়ে আসে যারা খোদাদ্রোহীতা করে পিতা, পুত্র ও পাকরূহের বিরুদ্ধে৷ শয়তান হলো খোদার প্রাচীনতম শত্রু৷ খোদা নিন্দা এমন একটা প্রবাহধারা যা শয়তানের উত্পন্ন কালিমা, অভিশপ্ত দোযখ থেকে প্রবাহিত হয়ে চলছে মানুষের মধ্যে৷ কেউ যখন কোনো সুদীর্ঘ পত্র পাঠ করে এবং উক্ত পত্রে মসিহের বিরুদ্ধে নিন্দার কথাবার্তা থাকে তবে তার মনে হবে দোযখের বাতাস টেনে নিচ্ছে তার ফুসফুসে৷ লেবীয় পত্রে ২৪:১৪-১৬ তে আমরা পাঠ করি, 'যে লোকটি কুফরী করেছে তাকে ছাউনির বাইরে নিয়ে যাও৷ যারা তাকে কুফরী করতে শুনেছে তারা সবাই তার মাথার উপর হাত রাখুক, তারপর বনি-ইসরাইলরা তাকে তার জন্য দায়ী করা হবে৷ যে মাবুদের নাম নিয়ে কুফরী করবে তাকে হত্যা করতেই হবে৷ বণি-ইসলাইলরা তাকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করবে৷ অন্য জাতির লোকই হোক, যে কেউ কুফরী করবে তাকে হত্যা করতেই হবে৷'
আমাদের বিনম্র ও সাবধান হতে হবে, কথা বলার সময় ও খোদা নিন্দাকারীর বিচারের বিষয়৷ ভুতাস্রিত অনেক ব্যক্তি এতটাই অন্ধ থাকে যে, মনে হবে তারা খোদার সেবা করে চলছে, আসলে তারা খোদা ও মসিহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে৷ 'যদি তোমরা এই দুনিয়ার হতে তবে লোকেরা তাদের নিজেদের বলে তোমাদের ভালবাসত৷ কিন্তু তোমরা এই দুনিযার নও, বরং আমি তোমাদের দুনিয়ার মধ্য থেকে বেছে নিয়েছি বলে দুনিয়ার লোকেরা তোমাদের ঘৃণা করে৷ আমার এই কথাটা তোমরা ভুলে যেয়ো না যে, গোলাম তার মালিকের চেয়ে বড় নয়৷ সেজন্য লোকেরা যদি আমাকে হত্যা করবার চেষ্টা করে থাকে তবে তোমাদেরও তা-ই করবে; যদি তারা আমার কথা শুনে থাকে তবে তোমাদের কথাও শুনবে৷ তারা আমার জন্য তোমাদের প্রতি এই সব করবে, কারণ যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তারা তাঁকে জানে না (ইউহোন্না ১৫:১৯-২১)৷ 'আমি তোমাদের এই সব কথা বললাম যেন তোমরা মনে বাধা না পাও৷ লোকেরা মজলিসখানা থেকে তোমাদের বের করে দেবে; এমন কি, সময় আসছে যখন তোমাদের যারা হত্যা করবে তারা মনে করবে যে, তারা আল্লাহর এবাদতই করছে৷ তারা এই সব করবে কারণ তারা পিতাকেও জানে নি, আমাকেও জানি নি (ইউহোন্না ১৬:১-৩)৷ সমাজে ধার্মিক ও জ্ঞানি নেতা তারাই যারা পুতপবিত্র বেগুনাহ মসিহকে খোদার নিন্দার অযুহাতে সলিববিদ্ধ করে হত্যা করার হুকুম দিয়েছিলেন৷ আত্মিক নেতা হওয়া সত্ত্বেও মসিহ যে জীবন্ত খোদার জীবন্ত পুত্র তা চিনে নিতে হয়েছে চরমভাবে ব্যর্থ৷ খোদার প্রতি তাদের আগ্রহের কারণে তারা খোদার অভিষিক্ত মসিহের নিন্দা করে বসেছে৷ তারা মসিহের মুখে চপেটাঘাত করেছে ও মাথায় আঘাত করেছে৷ পুরাতন যুগের নেতাগণ তাদের প্রভুকে চিনে নিতে হয়েছেন ব্যর্থ, যিনি তাদের মধ্যেই বসবাস করেছেন৷ পরিবর্তে, তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছে ও সলিবে টাঙ্গিয়ে করেছে হত্যা৷ দুঃজনক বিষয় হলো অদ্যাবধি অনেক লোক তাকে প্রত্যাখ্যান করেই চলছে৷
ইয়াকুব নবীর পুত্রদের মতো, মুসলমানগন মনে করেন, যদি মসিহের ঐশিসত্ত্বায় এবং সলিববিদ্ধ করে হত্যা করায় বিশ্বাস করে, তবে তাদের জন্য তা হবে, খোদাকে অবমাননাকর কাজ৷ তারা ইহুদিদের মতবাদের উত্তরসুরী যারা অন্যায়ভাবে তারা প্রত্যাক্ষান করেছিল এবং ত্রিত্ত্বপাকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল৷ সলিবে বিদ্ধ মসিহের বিরুদ্ধে চরম ঘৃণা নিয়ে ভরে প্রত্যাখ্যান করে চলছে৷ অন্যদিকে হিন্দুমতবাদ মসিহের চুড়ান্ত, সার্বভৌম প্রত্যাখ্যান করে আসছে, তারা ভাবছে অন্যান্য দেবতাদের মধ্যে মসিহ একজন দেবতা৷
কিছু পদস্খলিত মসিহি শয়তানের পূজার মাধ্যমে খোদার নিন্দা প্রকাশ করে চলছে৷ তারা প্রার্থনা সভায় অসমাজি কাজে ডুবে যায় এবং শয়তানকে রক্ত কোরবানি দিয়ে তুষ্ট করে৷ তারা প্রভুর প্রার্থনা বিক্রিত ও অনুকরণ করে এমনভাবে শব্দ চয়ন করে যাতে শয়তানের পূজা দেয়া হয়৷ যারা খেয়াল খুশি মতো মসিহের দ্বারা অর্জিত নাজাত অস্বীকার করেছে তারা অন্ধকারের শক্তির তলে অধিনস্ত হয়ে পড়েছে৷
তবে মসিহের মধ্যে রয়েছে আশ্রয় যেখানে দোযখের কোনো শক্তি নেই অনুপ্রবেশ করার৷ আমাদের উত্তম মেষপালক বলেছেন, 'আমার মেষেরা আমার ডাক শুনতে পায়, আর আমি তাদের চিনি তারা আমাকেই অনুসরণ করে৷ 'আমার মেষগুলো আমার ডাক শোনে৷ আমি তাদের জানি আর তারা আমার পিছনে পিছনে চলে৷ আমি তাদের অনন্ত জীবন দিই৷ তারা কখনও বিনষ্ট হবে না এবং কেউই আমার হাত থেকে তাদের কেড়ে নেবে না৷ আমার পিতা, যিনি তাদের আমাকে দিয়েছেন, তিনি সকলের চেয়ে মহান৷ কেউই পিতার হাত থেকে কিছু কেড়ে নিতে পারে না৷ আমি আর পিতা এক৷'
ইহুদি সমপ্রদায় তৃতীয় আজ্ঞা পূর্ণাঙ্গভাবে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চেয়েছিল কেননা তারা ভীত ছিল ভুল বসতঃ অথবা অগোচরে কোনোভাবেই যেন খোদার শক্তিশালী নামের উচ্চারণ তাদের মুখে না আসে৷ আমরা জানি ইব্রানী ভাষায় চারটি অক্ষরে লেখা খোদার নাম হলো ণঐডঐ ইয়াহোয়ে৷ তার পবিত্র চরিত্রের কারণে, মসিহের আবির্ভাবের ৩০০ বত্সর পূর্ব থেকে এ শব্দটি উচ্চারণ বন্ধ করে দিয়েছিল, কিতাব পাঠের সময় তারা এ শব্দের পরিবর্তে আর একটি শব্দ জুড়ে দিয়েছিল আর তা হলো 'অ্যাদোনাই'৷ 'জিহোভা' হলো মনুষ্য কতর্ৃক সৃষ্ট শব্দ যা ভাওয়েল শূন্য করে 'এডোনাই' অফড়হধর কনসনেন্টে দিয়ে ণঐডঐ ইয়াহোয়ে শব্দ৷ ১৫২০ খৃষ্টাব্দের পূর্বপর্যন্ত এ শব্দটি তৈরি করা হয় নি, প্রকৃত নাম ও তার উচ্চারণ সাধারণত 'ইয়াহোয়ে'৷
এ বিষয়গুলো আমাদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করে৷ আমরা কি আদৌ খোদার নাম নিয়ে কথা বলব? আসলে কীভাবে খোদার নাম নিয়ে আলোচনা করবো যাতে আমরা বিচারের সম্মুখীন না হই?
০৫.১০ - সঠিকভাবে খোদার নাম নিয়ে কথা বলা৷
তৃতীয় আজ্ঞায় বলা হয় নি সঠিকভাবে খোদার নাম ব্যবহার করা যাবে না৷ এখানে একটি বিশেষ প্রতিজ্ঞা, 'নিরর্থক খোদার নাম ব্যবহার করবে না, তবে ইমান, মহব্বত এবং শুকরিয়া আদায়ের জন্য ব্যবহার করতে হবে৷' খোদা আপনার সাখ্য শনিত রহমত হিসেবে ব্যবহার করবেন আপনার বন্ধুদের জীবনে ব্যয় আনবে মাগফেরাতের ফল্গুধারা৷ তার নামে কোনো যাদুশক্তি নেই যা আমাদের ইচ্ছেমতো চাইলেই তা ব্যবহার করতে পারি৷ জীবন্ত জাগ্রত মাবুদ তাঁর সুদূর প্রশারি পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করে থাকেন৷ খোঁড়া ব্যক্তিকে হযরত পিতর বলেছিলেন, 'নাসরতের ঈসা মসিহের নামে ওঠো এব হেঁটে বেড়াও৷' পরক্ষণে তিনি নেতা ও প্রবীনদের ব্যাখ্যা দিয়েছেন, 'নাসরতীয় ঈসার নামে এই লোকটা সুস্থ হয়েছে (প্রেরিত ৩:৬, ১৬; ৪:১০)৷ মসিহের নামে যে গুণ ও ক্ষমতা রয়েছে তা গভীরভাবে আমাদের জানতে হবে৷ সেলাতার (ঝপযষধঃঃবত্) নামক এক প্রসিদ্ধ ধর্মতত্ববিদ পুরনো ইঞ্জিল শরীফ গ্রীক ভাষায় মুখস্ত করেছিলেন৷ কিন্তু তার জীবনের শেষ দিকে তিনি একখানা বই লিখলেন এ উপাধিতে, 'আমরা কি মসিহকে জানি বা চিনি?' মসিহের বিষয়ে হালকাভাবে আমাদের কথা বলা উচিত নয়৷ বরং গভীরভাবে আমাদের প্রভুকে জানা আবশ্যক৷ প্রার্থনা সহকারে তাঁর কালামের গভীর অর্থ যেন আমরা বুঝতে পারি সে দিকে পদক্ষেপ দিতে হবে৷ প্রত্যেকটি বাক্য নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে, তখন খোদা তাঁর কালামের মাধ্যমে আমাদের সাথে কথা বলবেন৷ তার কালাম এবং অর্থ আমাদের হৃদয়ের গভীর গেঁথে যাবে৷
আমরা যদি কিতাবুল মোকাদ্দস ও ইঞ্জিল শরীফ পুরোপুরি মুখস্ত করতে পারি তবে সাখ্য দিতে সমজ হতো৷ কেননা খোদার কালামের অন্তর্নিহিত শক্তি আছে, এবং তা আমাদের পাকরূহের প্রজ্ঞা যোগায়৷ যারা নারী বা পুরুষ, পাককালাম মুখস্ত রাখে, হৃদয়ে তা পরিপূর্ণ রাখে তারা আশির্বাদ প্রাপ্ত৷ অধিকন্তু, পরিপক্ক ইমানদারদের জীবনি ও সাখ্য আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায় এবং বুঝতে সাহায্য করে আর আমাদের ঈমানকে দৃঢ় করে৷ নিত্যদিন খোদার কালাম নিয়ে প্রার্থনা ধ্যান করলে আমরা সুখী হই, আর আমাদের সাখ্য শুনে বন্ধুগণও খুসি হয়৷
আমরা যখন খোদার কালাম শুনি, তখন আর আমরা একাকি থাকি না, বরং আমাদের প্রভুকে আরো ভালোভাবে জানতে পারি৷ সোজাসুজি আমরা তাকে ডাকতে পারি, কেননা আমরা তাঁর নাম জেনে নিয়েছি৷ কিতাবুল মোকাদ্দসের মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের সাথে কথা বলেন, আর আমরা তার কথার জবাব দেই আমাদের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে৷ কত বড়ই না সুযোগ রয়েছে আমাদের, আমরা আমাদের স্রষ্টা প্রভুর সাথে যে কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারি, আমাদের পাপের বিষয়ে, অসুস্থতার বিষয়ে, সমস্যার বিষয়ে, তাড়ানার বিষয়ে, আর তিনি সবই শুনে থাকেন৷ তার পরামর্শ ডাক্তারের ও মনোস্তাত্তি্বকের পরামর্শের চেয়ে বহুগুণে উত্তম৷ আমাদের জাগতিক পিতা যতোটা আমাদের মহব্বত করেন তার চেয়ে সম্পূর্ণভাবে অধিক পরিমাণে আমাদের পাপের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রায়শ্চিত্ত সাধনকল্পে মসিহ আমাদের জন্য নিজের পূতপবিত্র রক্ত ঝরিয়েছেন সলিব থেকে আর আমাদের পাপের ক্ষমা উক্ত কোরবানির কারণে দিয়ে থাকেন৷ অনন্ত জীবনের ক্ষমতা তিনি আমাদের দান করেন, তাঁর পাকরূহকে আমাদের মধ্যে তিনি অভিষেক করেছেন চিরকাল বসবাস করার জন্য৷
০৫.১১ - সর্বান্ত করণে তার প্রশংসা
আসলে আমরা কি আন্তরিকতার সাথে খোলা মনে খোদার ধন্যবাদ দিয়ে থাকি? আমাদের মনে রাখতে হবে সর্বশক্তিমান খোদা হলেন আমাদের পিতা, তাঁর একমাত্র পুত্র আমাদের নাজাতদাতা এবং পাকরূহ অনন্তকালীন স্বান্ত্বনাদাতা, শক্তিদাতা, তাই আমরা তার কাছে সর্বদা ধন্যবাদ প্রাথর্ী৷ ভয়ে প্রকম্পিত হয়ে আনন্দের সাথে তার প্রশংসা গুণকীর্তন এবং তিনি যা কিছু আমাদের কল্যাণের জন্য করেন এবং পরিপূর্ণ নাজাত দানের জন্য ধন্যবাদ দেই৷ পাপের অতলে মরে পড়ে থাকার প্রয়োজন নেই আমাদের, বরং মসিহের সাথে অনন্তকালের জন্য জীবন যাপন করি৷ তাই, যদি সুকন্ঠিদের সাথে আমরা গান নাও গাইতে পারি, তাতে কি? নিজে নিজে তো গাইতে পারি৷ আর যদি আপনি নিজের ঠোটে গাইতে না পারেন আপনার হৃদয়ে সুরের লহড়ী তুলতে আপত্তি কার? যদি কেউ পিতার বিসয়ে কথা বলেন, পুত্র ও পাকরূহ সুনিশ্চিত প্রশংসা করে চলছেন, আনন্দ উপভোগ করছেন, সর্বশক্তিমানের গৌরব প্রশংসায় রয়েছে মসগুল পিতাকে প্রশংসা করতে দেখে৷
এমন যদি কেউ থেকে থাকে যে কিনা খোদার পরিচয় জানে না, অথবা তার হৃদয় বড়ই কঠিন হয়ে আছে, অথবা তার বিবেক গোপন পাপের কারণে নিজেকে দোষি সাব্যস্ত করে রেখেছে, তবে তাকে হযরত পিতরের উপদেশ নিতে হবে, 'রক্ষা পাবার জন্য যে কেউ মাবুদকে ডাকবে সে রক্ষা পাবে (প্রেরিত ২:২১)৷ খোদার অর্থাত্ পিতার সাথে সাথে সোজাসুজি অর্থাত্ প্রত্যক্ষ কথা বলার অধিকার তিনি আমাদের দিয়েছেন, মসিহের নামে তিনি আমাদের জবাব দিয়ে থাকেন৷ যেহেতু তিনি আমাদের কাছে এগিয়ে এসেছেন তাই আমরাও তার কাছে এগিয়ে আসতে পেরেছি৷ খোদার নাম 'আমাদের পিতা' বেহেশতি সর্বপ্রকার আশির্বাদ আমাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে৷ দোযখের ভিত্ত মসিহের নামে কেপে ওঠে কেননা মসিহ পরাভুত করেছেন পাপ, মৃতু্য এবং অভিশপ্ত শয়তান৷ পাকরূহ পুত্রের গৌরব প্রকাশ করেন কেননা পুত্রের নামে তিনি আমাদের অনন্তজীবন দান করেছেন, আর দিয়েছেন খোদার শক্তি যাতে আমরা হয়েছি শক্তিমান৷ তিনি আমাদের প্রতিরক্ষা দিয়েছেন, দান করেছেন পবিত্রতা, আনন্দ এবং শান্তি৷ যেমন সূর্য তার অগণিত রস্মি পৃথিবীতে সরবরাহ করে থাকে, দিনের পর দিন, একইভাবে ত্রিত্ত্বপাক খোদা আমাদের উপর বর্শন করতে থাকেন আশির্বাদের উপর আশির্বাদ৷ এমন কে আছে যে কিনা পিতার ধন্যবাদ দিবে না, অথবা পুত্রের প্রশংসা করবে না, অথবা পাকরূহের শক্তিতে প্রার্থনা করবে না? আপনার হৃদয় খুলে দিন স্বান্ত্বনাদাতা পাকরূহের কাছে যিনি প্রভুর পক্ষ থেকে আপনার কাছে এসেছেন, তখন বুঝতে পারবেন, আসলে কিভাবে পিতা আপনার প্রার্থনার জবাব দিয়ে থাকেন৷ ঈসা মসিহের নামে তার কাছে প্রশংসা পেঁৗছে দিন, তাই হবে পিতার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থনা৷ তাকে ধন্যবাদ দিন ও প্রশংসা করুন, কেননা তিনি আপানাকে মহব্বত করেন, আপনাকে নাজাত করেছেন আর দিয়েছে অনন্ত জীবন৷
০৫.১২ - অন্যের কাছে ইমানের সাখ্য দান করুন
কেউ কি নিরব থাকতে পারে যখন তার হৃদয় প্রশংসা ও ধন্যবাদে উদ্ধেলিত ওঠে? কেই বা পারে নাজাতের অভিজ্ঞতা নিজের মধ্যে কুক্ষিগত করে রাখতে, যদি সে জানে, খোদা সকল মানুষের মুক্তি কামনা করছেন? প্রচার কাজ আমাদের ইচ্ছামত বাছাই করা কোনো দায়িত্ব নয় বরং প্রভু মসিহ আমাদের আজ্ঞা করেছেন সুসমাচার নিয়ে সকল লোকের কাছে যেতে, সবাইকে জানাতে৷ ঈসা মসিহের বিজয় এবং তাঁর মহিমা অবশ্যই প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হবে৷ হযরত পিতর আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছেন 'বরং মসিহকে তোমাদের দিলে প্রভু হিসেবে স্থান দাও৷ তোমাদের আশা-ভরসা সম্বন্ধে যদি কেউ প্রশ্ন করে তবে তাকে উত্তর দেবার জন্য সব সময় প্রস্তুত থেকো, কিন্তু এই উত্তর নম্রতা ও ভয়ের সংগে দিয়ো৷' মসিহ অবশ্য আমাদের সাবধান করেছেন এ বলে, 'যে কেউ মানুষের সামনে আমাকে স্বীকার করে আমিও আমার বেহেশতি পিতার সামনে তাকে স্বীকার করব৷ কিন্তু যে কেউ মানুষের সামনে আমাকে অস্বীকার করে আমিও আমার বেহেশতি পিতার সামনে তাকে অস্বীকার করব৷'
হযরত পৌল খোদার শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন, রাতের বেলা প্রভু এসে তার কাছে হাজির হলেন, স্বান্ত্বনা দিলেন; 'একদিন রাতের বেলা প্রভু একটা দর্শনের মধ্য দিয়ে পৌলকে এই কথা বললেন, 'ভয় কোরো না, কথা বলতে থাক, চুপ করে থেকো না; কারণ আমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে আছি৷ তোমাকে আক্রমণ করে কেউ তোমার ক্ষতি করবে না, কারণ এই শহরে আমার অনেক লোক আছে৷' তিনি তাকে নিশ্চয়তা দিলেন, 'তোমার নিজের লোকদের ও অ-ইহুদিদের হাত থেকে আমি তোমাকে রক্ষা করব৷ তাদের চোখ খুলে দেবার জন্য ও অন্ধকার থেকে আলোতে এবং শয়তানের শক্তির হাত থেকে আল্লহর কাছে ফিরেয়ে আনবার জন্য আমি তোমাকে তাদের কাছে পাঠাচ্ছি, যেন আমার উপর ঈমানের ফলে তারা গুনাহের মাফ পায় এবং যাদের পবিত্র করা হয়েছে তাদের মধ্যে স্থান পায়৷'
মসিহের পুনরুত্থানের বিকেলে, তিনি তার ভীত সাহাবীদের ঐশি ক্ষমতা দান করলেন, তারা তখন দরজা জানালা বন্ধ করে প্রাণের ভয়ে লুকিয়ে বেড়াচ্ছিলেন৷ তিনি তাদের বললেন, পিতা যেমন আমাকে প্রেরণ করেছেন, তেমনি আমিও তাদের প্রেরণ করছি৷' তিনি যখন ঐশি শক্তি প্রকাশ করলেন তখন তিনি তাদের ওপর আত্মা ফুঁকে দিলেন, আর তাদের বললেন, 'পাকরূহকে গ্রহণ করো, তোমরা যদি কারো পাপ ক্ষমা করো তবে তার পাপ ক্ষমা হবে, তারা ক্ষমা পাবে, আর যদি না করো তবে তার পাপ ক্ষমা হবে না' 'পরে ঈসা মসিহ আবার তাঁদের বললেন 'আসসালামু আলাইকুম৷ পিতা যেমন আমাকে পাঠিয়েছেন আমিও তেমনি তোমাদের পাঠাচ্ছি'৷ এই কথা বলে তিনি সাহাবিদের ওপর ফুঁ দিয়ে বললেন, পাকরূহকে গ্রহণ কর৷ তোমরা যদি কারও গুনাহ মাফ কর তবে তার গুনাহ মাফ করা হবে, আর যদি কারও গুনাহ মাফ না কর তবে তার গুনাহ মাফ করা হবে না৷' আপনি যদি এ আয়াতগুলো মুখস্ত করে রাখেন এবং এনিয়ে ধ্যান করেন, তবে আপনি শক্তি ও পরিচালনা পাবেন সর্বোত্তম পথে চলার জন্য আর অবিশ্বাসী বাধাদানকারী ও প্রতিমাপূজারীদের কাছে সাফল্যের সাথে সুসমাচার প্রচার করার শক্তি ও প্রজ্ঞা লাভ করবেন৷
০৫.১৩ - প্রভুর নামে সেবা দান
প্রভু যখন তার কালামের মধ্যদিয়ে আমাদের সাথে কথা বলেন আর আমরা প্রার্থনা ও প্রশংসার মধ্যদিয়ে স্বীকার করি, আর তাঁর নামের মহিমা বন্ধুবান্ধব ও শত্রুমিত্রদের সম্মুখে প্রকাশ করি তখনই আমরা বুঝতে পারি তার নামের শক্তি ও পরাক্রম৷ সাহাবিগণ মসিহের নামে অসুস্থদের সুস্থ করেছেন, ভুত তাড়িয়েছেন, মৃতকে জীবিত করে তুলেছেন, মসিহ নিজেই সমুদ্রের ঝড় শান্ত করে দিয়েছেন কেবল খোদার কালামের জোরে৷ পাঁচটি রুটি হাজার লোকের জন্য গুণান্বিত করেছেন৷ অনুতপ্ত পাপীদের তিনিা ক্ষমা করে দিয়েছেন, দিয়েছেন তাদের আশির্বাদ ও অনন্ত জীবন৷ মসিহ বলেছেন, 'আমার পিতা অদ্যাবধি কাজ করে চলছেন, তাই আমিও কাজ করি' (ইউহোন্না ৫:১৭)৷ আমরা কেবল তাঁর নামে কথাই বলি না, কিন্তু তিনি আমাদের দুর্বলতার মধ্য দিয়ে কাজ করে চলছেন৷ যখন কোনো ঈমানদার ব্যক্তির হৃদয়ে পিতা, পুত্র এবং পাকরূহ বাস করেন, খোদা তখন তার জীবন দিয়ে আশ্চর্য ও কুদরতি কাজ করে থাকেন৷ তার সন্তান কত বড় বা ছোট তা মুল বিষয় নয়, কারণ পিতা নিজে তার মধ্যে থেকে তাকে দ্বারা আশ্চর্য কাজ করে চলছেন৷
সত্য ও ফলপ্রসু সাখ্য ঐগুলো যা বিশ্বাসির জীবনের ঘটনাবহুল অংশ হয়ে থাকে৷ আমরা খোদাকে আশিষ দেই আবার অবাধ্য হই একই সময়৷ পাকরূহ আমাদের পবিত্র হতে প্রেরণা যোগায়, আচরণ সুন্দর করার তাগিদ দেয় এবং আমাদের পবিত্র করেন, কেননা তিনি নিজেও পবিত্র৷ মসিহ আমাদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন, প্রভুর প্রার্থনার প্রথম শব্দ হলো, পবিত্র করা 'পবিত্র' মসিহের নাম আমাদের মুখে এবং আমাদের আচরণে৷ আমাদের প্রার্থনা মিথ্যাচার এবং আমাদের সাক্ষ্য অসত্য হয়ে দাঁড়াবে যদি না আমাদের আচরণ বক্তব্য অনুযায়ী না হয়৷ আর যদি সত্যিকারের বিনয়ী জীবন আমরা পরিচালনা না করে চলি৷
সত্যিকারার্থে আমরা আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাপ করি, কিন্তু পবিত্রজনের সম্মুখে আমরা অবনত থাকি৷ খোদার নজরে আমাদের পাপ কোনো তুচ্ছ বিষয় নয়, আর সবসময় আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের পাপ-অপরাধের দ্বারা তাঁকে ব্যথিত করে তুলি৷ তবে প্রত্যেক অনুতপ্ত ব্যক্তির হৃদয়ে পাকরূহ বসবাস করে, স্বান্ত্বনা দান করেন, এবং নিশ্চয়তা দেন যে মসিহের রক্ত সকল পাপ থেকে তাকে স্নাতশুভ্র করে রাখেন (ইউহোন্না ১:১৯)৷ পিতার বাক্য বিশ্বাস ধরে রাখতে আমাদের উত্সাহ যোগায় এবং প্রেরণা যোগায় সত্যিকারের খোদার নামে জীবন যাপন করার জন্য৷ অতুলনীয় প্রেম ও দীর্ঘ সহিষ্ণুতার দ্বারা আমাদের পবিত্র করার বিষয়টি আমরাও উপলব্ধি করে থাকি৷
সত্যিকারার্থে আপনি কি খোদার নামের তাত্পর্য বুঝতে পেরেছেন? তাঁর পবিত্র নাম কি আপনার জিভে থাকে? পাকরূহ কি আপনার হৃদয়ে বসবাস করে? ঠিক তখনই পিতা, পুত্র এবং পাকরূহের নামে যথার্থ ভক্তিশ্রদ্ধা ও প্রেমের সাথে কথা বলুন৷ নিরর্থক তার নাম উচ্চারণের পাপ থেকে তিনি আপনাকে মাফ করবেন, পরিচালনা দান করবেন আনন্দ ও প্রশংসায় আপনার জীবন চালিয়ে নিতে৷