Previous Lesson -- Next Lesson
খ) অইহুদিরে প্রতি নাজাত প্রদানে ইহুদিদের অথর্াত্ ইয়াকুবের সন্তানদের মনে কোনো ঈর্ষা প্রতিযোগিতা জাগার সম্ভাবনা আছে কি? (রোমীয় ১১:১১-১৫)
রোমীয় ১১:১১-১৫
১১. তাহলে ইহুদিরা উচোট খেয়ে কি চিরকালের জন্য পড়ে গেল? মোটেই না, বরং তাদের গুনাহের দরুনই অ-ইহুদিরা নাজাত পাবার সুযোগ পেল যেন ইহুদিরা আগ্রহে জেগে ওঠে৷ ১২. তাহলে দেখা যায়, ইহুদিদের গুনাহের দরুন দুনিয়ার লোকদের অনেক লাভ হল৷ জ্বী, তাদের ক্ষতির দরুন অ-ইহুদিদের অনেক লাভ হল৷ সেজন্য ইহুদিদের ওপর আল্লাহর পূর্ণ দোয়া যখন নেমে আসবে তখন তার সঙ্গে অ-ইহুদিদের জন্য আরও কত না বেশী দোয়া আসবে৷ ১৩. অ-ইহুদিরা, আমি তোমাদের বলছি, অ-ইহুদিদের কাছে সাহাবি হিসেবে আমি আমার কাজকে খুব সম্মানের চোখে দেখছি৷ ১৪. এতে যেন আমি আমার নিজের জাতির লোকদের আগ্রহ জাগিয়ে তুলে তাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে উদ্ধার করতে পারি৷ ১৫. আল্লাহ ইহুদিদের অগ্রাহ্য করেছেন বলে যদি আল্লাহর সঙ্গে দুনিয়ার অন্য লোকদের মিল হল তবে তিনি যখন ইহুদিদের গ্রণ করবে তখন অবস্থাটা কি হবে? সে কি মৃতের জীবন পাওয়ার মতো অবস্থা হবে না?
পৌল তাঁর জাতিকে ততটাই ভালোবাসতেন যতোটা তিনি রক্তের ভাই বোনদের মহব্বত করতেন৷ তিনি চিন্তা করে দেখেছেন, খোদা অবাধ্য জাতিকে কেবল অবাধ্যতার জন্যই শাস্তি দিবেন না, তারা যে মসিহকে অস্বীকার করেছে তার জন্যও তারা শাস্তি পাবে, অধিকন্তু, পুরাতন ব্যবস্থানুসারে যাদের বাছাই করেছেন এবং নতুন ব্যবস্থা মোতাবেক অইহুদি জাতির মধ্য থেকে যাদের অনুগ্রহ পূর্বক বাছাই করেছেন তাদের অস্বীকার করার কারণে তাদের শাস্তি দেয়া হবে৷ ইহুদিদের পতনের ফলে অইহুদিদের নাজাত লাভের একটা সুযোগ ঘটে গেল, যা পূর্ব থেকেই স্থির করা হয়েছিল যে ঈসা মসিহের ওপর বিশ্বাসের ফলে সকলেই নাজাত লাভ করে৷
অইহুদিদের মধ্যে নাজাতের প্রাপ্যতার বাগী ছাড়িয়ে পড়ায় ইয়াকুবের সন্তানদের অর্থাত্ ঈর্ষাকাতর করে তুলেছিল৷ ইহুদিদের হৃদয়ে জ্বলে ওঠা এ হিংসানল একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল৷ যা হলো মসিহের উপস্থিতিতে অপবিত্র জাতিসমূহ নাজাত লাভ করছে ও খোদার সাথে হচ্ছে পুনর্মিলিত, পরিপূর্ণতা লাভ করছে পাকরূহের সাহায্যে অনন্দ আর তারা তাদের শত্রুদের করছে মহব্বত৷ তখন ইব্রাহীমের ধার্মিক সন্তানগণ বুঝতে পারলো দীনহীন ও পরিত্যাক্ত একটা কিছুর অধিকার লাভ করেছে, যা তাদের কৃষ্টি সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে আসে নি, কিন্তু খোদা হতেই সরাসরি হয়েছে দত্ত৷ পৌল আশা করেছিলেন, ইহুদিদের মধ্য থেকে যারা বিদ্রোহী গোষ্টি ও আত্মতুষ্ট, তারা অবিশ্বাসীদের নুতন জন্মপ্রাপ্ত হতে দেখে ঈর্ষাকাতর হয়ে আর তাদের মধ্যেও ইব্রাহিম, ইসহাক ও ইয়াকুবের আশির্বাদ বর্তমান রয়েছে তা বুঝতে পারবে৷ তিনি আশা করেছিলেন তার লোকজন নিজ নিজ মনের পরিবর্তন ঘটাবেন, সিদ্ধান্ত নিবেন, তাদর উত্তরাধিকার অন্যকেও ভাগ দিবে যা অপরিচিতদের মধ্যেও ছিল পরিপূর্ণভাবে উপস্থিত৷ এ প্রসঙ্গে মসিহ তাঁর সাহাবিদের শিক্ষা দিয়েছেন, 'তোমরা দুনিয়ার আলো৷ পাহাড়ের উপরের শহর লুকানো থাকতে পারে না৷ কেউ বাতি জ্বেলে ঝুড়ির নীচে রাখে না কিন্তু বাতিদানের ওপরেই রাখে৷ এতে ঘরের সমস্ত লোকই আলো পায় (মথি ৫:১৪-১৬)৷
পৌল ইহুদিদের কাছে তার প্রচারের উপদেশাবলি শেষ করেছেন এ বলে, ইহুদিদের অনুতাপ যদি অবহেলিত জাতির জন্য আশির্বাদের ঝর্ণাধারায় পরিণত হয়, আর পবিত্র মনোনীত জাতির ক্রম অবনতি যদি অইহুদিদের মধ্যে নাজাত লাভ ও নতুন জন্মের সংখ্যা বাড়িয়ে তোলে, তাহলে তাদের মনের পরিবর্তনের ফলে আরো কতোই না বিশ্বব্যাপী বিশাল বিস্ফোরণের সৃষ্টি করবে৷ যদি সকল ইহুদি মসিহকে বিশ্বাস করে, তবে তাদের বিশ্বাসের পরাক্রম আর অনুভুতির গভীরতা প্রচারের ফলে বিশ্বে একটা ঝড় সৃষ্টি করবে, আর জীবন্ত জলের ঝর্ণাধারা বর্তমান বিশ্বের মরুপ্রান্তরে বইতে শুরু করবে, ফলে মারাত্মক পাপের রাজ্য পরিণত হয়ে ওঠবে প্রশান্তিকর বেহেশতে৷
এই কৌশলগত দিক দিয়ে দেখা যায়, পৌল মসিহিদের হতভম্ব করে দিয়েছেন একটি শিক্ষার মাধ্যমে আর তা হলো ইয়াকুবের বংশকে প্রেম করবে এবং তাদের ক্ষমা করবে, আর তাদের ঘৃণা ও গর্বিত হৃদয় আচরণ, বিনম্র হৃদয়ে সহ্য করবে (মথি ১১:২৮-৩০)৷
এরপরে পৌল অইহুদিদের মধ্য থেকে আগত ও রোমের জামাতে যুক্ত বিশ্বাসীদের দিকে নজর দিলেন, চাইলেন তাদের শিক্ষা দান করতে৷ ইহুদিদের সাথে রুহানি সত্যের আলোকে তাদের মোকাবেলা করলেন, বললেন, মসিহ আমাকে ইহুদিদের মধ্যে প্রচারক হিসেবে প্রেরণ করেন নি, কিন্তু মনোনয়ন দিয়েছেন ও প্রেরণ করেছেন হাজার দেব-দেবীর মধ্যে যারা অপবিত্র নোংরা আত্মায় রয়েছে পরিপূর্ণ তাদের কাছে৷ আনন্দের সাথে আমি এ দায়িত্ব পালন করেছি, তাদের ভাষা শিখেছি, তাদের ঐতিহ্য জানতে চেষ্টা করেছি, ও মসিহের ঐতিহ্য ও শিক্ষাদীক্ষা কৃষ্টিকলাপ প্রার্থনার নিয়মাচার, যারা অপবিত্র মন্দ দেবতার আরাধনায় যাকে ব্যস্ত ও বেশ্যালয়ে থাকে পড়ে তাদের শিক্ষা দিচ্ছি৷
পৌল তাঁর সেবার কাজে পরোক্ষভাবে ইহুদিদের কাছে প্রচারের একটি সুযোগ খুঁজে পেয়েছেন৷ তিনি ইব্রাহীমের সন্তানদের আশ্চার্য করে দিতে চেয়েছেন মসিহিদের সুন্দর চরিত্রের সাথে পরিচয় করে দিয়ে, আর এশিয়া ইউরোপে পরিষ্কার দৃষ্টান্ত স্থানীয় অবদানের মাধ্যমে৷ তিনি তা করেছেন তার কারণ হলো তাদের মধ্যে রুহানি আগ্রহ সৃষ্টি করা, যেন অনেকেই ভুল পথ থেকে ফিরে সত্য সঠিক পথে আসতে পারে৷ অইহুদিদের বিশ্বাসের গভীরতা ও উত্সাহ দেখে নিজেরা লাভ করে প্রেরণা আর পুনরুত্থিত মসিহকে যেন বাস্তবে করে চলে অনুসরণ৷ পৌলের প্রত্যাশা ছিল পুরাতন ব্যবস্থার অধীনে মনোনীতদের মধ্য থেকে যারা পিছলে পড়েছে তারা পুনরায় প্রভুকে বিশ্বাস স্থাপন করবেন, তাদের প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে, ব্যবস্থার পোশাক যা খোদার পক্ষ থেকে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে তা অদ্যাবধি রয়েছে কার্যকর ও সহজলভ্য৷
তাদের রাজা মসিহকে প্রত্যাখ্যানের ফলে যদি জগতের সাথে খোদার পুনর্মিলন সম্ভবপর হয়ে ওঠে তবে তারা আবার যখন ফিরে আসবে ও রুহানিভাবে হয়ে ওঠবে পুনর্জাত তখন ঐশি জীবন কানায় কানায় ভরে ওঠবে৷ পৌল অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, খোদার পরাক্রমের উচ্ছাস ও ঝড়ের মতো বিকাশ তার রুহানি মৃত অবস্থায় আর তাঁর শরীরে যে সকল অজানা দোষত্রুটি ছিল তা জানার মধ্য দিয়ে আরো বুঝতে পেরেছেন, প্রভুই তাকে করেছেন সুরক্ষা৷ যদিও ধর্মিয় উম্মাদনায় তিনি ছিলেন আস্ত একটা কসাই৷ একই অভিজ্ঞতা তার লোকজন লাভ করবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করছিলেন, তাই তিনি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশি ছিলেন, অনন্ত জীবনের অংশীদার তারাও হবে, কেবল খোদার রহমত যা মসিহের মধ্য দিয়ে জগতে প্রেরণ করা হয়েছে৷
প্রার্থনা: হে বেহেশতি পিতা, আমরা তোমার ধন্যবাদ ও প্রশংসা করি, কেননা ইহুদিদের মনের কঠিন অবস্থা গোটা বিশ্বের জন্য রহমতের উম্মুক্ত দূয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছো৷ আমাদের সাহায্য করো যেন স্বার্থপরের মতো জীবন যাপন না করে সকলকে পাকরূহের শক্তিতে সেবা করে চলতে পারি, কথায়, কাজে ও প্রার্থনায় আর বহুজনকে মুক্তির পথে পরিচালনা করে চলতে পারি, আর ইব্রাহীমের বংশধরদের কাছে মসিহের জীবন্ত বিশ্বাস প্রচার করতে পারি৷
প্রশ্ন:
- ৭৩. ইহুদিদের মনের কঠিন অবস্থা অপবিত্র অইহুদিদের জন্য কি বয়ে এনেছিল?৭৪. অবিশ্বাসীদের কাছে কিভাবে সত্যের সঠিক পথের শিক্ষা দান করবে?