Previous Lesson -- Next Lesson
৮. তিনটি গভীর আর্তনাদ (রোমীয় ৮:১৮-২৭)
রোমীয় ৮:১৮-২২
১৮. আমি জানি, আমরা যে মহিমা পরে পাব তার তুলনায় আমাদের এই জীবনের কষ্টভোগ কিছুই নয়৷ ১৯. আল্লাহর সন্তানেরা কখন সেই মহিমায় প্রকাশিত হবে তার জন্য সমস্ত সৃষ্টি আগ্রহের সংগে অপেক্ষা করে আছে, ২০. কারণ সৃষ্টির উদ্দেশ্যটাই বিফল হয়ে গেছে৷ অবশ্য নিজের ইচ্ছায় তা হয় নি, আল্লাহ তাঁকে বিফলতার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন৷ তবে তার সঙ্গে সঙ্গে এই আশ্বাসও দিয়েছেন যে, ২১. ধ্বংসের বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে এই সৃষ্টি একদিন আল্লাহর সন্তানদের গৌরবময় স্বাধীনতার ভাগী হতে পারবে৷ ২২. আমরা জানি যে, গোটা সৃষ্টিটাই যেন এক ভীষণ প্রসব-বেদনায় এখনও কাতরাচ্ছে৷
পৌল তাঁর খোদার প্রতি বিশ্বাস এবং প্রেমে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি, কিন্তু খোদার প্রতি আমাদের বিশ্বাসের প্রাচুর্যতার দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন৷ আপনি কি খোদার গৌরবের প্রকাশে প্রত্যাশা করেন ও এটাই কি আপনার জীবনের লক্ষ্য? আপনার ছোটোখাটো সমস্যার সমাধান দেখেই সন্তুষ্ট হবেন না, খোদার পরিকল্পনা হলো গোটা বিশ্বের নাজাত প্রাপ্তী৷ খোদার কাছ থেকে বিশাল কিছু প্রত্যাশা করুন, যা হলো গোটা বিশ্বের নতুন জন্ম৷
প্রাণীজগত কষ্ট পাচ্ছে, ঘাস শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ দুঃখ হয় তাদের প্রতি যাদের কারণে পশুপাখী বিনাশ পাচ্ছে৷ আপনি কি লক্ষ্য করেছেন প্রানী কুলের চোখ শোকে ভরা, রেখেছে বন্ধ করে? এর কারণ ওগুলো মরণশীল৷ আনন্দ তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে, আর একাকিত্ত্ব ও সমস্যা তাদের ঘিরে ধরেছে৷ সকল প্রাণীকুল তাকিয়ে আছে খোদার পুত্রদের মহিমা প্রকাশের দিকে, কেননা প্রভুর আগমনে, তাঁর সন্তানগণ, যারা তার রূহের দ্বারা লাভ করেছে নতুন জন্ম, তারা সকলে যন্ত্রণাদায়ক দেহ থেকে পাবে মুক্তি৷ আর তার গৌরব তাদের মধ্য থেকে হবে প্রতিফলিত৷ তখন সকল প্রাণী রক্ষা পাবে৷ উক্ত সময়ে কোনো গাধাকে ক্রোধের সাথে পেটানো হবে না, আর যারা শুয়ে থাকবে তাদের রক্ত খাবে না কোনো মশক সম্পূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা খোদা আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছেন৷ পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠা পাবে মসিহের দ্বিতীয় আগমনের সময়ে, তাঁর দ্বিতীয় আগমেন তিনি তার সকল ধার্মিক লোকদের ও ফেরেশতাদের নিয়ে হাজির হবেন৷ আপনি কি তাঁর আগমনের অপেক্ষায় আছেন?
মানুষের পতন থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক দুর্ভোগ পোহাচ্ছে, মানুষের দূনর্ীতির কারণে তার কর্মস্থল এবং যা কিছু রয়েছে তার অধীনে, সবকিছু হয়ে পড়েছে কলুষিত৷ প্রকৃতির জ্বালাতন নিয়ে পৌল বর্ণনা দিয়েছেন 'সন্তান প্রসবের' মতো চরম যন্ত্রণার সাথে৷ যে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে খোদার পুত্রকে আমাদের সান্বিন্ধে হাজির করবে, তিনি আমাদের সাথে হচ্ছেন যন্ত্রণাকাতর এবং সকল পশুপাখীও কষ্ট পাচ্ছে৷ যতোটা সম্ভব তিনি আমাদের কাছে আসতে চান সকলের নাজাতের জন্য৷
রোমীয় ৮:২৩-২৫
২৩. কেবল তা-ই নয়, কিন্তু যে মহিমা আমরা পরে পাব তার প্রথম ফল হিসেবে পাকরূহকে পেয়ে আমরা নিজেরাও দিলে কাতরাচ্ছি৷ আর সেই সঙ্গে সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করে আছি যখন আল্লাহর সন্তান হিসাবে আমাদের প্রকাশ করা হবে, অর্থাত্ ধ্বংসের হাত থেকে আমাদের শরীরকে মুক্ত করা হবে৷ ২৪. নাজাত পেয়ে আমরা এই আশাই পেয়েছি৷ আমরা যার জন্য আশা করে আছি যদি তা পাওয়া হয়ে যায় তবে তো সেই আশা আর আশাই রইল না৷ যা পাওয়া হয়ে গেছে, তার জন্য কে আশা করে থাকে? ২৫. কিন্তু যা পাওয়া হয় নি তার জন্য যদি আমাদের আশা থাকে তবে তার জন্য আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষাও করি৷
আমাদের পৃথিবীতে খোদার পুত্রগণ নিজেদের বিবেকে পাকরূহের দ্বারা আর্তনাদ করে ফিরছে, কামনা করছে তাদের যে পিতা গ্রহণ করেছেন তা যেন সুসম্পন্ন হয়৷ বিশ্বাসহেতু আমরা নাজাত পেয়েছি, কিন্তু পরিপূর্ণভাবে আমাদের নাজাত পেতে হবে৷ আজকে আমাদের আত্মার, আংশিক পরিশোধন ঘটেছে, তবে পরিপূর্ণ পরিশোধন রয়েছে অপেক্ষারত৷
সুনিশ্চিত প্রত্যাশা ও ধন্যবাদ আগেভাগে জ্ঞাপন করা উচিত, আমাদের মধ্যে রুহানি জীবনপ্রাপ্তীর ফলে ভবিষ্যতেও যে মহিমা আসবে তার জন্য সময় দেয়া প্রয়োজন৷ আমরা না স্বর্ণের বা কামনার পরিপূর্ণতার প্রত্যাশা করি, কিন্তু আমরা দেখতে চাই পিতা পুত্র ও পবিত্র আত্মাকে৷
আপনি কি আপনার পিতাকে দেখতে চান? চান কি মসিহের সাথে সহভাগিতা লাভ করতে, যিনি হলেন আপনার নাজাতদাতা? মনে রাখবেন আপনার মরণশীল দেহ খোদার মহিমার উপস্থিতিতে জ্বলে ওঠবে, আপনি হয়ে ওঠবেন তাঁর মধ্যে অনন্তকালীন আলোর সন্তান৷ ধার্মিকদের হলো এটাই প্রত্যাশা, কেননা তাদের গুপ্ত জীবন যা খোদার মধ্যে লুপ্ত রয়েছে যা প্রকাশ হয়ে পড়বে৷ তা কেবলই হৃদয় ভরে দিবে না বরং তাদের আঘাতপ্রাপ্ত, রোগাগ্রস্থ মরণশীলদেহ দ্রুত বদলে যাবে গৌরবের দেহে৷ পৃথিবীটা যেন অপেক্ষা করার ক্ষেত্র, এখানে আমাদের যথেষ্ট ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে৷ প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের কাজ হলো এ বিশ্বে ক্ষয়িষ্ণু বেহেশত নির্মান করার মধ্য দিয়ে আমাদের প্রত্যাশা নষ্ট করে দেয়া৷ যাহোক, পাকরূহ হলেন অনাগত ভবিস্যতের মহিমার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা৷
রোমীয় ৮:২৬-২৭
এছাড়া আমাদের দুর্বলতায় পাক-রূহ আমাদের সাহায্য করেন৷ কি বলে মুনাজাত করা উচিত তা আমরা জানি না, কিন্তু যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না সেই রকম আকুলতার সঙ্গে পাকরূহ নিজেই আমাদের অনুরোধ করেন৷ ২৭. যিনি মানুষের দিল তালাশ করে দেখেন তিনি পাকরূহের মনের কথাও জানেন, কারণ পাকরূহ আল্লাহর ইচ্ছামতই আল্লাহর বান্দাদের জন্য অনুরোধ করেন৷
পাকরূহ নিজেও আমাদের সাথে আমাদের দুর্বল দেহে কষ্ট পাচ্ছেন, আমাদের সত্ত্বার অক্ষমতার জন্য আর্তনাদ করছে, ব্যাথা অনুভব করছে আমাদের নিঃশেষিত প্রার্থনায়, আমাদের অসম্পূর্ন জ্ঞানের জন্য করছেন বিলাপ, আমাদের দুর্বল মানবীয় প্রেম দেখে দুঃখ পান ও আশ্চর্যান্বিত হন আমাদের দুর্বল মনোবল দেখে৷ পাকরূহ নিজেও বিশ্বাসীদের পক্ষে নিয়ত সুপারিশ ও মুনাজাত করে চলছেন, তারা হয়তো নিজেরা আদৌ প্রার্থনা করছে না, তাদের মধ্যে রুহানি বিলাপ জাগ্রত হচ্ছে, প্রভুর শেখানো প্রার্থনার অনুসারে যা হলো পাকরূহের প্রার্থনা৷ আপনাকে সমর্পন করুন এ প্রার্থনার বিদ্যালয়ে যেন আপনি আপনার স্বার্থপরতার কবল থেকে পেতে পারেন মুক্তি, হতে পারেন প্রেমের তাগিদে পরিচালিত প্রার্থনার ঝড়ো আবর্তে ও অন্যের জন্য বিনতিপূর্বক প্রার্থনা জ্ঞান করতে বিজ্ঞতাপূর্বক প্রার্থনা, আনন্দ সহকারে ও শক্তির সাথে, কেননা প্রভুর রূহ দিবারাত্র আপনার মধ্যে প্রার্থনা করে চলছেন যেন গোটা বিশ্ব লাভ করে নাজাত৷ তাই কখন আপনি বিনীতভাবে প্রার্থনায় অংশ নিবেন আপনার বেহেশতি পিতার কাছে, সর্বান্তকরণে ধন্যবাদ ও প্রার্থনা জ্ঞাপন করে?
প্রার্থনা: হে পবিত্র পিতা আমাদের মন্থরগতি স্বার্থপর প্রার্থনার জন্য আমাদের ক্ষমা করো, পরিচালনা দান করো তোমার নামের মহিমা প্রকাশ করার জন্য, আমাদের পূর্ণ সত্ত্বা দিয়ে যেন মসিহের দ্বারা মুক্তি অর্জনের জন্য গৌরব করতে পারি, আর তোমার পাকরূহের পরাক্রমে বিনম্র সেবা দান যেন চালিয়ে যেতে পারি৷ হে প্রভু, পাকরূহের প্রত্যাশার বিসয়ে উপলব্ধি আমাদের শিক্ষা দাও, তিনি যাতে সন্তুষ্ট তেমন প্রার্থনা করতে শেখাও, আর তোমার উপস্থিতি কামনা যেন করে চলি আর তোমার পুত্রের আগমন যিনি মহা মহিমায় হাজির হবেন, যখন আমাদের জাতি সহ গোটা বিশ্ব একত্রে পাবে নাজাত ঘটবে মহামুক্তি৷
প্রশ্ন: