Previous Lesson -- Next Lesson
ক) সনাক্তকরণ ও আশির্বাদ বচন (রোমীয় ১:১-৭)
রোমীয় ১:১
আমি, মসিহ ঈসার গোলাম পৌল, রোম শহরের ঈমানদারদের কাছে এই চিঠি লিখছি৷ তাঁর সাহাবি হবার জন্য আল্লাহ আমাকে ডেকেছেন এবং তাঁর দেওয়া সু-সংবাদ তবলিগ করবার জন্য বেছে নিয়েছেন৷
জন্মলগ্নে পৌলের নামকরণ করা হয় শৌল, বিনইয়ামিন বংশের অহংকারি রাজা৷ জামাতের ওপর অত্যাচারে রাজা যখন মসিহের গৌরব প্রত্যক্ষ করলেন, তখন বুঝতে পারলেন তিনি আসলে কেউই নন৷ তখন তিনি 'পৌল' নামটি গ্রহন করলেন, যার অর্থ হলো 'সামান্য একজন' এবং তিনি তার বিখ্যাত পত্র এ বলে লিখতে শুরু করলেন 'আমি, সামান্য বটে, মসিহের গোলাম মাত্র'৷
তিনি তার লিখিত বিবৃতিতে মসিহের ক্রিতদাস বলে যে ঘোষণা দিলেন, তাতে পৌলের স্বাধীনতা অস্বীকার করেছিলেন, এবং সম্পূর্ণভাবে তার প্রভুর কাছে বশ্যতা স্বীকার করলেন৷ স্বেচ্ছায় তিনি নিজেকে শুণ্য করলেন, বিনম্র করলেন এবং তার উগ্রতার কাছে তিনি মৃতবত্ হয়ে গেলেন৷ মসিহের জন্য পাকরূহের পরিচালনায় তিনি জীবন-যাপন করতে শুরু করলেন৷ তিনি প্রভুর ইচ্ছা সানন্দে পালন করে চলছেন৷ এর অর্থ দাঁড়ায় জীবন্ত মসিহ রোমে জামাতের কাছে নিজেই যেন এ পত্রখানা লিখেছেন, অর্থাত্ তার দাসের কাছে যা কিছু প্রকাশ করেছেন তাই হলো এ পত্রটি৷ যা হোকও এ প্রকাশিত বাক্য পৌলের ইচ্ছাশক্তির বিরুদ্ধে লেখা হয় নি, বরং আগ্রহের সাথে ও স্বেচ্ছাতেই লিখেছেন, কেননা মসিহ তাঁর ইমানদার ব্যক্তিদের ক্রীতদাস হিসেবে বন্দি করে রাখেন না, বরং তাদের স্বাধীনতার ওপর ছেড়ে দেন৷ বিশ্বাস, প্রেম এমনকি মসিহের থেকে ভিন্নভাবে চলতে চাইলেও তিনি কোনো আপত্তি করেন না৷ আসলে ইমানদার ভাইবোনেরা কখনোই তাকে ফেলে একা একা চলতে চায় না, কেননা তিনি হলেন প্রেমের একমাত্র উত্স, দূরে যাওয়া তো দূরে থাক, তারা বরং তার মধ্যে সদাসর্বদা জীবন যাপন করতে বড়ই আগ্রহী থাকে৷
বিনম্রতার ফলে মসিহের ক্রীতদাসে পরিণত হতে পেরে সম্মান ও মর্যাদার উচ্চশিখরে পৌছাতে পেরেছিলেন হযরত পৌল৷ প্রভু তাকে তাঁর সাহাবি হিসেবে গণ্য করেন, ফলে তিনি মসিহের রাজ্য ধার্মিকতার বিষয়ে গোটা জাতির কাছে প্রচার করার সুযোগ লাভ করেন৷ মসিহ তাকে প্রাধিকার দান করেন, যেমন রাজা ও প্রেসিডেন্ট তাদের দূতদের ক্ষমতা অর্পণ করেন তাদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এবং তারাও সর্বদা যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন তার সাথে যিনি যে কাজে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দান করেছেন৷ একইভাবে মসিহ আজকে আপনাদের ডেকে ফিরছেন তাঁর সেবা কর্মে নিয়োজিত হবার জন্য৷ মসিহের ডাকে সাড়া দিন, দরজা খুলে দিন, কালবিলম্ব না করে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে তার কাছে সমর্পণ করুন৷ আর বিনত ও বিনম্রতার সাথে তা করুন যাতে তাঁর ঐশি ক্ষমতা ও প্রেম আপনার মাধ্যমে অন্যের কাছে পৌছাতে পারে৷ সমগ্রজাতির কাছে মসিহের রাজদূত হিসেবে হযরত পৌল তার পত্রের মাধ্যমে জগতে একটা পরিবর্তন আনয়নে সক্ষম হয়েছিলেন, মসিহের পরে পৌলের চেয়ে বড় প্রচারক আর কেউ নেই, আর তিনিই হলেন 'সামান্য একজন'৷
মসিহের ক্রীতদাস হযরত পৌলের সুসংবাদ বলতে কী ছিল? আর যাই হোক তা ছিল খোদার গৌরবোজ্জল সুসমাচার ছিল৷ পৌল নিজের চিন্তা নিয়ে আগমণ করেন নি, বরং পতিত শোকার্ত বিশ্বের কাছে সুসমাচার বিশ্লেষণ৷ 'সুসমাচার' শব্দটি তদানীন্তন রোম সম্রাজ্যে সুপরিচিত ছিল৷ রোমের শাসকদের সময়ে সরকারিভাবে ঘোষণা করার জন্য এ শব্দটি ব্যবহার করতেন৷ যেমন রাজার যখন কোনো সন্তান ভূমিষ্ট হতো অথবা শত্রুদের সাথে যুদ্ধে বিজয় লাভ করে ঘরে ফিরে আসার সময় এ শব্দ ব্যবহৃত হতো৷ তাই শব্দটি প্রমাণ করতো রাজপরিবারে হয়েছে কোনো বিশেষ বিজয় লাভ৷ যাহোক, পৌল খোদার তরফ থেকে একটি শুভ বার্তা সাধারণের জন্য বয়ে এনেছেন, মসিহের উপস্থিতির বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান, শত্রুদের শক্তির ওপর হয়েছে তাঁর বিজয় অর্জিত, যার ফল হলো তার নাজাত লাভ, আর এ প্রচারের ফলে শ্রোতৃমন্ডলিও যাতে পায় মুক্তি আর ঐশি ধার্মিকতার রাজ্যে যেন করতে পারে প্রবেশ লাভ৷
পূতপবিত্র খোদা পৌলকে বেছে নিয়েছেন, করেছেন আলাদা, তিনি একজন উকিল, তাকে মুক্ত করেছেন অন্ধকারের দাসত্ব থেকে৷ তিনি তাকে এ কারণে মুক্ত করেছেন যেন তিনিও অন্যের দাসত্ব-মুক্তির-অভিযানে অংশ নিতে পারে, ফলে তারা যে ধরণের দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি ও ধুঁকে ধুঁকে মরছে, মুক্ত হওয়ার পর তারাও যেন খোদার কাজে ব্যস্ত হতে পারে, আর তাদের নিয়ে চলতে পারে খোদার রহমতের রাজ্যে, যেন নিজেরা নিজেদের মুক্ত করার ধারায় পড়ে না থাকে, বরং মসিহের মাধ্যমে প্রবেশ লাভ করতে পারে বেহেশতে, কেননা মসিহই হলেন পিতার রাজ্যে প্রবেশের একমাত্র দরজা৷
প্রার্থনা: হে প্রভু মসিহ, তোমাকে ধন্যবাদ জানাই, কেননা তুমি তোমার সহদাস পৌলকে বাছাই করেছো, আর তাকে জগতে প্রেরণ করেছো তোমার কালাম জগতে ছড়িয়ে দিতে৷ আমাদের স্বধার্মিকতা ও অহংকার অপরাধের জন্য ক্ষমা করো, করো আমাদরে বিনম্র, যেমন হৃষ্টচিত্তে আমরাও মসিহের সহদাসে পরিণত হতে পারি, তা তোমার প্রেম ও দয়ার পূর্ণতা প্রকাশ করতে পারি গোটা বিশ্বের বিশ্বাসিকুলের কাছে৷
প্রশ্ন: