Home
Links
Bible Versions
Contact
About us
Impressum
Site Map


WoL AUDIO
WoL CHILDREN


Bible Treasures
Doctrines of Bible
Key Bible Verses


Afrikaans
አማርኛ
عربي
Azərbaycanca
Bahasa Indones.
Basa Jawa
Basa Sunda
Baoulé
বাংলা
Български
Cebuano
Dagbani
Dan
Dioula
Deutsch
Ελληνικά
English
Ewe
Español
فارسی
Français
Gjuha shqipe
հայերեն
한국어
Hausa/هَوُسَا
עברית
हिन्दी
Igbo
ქართული
Kirundi
Kiswahili
Кыргызча
Lingála
മലയാളം
Mëranaw
မြန်မာဘာသာ
नेपाली
日本語
O‘zbek
Peul
Polski
Português
Русский
Srpski/Српски
Soomaaliga
தமிழ்
తెలుగు
ไทย
Tiếng Việt
Türkçe
Twi
Українська
اردو
Uyghur/ئۇيغۇرچه
Wolof
ייִדיש
Yorùbá
中文


ગુજરાતી
Latina
Magyar
Norsk

Home -- Bengali -- The Ten Commandments -- 12 Tenth Commandment: Do Not Covet Your Neigbor's House
This page in: -- Afrikaans -- Arabic -- Armenian -- Azeri -- Baoule? -- BENGALI -- Bulgarian -- Cebuano -- Chinese -- English -- Farsi? -- Finnish? -- French -- German -- Gujarati -- Hebrew -- Hindi -- Hungarian? -- Indonesian -- Kiswahili -- Malayalam? -- Norwegian -- Polish -- Russian -- Serbian -- Spanish -- Tamil -- Turkish -- Twi -- Ukrainian? -- Urdu? -- Uzbek -- Yiddish -- Yoruba?
ব্যাখ্যা ৬: দশ আজ্ঞা - মানুষকে অপরাধের কবল থেকে রক্ষা করার প্রতিরক্ষা কবজ সম দেয়াল৷ প্রথম খন্ড
সুসমাচারের আলোকে হিজরত পুস্তকের ২০ অধ্যায়ে বর্ণীত দশ শরীয়তের ব্যাখ্যা

১২ - দশম আজ্ঞা: প্রতিবেশির গৃহে লোভ করো না



হিজরত ২০:১৭
'অন্যের ঘর-দুয়ার, স্ত্রী, গোলাম ও বান্দী, গরু-গাধা কিংবা আর কিছুর ওপর লোভ করো না'


১২.১ -- বর্তমানকার প্রলোভন

যে কেউ টেলিভিশন দেখে সেই বাণিজ্যিক মনোলোভা বস্তুর লোভে পড়তে পারে৷ আকর্ষণীয় দ্রব্য ক্রয় করার জন্য তাড়াহুড়া লেগে যায়, জীবনবীমা কোম্পানির চুক্তিপত্রে সই করার জন্য 'এখনই উপযুক্ত মুহুর্ত' হাতছাড়া হলে অপূরণীয় ক্ষতি৷ অপরূপ সুন্দর প্রশাধনি, জমকালো কাপড় এবং রেসের গাড়ি৷ এমন আকর্ষণীয় দ্রব্যের তালিকার শেষ নেই, মজার বিষয় হলো এই সকল কোম্পানির শত বাণিজ্যিক প্রচারের মধ্যে একটি শব্দও পাবেন না মসিহের সত্য নিয়ে বলতে৷ যেমন তিনি বলেছেন, 'নিজেকে অস্বীকার করো৷' 'তোমার যা আছে তাতে সন্তুষ্ট থাকো!' তাদের প্রচারের বিষয় হলো , 'প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য কামনা করো, আর যা কিছু নেই তা ক্রয় করো৷'

খবরের কাগজে একটি শিশুর ছবি প্রকাশ করেছে যার চারদিকে, কান পর্যন্ত, পুতুলের ছড়াছড়ি৷ টেডি বিয়ার, সর্বপ্রকার প্রাণির খেলনা সমূহ, গাড়ি ও খেলার সামগ্রী৷ ক্ষুদ্র বালককে সবকিছুই দেয়া হয়েছে যা কিছুই চেয়েছে৷ এমন কিছু নেই যা চেয়ে পায় নি৷ কি অসহায় বালকটি৷ সমাজ তাকে সবকিছু দিয়ে ভরে দিয়েছে, ফলে তার শেষাবস্থায় হতাশার ঘোলাজলে সে ডুবে গেল৷

শিল্প সমৃদ্ধ সমাজে মানুষগুলো আকৃষ্ট থাকে এমন কিছু বিষয়ের দিকে যা দশম আজ্ঞার আলোকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷ দৃষ্টান্ত স্বরূপ, স্বামী-স্ত্রী বছরের পর বছর শ্রম দিয়ে যেতে পারে দীর্ঘ প্রত্যাশিত গৃহটির জন্য৷ কখনো তারা অতিরিক্ত শ্রম দেয়, মাতা যদি কোনো কাজ পায় তবে কাজের চাপে নিজের সন্তানদের প্রতি যত্নে ঘাটতি পড়ে, ক্লান্ত ও অপারগ হয়৷ তারা প্রচুর পরিমাণ কফি এবং অন্যান্য উত্তেজক দ্রব্য পান করে, কাজের সুবিধার্থে নিজেদের চাঙ্গা রাখার জন্য৷ এর ফলে ছাঁকা মুনাফা যা আসে তা কেবল শূন্যতা আর ঋৃণের বোঝা এবং পারিবারিক দ্বন্ধ ও বিচ্ছিন্নতা৷ কেন এমন হয়? কারণ হলো, পরিবারের প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যয় এবং যা কিছু তাদের আদৌ প্রয়োজন ছিল না তার পিছনে ব্যয় করছে, আর আয় বুঝে ব্যয় না করার কারণই হলো সমস্যার প্রধান করেন৷


১২.২ - সম্পদের অধিকার কি নিয়ম শুদ্ধ?

মসিহ বলেছেন 'যদি কেউ সমস্ত দুনিয়া লাভ করে তার বিনিময়ে তার সত্যিকারের জীবন হারায় তবে তার কি লাভ হল? সত্যিকারের জীবন ফিরে পাবার জন্য তার দেবার মত কি আছে' (মথি ১৬:২৬)৷ তিনি আরও বলেছেন, 'সেই দিন সন্ধ্যাবেলা ঈসা মসিহ তাঁর উম্মতদের বললেন, চল, আমরা সাগরের ওপারে যাই' (মার্ক ৪:৩৫)৷ যুদ্ধের সময় একটি বোমাই যথেষ্ট ৮ তলাবিশিষ্ট ইমারত সেকেন্ডেই বিনাশ করে দিতে৷ পরিশেষে সবকিছু ধ্বংস ও ছাইয়ে হলো পরিণত৷ লক্ষ কোটি বিপন্ন উদ্ভাস্ত আজ বিপন্ন যাদের কোনো এককালে সবকিছু ছিল৷ সমাজতান্ত্রিক দেশে যাদের অদ্যাবধি নিজস্য বাড়ি-ঘর আছে তাদের ওপর ট্যাক্সের বোঝা এতটা চাপানো যে সমপরিমান ফ্লাটের ভাড়া হবে অনেক কম৷ পরিশেষে ঘরের মালিক হয়েও এতটা গরীব যে, যার কিছুই নেই তার চেয়েও অভাবি৷ খোদা আমাদের তাঁর সাথে সুরক্ষা করতে চান এবং আমাদের যোগ্য করে তুলতে চান যেন আমরা দেখতে পাই যা কিছু বস্তুগত দ্রব্যের আমাদের প্রয়োজন তা যেন তাঁর বিবেচনা থেকে আসে৷ বস্তুগত বিষয়ের চেয়ে রুহানি সত্য অধিক মূল্যবান৷

উত্তরাধীকারে প্রাপ্ত সম্পত্তি যারা ভাগ করতে চায় তাদের মনে একটা ধারণা বদ্ধমুল থাকা প্রয়োজন, এর ফলে পরষ্পর স্বজন-প্রিয়জনদের মধ্যে কেবল শত্রুতাই বাড়বে, কেননা টাকা পয়সা ও অধিকারের সম্পদের কারণে মানুষ দূর হয়ে যায় একে অপরের থেকে৷ মসিহ তাই বলেছেন 'যে কেউ তোমার কোর্তা নেবার জন্য মামলা করতে চায় তাকে তোমার চাদরও নিতে দিয়ো৷ যে কেউ তোমাকে তার বোঝা নিয়ে এক মাইল যেতে বাধ্য করে তার সঙ্গে দুই মাইল যেয়ো'(মথি ৫:৪০)৷ হযরত পৌল আমাদের সুনিশ্চয়তা সহ বলেছেন, 'পাওয়ার চেয়ে দেওয়াতে আনন্দ অনেক বেশি!' মসিহের পথে চলতে এই নিয়মটি আমাদের প্রধান চালিকা রীতি হওয়া উচিত্‍৷ কারো সরলতার সুবাধে কেউ যদি জাল দলিল দিয়ে কিছু আদায় করতে চায় তবে খোদার গজব তার ওপর পড়বে, কেননা খোদা পিতৃমাতৃহীন ও অসহায় লোকদের রক্ষক৷


১২.৩ -- লোকদের প্রতারণা

দশম আজ্ঞা কেবল সম্পত্তির অধিকারে সীমাবদ্ধ করেই দেয় নি বরং সহকমর্ীদের অংশ থেকে বঞ্চিত করার প্রশ্নে সেবাদানকারি ব্যক্তিদের ন্যাজ্য পাওনার ওপর অন্যায় না করতে তথা বন্ধু-বান্ধবদের না ঠকাতে নিষেধ করে দিয়েছে৷ কর্মচারীবৃন্দ কর্মকর্তাকে অসন্তুষ্ট করেছে অথবা কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করেছে সে দোষ বা অযুহাতে বিরোধ বাড়িয়ে দেয়া ঠিক হবেন৷ পরিবর্তে আমরা তাদের স্বীয় স্থানে স্থির থাকতে পরামর্শ ও অনুরোধ জানাব, পরিবর্তিত পরিবর্তনে সুযোগ সুবিধা যতই আসুক না কেন৷ দশম আজ্ঞাটি জামাতেও আমরা প্রয়োগ করবো, প্রয়োগ করবো সমাজে, স্কুলে সেবাকেন্দ্রে কেননা ভাই বোন অথবা সহকমর্ীদের তোষামোদে আশির্বাদ নেমে আসতে পারে না৷

কারো পারিবারিক বিষয়ে নাকগলানোতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে, স্বামী বা স্ত্রীর কারো মধ্যে পারিবারিক বন্ধন ভেঙ্গে দেবার প্রবণতা জাগতে পারে অথচ খোদা ঐক্যে বাস করার জন্যই তাদের যুক্ত করেছেন৷ পরিবর্তনের আগ্রহ, অথবা মারাত্মক ভুলবুঝাবুঝি, অথবা ভীষণ বিরোধ সমর্থন করতে পারে না বেদনাদায়ক পদক্ষেপ৷ মসিহ নিজেই বলেছেন, 'খোদা যা কিছু যুক্ত করেছেন মানুষ যেন তা বিযুক্ত না করে৷' কেউ যদি কোনো পরিবার ধ্বংস করে দিতে চায় অথবা বিবাহের বাইরে যৌনসম্পর্ক গড়ে তোলে, তবে তাত্‍ক্ষণিক তাকে অনুতপ্ত হতে হবে, তার স্বভাব আচরণ মনোভাবের পরিবর্তন করতে হবে এবং তার নিজের পরিবারের দিকে এবং পারিবারিক দায়িত্ব পালনে তাকে অধিক যত্নবান হতে হবে৷ তখন উক্ত ব্যক্তির জীবন অর্থবহ হবে, এবং সে হিসেবে সর্বপ্রকার পাপ প্রত্যাখ্যান ও ঘৃণা করার কৌশল৷ সে তখন আর পুষে রাখবে না তেমন মন্দ চিন্তা, সঙ্গী ফেলে অন্য সঙ্গী নিয়ে মদে মত্য হতে নিজের ঘর থেকে ছুটি নিয়ে অন্যের ঘরে হামলা করতে৷ তার পরিবর্তে পাকরূহের শক্তিতে সে তখন প্রকৃত পাপমুক্ত জীবন যাপন করবে, কেননা পাকরূহকে বাদ দিয়ে আপনি কিছুই করতে পারবেন না৷


১২.৪ - অভিলাষ জাগে কেন?

কতিপয় বিশেষ বিষয়বস্তু ও লোকের বিষয় দশম আজ্ঞা আলোচনা করেছে যা আমাদের জানার আগ্রহ রয়েছে৷ তালিকার মধ্যে আজ আমরা যোগ দিতে পারি, যেমন গাড়ি, সাংগীতিক যন্ত্রপাতি, ওয়াশিং মেশিন, রেফ্রিজারেটর এবং বাহারি পোশাক৷ মানুষ কামনা করে অন্যের যা কিছু আছে তারও তা থাকতে হবে৷ মানুষের জীবনমান এতটা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা কেবল সমস্যা বাড়িয়েই চলে, ফলে ব্যক্তি ও পরিবার ক্রমশ: গরীব হয়ে পড়ে৷ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারণে তারা ঋণের বোঝা বয়ে চলছে, কখনো কখনো এমন হয়, মুলধন রিফান্ড করা তো দূরে থাক, সুদের বোঝা পরিশোধ করারও উপায় থাকে না৷ তারা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করে, কিন্তু বর্তমানে অচল হয়ে পড়ে থাকে, তার কারণ বিকল হলে মেরামতের অর্থও যোগান দিতে পারে না, পারে না ২/৪টি খুচরা যন্ত্রাংশ বদল করে নিতে৷ খোদার বিজ্ঞ সাহাবি জানেন এ অবস্থা, তাই তিনি বলেছেন, তোমাদের যা আছে তাতে সন্তুষ্ট থাকো, আর ঋণের ভার থেকে অবমুক্ত হতে চেষ্টা করো, ঋণ দেহ ও আত্মা উভয়ই ধ্বংস করে দিতে পারে৷ অধিকন্তু মসিহ বলেছেন, 'কিন্তু তোমাদের মধ্যে তা হওয়া উচিত নয়৷ তোমাদের মধ্যে যে বড় হতে চায় তাকে তোমাদের সেবাকারী হতে হবে, আর যে প্রথম হতে চায় তাকে তোমাদের গোলাম হতে হবে' (মথি ২০:২৬-২৭)৷ মসিহ এসেছেন আমাদের জীবনের পূর্ণগঠন দিতে জীবনের মুল্যবোধ ফিরিয়ে দিতে, তিনি প্রার্থনা করেছেন, 'শিক্ষক থেকে ছাত্র বড় নয় এবং মালিক থেকে গোলাম বড় নয়৷ ছাত্রের পক্ষে শিক্ষকের যখন তারা বেলসবূল বলেছে তখন ঘরের অন্য সবাইকে আরও কত বেশি করেই না বেলসবূল বলবে৷ তবে তোমরা তাদের ভয় করো না, কারণ লুকানো সব কিছুই প্রকাশ পাবে এবং গোপন সব কিছুই জানানো হবে৷ আমি তোমাদের কাছে যা অন্ধকারে বলছি তা তোমরা আলোতে বোলো৷ তোমরা যা কানে-কানে শুনছ তা ছাদের ওপর থেকে প্রচার করো৷ যারা কেবল শরীরটা মেরে ফেরতে পারে কিন্তু রূহ মারতে পারে না তাদের ভয় করো না৷ যিনি শরীর ও রূহ দু'টাই জাহান্নামে ধ্বংসকরতে পারেন বরং তাঁকেই ভয় কর৷ দু'টা চড়াই পাখী কি সামান্য দামে বিক্রি হয় না? তবুও তোমাদের পিতার অনুমতি ছাড়া তাদের একটাও মাটিতে পড়ে না; এমন কি তোমাদের চুলগুলোও গোনা আছে' (মথি ১০:২৫-৩০)৷

হযরত পৌল করিন্থীয় জামাতের কাছে লিখেছেন, খোদা সর্বপ্রকার অহংকার ও অবাধ্যতা ধ্বংস করে দিবেন যখন কেবল গুটি কয়েক বিশেষ লোকের হাতে জামাতের দায়িত্ব চলে যাবে বা নিয়ন্ত্রিত হবে৷ জীবনের লক্ষ্যবিন্দু পরিবর্তন এবং হৃদয়ের নবায়নকরণের ফলে প্রথম দিকের জামাতের সদস্যগণ জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছেন৷

দশম আজ্ঞা খারাপ ও ঘৃণিত কাজকেই নিষেধ করে নাই বরং হৃদয়ের সর্বপ্রকার শুপ্ত মন্দ চিন্তাকেও ঘৃণা করেছে৷ আদালত একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ব্যক্তির অপরাধের বিচার করতে পারে, কিন্তু মানুষের হৃদয়ের অবস্থা কেবল খেদাই দেখতে পান৷ এমনকি আমরা সম্পূর্ণরূপে আমাদের হৃদয়ের অবস্থা দেখতে পাই না৷ অনেক সময় ভেবে কুল পাই না, আমাদের বন্ধু-বান্ধব কেন এমন আচরণ করলেন৷ নিজেদের কাছেও আমরা থাকি রহস্যাবৃত্ত৷ কিতাবুল মোকাদ্দস ঘোষণা দিচ্ছে, 'মাবুদ দেখলেন দুনিয়াতে মানুষের নাফরমানী খুবই বেড়ে গেছে, আর তার দিলের সব চিন্তা-ভাবনা সব সময়ই কেবল খারাপীর দিকে ঝুঁকে আছে' (পয়দায়েশ ৬:৫)৷ মসিহের পবিত্রতার মাপকাঠীতে যদি আমরা আমাদের মেপে দেখি তবে দেখতে পাবো কতোটা দুষ্ট ও অপবিত্র আমরা 'আল্লাহ তাদের ধার্মিক বলে গ্রহণ করেন৷ ইহুদি ও অ-ইহুদি সবাই সমান, কারণ সবাই গুনাহ করেছে এবং আল্লাহর প্রশংসা পাবার অযোগ্য হয়ে পড়েছে' (রোমিয় ৩:২৩)৷ এ প্রবণতা একটি শিশুর ক্ষেত্রেও দৃষ্টি হয় যখন তার ইচ্ছে পুরণ করার জন্য সর্বদা চিত্‍কার দিতে থাকে৷ শিশুরা একে অন্যকে ঠকায়, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পাপ তাদের মধ্যে দৃষ্ট হয়, তখন ভাসাভাসা বক্তব্য যা হলো 'শিশুরা নিষ্পাপ' আমরা অস্বীকার করতে বাধ্য৷ বাড়ন্ত শিশুদের মধ্যে পরিলক্ষিত হতে থাকে একগুয়েমি ও স্বার্থপরতার স্বভাব৷ খারাপ চিন্তা এবং খারাপ কাজের মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য রয়েছে৷ প্রলোভন এড়িয়ে কেউই চলতে পারে না৷ কিন্তু আপনাকে বলা হয়েছে শয়তানকে রুখে দাঁড়াতে৷ ড. মার্টিন লুথার বলেছেন, 'আমার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া কোনো পাখীকে আমি বারণ করতে পারবো না, তবে তা আমার চুলের ওপর বসতে দেব না, সে ক্ষমতা আমার আছে৷' প্রলোভনের সূচনা লগ্ন থেকে আমাদের সাবধান হতে হবে, বাধা দিতে হবে এবং এর হাত থেকে পেতে হবে রেহাই৷ হযরত পৌল গ্রীক বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছেন, '(মন্দ)' চিন্তা কখনোই যেন আমার হৃদয়ে জন্মলাভ না করে! হযরত ইয়াকুব প্রলোভনের মুল কারণ খুঁজে পেয়েছে৷ তার পত্রের প্রথম অধ্যায়ে তিনি সুনিশ্চিতভাবে লিখেছেন, প্রলোভন খোদা থেকে অনুপ্রানিত হয় না, কেননা খারাপ কোনো কাজে খোদা কাওকে প্রলুদ্ধ করেন না৷ যদি কেউ প্রলুব্ধ হয় তবে সে মাংসিক কামনা বাসনার দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে প্রলুব্ধ হয়ে থাকে৷ স্পষ্টত: 'আকাঙ্খা গুলো পুষ্ট পরিপক্ক হয় তখন পাপের জন্ম দেয়; আর পূর্ণাঙ্গ পাপ মৃতু্য উত্‍পাদন করে৷' সাহাবি আরও বলেছেন, 'আমার প্রিয় ভাইয়েরা, ভুল করো না৷ জীবনের প্রত্যেকটি সুন্দর ও নিখুঁত দান বেহেশত থেকে নেমে আসে, আর তা আসে আলস্নাহর কাছ থেকে, যিনি সমসত্ম নূরের পিতা৷ চঞ্চল ছায়ার মত করে তিনি বদলে যান না৷ তাঁর নিজের ইচ্ছায় সত্যের কালামের মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের তাঁর সনত্মান করেছেন, যেন তাঁর সৃষ্ট জিনিসের মধ্যে আমরা এক রকম প্রথম ফলের মত হই৷' (ইয়াকুব ১:১৬-১৮)৷

একজন মসিহির উচিত পাক-কালামের আলোকে নিত্যদিন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা, সামলে নেয়া তার আকাঙ্খা, তার লক্ষ্যবিন্দু ও মনোবাসনা৷ নোংরা চিন্তা-চেতনার ওপর বিজয় অর্জন কেবল তখনই সম্ভব যখন মসিহের কাছে সম্পূর্ণ সমর্পণ করা হয়, এবং বিশ্বাসপূর্ণভাবে তার অনন্তকালীন রহমতের ওপর নির্ভর করা হয়৷ 'আমাদের তুমি পরীক্ষায় পড়তে দিয়ো না, বরং শয়তানের হাত থেকে রক্ষা কর৷' (মথি ৬:১৩)৷ মসিহিগণ নিশ্চিতভাবে জানেন যে তাদের পাপের ক্ষমা মসিহের রক্তের মূল্যে লব্ধ হয়েছে৷ আর মসিহের ধার্মিকতাই হলো তাদের ধার্মিকতা যা তিনি তাদের করেছেন দান৷ তাই তারা আর ইচ্ছাকৃত পাপ করে না, কেননা পাকরূহ তাদের চিন্তা-চেতনা ও মনোভাবকে পূতপবিত্র করেন৷ মসিহ আমাদের হৃদয়ের বিজয়ী মালিক হতে চান৷ আমাদের যুদ্ধ তিনি পরিচালনা করতে চান এবং দান করতে চান বিজয়৷ এটা কোনো ব্যক্তি বা জাতির বিরুদ্ধে জেহাদ নয় বরং আমাদের নিজেদের মধ্যে জমাট বাঁধা একগুয়েমির বিরুদ্ধে, দুষ্ট চিন্তার বিরুদ্ধে আর প্রলোভনের বিরুদ্ধে যা আমাদের আহত করে৷ আমরা প্রার্থনা করি তা যেন বিশ্বাস করি, 'হে জীবন্ত ও সর্বশক্তিমান প্রভু, তোমাকে পুনরায় অনুরোধ করি আমাকে পাপে পড়তে দিও না, বরং এর কবল থেকে রক্ষা করো, এবং আমার মধ্যে জেঁকে থাকা মন্দ স্বভাবের হাত থেকে রক্ষা করো৷ মন্দের আত্মা যেন কোনো ভাবেই আমার মধ্যে জেঁকে বসতে না পারে৷ আমাকে অধিকার করো প্রভু, এবং সর্বক্ষণ আমার মধ্যে বসবাস করো৷ তোমার রক্তের দ্বারা আমাকে স্নাত করো এবং তোমার রূহের দ্বারা আমাকে পুষ্ট করো যেন আমার ইচ্ছা ও আকাঙ্খা তোমাকে সন্তুষ্ট করে৷'


১২.৫ - নতুন হৃদয় এবং নতুন আত্মা

আমরা যখন রুহানি স্তরে মন্দ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হই তখন বুঝতে পারি মসিহের শিক্ষার প্রকৃত অর্থ, 'হৃদয়ে পুঞ্জিভূত মন্দ চিন্তা বেরিয়ে আসে৷' তাই, মন্দ আচরণ ঠেকানোই সমাধান নয়, অথবা বিশেষ বিশেষ পাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই শেষ কথা নয়, বরং তার চেয়েও অধিক কিছু করনীয় আছে৷ আমাদের বিবেক পরিষ্কার করা অত্যাবশ্যক, একটি নতুন হৃদয় এবং নতুন মনের উপস্থিতি প্রয়োজন৷ আসুন, প্রভুর কাছে প্রার্থনা করি তার পরিকল্পনা আমাদের মধ্যে বাস্তবায়ন করার জন্য৷ পাকরূহের শক্তিতে, যার ফলে আমাদের জীবনের আত্মা, দেহ ও মনের অবস্থান সত্যিকারার্থে পূতপবিত্র হয়ে ওঠে৷ কেবল আমাদের দেহই কলুষিত নয় বরং আমাদের আত্মা ও মনও দুষিত হয়ে আছে৷ দশম আজ্ঞা নতুন জন্মের বিষয়ে সচেষ্ট, যার ফলে পুরাতন মানুষটি পরিণত হয়ে ওঠেন নতুন মানুষে, পরিবর্তিত হবে রুহানি অবস্থান, চিন্তা চেতনা ও মন-মানসিকতার৷ যেরেমিয়া নবী তাঁর বিদ্রোহী লোকদের জন্য ভিষণভাবে কষ্ট পেয়েছে, আর এক ঐশি প্রতিজ্ঞা লাভ করেছে, 'আমি আমার আইন তাদের মনে ঢেলে দেব, এবং তাদের হৃদয়ে তা লিখে দিব; আমি হবো তাদের খোদা, আর তারা হবে আমার বান্দা৷ তখন আর কোনো লোক তাদের প্রতিবেশিকে শিক্ষা দিবে না, আর ভাইকে শিক্ষা দিবে না এ বলে 'প্রভুকে জানো' কারণ তারা আমাকে জানবে, ক্ষুদ্র থেকে বৃহত্‍ পর্যন্ত সকলেই আমাকে জানবে৷ প্রভু বলেন, আমি তাদের পাপ ক্ষমা করবো, আর তাদের পাপের কথা আর স্মরণ করা হবে না (যেরোমিয়া ৩১:৩৩-৩৪)

একই ধরণের প্রতিজ্ঞা যিহিষ্কেল নবীকেও প্রভু দিয়েছেন৷ যখন তিনি তাদের কাছে এ কথা প্রকাশ করেছেন, 'আমি '' (যিহিষ্কেল ৩৬:২৬-২৭)৷ রাজা দাউদ অত্র প্রতিজ্ঞা প্রকাশের ৩০ বত্‍সর পূর্বে অনুতাপ করেছেন, 'হে আল্লাহ, তোমার অটল মহব্বতের জন্য আমার প্রতি দয়া কর; তোমার অসীম মমতার জন্য, তোমার প্রতি আমার সব বিদ্রোহ মাফ কর৷ আমার সব অন্যায় তুমি ধুয়ে ফেল; আমার গুনাহ থেকে আমাকে পাক-সাফ কর৷ আমার সব বিদ্রোহের কথা আমার চেতনায় রয়েছে; আমার গুনাহ সব সময় আমার মনে রয়েছে৷ তোমার বিরম্নদ্ধে, কেবল তোমারই বিরম্নদ্ধে আমি গুনাহ করেছি আর তোমার চোখে যা খারাপ তা-ই করেছি৷ কাজেই তোমার রায় ঠিক, তোমার বিচার নিখুঁত৷ হঁ্যা, জন্ম থেকেই আমি অন্যায়ের মধ্যে আছি; গুনাহের অবস্থাতেই আমি মায়ের গর্ভে ছিলাম৷ তুমি দিলের মধ্যে সত্য দেখতে চাও; তুমিই আমার দিলের গভীরে জ্ঞান দাও৷ এসব গাছের ডাল দিয়ে তুমি আমাকে পাক-সাফ কর, তাতে আমি পাক-সাফ হব; আমাকে ধূয়ে নাও, তাতে আমি ধবধবে সাদা হব৷ আমাকে খুশির আওয়াজ ও আনন্দধ্বনি শুনতে দাও; তোমার চুরমার করা আমার এই হাড়গুলো আনন্দ করম্নক৷ তুমি আমার গুনাহের দিকে চেয়ে দেখো না; আমার সমসত্ম অন্যায় তুমি মাফ কর৷ হে আলস্নাহ, তুমি আমার মধ্যে খাঁটি অনত্মর সৃষ্টি কর; আমার মন আবার স্থির কর৷ তোমার সামনে থেকে আমাকে দূর করে দিয়ো না; আমার মধ্য থেকে তোমার পাক-রূহকে নিয়ে যেয়ো না৷ তোমার দেওয়া নাজাতের আনন্দ আমাকে আবার দাও; তোমার বাধ্য হওয়ার ইচ্ছুক মন দিয়ে তুমি আমাকে সবল কর৷ তাহলে আমি তোমার পথ সম্বন্ধে বিদ্রোহীদের শিক্ষা দিতে পারব, আর গুনাহগার লোকেরা ঘুরে তোমার দিকে ফিরবে৷ হে আলস্নাহ, আমার নাজাতদাতা আল্লাহ, খুনের দায় থেকে তুমি আমাকে বাঁচাও; তাতে আমার মুখ থেকে তোমার ন্যায্যতার কাওয়ালী বেরিয়ে আসবে৷ হে মালিক আমার মুখ খুলে দাও, আমি তোমার প্রশংসা প্রচার করব৷ পশু-কোরবানীতে তো তুমি খুশি হও না, হলে আমি তা দিতাম; পোড়ানো-কোরবানীতেও তুমি সন্তুষ্ট হও না৷ ভাংগাচোরা অনত্মরই আলস্নাহর কবুলের যোগ্য কোরবানী; হে আলস্নাহ, নত এবং নম্র মনকে তুমি তুচ্ছ করবে না' (আল জবুর ৫১:১-১৭)

মহামতি দাউদের প্রার্থনায় সংগতি রেখে যদি কেউ প্রার্থনা করে তবে খোদার তরফ থেকে নিশ্চিতভাবে সে জবাব পাবে৷ মসিহ এ ভবিষদ্বানী পূর্ণ করেছেন, তিনি বলেছেন, 'পরে ঈসা মসিহ আবার লোকদের বললেন, আমি দুনিয়ার নূর৷ যে আমার পথে চলে সে কখনো অন্ধকারে পা ফেলবে না, বরং জীবনের নূর পাবে৷' (ইউহোন্না ৮:১২)৷ তিনি আরও বলেছেন, 'মানুষ যেভাবে বিচার করে আপনারা সেভাবে বিচার করে থাকেন, কিন্তু আমি কারও বিচার করি না৷' (ইউহোন্না ১৫:৫)৷

মসিহের প্রচারারম্ভে নিকদিমের কাছে এ বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন, 'জবাবে ঈসা মসিহ বললেন, আমি আপনাকে সত্যিই বলছি, পানি এবং পাক-রূহ থেকে জন্ম না হলে কেউই আল্লাহর রাজ্যে ঢুকতে পারে না৷' (ইউহোন্না ৩:৫)৷ পিতর এ প্রতিজ্ঞার সত্যতার স্বীকৃতি দিয়েছেন, পঞ্চসপ্তমির দিনে ৩০০০ হাজার লোকের সম্মুখে, 'জবাবে পিতর বললেন, আপনারা প্রত্যেকে গুনাহের মাফ পাবার জন্য তওবা করুন এবং ঈসা মসিহের নামে তরিকাবন্দী গ্রহণ করুন৷ আপনারা দান হিসেবে পাকরূহকে পাবেন' (প্রেরিত ২:৩৮)৷


১২.৬ - রুহানি যুদ্ধ

পাকরূহ যখন আমাদের মধ্যে বাস করেন তখন আমরা প্রলোভন থেকে মুক্ত নই৷ কিন্তু রূহ আত্মার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আর আত্মা রূহের বিরুদ্ধে যুদ্ধে থাকে লিপ্ত৷ আর যুদ্ধ চলতে থাকে, যেমন হযরত পৌল বর্ণনা দিয়েছেন, 'যদি তোমরা গুনাহ-স্বভাবের অধীনে চল তবে তোমরা চিরকালের জন্য মরবে৷ কিন্তু যদি পাক-রূহের দ্বারা শরীরের সব অন্যায় কাজ ধ্বংস করে ফেল তবে চিরকাল জীবত থাকবে৷' (রোমীয় ৮:১৩)৷ ইফিষীয় ৪:২২-২৪ পৌল সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছেন, 'তোমরা এই শিক্ষা পেয়েছিলে যে, তোমাদের পুরানো জীবনের পুরানো 'আমি' কে পুরানো কাপড়ের মতই বাদ দিতে হবে, কারণ ছলনার কামনা দ্বারা সেই পুরানো 'আমি' নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ তার বদলে আল্লাহকে তোমাদের মনকে নতুন করে গড়ে তুলতে দাও, আর আল্লাহর দেওয়া নতুন 'আমি'কে নতুন কাপড়ের মতই পর৷ সত্যের ধার্মিকতা ও পবিত্রতা দিয়ে এই নতুন 'আমি' কে আল্লাহর মত করে সৃষ্টি করা হয়েছে'৷ পুরাতন মানুষটি অপসারনের অর্থ হলো, আপনার পূর্বের ধ্যান ধারণা৷ পুরাতন মানুষটি নিয়ত কলুষিত হয়ে চলছে প্রতারণামূলক অভিলাষে আর রূহের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ নবীন হয়ে উঠুন, এবং রুহানি জীবন পরিধান করুন, যাকে খোদার ইচ্ছায় খোদার সুরতে করা হচ্ছে সৃষ্ট, সত্যিকারের ধার্মিকতা ও পবিত্রতা দিয়ে৷ পুরাতন মানুষটিকে পরিহার করার অর্থ হলো, চিরতরে সর্বপ্রকার পাপের আকাঙ্খা ঘৃণা ও পরিত্যাগ করা৷ নতুন মানুষটিকে পরিধান করার অর্থ হলো, মসিহকে পরিধান করা যেমন তার সাহায্যে পাপ ও স্বার্থপরতার ওপর বিজয় লাভ করা৷

এ চলমান যুদ্ধে আমরা পরাজয় ভোগ করতে পারি, কেননা আমরা যে পূতপবিত্র জীবন যাপন করতে চাই৷ পরাভূত হবার সাথে সাথে আমরা যেন আবার উঠে দাঁড়াই৷ আন্তরিকভাবে প্রভুর মুখাপেক্ষী হই ও তওবা করি তাঁর কাছে৷ যখনই আমাদের অহমিকা ও আত্মনির্ভরতা মুলোত্‍পাটিত হয় তখনই আমরা মসিহের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে থাকি, আর অমনি দুর্বলতার মধ্যেই প্রভুর শক্তি সঞ্চলিত হতে শুরু করে৷ আমাদের মধ্যে পুঞ্জিভূত মন্দ বিষয়ের ওপর বিজয় কেবল সম্ভব হয় মসিহের ওপর নির্ভরতার ফলে এবং তখন থেকে রুহানি জীবনে অর্জিত হতে থাকে পরিপক্কতা৷ পাক-কালামে ঘোষণা দিয়েছে, 'খোদার রূহের দ্বারা যারা পরিচালিত হয় তারাই হলো খোদার সন্তান'৷ রোমীয়দের পত্রে হযরত পৌল লিখেছেন, ৮:১-২ তিনি, যতজন রুহানি যুদ্ধে নিয়োজিত রয়েছেন তাদের সান্ত্বনা দিয়েছেন, 'যারা মসিহ ঈসার .... মুক্ত করেছেন'৷ নবীদের শিক্ষার আলোকে মন্দ মনোভাব ও আচরণ শরীয়তের অধিনে বিচার্য, আর ইঞ্জিল শরীফে মসিহের শিক্ষার আলোকে পাপের প্রবণতার ওপর আমাদের গভীর জ্ঞান ও উপলব্ধি জ্ঞাত করেছেন আর তত্‍সঙ্গে উদ্দিপিত করেছেন খোদার ধার্মিকতা বরণ করার জন্য যা মসিহের ওপর বিশ্বাস স্থাপনের ফলে খোদার রহমত হয় অর্জিত৷ আমাদের মন ও ইচ্ছাশক্তি নবায়ন ও শক্তিধর করার জন্য পাকরূহের উপস্থিতি প্রেরণ করেন৷ মুসা নবীর কাছে যে শরীয়ত দেয়া হয়েছে তা পাপের পতনের বিষয়ে বাধা দেয় বা নিষেধ করে, কিন্তু মসিহ আমাদের পরিপূর্ণ মুক্তি দান করেছেন এবং পাকরূহের দ্বারা শক্তিশালী করেছেন শরিয়তের আজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করার জন্য৷ নবীদের লেখার মধ্য দিয়ে আমাদের জীবনের সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল অবস্থা ও কুঠিল মনোভাব প্রকাশ করেছে, আর বেহেশতি পিতা দান করেছেন সম্পূর্ণ রুহানি পরিত্রাণ; তাতে নেই কোনো অপরাধ, নেই কোনো শাস্তি! মসিহ ইতোপূর্বে পাপের প্রায়শ্চিত্ত শোধ দিয়েছেন! মুক্তিদানের সাথে সাথে আমাদের শক্তিও দান করেছেন, যার ফলে পাপের ওপর আমাদের বিঝয় অর্জিত হয়েছে৷ ত্রিত্তপাকের খোদা পাপের কবল থেকে আমাদের মুক্ত করেছেন, আর পরিচালনা করে চলছেন নিয়ত ধার্মিকতায় চলার জন্য আর তা করছেন আমাদের মধ্যে উপস্থিত প্রেমের ফলে৷


১২.৭ - ইসলাম ও লালসা

ইসলামে বণর্ীত নেই যে ইমানের দ্বারা ন্যায়বান বলে ঘোষিত হয় এবং মাংসিক কামনা বাসনার ওপর বিজয় অর্জন কেবল রূহের শক্তিতেই সম্ভবপর৷ কোরানে বণর্ীত রয়েছে, মানুষকে দুর্বল করেই সৃষ্টি করা হয়েছে (সুরা আন নিসা ৪:২৮)৷ এ বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলাম আল্লাহকেও কিয়দংশ দোষারোপ করে থাকে৷ এ কারণেই মুহাম্মদ পুরুষদের চার স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও উপপত্নী বিবাহের হুকুম দিয়েছেন, যেন তারা প্রলোভনে পতিত না হয় (সুরাহ আন নিসাহ ৪:২৫)৷ মুহাম্মদ তার পালিত পুত্র যায়েদের স্ত্রীকে বিবাহ করেছিল৷ বৈবাহিক বিষয়ে তার দাবি অনুযায়ী সে যে প্রত্যাদেশ পেয়েছিল তা হলো পালিত পুত্রের স্ত্রীকে সে বিবাহ করার অধিকার রাখে, তাছাড়া যারাই তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় তাদেরকেই সে বিবাহ করতে পারবে (সুরাহ আল আহযাব ৩৩:৩৭, ৫০, ৫১)৷

কোরানে বার বার একটি ঘোষণা দিয়েছে, আল্লাহ যাকে খুশি তাকে সঠিক পথে পরিচালনা করেন আর যাকে খুশি তাকে বিপথে ঠেলে দেন (সুরাহ ইব্রাহীম ১৪:৪ এবং আলফাতির ৩৫:৮)৷ ফলস্বরূপ মানুষের ওপর ভালো মন্দের খুব একটা দায়দায়িত্ব বর্তায় না৷

যেহাদের সময় লুটপাট করাই হলো প্রধান বিষয়৷ লুটের মালামাল সংগ্রহে ব্যস্ত থাকার ফলে এবং তার নিজ নিজ গৃহে দখলে নেয়ার কারণে তারা যুদ্ধে পরাজিতও হয়েছে৷ লুটের মাল ভাগ করার প্রশ্নে কখনোবা চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে৷ পার্থিব বস্তু লাভের জন্য ও লালসার বসবর্তী হয়ে কাজ করা মুসলমানগণের কখনো জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠেছে৷ তার কাছে অর্থবিত্ত ও সম্মান হলো খোদার রহমতের প্রমাণ, মুসলিম শাসকদের জীবনে যে প্রবণতা দর্শণীয় হয়ে থাকে৷ মসিহের বিনম্রতার ও ভদ্রতা ইসলামে অবান্তর বিষয়৷

তাছাড়া রক্তক্ষয়ি প্রতিশোধ গ্রহন করা ইসলামে নিষিদ্ধ নয়, যতক্ষণ ক্ষতিপূরণ পুরোপুরি আদায় না হয়৷ মুহাম্মদ তার শত্রুদের গুপ্ত হত্যা করার জন্য ঘাতক পাঠাতো৷ ইসলামে মানুষের একগুয়েমি স্বভাবের কোনো পরিবর্তন ঘটে না, তার সবকিছু অর্থাত্‍ অমানবীয় বিষয়গুলো থাকে অটুট, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে মসিহের দ্বারা অবমুক্ত হয়৷ একজন মুসলমানের কাছে, পিতা খোদার ওপর ঈমান স্থাপন করার অর্থ হলো অমার্জনীয় পাপের একটি৷ তার প্রবণতা হলো, নিজের ভালো কাজের দ্বারা তার নাজাত অর্জন করতে হবে৷ ভালো কাজ আসলে কোনো করুনার কাজ নয় বরং তা হলো অবশ্য করণীয় দায়িত্ব একজন মুসলমানের জন্য৷ বিশ্বাসের সাক্ষ্য দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রমজান মাসে দিনের বেলা উপবাস থাকা, গরীবদের যাকাত প্রদান করা, হজ্জ ব্রত পালন করা, কোরান মুখস্ত করা এবং ইসলাম প্রচার-প্রসারের জন্য যেহাদ করা হলো অবশ্য করনীয় দায়িত্ব প্রত্যেক মুসলমানের জন্য৷ হৃদয় যে কীভাবে নতুন ভাবে সৃষ্টি হবে সে বিষয়ে একজন মুসলমান আসলে কিছুই জানে না৷ ইসলামে পাকরূহের বিষয়ে কোনোই ধারণা দেয়া হয় নি, তাই পাকরূহের মধ্যস্থতা তাদের কাছে অবান্তর (সুরাহ আল ইসরার ১৭:৮৫)৷ মুসলমানদের ধারণা পাকরূহ হলেন খোদা সৃষ্ট কোনো রূহ, তাই স্বাভাবিক কারণে তারা জিব্রাইল ফেরেস্তাকে পাকরূহ বলে মনে করে৷ সে খোদার মধ্যে উপস্থিত কোনো রূহ নয়৷ তাই ইসলামে সভ্যতা ও কৃষ্টি সম্পূর্ণ নির্ভর করে শ্রমের ফল৷ পাকরূহের ফল, মহব্বত, আনন্দ, শান্তি, ইসলামে প্রত্যাখ্যাত হয়ে থাকে, কেননা এর ভিতকেই তারা অস্বীকার করে বসেছে আর তা হলো সলিবে মসিহের জানের কোরবানির ফলে পাপের ক্ষমা লাভ হয়, তারা তা মানে না৷

কোনো ব্যক্তির মুসলমান হওয়া বড়ই সহজ, কেননা তার জীবন প্রণালীর কোনো একটা পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে না মুসলমান হিসেবে সমাজে চলার জন্য৷ কেউ যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তবে তার বহু বিবাহে ইসলাম আপত্তি করে না, তা চলতে থাকে, বিশেষ করে আফ্রিকা ও এশিয়াতে৷ মাংসিক কামনা বাসনা ও বস্তুগত চাহিদা এ পৃথিবীতে যেমন অস্তিত্বমান তেমন উক্ত ব্যবস্থা বেহেশতেও চালু থাকবে৷ ইসলামের বর্ণনা অনুযায়ী একজন মুসলমানের অনন্ত জীবনের অর্থ হলো মানুষের কামনা বাসনার বাস্তবায়ন (সুরাহ আল-ওযাকিয়া ৫৬:১৬-৩৭)৷ ইসলামের বর্ণনা অনুযায়ী বেহেশতে আল্লাহ নিজে থাকবেন না৷ খোদার সাথে কোনো প্রকার সহভাগিতা বা যোগাযোগ সম্বন্ধ স্থাপন করা সম্ভবপর নয়, কোনো প্রকার রুহানি পুনর্জাগরণ অথবা মানুষের একগুয়েমি ও স্বার্থপরতার বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রয়োজন নেই ইসলামে৷ নৈতিক ও রুহানি ভাবে ইসলাম নবীদের শিক্ষা কলাপের অবস্থান থেকেও অনেক নীচে অবস্থান করে আর ইঞ্জিল শরীফের আলোকে কোনো তুলনাই দেয়া চলে না৷


১২.৮ - মসিহই হলেন আমাদের একমাত্র ভরসাস্থল

আমাদের নিশ্চিত হতে হবে এ ব্যাপারে, আমরা যেন কোনো মতেই মুসলান ও ইহুদিদের প্রতি ঘৃণার ভাব না দেখাই, কেননা এমন কোনো মসিহি নেই যে কিনা নিজে নিজে অর্থাত্‍ নিজের উত্তমতার দ্বারা মুসলিম বা ইহুদিদের চেয়ে উত্তম৷ কেবলমাত্র মসিহের ওপর বিশ্বাসের ফলেই আমরা মসিহের ধার্মিকতা লাভ করে থাকি, লাভ করি শক্তি, পূতপবিত্র জীবন যাপন করার জন্য৷ মসিহ হলেন আঙ্গুর গাছ আর আমরা হলাম তার শাখা প্রশাখা, আর কাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকার ফলেই সর্বপ্রকার অহংকার ও গর্বের হাত থেকে তিনি আমাদের রক্ষা করেন আর আমাদের মধ্য দিয়ে উত্‍পন্ন করেন পাক রূহের ফল৷ মসিহকে ব্যতিত আমরা কিছুই করতে পারি না৷ তিনিই হলেন আমাদের মানদন্ড৷

www.Waters-of-Life.net

Page last modified on September 25, 2013, at 08:36 AM | powered by PmWiki (pmwiki-2.3.3)